মেঘভাঙা রোদ (Part 3)
মেঘভাঙা রোদ (Part 3)
Speech শেষ হবার পর তৃষা, হিয়া Reception Disk-এ গিয়ে তাদের Appron, Stethoscope সংগ্রহ করে...
অন্যদিকে উজান তার আজান স্যারের কাছে আসে,
উজান : স্যার, আপনি আমাকে খুঁজছিলেন !!
Dr. আজান : Yes My Son.... একটা খুব Delicate Case এসেছে... তোমাকেই দিতে চাই... সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে... তোমার সাথে আলোচনায় বসতে চাই... এই নাও File... Case History সবটা আছে... have a look... এখানে বসে একটু আলোচনাটা সেরে নিই... বাকি তোমার যা যা help লাগবে, আমি আছি...
উজান তার স্যারের সাথে আলোচনায় মগ্ন হয়...
হিয়া : তৃষা, আমি একবার সৌহার্দ্য স্যারের সাথে দেখা করব... ওনাকে একটু প্রণাম করতে চাই...
তৃষা : Okkk... তুই দেখ, স্যার কোথায় আছেন !! লিলি ম্যাম কিছু বলবেন বলছিলেন আমাদের... উনি ডাকলে আমি তোকে ডেকে নেব....
হিয়া : Thank You soooooo much তৃষা... ওই তো সৌহার্দ্য স্যার... (চিৎকার করে) স্যারররররররর....
হিয়ার চিৎকারে উজান File থেকে চোখ তুলে রাগী চোখে হিয়ার দিকে তাকায়...
উজান : Ridiculous... এটা যে হসপিটাল, সেটাই ভুলে গেছে...
Dr. আজান : Cool My Boy... এত রাগ করো না... She is Full of Life...
উজান : (রাগত স্বরে) Minimum Ethics টুকু জানে না, ডক্টর হতে এসেছে...
Dr. আজান : আচ্ছা উজান- is there any Hope !! কোনো আশা আছে এই কেসটায় !!!
উজান : যতক্ষণ শ্বাস আছে, ততক্ষণ আশাও আছে... আর আমার চেষ্টাও...
Dr. আজান : এইজন্যই তুমি অনন্য, উজান...
দু'জনে পুনরায় আলোচনায় মগ্ন হয়ে পড়ে...
হিয়া তার সৌহার্দ্য স্যারকে প্রণাম করে... এর আগেও হিয়া ওনার স্নেহধন্যা হবার সুযোগ পেয়েছিল...
Dr. সৌহার্দ্য : আরে হিয়া যে !!! কেমন আছো মা !!!
হিয়া : ভালো আছি স্যার... আপনি কেমন আছেন !!!
Dr. সৌহার্দ্য : ভালো ভালো... তুমি কি নিয়ে Specialization করবে ভেবেছো হিয়া !!!
হিয়া : Sir, Gynaecology and Infertility....
Dr. সৌহার্দ্য : ওহহহ... ডক্টর পরমা তোমাকে ভালো guide করতে পারবে... কিন্তু তুমি এই Topic টাই কেন বাছলে !!
হিয়া : আসলে স্যার, এটা তো এখন একটা জ্বলন্ত সমস্যা... আর তাছাড়া আমার পাহাড়ের মতো অনগ্রসর অঞ্চলে 'মেয়ে ডাক্তার' না হলে মেয়েরা সাধারণত ডাক্তারের কাছে আসে না... ফলে প্রসূতি মৃত্যুহারও খুব বেশি...
Dr. সৌহার্দ্য : তোমার যা Results হিয়া, তুমি সহজেই Cardiology পেয়ে যেতে... যদিও এই বছর তোমাদের সবকিছুই পড়তে হবে... বেশ কিছু Young Senior Doctors-দের under-এ থেকে তাদের assist করতে হবে... আমি তো ভেবেই রেখেছি, তোমাকে Dr. উজানের team-এ দেব... Next Year তুমি Dr. পরমাকে Guide হিসেবে choose করো...
হিয়া : অ্যাঁআআআআআ
Dr. সৌহার্দ্য : কি হলো !! তুমি চমকে উঠলে কেন !!! এসো আমি তোমাকে ওর সাথে আলাপ করিয়ে দিই... ও হয়তো একটু বকাবকি করে, কিন্তু যদি ওর রাগ, ওর মেজাজ তুমি সহ্য করে নিতে পারো- জীবনে আর Career-এ ওর থেকে ভালো Guide তুমি পাবে না... as a Guide, as a Doctor - he is Genius.... তুমি খুব enrich হবে হিয়া... এ কি !!! AC-তে থেকেও তুমি ঘামছো কেন !!!
হিয়া : (মনে মনে) হয়ে গেল... আজ কার মুখ দেখে উঠেছিলাম, কে জানে !!!
Tulip Hospital :
-------------------‐----
হিয়া এগোতে যেতেই তৃষা ছুটে ডাকতে আসে লিলি ম্যামের কাছে যাবার জন্য... সব Formalities শেষ করতে হিয়ার একটু দেরীই হয়ে গেল... তৃষাকে একটু আগে তার মামা এসে নিয়ে গেছে- উনিই এখন তৃষার Local Guardians....
হিয়া আর Dr. সৌহার্দ্য কথা বলতে বলতে Corridor-এর দিকে এগোতে থাকে...
Dr. সৌহার্দ্য : এতো খুব মুশকিল হলো হিয়া !!! কলকাতা তো ঠিক করে চেনা হয়ে ওঠে নি তোমার... এই সন্ধ্যাবেলায় তোমায় একা পাঠাই কি করে বলো তো !!!
হিয়া : আমি পারব স্যার...
Dr. সৌহার্দ্য : না... না... রাতের কলকাতা একদমই সুরক্ষিত নয় হিয়া... বিপদ ওত পেতে বসে থাকে... তোমাকে একা ছাড়া যাবে না...
ঠিক তখনই দেবদূতের মতো উজানকে Corridor দিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে Dr. সৌহার্দ্য...
Dr. সৌহার্দ্য : (একটু জোরে) উজানননন....
উজান : Yes Sir...
Dr. সৌহার্দ্য : তোমার কি এখন Schedule off আছে !!!
উজান : হ্যাঁ স্যার... আমার এখন Schedule নেই... আসলে জিনিয়াকে মেট্রো স্টেশন থেকে আনতে যাব...
Dr. সৌহার্দ্য : তাহলে হিয়াকেও একটু স্টেশনে Drop করে দাও না Please...
উজান এতক্ষণে খেয়াল করে সৌহার্দ্যর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হিয়াকে... আর হিয়াকে দেখেই উজানের চোখে মুখে রাগের ছাপ পড়ে...
উজান : (রাগতঃ স্বরে) ওনাকে !!!!
Dr. সৌহার্দ্য : (অবাক হয়ে) তুমি ওকে চেনো নাকি !!
উজান : নামে চিনি না... কিন্তু গলায় চিনি... Idiot মেয়ে একটা... Minimum Ethics-টুকু জানে না- হসপিটালে চিৎকার করে... এতোই যখন চিৎকার করার শখ- ট্রেণের ইঞ্জিনের সামনে বসুক... হর্ণ লাগবে না তাহলে... ডাক্তার হতে এসেছে ??? Disgusting ...
Dr. সৌহার্দ্য : আহহহহহ উজান... এমনি করে বকো না... ভয় পেয়ে যাবে তো !!! আর হিয়া, তুমি কিন্তু সত্যিই হসপিটালে চিৎকার করে ভালো করো নি... এটা তো Silence Zone....
হিয়া : (মুখ নীচু করে) Sorry Sir...
(তৎক্ষনাৎ উত্তেজিতভাবে) আসলে তখন আপনাকে দেখে না উত্তেজনায়...
উজান : (বিরক্তির সুরে) ওই দেখুন স্যার... দেখছেন... Ridiculous ...
Dr. সৌহার্দ্য : আহহহ... আচ্ছা মুশকিল হলো তো এদের নিয়ে... হিয়া শোনো- তোমাকে আমি আগেও বলেছি উজানের উপরের রুক্ষতা দেখে ওকে বিচার করো না, ভয় পেও না... ওর মনটা সোনা দিয়ে মোড়া... He is a Jem of Person...
সৌহার্দ্য স্যারের আদেশ মতো হিয়া উজানের সাথে উজানের গাড়ির দিকে এগোয়... কিছুটা যাবার পর উজান খেয়াল করে, হিয়ার হাতের ব্যাগটা বেশ ভারি... ওর বইতে কষ্ট হচ্ছে... স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কপালে ভাঁজ ফেলে হিয়ার দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে,
উজান : প্রথম দিনেই কি সব বই উঠিয়ে নিয়েছেন নাকি !!!
হিয়া : না স্যার... কিছু Cake, Chocolate আর Balloon আছে... টিউলিপের পাশের ওই কাকার গুমটি থেকে নিয়েছি....
উজান : যত্তসব Unhygienic ব্যাপারস্যাপার... কেন !! এই Canteen-টা কি দোষ করেছিল !!
হিয়া : খুব চড়া দাম...
উজান : Disgusting .... দিন আমাকে...
হিয়া : নাহহহহ স্যার... আমি পারব...
উজান : (ধমকে) দিতে বললাম তো !!! দিন...
হিয়ার হাত থেকে ছো মেরে নিয়ে নেয়, তারপর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে....
উজান : এই... এই বেলুন নিয়ে কি করবেন !!!
হিয়া : এইসব কিছু আমার কিছু Special Friends-দের জন্য...
উজান : ওহহহহহহহ.... রাতভর Celebration চলবে বুঝি !!! ডাক্তাররা রাতের পর রাত Duty করে ডক্টর....
হিয়া : হিয়াআআআ... হিয়া মিত্র...
উজান : হ্যাঁ... Dr. মিত্র... Celebration নয়... (বিস্মিত হয়ে) আর এই Cup Cake, Pastry, Cadbury দিয়ে আপনি Celebration করবেন !!! How Ridiculous !!!
হিয়া : কি করব স্যার !!! সব জায়গায় তো আপনাদের মতো ঝা চকচকে Celebration শোভা পায় না...
হিয়ার কথা উজানের মনে জোরে ধাক্কা মারে... তার মুখ শুকিয়ে যায়... কিন্তু হিয়া মুখে একরাশ মিঠে রোদ্দুরের মতো হাসি হেসে আর চোখে হাজারটা ঝাড়বাতি জ্বেলে বলে,
হিয়া : আপনি যাবেন স্যার আমার সাথে !!! কথা দিচ্ছি, আপনারও ওদের খুব ভালো লাগবে... পাক্কা প্রমিস...
উজান : (রূঢ়ভাবে) নাহহহ... আমার কোনো Social Gathering ভালো লাগে না...
হিয়া : কিন্তু আপনার ওদেরকে খুব ভালো লাগবে... আর ওদেরও খুব ভালো লাগবে দেখবেন.... হিয়ার পাক্কা প্রমিস বলে কথা...
উজান : বললাম তো 'না'... Talkative Girl... (ধমকে) গাড়িতে উঠুন...
হিয়া গাড়ির পেছনের সিটে উঠতে যায়... আবার ধমক খায় উজানের কাছে,
উজান : পেছনে না... সামনে...
হিয়া : (অবাক হয়ে) আমি !! সামনে !!
উজান : হ্যাঁ.... I'm not your Driver...
হিয়া : (গাড়িতে উঠে দরজা লাগিয়ে) চলুন স্যার...
উজান : (বিরক্ত হয়ে) Seat Belt !!!
হিয়াকে Seat Belt খুঁজে পেতে একটু বেগ পেতে হয়... এদিক-ওদিক দেখে Seat Belt দেখে উজানকে জিজ্ঞেস করে,
হিয়া : এইটা !!!
উজান : হ্যাঁআআআআ ..
হিয়া বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে Seat Belt লাগাতে হবে !! উজান রাগী আর বিরক্তির চোখে হিয়াকে কিছুক্ষণ দেখে নিজের Seat Belt খুলে যতটা সম্ভব হিয়ার স্পর্শ এড়িয়ে হিয়াকে Seat Belt লাগিয়ে দেয়...
উজান : (গাড়ি Start দিতে দিতে) Idiot একটা...
হিয়া : স্যার একটা কথা বলব !!
উজান : (মনে মনে) না বললে যেন কত্ত শুনবে !
হিয়া : বলব !!!
উজান : বলুন...
হিয়া : এই Idiot, Disgusting বলাটা কি আপনার মুদ্রাদোষ !!!
উজান পারলে হিয়াকে জ্যান্ত চিবিয়ে খেয়ে নেবে- এমন দৃষ্টি নিয়ে হিয়ার দিকে তাকায়... হিয়া হাসি চেপে জানলা দিয়ে বাইরেটা দেখতে মনোনিবেশ করে...
উজান : Utter absolute Nonsense....
মেট্রো স্টেশন :
---------------------
স্টেশনে হিয়াকে নামিয়ে ওকে উল্টো পথে হাঁটতে দেখে উজান অবাক হয়... গাড়ি Park করিয়ে হিয়াকে চেঁচিয়ে বলে,
উজান : ডক্টর মিত্রররর !!!! স্টেশন এইদিকে... আপনি যেদিকে যাচ্ছেন, সেইদিকে বস্তি আছে....
হিয়া : (একইভাবে চেঁচিয়ে আর ইশারা করে)
Sirrrrrrr.... Special Friend...
উজান : বস্তিতে !! I mean how Idiotic !!! (বলেই হিয়ার মুদ্রা দোষের কথাটা মনে পড়ে).... Ridi !!!
কথাটা শেষ করতে পারে না উজান- ওর চোখ আটকে যায় হিয়ার দিকে... একটা বুড়ো অন্ধ হকারের হাত ধরে রাস্তা পার করে দিচ্ছে, আর বকবক করে যাচ্ছে... উজান বুঝতে পারে না জিনিয়া কখন ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে.... জিনিয়া উজানকে আনমনা দেখে ওকে জড়িয়ে ধরে,
জিনিয়া : দাদাভাই...
উজান : ক্লাস কেমন হলো জিনি ???
জিনিয়া : দারুণ ...
হঠাৎই একটা গানের সুর ওদের কানে ভেসে আসে, আর সেই গানের সুর অনুসরণ করে দাদা-বোন বস্তিতে এসে দাঁড়ালো... দেখে হিয়া বস্তির বাচ্চাদের নিয়ে কেক, চকলেট, বেলুন দিয়ে খেলছে আর মনের আনন্দে নাচতে নাচতে গান গাইছে,
"হা রে রে রে রে- আমায় ছেড়ে দে রে দে রে...
যেমন ছাড়া বনের পাখি মনের আনন্দে রে.... "
জিনিয়া : দেখ দাদাভাই, কি সুন্দর !!! আজকাল এমন নিঃস্বার্থভাবে কতজন করতে পারে !!
উজান : একজন Idiot মানুষই পারে....
বলতে বলতে উজানের চোখে ভেসে উঠে ছোটবেলায় তার হারানো মা বাসবীর মুখ... উজানের জন্মদিনে ভোর ভোর পূজো দিয়ে উজানের প্রিয় সব পদ নিজে হাতে রান্না করে উজানকে নিয়ে কোনো দূরের গ্রামে গিয়ে সারাদিন কাটাতো... গান গাইতো... আর এই গানটা তো উজানের খুব প্রিয় ছিল ছোটোবেলায়... মায়ের চারপাশে আধো আধো গলায় নাচতে নাচতে গানটা গাইতো উজান... মা মারা যাবার পর তো !!! দীর্ঘশ্বাসটা নিজের ভেতরেই চেপে নেয় উজান...
হিয়া : (উত্তেজিতভাবে) স্যার !!! আপনি !! এ কি !!! আপনার চোখে তো জল !!!
হিয়ার থেকে নিজেকে আড়াল করার নিষ্ফল চেষ্টা করে উজান, কিন্তু সবটা বুঝতে পেরে হিয়া কথা ঘোরায়...
উজান : কোথায় !!! কোথায় জল !!! মাথার সাথে সাথে চোখটাও খেয়েছেন না কি !!! আপ... আপনার Celebration শেষ হয়ে থাকলে এবার চলুন...
হিয়া : দেখলেন তো স্যার... সেই তো আপনি এলেন....
উজান : হ্যাঁ... তো !!! কি হয়েছে !!! আপনাকে ট্রেণ ধরানোটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে... নয়তো গিয়ে আমি সৌহার্দ্য স্যারকে কি বলব !!! আচ্ছা - আপনার কি সব অসমবয়সী বন্ধু !!! মানে বুড়ো-বাচ্চা !!
উজানের কথা শুনে হিয়ার মুখের হাসি ক্ষণিকের জন্য মিলিয়ে যায়... কিছুটা অস্ফুটভাবে আর উদাসীনভাবে যেন নিজেকেই বলে হিয়া,
হিয়া : সমবয়সীরা ভীষণ মন ভাঙ্গে, স্যার...
উজান : কি বললেন !!
হিয়া : কিছু না... কিছু না....
উজান : (ধমকে) চলুন...
হিয়া : চলুন... চলুন...
হিয়াকে ট্রেণে চাপিয়ে উজান আর জিনিয়া গাড়িতে এসে বসে... জিনিয়া গাড়ির Music Player Start করে দেয়...
"বইছে জীবন বেঁচে নাও- বেঁচে নিতে দাও গো আমায়...
তোমার এই মনছায়ায়- প্রিয়তমা.... "
(কি মনে হয়- কেমন হবে হিয়া আর উজানের প্রথম দিন !!)

