Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Drama Romance

3  

Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Drama Romance

মেঘভাঙা_রোদ (Part 5)

মেঘভাঙা_রোদ (Part 5)

8 mins
275



টিউলিপে উজানের ঘর :

---------------------------------


সকালের মিঠে রোদ এসে উজানের ঘুম ভাঙায়... এ কি !!! তার গায়ে এমন করে চাদর কে টেনে দিল !! কাল রাতে নীলিমার সাথে কথা কাটাকাটি হবার পর তো সে Drink করে... তারপর তো আর কিছু মনে নেই... মা মারা যাবার পর থেকে তো চাদর নীচে আর সে চাদরের উপর শোয়... এইটা তার জন্মগত স্বভাব... মা সারারাত তার গায়ে চাদর টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়তো... কে টেনে দিল চাদর তার গায়ে !!! ওই Idiot মেয়েটা !!! হ্যাঁ... ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ছে... রাতের খাবার নিয়ে এসেছিল... হ্যাঁ, তাই হবে... এইসব তো ওনার দ্বারাই সম্ভব !!! 


বালিশ ছেড়ে উঠে বসে আরো চমকে গেল উজান... এ কিইইই !!! তার রুম বাচ্চাদের মতো করে কে সাজালো !!! আর সামনের টেবিলে ওটা কার ফোটো !!! চশমা পড়ে খাট থেকে নামে উজান... ও মা !!! এ তো- মায়ের ছবি... ফুল, মালা, প্রদীপ দিয়ে সাজানো... তার সামনে পায়েস রাখা.... আর কেক....


         'Happy Birthday Dadabhai'


আরে !!! আজ তো উজানের জন্মদিন... তার মনে না থাকলেও তার পাগলি বোনটার ঠিক মনে আছে... এক লহমায় চোখটা ভিজে আসে উজানের... মা চলে যাবার পর কেউ তো আছে তার কথা ভাবার... তখনই পেছন থেকে একটা পাহাড়ী মেঠো সুর ভেসে আসে,


নেপথ্যে : উজান স্যার !!! স্যার !!! আসব !!!


উজান : (মনে মনে) ব্যাস... হয়ে গেল...

       (প্রকাশ্যে) আসুন...


নেপথ্যে : স্যার, আমার Arrangement-টা কেমন লাগল !! সব ব্যবস্থা ঠিকভাবে হয়েছে তো !!!


উজান : Am I a Kid, Dr. Mitra !! এইসব বেলুন টেলুন... মানে Just Ridiculous 😬... একে ব্যবস্থা বলে না Dr. মিত্র, বলে বাড়াবাড়ি... আপনি না Just....


কথাটা বলতেই পিছনে ফিরতেই হিয়াকে দেখে স্থির হয়ে যায় উজান... হিয়াকে আপাদমস্তক মুগ্ধ চোখে একবার দেখেই চোখ ফিরিয়ে নেয় সে... প্রাথমিক অস্বস্তি কাটিয়ে মুখে হাসি টেনে উজানের সামনে এসে দাঁড়ায় হিয়া...


হিয়া : স্যার, ঢুকেই গেলাম... আসলে জন্মদিনটা যদিও আপনার, কিন্তু ঠাম্মি না আমাকে এই শাড়িটা পড়তে দিলেন... ওই আপনার পায়েসটা করে পূজো দিতে হবে তো... তাই সকাল সকাল স্নান সেরে এই নতুন শাড়িটা পড়ে পুজোর ব্যবস্থা করে এলাম... হ্যাঁ... তারপর ঠাম্মি যেমন যেমন বললেন, তেমনি তেমনি আপনার পচ্ছন্দ সব পদ রান্না করলাম ঠাম্মির Instruction মতো... তারপর জিনিয়ার সাথে Cakeটা বানালাম... এই টেবিলটা সাজিয়ে ওরা রেডি হতে গেছে বাড়িতে... আমাকে ঠাম্মি পাঠালেন আপনাকে তৈরি করতে... হ্যাঁ... কিন্তু... আপনার মাকে না আমার ভীষণ চেনা লাগছে... কোথায় যেন দেখে !!


নেপথ্যে : (ধমকে) আমাকে কি আপনারা সবাই মিলে কচি শিশু পেয়েছেন !!!


উজান এতক্ষণ ধরে গালে হাত দিয়ে একমনে হিয়ার কথাগুলো শুনছিলো, আর সহ্য করতে না পেরে জোরে ধমক লাগায়...


উজান : আর আপনি সবসময়... মানে সবসময়ই এত বকেন কি করে বলুন তো !! Ridiculous 😬 ....


হিয়া : (একটু আদুরে গলায়) সে যাই বলুন স্যার, আপনি কিন্তু একদম নিষ্পাপ ছোট্ট শিশুর মতো ঘুমান... আর ওই গায়ের চাদর....


বলেই জিভ কাটে হিয়া, আর হিয়ার কথায় উত্তেজনায় উজানের চোখ বড় বড় হয়ে যায়... 


উজান : What !! আপনি সারারাত এই ঘরে !!! What the hell is going on !!!


হিয়া : এই ঘরটা সাজাতে আমার পাক্কা ৫ঘন্টা সময় লেগেছে, হ্যাঁ... আর আমি কিন্তু আপনাকে একফোঁটাও Touch করি নি... আপনার যাতে ঠান্ডা লেগে না যায়, তাই আপনার গায়ে চাদরটা টেনে দিয়েছি মাত্র... দেখুন, এইভাবে শুধু আমি আপনার খাটে উঠেছি...


উজান প্রায় তেড়ে যায় হিয়ার দিকে.....


উজান : এই... নামুন... নামুন বলছি আমার খাট থেকে... আমার খাট হাটকাবেন না তো... নামুন...


হিয়া : এই তো স্যার... কি সুন্দর ইংরেজি থেকে পাতি বাংলাতে নেমে এলেন....


উজান : এই আপনি তো নামুন তো....


উজান হিয়ার হাত ধরে টেনে খাট থেকে নামায়... হিয়া যন্ত্রণায় কাতরে ওঠে ক্ষণিকের জন্য... 


হিয়া : আহহহহ.... মাগো.....


হিয়ার ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতটা নিজের দুই হাতের মধ্যে নেয় উজান...  


উজান : কি হয়েছে !!! দেখি !!! দেখি হাতটা !!! হাতে ব্যান্ডেজ কেন !! কখন লাগলো আপনার !!!


হিয়া : ইয়ে স্যার.... কাল তো আপনি সুস্থ অবস্থায় ছিলেন না... তাই মনে নেই... 


উজান হিয়ার কাছে ধরা পড়ে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়....


হিয়া : আমার হাতটা একটু পুড়ে যাওয়ায় এই ব্যান্ডেজটা আপনিই করে দিয়ে....


হিয়ার কথা শেষ হয় না, হিয়া নিজের আহত হাতের উপর উজানের দুই হাতের আলতো চাপ অনুভব করে... একটা নরম দৃষ্টিতে হিয়ার চোখের দিকে তাকায় উজান...


উজান : আর... আর এই আহত হাত নিয়েই আপনি রান্না করেছেন !!! এই এত্ত Arrangement করেছেন আপনি !!! Idiot নাকি আপনি !!!


হিয়া : আপনি তো আমাকে তাই বলেন স্যার... আসলে স্যার, ঠাম্মি আর জিনিয়া...


একইভাবে হিয়ার চোখে চোখ রেখে হিয়ার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আবারও হিয়ার কথা শেষ হতে দেয় না উজান...


উজান : (নরম সুরে) সারাদিন এত কথা বলো... বকবক বকবক করে সবার মাথা খাও... কখনো তো নিজের কথাটাও বলতে হয় ডক্টর হিয়া মিত্র... নিজের কথা মুখ ফুটে বলতে না পারলে জীবনে অনেককিছুই হারাবে হিয়া...


হিয়া : (আনমনা আর উদাস হয়ে) হারিয়েছি তো স্যার...


উজান : কিইইই


হিয়া : কিছু না... কিছু না...


হিয়া হেসে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে উজান শক্ত করে শক্ত করে হিয়ার কাঁধ দুটো ধরে হিয়াকে আটকায়...


উজান : কখনো নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো হিয়া !!! তোমার চোখের কোনে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট... তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে !!! কিসের এত অভিমান তোমার নিজের প্রতি !!!


হিয়া নিজেকে হাসির আড়ালে লুকিয়ে নেবার আগে একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা হিয়ার চোখে বাঙ্ময় হতে দেখে উজান...


হিয়া : (হেসে) স্যার... আপনি জিনিয়ার দেওয়া জামাটা পরবেন তো !!!


চমকে উঠে হিয়াকে ছেড়ে দেয় উজান...


উজান : কো... কোন জামা !!


হিয়া : আরেএএএএ... দেখুন... আপনার এইটাও মনে নেই... (জিনিয়ার দেওয়াটা জামাটা দেখিয়ে) এই জামাটা...


উজান : আমি রঙীন জামা পরি না...


হিয়া : নিজের ছোট বোন দিলেও না !!! আজকের মতো শুভ দিনে কাউকে মনে কষ্ট দিতে নেই স্যার....


উজান : এটা কি "Dr. হিয়া মিত্র উবাচঃ" !!! আমি স্নানে চললাম...


উজান তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢোকে... বাথরুমের দরজার নক করে হিয়া...


হিয়া : স্যার...


উজান : এই আপনি যান তো... একটু শান্তিতে স্নান করতে দিন... 


হিয়া : বলছি, জিনিয়ার জামাটা আর একটা সাদা শার্ট বের করে খাটের উপর রেখে গেলাম... যেটা মন চায় পড়বেন...


উজান : আপনি আপাতত যান তো এখান থেকে...


হিয়া : আপাতত গেলাম... আবার আসব কিন্তু... আপনি রেডি হয়ে নিন...


উজান : (ধমকে) যান তো...


রাধাগোবিন্দ-এর মন্দির :

------------------------------------


উজান, ঠাম্মি, জিনিয়া, কিশলয়, তৃষা ও হিয়াকে নিয়ে মন্দিরে আসে... ঠাম্মি উজানকে নিয়ে পুজোয় বসলে হিয়া আর জিনিয়া মিলে কেক-এর টেবিলটা সাজিয়ে ফেলে... ঠাম্মির আরতির পর উজান আর জিনিয়া আরতি করে... আরতির পর জিনিয়া তার দাদাভাইকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানায় আর তার দাদাভাই যে তার দেওয়া নতুন জামাটা পড়েছে- তার জন্য আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে... জিনিয়ার ভালোবাসা আর আনন্দের উষ্ণতা উজানকে ছুঁয়ে যায়... উজান আড় চোখে তার Idiot-কে দেখে... হঠাৎই কিশলয় আব্দার জোড়ে সে তৃষার সাথে আরতি করবে... সম্প্রতি এই দু'জনের মধ্যে একটা মিষ্টি টান সবাই অনুভব করেছে আর তারপর কিশলয়ের আব্দার শুনে সবাই মিট্টি মিট্টি করে হেসে ফেলে... সবার আরতি শেষে ঠাম্মি হিয়াকে বলে আরতি করতে... ঠিক তখনই উজান বলে ওঠে,


উজান : দাঁড়ান ডক্টর মিত্র....


ঠাম্মি : কি হলো রে দাদা !!! 


উজান : ওনার হাতে চোট লাগা আছে ঠাম্মি... কাল ওনার হাত পুড়ে গেছে... সেই হাত নিয়েই উনি এতক্ষণ ধরে এতকিছু... Idiot একটা...


তৃষা : হিয়া তো বরাবরই ওমনি....


ঠাম্মি : কই দেখি !! ওম্মা... হ্যাঁ তো... তুই কি করে হিয়া !!! আমি ফোনে তোকে বলে গেলাম এত কিছু রান্না করতে, আর তুই রান্না করে গেলি... মুখ ফুটে একবারও বললি না... পরে যখন ব্যান্ডেজ দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে !! 'ওহহহ কিছু না' বলে হেসে এড়িয়ে গেলি !!!


হিয়া : বললে, হয় এই সব কাজগুলো তুমি করতে... নয়তো তোমার মনের মতো করে উজান স্যারের জন্মদিনটা পালন করা হতো না... তার থেকে এই তো ভালো ঠাম্মি... 


ঠাম্মি : তা বলে তুই একবারও মুখ ফুটে বলবি না...


হিয়া : বিশ্বাস করো ঠাম্মি, সত্যিই আমার তেমন লাগে...


উজান : কাল আমি নিজে আপনার হাতে ব্যান্ডেজ করেছি ডক্টর মিত্র...


হিয়া : হ্যাঁ আআআ... আপনার যেন কতো মনে আছে !!!


(বলেই হিয়া ছোট্ট করে জিভ কাটে, আর উজান রেগে চোখ পাকিয়ে হিয়ার দিকে তাকায়)


উজান : (ধমকের সুরে) বাজে না বকে চুপচাপ আসুন এবার... আরতি করুন...


উজান প্রদীপের ভার হিয়ার হাতে দেয় না... নিজে প্রদীপ হাতে ধরে নিয়ে এসে হিয়ার হাত ধরে আরতি করিয়ে দেয়... উজান নিজের থেকে হাতে প্রদীপ নিয়ে এসেছে দেখে প্রথমে সবাই হতবাক হয়ে যায়... তারপর ওরা আরতি শুরু করলে বাকিরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসি চেপে নেয়....


এরপর সবাই কেক-এর টেবিলে এগিয়ে গেলে হিয়া ঠাম্মির হাতে পায়েসের বাটিটা এগিয়ে দেয়... উজানের মাথায় গায়ে স্নেহের পরশমাখা হাত বুলিয়ে ঠাম্মি উজানকে পায়েস খাইয়ে দেয়... পায়েস খাওয়ানো হলে গেলে উজানের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হিয়া উজানকে ফিসফিসিয়ে বলে,


হিয়া : উজান স্যার.... স্যাররররররর....


উজান : (ফিসফিসিয়ে ধমক দিয়ে) কি হলো কি !!!


হিয়া : প্রণাম...


উজান : কিইইই !!!


হিয়া : (ইশারায় দেখিয়ে) প্রণাম... প্রণাম....


উজান ঠাম্মিকে প্রণাম করলে ঠাম্মি উজানকে নিজের বুকে টেনে কপালে স্নেহচুম্বন দেন...


কেক কাটা পর্ব শেষ হলে ঠাম্মি কিশলয়কে হাঁক পাড়ে...


ঠাম্মি : কিশলয়য়য়...


কিশলয় : Yes Thammmiiiii.... 😉


টেবিলের পেছন থেকে উজানের গিটারটা বের করে আনে কিশলয়, চমকে ওঠে উজান...


উজান : (বিস্মিত হয়ে) এ কিইইই !!! ঠাম্মি !!! আপনিও না !!! এদের সাথে মিশে মিশে...


ঠাম্মি : একটা গান শোনা না দাদা... কবে আছি !! কবে নেই !!!


উজান : আহহহহ !!! কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে যান আপনি !!!


জিনিয়া : (উচ্ছসিত হয়ে) আজ আমরা হিয়াদিরও গান শুনব... আজ হিয়াদি শুধু দাদাভাই-এর জন্য গাইবে... afterall Birthday Boy বলে কথা... কি বলে সবাই !!!


সবাই (উজান বাদে) : একদমমমমমমম.....


ঠাম্মি : হ্যাঁ হিয়া, ধরতো... দেখি ও কি করে না ধরে থাকে....


উজান আর হিয়া ইতস্ততঃভাবে আড় চোখে একবার পরস্পরকে দেখে....


হিয়ার গান :


হয়তো তোমার বুক পায় নি কোথাও কোনো স্বান্তনা...

বিনিদ্র রাত্রে সজ্জাসঙ্গী শুধু যন্ত্রণা...

বোঝাতে চেয়েছো তবু পারো নি বোঝাতে এই কবিতা...

বুঝেও বুঝবে না- শুনবে না তোমার এই গানের ব্যাথা...

তবু ভুলে যাও- সে স্মৃতি মনে রেখো না...


উজানের গান :


ও ও ও মন আমার... ও ও ও মন আমার...

কখনো ভুলে যেও না- গিটারের ব্যাথায় বাঁধা কবিতা...

নিষেধের গন্ডিটাকে পেরিয়ে,

উড়ে যাও কখনো ধরা দিও না....

ও ও ও মন আমার... ও ও ও মন আমার....


যুগলের গান :


শুনবে তোমার গান নীল আকাশের ওই পাখিরা...

দুলবে সুরের দোলে সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলেরা...

নদীর কলষ্ছাসে ভাসিয়ে দিও এ ভাবের খেয়া...

হৃদয়ের রঙ্গনে জ্বালিয়ে রেখো এই সুরের দিয়া...

তবু গেয়ে যাও, এই গানে তুমি থেমো না....


সকলে একযোগে


ও ও ও মন আমার.... ও ও ও আমার....


গানের শেষে উজান না চেয়েও তার Idiot-এর দিকে আড় চোখে না তাকিয়ে পারে না...


(গান সৌজন্য : ব্যান্ড পরশপাথর, অ্যালবাম- আজো আছে)


(ছোট্ট ছোট্ট মূহুর্তের আড়ালে দুটো মন কি নিজেদের অজান্তেই কাছাকাছি আসবে !!! কেন নিজের প্রতি এত অবহেলা হিয়ার !! উজান কি জানতে পারবে !! )




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama