STORYMIRROR

Anishri's Epilogue

Romance

3  

Anishri's Epilogue

Romance

মেঘভাঙা রোদ (Part 4)

মেঘভাঙা রোদ (Part 4)

11 mins
244


Tulip Hospital :

-----------------------


উজানের নিজের মনের অজান্তেই ওই ছটফটে, প্রাণবন্ত 'Idiot' মেয়েটার জন্য একটা অপেক্ষা শুরু হয়... না চাইতেও পরেরদিন বারবার সবার অলক্ষ্যে উজানের চোখ টিউলিপের Entrance Gate-এর দিকে চলে যেতে থাকে...


Emergency Care Unit :

-----------------------------------


এদিকে পরের দিনটা খুব ব্যস্ততায় শুরু হয় হিয়ার... Dr. পরমা Emergency Call পেয়ে খুব ভোরেই সে আর তৃষা চলে এসেছে... একটা অদ্ভুত Case নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে Dr. পরমা আর হিয়া... একটি পরিবার এসেছে তাদের পুত্রবধূকে নিয়ে যার Labour Pain উঠেছে... কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, পারিবারিক গোঁড়ামির জন্য তারা বিগত নয় মাস কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয় নি, এবং তাদের স্থির ধারণা তাদের বংশপরম্পরায় পুত্র সন্তানই হবে... এদিকে প্রসূতির অবস্থায় খুবই খারাপ, অন্তিম মূহুর্তে অবস্থা হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় তারা হাসপাতালের শরণাপন্ন হয়েছে... বাড়িতে প্রসব না হওয়ায় তারা বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে অবশেষে টিউলিপে এসেছে... কোনো হাসপাতাল এই Case নিতে চায় নি...


Operation Theater :

-------------------------------


এদিকে বহুবার চেষ্টা করেও Fetoscope বা Doppler Ultrasound Device-এর Baby-র Heart Beat পায় নি হিয়া... অবশেষে Dr. পরমা, হিয়া, তৃষা, মেট্রণ এবং কিছু নার্স প্রসূতিকে Operate করতে নিয়ে যায়... কিন্তু Open করতেই সবাই হতবাক... Baby কোথায় !! এ তো টিউমার...


হিয়া : Pseducyesis !!!!


Dr. পরমা : একদমই... একে False / Phantom Pregnancy-ও বলে... ছেলেদের ক্ষেত্রেও হয় এইরকম... তখন একে 'Cauvade' বা Sympathetic Pregnancy বলে...


হিয়া : ম্যাম, এইগুলো তো শুধু বইতে পড়েছিলাম... You tube-এ কিছু Videos দেখেছিলাম... কিন্তু এইভাবে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা... সন্তানের তীব্র বাসনা, বারংবার গর্ভপাত, বা Impending Menopause হলে অনেক সময় শরীরে Pregnancy Symptoms দেখা যায়... কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই এইরকম False Labour Pain হয়...


Dr. পরমা : ব্যথাটা টিউমারের ছিল হিয়া, যেটাকে ওরা Labour Pain বলে ধরেছে... তুমি টিউমারটা Remove করো... আমাদের ওনাদের খুব শান্তভাবে ব্যাপারটা বোঝাতে হবে... প্রসূতির এই Pseducyesis Depression Recovery-র জন্য এখন Psychological Therapy দিতে হবে...


হিয়া : হ্যাঁ ম্যাম, আপনি ঠিকই বলেছেন... আমি টিউমার বাদ দিয়ে দিয়েছি...


Dr. পরমা : Okkk... হিয়া, তুমি আমার সাথে বাইরে এসো... ওনাদের খুব ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে হবে... They are already very Aggressive for their offspring... তৃষা Operation End করুক...


তৃষা : না ম্যাম... আমার হাত কাঁপছে... জীবনের প্রথম অপারেশন আর এই অবস্থা...


হিয়া : ঠিক আছে... ঠিক আছে... তুই ভয় পাস না... আমি End করছি...


Reception Hall :

--------------------------


কিছুক্ষণ পর পরমা তৃষা, হিয়া আর মেট্রণকে নিয়ে বেরিয়ে আসে... পরিবারটিকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে তারা, কিন্তু কোনোকিছুই বোঝাতে অক্ষম হয় তারা... চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে উজান-কিশলয় সহ চ্যাটার্জি, দেবরায় পরিবার এবং টিউলিপের প্রায় সকল Staff আর Security-রা ছুটে আসে... কিন্তু পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ দেখে কেউই এগিয়ে আসতে সাহস পায় না... এগিয়ে আসে শুধু কিশলয় আর উজান...


প্রসূতির স্বামী : বল কি করেছিস আমার ছেলের !! মেরে ফেলেছিস !!! না কি বিক্রি করে ফেলেছিস !!!


Dr. পরমা : নাহহহ... আমরা এমনি কেন করব !! আপনি একটু শান্ত হয়ে বোঝার চেষ্টা করুন- Baby ছিলই না... যেটা ছিল, সেটা টিউমার...


পরিবার : কি ছিল আর কি ছিল না- সেটা আমরা বুঝে নেব... আপনারা এই চারজনকে আমাদের হাতে তুলে দিন...


উজান : দেখুন, আপনাদের মনের অবস্থা আমরা বুঝতে পারছি... কিন্তু আপনার Limit cross করবেন না... Please...


প্রসূতির স্বামী : (মারমুখী হয়ে পরমার দিকে তেড়ে আসে) দিন বলছি....


উজান : (তার হাত ধরে ফেলে) হাত না তুলে কথা বলুন... গায়ে হাত দেবার সাহস করবেন না...


হঠাৎই পেছন থেকে কেউ একজন একটা আধলা ইট ছুঁড়ে দেয়... উজান পরমাকে সরাতে পারলেও তৃষাকে আড়াল করতে গিয়ে ইটটা লাগে হিয়ার কপালে... রক্তাক্ত হিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে... 


       হিয়াআআআআআআআ


ঘটনার আকস্মিকতায় পরমা-উজান প্রথমে বুঝতে না পারলেও তৃষার চিৎকারে ঘুরে তাকায়... হিয়া তার রক্তাক্ত হাত Dr. সৌহার্দ্য-র দিকে একবার বাড়ানোর চেষ্টা করে... পরমা আর সৌহার্দ্য ছুটে আসে হিয়ার কাছে... সৌহার্দ্য হিয়ার মাথা নিজের কোলে তুলে নিতেই হিয়ার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে... তারপরেই আর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে হিয়া জ্ঞান হারায়... 


উজান কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে... হঠাৎই তার কানে আসে,


নেপথ্যে: ঠিক হয়েছে.... এমনি আরো হবে.... দেখ কেমন লাগে !!!


কথাটা কানে আসতেই হঠাৎই উজান রুদ্রমুর্তি ধারন করে প্রসূতির স্বামীকে সপাটে একটা চড় বসিয়ে দেয়... কিশলয় দৌড়ে গিয়ে উজানকে আটকানোর চেষ্টা করে... Dr. সমরেশ পুলিশকে ফোন করে...


কিশলয় : (উজানকে জাপটে ধরে) রাজা নাহহহ.... নাহহহহ রাজা.... Please Control yourself... You are a Doctor...


উজান নিজেকে কিশলয়ের বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে নেবার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে...


উজান : (ক্রুদ্ধ হয়) ছাড়... ছাড় আমাকে গুন্ডা... আমরা দিনরাত এক করে ওনাদের সেবা করবো... আর ওনারা !!! কি দোষ আছে ওই মেয়েটার যে ওইভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে... ছাড় আমাকে গুন্ডা... ছাড় বলছি...


Dr. পরমা : উজান Please... নিজেকে সংযত করো.... হিয়ার conditions deteriorate করছে... Pulse Drop করছে... এতো Bleeding হওয়ায় Breathing Problems start হয়ে গেছে... Please ওকে ওঠাও... ওর immediately Medical Attention দরকার...


Dr. সৌহার্দ্য হিয়াকে কোলে তোলার আগেই উজান দৌড়ে এসে হিয়াকে কোলে তুলে নেয়, সৌহার্দ্য অপলক দৃষ্টিতে উজানের দিকে তাকিয়ে থাকে... কিশলয় স্ট্রেচার আনতে ছোটে... উজান দেখে, যদিও হিয়া অচেতন তবুও তার Breath করতে কষ্ট হচ্ছে... হিয়ার রক্তাক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বুকে একটা দলা পাকানো কষ্ট হয় উজানের, কাল মেয়েটাকে খুব বকাবকি করেছে... আর আজ সেই মেয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছে...


উজান : (নরম গলায়) কিছু হবে না আপনার... আমি আছি তো... কিছু হতে দেব না আপনার মতো Idiot-এর... 


Operation Theater :

-------------------------------


হিয়াকে অপারেশন টেবিলে আনা হয়... দশটা Stitch পড়ে মাথায়... এখন সে অনেকটা Stable... Out of Danger... Breathing Problems-টাও নেই... 


হিয়ার কেবিন :

-----‐----------------


রাত্রে উজান ঢুকতে যায় হিয়ার কেবিনে... হিয়ার সেই মূহুর্তে ক্ষণিকের জন্য একটু জ্ঞান ফেরে... যদিও তার এক হাতে Blood দেওয়া হচ্ছে, অন্য হাতে সেলাইন... তবুও অতি কষ্টে দু'হাত দিয়ে পরমার হাত ধরে অস্ফুটভাবে সে অনুরোধ করে,


হিয়া : পরমা ম্যাম, ওদের... ওদের বিরুদ্ধে কোনো... কোনো... Legal Action Please নেবেন না... একবার... একবার ওদের মনের অবস্থা... অবস্থাটা ভাবুন Please... আমাকে... আমাকে কথা দিন... কথা... আহহহ... মাআআআ...


Dr. পরমা : হিয়া... হিয়া... হিয়াআআআ... কি হলো তোমার !!!


উজান : উনি আবার Sense হারিয়েছেন পরমাদি... আপনি বাড়ি যান... বাকি রাতটা আমি থাকছি ওনার কাছে....


Dr. পরমা : Are you sure Ujaan !!! তোমার কোনো Problems হবে না !!


উজান : না পরমাদি... আপনার মেয়েটা এতো ছোটো, সবে কয়েক মাসের... ওর তো দিনের শেষে আপনাকে সবথেকে বেশি দরকার... আপনি যান... আমি আছি...


Dr. পরমা : Thank you Ujaan... Good Night...


 : Good Night....


পরমা চলে যেতেই হিয়ার কাছে আসে উজান... মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গিয়েও নিজেকে সংযত করে নেয়... হিয়ার বেডের পাশে চেয়ার টেনে বসে, হিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, "IDIOT"


ভোরে মেট্রণ হিয়ার কেবিনে ঢুকে দেখে হিয়ার বিছানায় মাথা রেখেই তাদের রাগী, একরোখা উজান স্যার অঘোরে ঘুমোচ্ছেন....


(এই পর্বটি NRS-এর Junior Doctor পরিবহ মুখোপাধ্যায়-এর ঘটনা অবলম্বনে রচিত... এই পর্বটি সেইসব চিকিৎসক-দের জন্য উৎসর্গিত যারা নিজেদের সেবাব্রতের পরিবর্তে প্রহৃত বা নিগৃহীত হন)


তিন মাস পর :

---------------------


এই ঘটনার পর তিন মাস কেটে গেছে... হিয়ার জীবনে ডাক্তার হবার প্রচেষ্টা ছাড়া তেমন কোনো পরিবর্তন না হলেও টিউলিপ হসপিটালে আর উজানের জীবনে পাহাড়ী রামধনুর রঙ এসে লেগেছে...


Neo-Natal Care Unit, Pediatric Unit, Old-Age Unit নতুন করে মুখরিত হয়ে উঠেছে হিয়ার গান, হাসি, কথা আর কলতানে... এই তিনটে Unit-ই বেলুন, ফুল, পুতুল আর বিবিধ টেডিতে সেজে উঠেছে... নীলিমা আর মীনাক্ষীর বিরোধ, উজানের বকা, ধমক, অপমান কোনোকিছুই হিয়াকে দমাতে বা আটকাতে পারে নি... বরং উজানের এই রুক্ষতাকে সে অভ্যেসে পরিণত করে নিয়েছে... অভ্যাস তো উজানেরও পরিবর্তন হয়েছে, আজকাল যেন তার চোখ আর মন নিজের অজান্তেই ওই কল্লোলিনীকে খুঁজে বেরায়... যদিও সে নিজে সেটা এখনো স্বীকার করতে রাজি নয়... তাই হিয়ার এই নব উদ্যোগকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে Dr. সৌহার্দ্য, Dr. আজান, Dr. লিলি, Dr. সমরেশ আর Dr. পরমার প্রকাশ্য সহযোগিতা.... এবং... এবং... এবং... সবার আড়ালে উজানেরই প্রচ্ছন্ন Support...


উজানের জীবন :

------------------------


আর উজান.... তার নিস্তরঙ্গ বেরঙীন জীবনে বেশকিছু উৎপাত ও উদ্বেগের তরঙ্গ উঠেছে...


উদ্বেগের কারন :



প্রথমতঃ

       হিয়ার প্রতি মীনাক্ষী আর নীলিমার ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষ... মীনাক্ষীকে উজান খুব ভালো করে চেনে... তার মায়ের মৃত্যুর পর একমাসও পার হয় নি... সমরেশকে বিয়ে করে Chatterjee Villa-তে সে আসে... তারপর থেকে ছোট্ট উজান তার ঠাম্মির কাছেই বড় হয়... বাবা সমরেশের সাথেও উজানের অত্যন্ত শীতল সম্পর্ক... মীনাক্ষীর কাছে উজান শুধু একটা ঋণেই ঋণী- তার ছোটো বোন জিনিয়া... ঠাম্মি আর জিনিয়াই এখন উজানের প্রাণভোমরা...


দ্বিতীয়তঃ

      হিয়ার শরীর... উজান সবার অলক্ষ্যে লক্ষ্য করে, হিয়া রাতের পর রাত টিউলিপে পড়ে থাকে... পড়াশোনা করে, কাজ শেখে, সিনিয়র ডাক্তারদের assist করে... ক্রমাগত পরিশ্রমে ওর শরীর ভাঙছে... নিজের প্রতি একটা অদ্ভুত উদাসীনতা মেয়েটার, যেন নিজের সঙ্গে সব সূত্র ছিন্ন করে দিয়েছে... মাঝে মাঝে অদ্ভুত উদাসীন আর আনমনা হয়ে পড়ে....


আর উৎপাত  


উৎপাত নং.1 :

         হিয়া একটি Idiot মেয়ে... উজানের স্বপ্নেও মাঝে মাঝেই 'হা রে রে রে রে' করে চলে আসে... উজান হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁতে গেলেই কুয়াশাতে হারিয়ে যায়... বিগত কয়েক মাসে উজান এই স্বপ্নের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝে উঠতে পারে নি... উজান যে কেন তাকে ছুঁতে যায় !! হিয়াই বা কুয়াশাতে কোথায় হারিয়ে যায় !!! এত বছর স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই ছিল তার কাছে, কিন্তু এইটা যেন তার ভাবনার সাথে মিশে গেছে... কিছুদিন ধরে আরো একজনকে বড্ড মনে পড়ছে উজানের, সেও এইভাবেই হঠাৎই কুয়াশাতে হারিয়ে গিয়েছিল.... কত খুঁজেছিল তাকে উজান আর বাসবী... কিন্তু কোথাও খুঁজে পায় নি... সবাই বলে সেদিনের দুর্ঘটনায় তার 'মিঠাই' ও মারা গেছে... কিন্তু উজান আর বাসবী সেদিনও সেই কথা বিশ্বাস করে নি, উজান আজও সেটা বিশ্বাস করে না... উজানের মনে আজো দৃঢ় বিশ্বাস আছে, তার 'মিঠাই' একদিন ঠিক তার সামনে এসে দাঁড়াবে...


উৎপাত নং.2

         টিউলিপে এতদিন যা হয় নি, এবার তাই শুরু হয়েছে... টিউলিপে একটি দল সৃষ্টি হয়েছে- ঠাম্মি, জিনিয়া, তৃষা, কিশলয় আর হিয়া... এখন তো ঠাম্মির কাছ থেকে নানান রকম রান্না শিখে ওই Idiot মেয়েটা Pediatrics Unit আর Old-Age Unit-এর খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে... আজকাল তাদের 'হিয়া দিদি' আর 'হিয়া মা'-কে ছাড়া খাওয়া হয় না... এতদূর পর্যন্ত থাকলে উজানের কোনো সমস্যা হতো না... কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয়, যখন ঠাম্মির নির্দেশে সে উজানেরও দায়িত্ব নিতে রাজি হয়... এখন তো যখন-তখন উজানের উপর চড়াও হয়... উজান টিউলিপের RMO-র দায়িত্ব নিয়ে টিউলিপে Shift করার পরেই ঠাম্মি এই অপকম্মটি করেছে... ঠাম্মির দুশ্চিন্তাটাও উজান বোঝে, কিন্তু তাই বলে ওই Idiot মেয়েটাকে দায়িত্ব দিতে হবে !! টিউলিপে আর কাউকে খুঁজে পেল না ঠাম্মি !!! 


সব চিন্তার শেষে Whiskey-র শেষ পেগটা গলায় ঢেলে জড়ানো গলায় উজান স্বগতোক্তি করে,


   কিন্তু আমি এত কিছু ভাবছি কেন ??? 


শুধু এটাই বুঝতে পারে না যে তার সব চিন্তা এখন হিয়াকে ঘিরেই আবর্তিত হয়...


Ujaan-Hiya, the Caring Bond :

-----------------------------------------------


        আহহহহ.... মা গোওওও.....


আনমনে উজানের গরম চিকেন স্টু-টা Bowl-এ ঢালতে গিয়ে কিছুটা হিয়ার হাতের উপর পড়ে... যন্ত্রণা উপেক্ষা করে সে উজানের রাতের খাবার নিয়ে উজানের রুমে আসে...


হিয়া : স্যার... উজান স্যার... আসব !!!


উজান : (জড়ানো গলায়) Hey You... আসবেন না বললে শোনার মেয়ে নাকি আপনি !!! আবার তো এসেই গেছেন...


হিয়া : (বিস্মিত হয়ে) স্যার !!! আপনি Drink করেছেন !! আপনি না ডক্টর !!! 


উজান : ডাক্তার হবার সাথে Drink করার কোনো সম্পর্ক নেই... কোনো বিরোধ নেই...


হিয়া : (চোখ পাকিয়ে বকুনি দেয়) আপনি অন্যায় করে মুখে মুখে কথা বলছেন !!! হাসপাতালে বসে Drink করছেন- আমার মতো যে কেউ দেখে নিতে পারে !!! যে কোনো সময় Emergency Call আসতে পারে !!! আপনার হাতে মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে... আপনার লজ্জা করা উচিত, সেখানে আপনি তর্ক করছেন....


উজান খুব গভীর দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, হিয়া রাগী চোখেও ভ্রূ কোচকায়... তারপর উজান মৃদু হেসে বলে,


উজান : (জড়ানো গলায়) খুব ছোটো... ছোটোবেলায় মিট্টি মাসি আমাকে এমনি করে বকা দিত... মা কোনোদিন বকতো না... বকাটা মিট্টি মাসির Department ছিল... আজ যেন মনে হলো, মিট্টি মাসি আপনি হয়ে আমাকে বকে দিল...


কথাটা বলতে গিয়ে উজান টলে গেলে হিয়া নিজেকে বাঁচিয়ে উজানকে ধরে ফেলে.... তারপর উজানের রাতের খাবার টেবিলে রাখে...


উজান : এটা কি !!


হিয়া : আপনার রাতের খাবার... কিন্তু আপনি তো গিলেই বসে আছেন...


উজান : কি বললেন !!


হিয়া : কিছু না... আপনি ঠিক অবস্থায় নেই... আমি আসছি...


উজান : দাঁড়ান...


কথাটা বলে উজান হিয়ার হাত ধরে আটকাতে যায়, আর হিয়া যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠে...


হিয়া : আহহহহহ ....


উজান : কি হয়েছে !!! কি হয়েছে !!!


হিয়া : কিছু না... কিছু না...


উজান : চুপ.... দেখি হাতে !!! এ কি !!! এতটা পুড়লো কি করে !!! যন্ত্রণা হচ্ছে খুব !!! পুড়লো কি করে !!  


হিয়া : এমন কিছু পোড়ে নি... স্যার.... আমার কথাটা শুনুন...


উজান : হুসসসসস....


হিয়ার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে উজান হিয়াকে চুপ করতে বলে... তারপর হিয়ার কাঁধ ধরে হিয়াকে একটা চেয়ারে বসিয়ে টলতে টলতে First Aid Box নিয়ে এসে নিজে আর একটা চেয়ার টেনে বসে... তারপর জড়ানো চোখ আর গলায় বলে,


উজান : হাত...


হিয়া : অ্যাঁ...


উজান : হাতটা দাও... (একটু হেসে) আমি জানি সারাদিন আপনার অনেক বক্তব্য থাকে সবকিছু বিষয়ে... কিন্তু আমি যখন কথা বলব, তখন আপনি চোপ থাকবেন... হাতটা... দাও... হিয়া...


ইতস্ততঃভাবে উজানের হাতের উপর হাত রাখে হিয়া... উজান নিজের First Aid Box থেকে Burnol বের করে হিয়ার হাতে লাগিয়ে দেয়... হিয়া মুখ থেকে একটাও শব্দ বের না করে যন্ত্রণা চেপে রাখতে চাইলেও তা চোখ এড়ায় না উজানের... পরম মমতায় হিয়ার হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিতে দিতে বলে,


উজান : সারাদিন সবার খেয়াল রাখো, আমার খেয়াল রাখো.... আর নিজের !!! চোখের তলায় ক্লান্তির ওই কালো ছাপটা দেখেছো !! কেন হিয়া !! কিসের এত অভিমান তোমার !!!


হিয়া : ভালো তো আপনি নেই, স্যার !! কেন খান এইসব ছাইপাশ !! কেন নিজের চারপাশে এতটা রুক্ষতার বর্ম !!!


উজান : (রূঢ়ভাবে) কথা তোমাকে নিয়ে হচ্ছিল হিয়া !!! আর এইসব কথার উত্তর আমি তোমাকে কেন দেব !! কে হন আপনি আমার !! পরিবার না... বন্ধু না... কেউ না... Just No One...


হিয়ার মন অকারণেই কোথাও একটু অভিমানী হয়ে ওঠে... সে উজানের হাত থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে উজানের মুখের সামনে খাবার ধরলে ক্রুদ্ধ উজান হিয়ার হাত ঠেলে সরিয়ে দেয়...


হিয়া : জানি স্যার- আমি শুধু আপনার কেন, এই পৃথিবীর কারোরই কেউ হই না... অনাথদের কোনো আপনজন থাকে না... 


উজান হিয়ার দিকে তাকালে হিয়া মৃদু হেসে উজানের মুখের সামনে খাবার ধরে,


হিয়া : আপনি খেয়ে নিন... নিজের জন্য না হোক... ঠাম্মির জন্য... জিনিয়ার জন্য... ওরা তো আপনার আপন... Please Sir... Please...


হিয়ার হাত ধরে খাবার মুখে নেয় উজান... হঠাৎই কিছুটা খাবার হিয়ার মুখের সামনে তুলে ধরে উজান... তারা জানে না কি ছিল পরস্পরের চোখে- ভরসা !বিশ্বাস !নির্ভরতা !!! শ্রদ্ধা ! বন্ধুত্ব ! নাকি কোনো অজানা বাঁধন ! এটাও জানে না কতক্ষণ তারা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে ছিল... হুশ ফিরতেই দু'জনেই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়... হিয়া চোখের জল মুছে উজানের আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করে উজানকে দেয়...


হিয়া : স্যার, আপনার জন্য এই জামাটা জিনিয়া এনেছে...


উজান : জিনিয়া !!! কেন !! (জামাটা বের করে দেখে উজান) ও জানে, এই রঙগুলো আমি পচ্ছন্দ করি না... তাও.... তাও তো কেউ কিছু এনেছে আমার জন্য... আপনি ওমনি করে হাসছেন কেন !!!


হিয়া : (হাসি চেপে) কই !!! না তো !!! নাহহহ...


উজান : আমি দেখলাম আপনি হাসছেন....


বলতে বলতে ধপ করে খাটে বসে শুয়ে পড়ে... তারপর জড়ানো গলায় বলে,


উজান : Doctor Hiya Mitraaaaaa.... I Hate You....


আরো কিছু বলতে থাকে জড়ানো গলায়, কিন্তু বোঝা যায় না... তারপর ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ে... হিয়া উজানের গায়ে চাদর টেনে দেয়.... তারপর উজানের বালিশ ঠিক করে দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, 


        Happy Birthday Ujaan Sir.....


উজানের নিষ্পাপ চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হিয়ার চোখ আটকে যায়, তারপর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে নিজের মনেই বলতে থাকে,


হিয়া : না বাবা... আমি কাজে লেগে পড়ি... নয়তো জিনিয়া আর ঠাম্মির মনের মতো কালকের দিনটা উদযাপন করা যাবে না... কালকে স্যারকে একদম চমকে দেব... হুমমমমমমম....


(কেমন হবে উজানের জন্মদিন উদযাপন !!! আর কেমন হবে উজান-হিয়ার সম্পর্কের সমীকরণ !!! মিঠাই কে !!! সে কি ফিরবে উজানের জীবনে !!! ফিরলে কোন দিকে মোড় নেবে উজান-হিয়ার সম্পর্ক !!!) 




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance