Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance

3  

Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance

মেঘভাঙা রোদ (Part 6)

মেঘভাঙা রোদ (Part 6)

8 mins
356



Tulip Hospital :

------------------------


নীলিমা মীনাক্ষীর রুমের দরজা ঠেলে ঢুকে দেখে মীনাক্ষী ভীষণ অন্যমনস্কভাবে ফাইল ঘাটছে... 


নীলিমা : আন্টি, হিয়া ফোন করেছিল... ওরা মন্দির থেকে বেরিয়ে গেছে... এইদিকে হিয়া তো সব Arrangements ready করে রেখেই গেছে... ওরা আসলেই আমরা Party-টা Start করে দেবো... হিয়া উজানের সব প্রিয় পদ রান্না করে কাঁসার বাসনে সাজিয়ে রেখে গেছে... ঠাম্মি হিয়াকে বলেছে, ছোটোবেলায় নাকি এমনিভাবেই উজানের জন্মদিন পালন করা হতো... আন্টি, আমি তোমাকে কিছু বলছি...


মীনাক্ষী : আমি শুনছি তো নীলিমা...


নীলিমা : তাহলে কোনো Reply দিচ্ছো না কেন !!


মীনাক্ষী : Reply !!! কি Reply দেবো বলো তো নীলিমা !! সব কাজ তো ওই... ওই হিয়া করেছে... তুমি উজানের জন্য আজ কি Special করেছো !!!


নীলিমা : Are you Kidding me Aunty !!! মানে Are You Serious !!! এমন দুর্দিন এসেছে যে এইসব কাজ আমাকে করতে হবে !!


মীনাক্ষী : আচ্ছা !! তোমার আর উজানের Relationship Status টা আমাকে একটু বলবে... নীলিমা !!!


নীলিমা : বলার কি দরকার আছে আন্টি !!! একবার তো ছেড়ে গিয়েছিলাম... উজানের কি অবস্থা হয়েছিল, মনে আছে নিশ্চয়ই আপনার... এখনো যদি !!! ছেড়ে যাবার দরকার নেই... কাল তো সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছিল... আর তাতেই তো (মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি)


মীনাক্ষী : তোমার সত্যিই মনে হয় নীলিমা, হিয়া ঘুরে দাঁড়ানোর পর আর তোমাকে Importantance দেয় ?? তোমাকে বন্ধু বলে মানে ও ?? উজান তো বরাবরই Rude, Emotionless... কিন্তু তুমি নীলিমা !!! কতটুকু Attachments আছে তোমার ওর সাথে !! প্রতিটা সম্পর্কে Attachments থাকাটা অত্যন্ত জরুরী, আর বিশেষ করে ভালোবাসার সম্পর্কে... আর কাল যেটা হয়েছে বলে তুমি অহংকার করছো না নীলিমা, ওটা আসলে উজান Repent করছিল যে তুমি কখনো ওর কেউ ছিলে বলে...


নীলিমা : দেখো আন্টি, আমার মনে হয় তুমি হিয়াকে নিয়ে খুব বেশি ভাবছো... হিয়া আর কেউ না, শুধু এই টিউলিপের একজন Dedicated Junior Doctor.... উজানের কাছে পড়ে থাকে শুধু কাজ শেখার জন্য... Actually she is extremely Dedicated to her Profession... Over-Duty করেই যাচ্ছে... এতো ভেবো না Aunty... পার্টিতে চলো... ওরা এলো বলে....


নীলিমা মীনাক্ষীর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়....


মীনাক্ষী : (ঋজুভাবে) এই 'কেউ না' টা যখন 'সবকিছু' হয়ে দাঁড়াবে, তখন তুমি বুঝবে নীলিমা... সেদিন দেখবো, তোমার এত অহংকার কোথায় থাকে !! কিন্তু তার আগে যে আমাকে ভাবতেই হচ্ছে... এই হিয়ার মধ্যে কেন আমি বারবার বারবার বাসবী চ্যাটার্জিকে দেখতে পাই... সবসময়ই মনে হয়- হিয়ার রূপ ধরে বাসবী চ্যাটার্জি যেন ফিরে এসে সবকিছুর প্রতিশোধ নিতে... সেই উজানকে সবসময় আগলে আগলে রাখা, একইরকম যত্ন নেওয়া... আর উজান... সেও তো হিয়ার সামনে সেই 'ছোট্ট রাজা' হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে... না... না... অনেক কষ্টে আমি রাজা থেকে আজকের ডক্টর উজান চ্যাটার্জি তৈরি করেছি আমি... এই উজান আমার সোনার ডিম পাড়া হাঁস... স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি- এইসব Soft Feelings আমি উজানের মন থেকে, জীবন থেকে Just মুছে দিয়েছিলাম... উজানের জীবনে শুধু কাজ থাকবে, কাজ... এর মাঝে যদি হিয়া বাসবীর ছায়া হয়ে উজানের জীবনে এসে পড়ে, তাহলে ওকেও উজানের জীবন থেকে সরিয়ে দেব... শুধু উজানের জীবন না, ওকে এই পৃথিবী থেকেই সরে যেতে হবে... ঠিক যেমন বাসবী চ্যাটার্জিকে সরে যেতে হয়েছিল আমার আর সমরেশের মাঝখান থেকে... কিন্তু কে এই 'হিয়া' !!! আমাকে জানতেই হবে...


BIRTHDAY PARTY :

-------------------------------


মীনাক্ষী : হিয়াআআআ !!! Right !! তুমিই তো হিয়া না !!!


হিয়া : হ্যাঁ ম্যাম... আমিই হিয়া... ডক্টর হিয়া মিত্র....


মীনাক্ষী : 'মিত্র' !!! তুমি তো Orphanage-এ মানুষ হয়েছো তাই না !!! তাহলে 'মিত্র' !!!


হিয়া : কেউ তো জন্মগতভাবে অনাথ হয় না ম্যাম...


বলেই উথলে আসা কান্না চেপে সেখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যায় হিয়া....


Tulip Emergency Unit :

------------------------------------


রাত্রে টিউলিপে একটা Emergency Case আসে... একটা তিন বছরের বাচ্চার Accident Case...


উজান : সবথেকে Efficient Doctor-দের একটা Team Ready করুন মেট্রণ... ও হ্যাঁ, ডক্টর হিয়া মিত্র যেন অবশ্যই থাকেন... উনি বাচ্চাদের ব্যাপারটা বেশ ভালোই Handle করতে পারেন...


মেট্রণ : স্যার, দুপুর থেকে হিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না... মানে দুপুর থেকে ওকে কেউ দেখতে পায় নি...


উজান : What !!! আর আপনি আমাকে এই কথাটা এখন, এই অবস্থায় জানাচ্ছেন... ওনার কোনো বিপদও তো হতে পারে... হস্টেলে ফোন করেছিলেন !!


মেট্রণ : হ্যাঁ স্যার... আমি নিজে হস্টেলে ফোন করেছিলাম... হিয়া হস্টেলেও নেই স্যার... ওরা জানে, হিয়া টিউলিপে... আসলে ও তো রাতদিন টিউলিপেই পড়ে থাকে...


উজান : মানে !! হস্টেলে নেই !! টিউলিপে নেই !! তাহলে উনি কোথায় !! Ridiculous !! Unpredictable !! কখন যে কি করে বসে, তার কোনো ঠিক নেই !!! এদিকে ওনার শরীরটাও কয়েকদিন ধরে... ফোন করুন মেট্রণ... ফোন করুন...


মেট্রণ : ফোন... করেই যাচ্ছি স্যার... কিন্তু বেজে যাচ্ছে... তুলছে... না...


উজান : Disgusting 😬... কিন্তু আমাকে তো এখন O.T.-র জন্য রেডি হতে যেতে হবে... দেখি কিশলয়কে একবার বলি...


কিশলয়কে ফোনে সবটা জানিয়ে উজান নিজেও হিয়াকে ফোন করতে করতে হাঁটতে থাকে... হঠাৎই স্টোর রুম থেকে আওয়াজ আসে,


Hello SWEETIE ... I Love You... Please Pick Up the Phone....


উজান : ডক্টর মিত্রর ফোনের রিংটোন না !!! উনি সব কাজ ফেলে স্টোর রুমে কি করছেন !!!


স্টোর রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে উজান... হঠাৎই ফোপানোর শব্দ কানে আসে উজানের... শব্দ অনুসরণ করে ঘরের একদম শেষ প্রান্তে এসে দেখে হিয়া এক কোণে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে... হয়তো বা কান্নার শক্তি হারিয়েছে... হিয়াকে যতই বকাবকি করুক উজান, ওকে এই অবস্থায় দেখে উজানের বুকের ভেতর একটা অব্যক্ত কষ্ট হয়... হিয়ার কাছে গিয়ে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে উজান, হিয়ার হাতের উপর নিজের ভরসায় পরম দেওয়া হাত রাখে... ধীরে ধীরে মুখ তোলে হিয়া... নিজের দু'হাত দিয়ে হিয়ার মুখটা মুছিয়ে অনভ্যস্ত হাতে হিয়ার কপালে লুটিয়ে পড়া অগোছালো চুলগুলো সরাতে থাকে উজান... 


উজান : নিজের কি অবস্থা করেছেন ডক্টর মিত্র !! কি হয়েছে আপনার !! আমরা তো আপনাকে খুঁজছিলাম...


কিছু একটা বলার জন্য হিয়ার ঠোঁট দুটো নড়ে শুধু, কিন্তু কোনো শব্দ বের হয় না... একটা হেঁচকি তোলে হিয়া...


উজান : জল খাবেন !!! কিন্তু এখানে তো... (এদিক ওদিক দেখে) মনে হচ্ছে জল নেই... ডক্টর মিত্র, মন দিয়ে আমার একটা কথা শুনুন... আমি জানি না, আপনি কিসে এত কষ্ট পেয়েছেন... কিন্তু আমরা তো ডক্টর.... আমাদের Emotionless হতে হয়... এত Emotional Fool হলে আমি আপনাকে লিখে দিতে পারি, আপনি কোনোদিনও ডক্টর হতে পারবেন না... 


আবার কিছু বলার জন্য হিয়ার ঠোঁট একটু নড়ে উঠলে উজান দু'হাত দিয়ে হিয়ার মুখ চেপে ধরে... 


উজান : আমি আপনাকে বারবার বলেছি ডক্টর মিত্র, যখন আমি কথা বলব আপনি আপনার বক্তব্যগুলো ক্ষণিকের জন্য বন্ধ রাখবেন... এখন উঠুন... একটা Emergency Case এসেছে... Get Ready For the O.T. ....


উজানের হাতের উপর হিয়ার কয়েক ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়েছিল... উজান খুব যত্নে হিয়ার চোখের জল মুছিয়ে হিয়াকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়... তারপর হিয়ার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু আদেশের সুরে বলে...


উজান : উঠুন ডক্টর মিত্র... Get Ready for the Operation... আপনি আজ আমাকে Assist করবেন...


হিয়া উজানের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়...


Operation Theater No. 3 :

-----------------------------------------


অপারেশন টেবিলে বাচ্চাকে দেখে হিয়া আৎকে ওঠে... ছোট্ট বাচ্চার মতো উজানের বাহু আঁকড়ে ধরে চিৎকার করে ওঠে,


হিয়া : এ কি !!! তিন্নি !!! এ তো তিন্নি !! একে তো আমি চিনি... এ তো বস্তির...


উজান : (চাপা গলায় ধমক দেয়) কি করছেন কি ডক্টর মিত্র !!! অপারেশন টেবিলে এমনিভাবে চেঁচাচ্ছেন কেন !!! আর আমার হাতটা ছাড়ুন... আমি জানি, আপনি ওকে চেনেন... ওরা আপনার Reference-এই ওকে এখানে Admit করেছে...


উজানের কথা যেন হিয়ার কানে ঢুকল না... উজানের হাত ছেড়ে হিয়া টলতে টলতে টেবিলে তিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে....


হিয়া : তি... তি... তি...


উজান : Just keep your mouth Shut Dr. Mitra.... otherwise, get out from the O.T. right now...


হিয়া : না... না... আ... আ... আ...আমি... আমি থাকব...


উজান : (হিয়ার কাঁধে হাত রেখে, নরম স্বরে) Ok... Ok... Relax... Take a Deep Breath... Breath in... Breath out... Good Girl... Now Assist me... Let's start the Operation....


অপারেশন চলতে চলতে উজান স্বগতোক্তি করে,


উজান : (মনে মনে) যতই বকাবকি করি না কেন Idiot-টাকে... Surgery-র হাত খুব ভালো... একে আমাকে ঠিক করে তৈরি করতে হবে...


কিন্তু হঠাৎই মনিটরে আওয়াজ ওঠে,


বিপ... বিপ... বিপপপপপ.... বিপপপপপপপপপ


সবাই চমকে উঠে দেখে মনিটরে সব রেখা আস্তে আস্তে সোজা হয়ে গেল... 


হিয়া : (আতঙ্কিত হয়ে) ক্কি !!! কি হলো !!! সব কিছু এইভাবে Drop করছে কেন !!!


উজান : ডক্টর মিত্র... Patient-এর Pulse Drop করছে... Shock Treatment দিতে হবে...


হিয়া : শ... শ... শ... শক....


উজান : Don't get Nervous, Dr. Mitra... Do it fast....


হিয়া : (দৃঢ়ভাবে) Yes Sir.... Ready....


উজান : Give me 150...


হিয়া : All set...150 Ready Sir....


উজান : 1... 2... 3... come on Champ... Fight... Fight... Give me 200, Dr. Mitra....


হিয়া : All Set... 200 Ready Sir...


উজান : 1... 2... 3... Give us Response Champ... Give me 300....


হিয়া : থি... থি... থি...


উজান : (ধমকে) Come on... Give me 300....


হিয়া : All Set... 300 Ready Sir....


উজান : 1... 2... 3....


      বিপ.... বিপ.... বিপ.... বিপ....


আবার সচল হয়ে ওঠে মনিটর... নড়ে ওঠে ছোট্ট তিন্নি... হিয়ার মুখে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে, কিন্তু হঠাৎই সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসতে থাকে হিয়ার চোখে... হাতড়ে হাতড়ে পাশের টেবিলটা ধরার চেষ্টা করে হিয়া, কিন্তু ঝাপসা চোখে ঠিক মতো ধরতে পারে না... 


উজান : Operation Successful... সুনয়না Operation End করো...


Dr. সুনয়না : Okkk... 


মেট্রণ : হিয়া আআআআআআ...


হিয়া জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়... উজান কিছুক্ষণ হতভম্বের মতো হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে.... মেট্রণ, সুনয়না ছুটে যায় হিয়ার কাছে... মেট্রণ হিয়ার মাথা নিজের কোলে তুলে নেয়... সুনয়না ছুটে গিয়ে Sphygmomanometers নিয়ে এসে হিয়ার Blood Pressure মাপতে থাকে... উজান একটা Container-এ জল নিয়ে এসে মেট্রণকে বলে হিয়ার মুখে ছিটিয়ে দিতে... কিন্তু তাতেও হিয়ার জ্ঞান ফেরে না... এবার উজান এসে হিয়ার পাশে বসে হিয়ার হাত নিজের হাতে নিয়ে ওর Pulse Check করে...


উজান : Pulse তো ভীষণ Drop করছে... সুনয়না BP কত !!!


Dr. সুনয়না : 80/50...


উজান : এত দুর্বল শরীর নিয়ে উনি বেঁচে আছেন কি করে !! 


মেট্রণ : আহহহহহ... Dr. Chatterjee...


উজান : Sorry... I mean, উনি বলেই সম্ভব এত্ত Low BP নিয়ে উনি O.T. করলেন... এটা Nerval Breakdown... দিনের পর দিন উনি নিজের শরীরটাকে উপেক্ষা করে কাজ করে যান... আমি এই ভয়টাই এতদিন পাচ্ছিলাম, যে কবে এই Nerval Breakdown-টা হয়.... আর ঠিক সেটাই হলো !!! মেট্রণ ওনাকে কেবিনে Shift করুন... আর ঘুমের Injection রেডি করুন- যাতে দু'দিন ঘুম থেকেই না উঠতে পারেন... 


মেট্রণ : মানে স্যার Seriously !!! 😳


উজান : আপনি সরুন মেট্রণ... ওনাকে দিন আমাকে... আর আপনি একবার কেবিনে আসুন... আর সুনয়না- পেশেন্টকে ICU তে Shift করো... আমি 15mins-এর মধ্যে আসছি...


তার সংজ্ঞাহীন Idiot-কে পরম যত্নে কোলে তুলে নিয়ে O.T. থেকে বেরিয়ে যায় ডক্টর উজান চ্যাটার্জি....


(কে এই 'হিয়া' !!! সে কি সত্যিই কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে টিউলিপ এসেছে !!! না কি একেই বলে 'নিয়তি'... যেটা মীনাক্ষীর সাথে ঘটতে চলেছে !! কি হবে এরপর !!!) 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance