Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sumana Sinhababu

Abstract Inspirational

3.9  

Sumana Sinhababu

Abstract Inspirational

মৌমাছি আর প্রজাপতির গল্প

মৌমাছি আর প্রজাপতির গল্প

6 mins
788


মেয়েগুলো আজকেও তার দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে । মৌ আড়চোখে না তাকিয়েও বুঝতে পারল । কিছু বলল না । কোনদিনই কিছু বলে না । আসলে এই সময়টা তার এত তাড়া থাকে । পাঁচটা বাজতে আর ঠিক 30 মিনিট দেরি । পরের বাসটা না ধরলে আর পৌঁছানো যাবে না । আজকে না গেলে স্যার ট্রায়ালে যেতে দেবেন না । যদিও মেয়ের নিজের শক্তির ওপর কোনো সন্দেহ নেই , স্যারের ও নেই , তাও সত্যি, তবু আজ ফাইনাল প্র্যাকটিস করতে হবে ।

তাই আর ওদের দিকে মন না দিয়ে বাসটা আসতেই তাতে চেপে বসল মৌ । দু'ঘণ্টা পর যখন ক্লান্তিতে আর ঘামে ভিজে ক্রিকেট ক্লাব থেকে বেরোলো তখন শরীরে এনার্জি না থাকলেও মনে ভরপুর আনন্দ । স্যার ওর ব্যাটিং দেখে ওকে আশ্বাস দিয়েছেন কালকের ট্রায়ালে ওর সিলেকশন হবেই । এই ট্রায়াল টা পেরোতে পারলেই স্টেট ক্রিকেট। তারপর ন্যাশনাল তারপর ইন্টারন্যাশনাল তারপর আরো আরো অনেক দূরে ...সব স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে মৌএর । গলায় সোনার পদক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে সে কাপটা তার হাতের মুঠোয় ।

স্বপ্নের রাজপথ গুলোকে আপাতত বিদায় দিয়ে পাড়ার কানা গলিতে ঢুকে যায় মৌ । বাড়িতে দরজায় ধাক্কা দিতেই মা বেরিয়ে আসলো । মুখে চোখে একটা অপছন্দের ছাপ । নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে তার আবার ক্রিকেটের শখ কোন মা-বাবা ই বা হাসিমুখে মেনে নেবে । মায়ের মুখের অপছন্দের ছাপটা মৌ এর খুশি মনটাকে কেমন যেন রঙহীন করে দিল । ব্যাপারটা খুব একটা গা করল না মৌ । ও জানে শরীরের এনার্জি টা চলে গেছে এখন যদি মনের টাও চলে যায় তাহলে আর বাকি কাজগুলো করতে পারবেনা সে‌ । তাই তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুয়ে মায়ের অনাদরে , অযত্নেকরা রুটি তরকারি টা উদরস্থ করল। তারপরে বেরিয়ে পরলো বাড়ি থেকে । তিনটে বাড়ি পরে বাবলিদের বাড়ি । কাছে বলেই এত রাতে পড়াতে আসতে । আজ পড়াতে বসে দেখলো বাবলিদের ক্লাসে নতুন বই দিয়েছে । কভার টায় আঁকা একটা বড় রঙিন প্রজাপতি সুন্দর করে নেচে নেচে মধু খাচ্ছে । কেমন একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল। ওর জীবনটাও যদি প্রজাপতির মতো হতো ! কি আনন্দ সারাদিন কোনো তাড়া নেই ব্যস্ততা নেই শুধু আনন্দে ঘুরে বেড়ানো । তার উপর প্রজাপতির এত রং এত সৌন্দর্য.... চমৎকার না !


বাবলিদের বাড়ি থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় সাড়ে নটা বেজে গেল । দরজা খুললো বাবা যথারীতি গম্ভীর মুখ । তাতে মৌ এর খুব একটা কিছু চিন্তা হয় না । রোজই গম্ভীর বাবার মুখ । ভাইকে দেখলাম টেবিলে বসে খাচ্ছে । হাতমুখ ধুয়ে সেও খেতে বসে গেল । সবার মুখ গম্ভীর কোন কথা নেই প্রথমে মায়ের শুরু করল - " হ্যাঁরে মৌ আর কতদিন এসব চালাবি ? "

"এসব মানে ? "

" মানে এই ওই খেলাধুলো। কলেজ টা না হয় থাকুক ওটা বন্ধ করতে বলছিনা । অনেক তো বড় হলি মা এরপর বন্ধ কর ওই ক্রিকেট । একে আমাদের টাকা কড়ি নেই । তারপর তোর গায়ের রংটা ও চাপা । বিয়ে তো করতে হবে তোকে ! "


"সেই জন্যই তো ক্রিকেটটা খেলছি মা যাতে আমার ব্যাটিং দেখে কোন বড়লোক বাড়ি আমাকে বৌমা নিয়ে যায় । " একগাল হেসে মৌ বলে ।


"সব সময় ফাইজলামি করবি না "মায়ের গলার স্বর এর সাথে মিশে আছে রাগ আর বিরক্তি । মৌ আর কথা বাড়ায় না উঠে চলে যায় নিজের ছোট্ট খুপরি তে । নিজের পড়ার বইয়ের মধ্যে পড়তে পড়তে কখন যে বাইরের রাত আধার কালো হয় টের পায় না । পড়ার বই ছেড়ে যখন উঠল তখন রাত দুটো । আজ আর না ‌ । ঘুমাতে যাওয়ার আগে বেসিনের আয়নায় দেখে ওর চোখের তলায় কালো রেখা । শ্যামলা মুখে সেটা যেন আরো প্রকট হয়ে উঠেছে । হঠাৎ সেই প্রজাপতিটার কথা মনে পড়ে যায় । কি সুন্দর না !.....


অবশ্য ঘুম থেকে পরের দিন সকালে ওঠার পর তাড়াহুড়োয় তার মাথায় থাকে না । ঘন্টা দুয়েক পড়াশোনার পর স্নান করে ভাত খেয়ে বেরিয়ে যায় । একটা টিউশন পড়িয়ে তাকে কলেজ যেতে হয় । মৌ বাবার কাছ থেকে পড়ার খরচ নেয় না । দু'চারটা টিউশন করে নিজেই কলেজের আর ক্রিকেট কোচিং এর খরচা সামলায় ।


আজকেও কলেজ থেকে বেরোবার সময় প্রজ্ঞা , এশা , মুন , কোয়েল ওদের মুখোমুখি হতে হলো মৌ কে । এদেরকে মৌ ভালো করে চেনে ওর সাথে একই ডিপার্টমেন্টের এক ক্লাসে পড়ে । প্রত্যকেই ধনী ঘরের আদরের দুলালী । নিত্য নতুন রঙ্গিন জামা তার সাথে ম্যাচিং লিপস্টিক , কাজল , চুরি কানের দুল ----- সাজগোজে যতটা মন ক্লাসে ততটা নেই । মৌ জানেনা ওকে নিয়ে এদের অসুবিধা ঠিক কি । ওর নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ির সস্তা কুর্তি নাকি ওর শ্যামলা গায়ের রং নাকি প্রতি সেমেস্টারে ওদের থেকে বেশি নাম্বার পেয়ে পাস করা । এদেরকে দেখে আরো একবার মৌ এর সেই প্রজাপতি টার কথা মনে পড়ে গেল । ঠিক একরকম না.......


মুখে বেশি ভাবতে না দিয়ে ওরা ওদের রোজকার বিদ্রূপ টিটকিরি শুরু করলো ।

"এই দেখ দেখ মৌমাছি যাচ্ছে ।"

"যেমন নাম তেমন চেহারা । মৌমাছির মত গায়ের রং .... হ্যাঁ হ্যাঁ তা যা বলেছিস নামটা যে রেখেছিল তাকে বুদ্ধিমান বলতে হয় "

" অ্যাই না না থাক । কিছু বলিস না ভালো নাম্বার পাওয়া মেয়ে তো "

মৌএর অভ্যাস হয়ে গেছে এগুলো শুনতে শুনতে । রোজই বলে । কথাটা একপ্রকার ঠিক ও যা দেখতে , মৌমাছির সাথেই তুলনা করা চলে । সেই রকমই বাদামি কালচে গায়র রং । আর ওরা .......ওরা তো সেই হাওয়ায় ভেসে থাকা সুন্দর প্রজাপতিটা , কত রং......

বাস আসতে এখনো মিনিট পনেরো দেরি । চুপ করে দাঁড়িয়ে ওদের টিটকিরিগুলো শুনতে লাগলো । ঠিক সে সময় একটা কান্ড হলো । একটা বাইক তিনটে অসভ্য ছেলে এসে প্রজ্ঞা দের সামনে দাঁড়ালো ।

" ওহ্ কি সুন্দর , কি সুন্দর দেখাচ্ছে ঠিক যেন রঙিন প্রজাপতি । চলো প্রজাপতি , আজ একটু মধু খাইয়ে আনি । "

ওদের মধ্যে থেকে একটা ছেলে প্রজ্ঞার হাতটা জাপটে ধরে । প্রজ্ঞা ভয় পেয়ে ঝটকা মেরে হাতটা ছাড়িয়ে নেয় । ততক্ষণে একটা ছেলে বাইক থেকে নেমে পড়েছে । সে প্রজ্ঞার ওড়নাটা টেনে ধরে ‌। আরে চলো চলো । লজ্জা কিসের প্রজাপতি ?


এতক্ষণ মৌ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল । এবার ও বুঝতে পারি ওকে কিছু একটা করতে হবে মনে পড়ে ব্যাগে রাখা ক্রিকেট ব্যাটটার কথা । এক মুহূর্তের মধ্যে ব্যাগ থেকে বের করে হাতে ধরে ।

তারপর এক দৌড়ে ছেলেটার দিকে তেড়ে যায় দুমদুম মারতে থাকে । ছেলেটার হাতে জোরে মারতেই ছেলেটা প্রজ্ঞার ওড়নাটা ছেড়ে দেয় । বাকি দুটো ছেলে তখন ছুটে এসেছে । ভয়ডরহীন ভাবে ওদের ব্যাটের ঘা মারতে থাকে ।

ততক্ষণে অবশ্য রাস্তার বাকি লোকজন , ট্রাফিক পুলিশ সবাই ছুটে এসেছে। কর্তব্যরত পুলিশটাও ছুটে এসেছে । ইভটিজিংয়ের দায়ে ছেলে তিনটেকে পুলিশ কাস্টডিতে নেয় ।

পুলিশ অফিসার মৌ এর দিকে এগিয়ে আসে ।

" ধন্যবাদ । আপনি যেভাবে সাহসিকতার সাথে ওদেরকে মারলেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার । এভাবে সাহস করে সব সময় এগিয়ে আসবেন ‌ । আপনার নামটা কি ...?

বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে স্পষ্ট গলায় বলে " মৌ ..... আই মিন মৌমাছি কর । "

বাসটা আসার আগে একবার প্রজ্ঞাদের দিকে তাকায় । একবার ভাবে কিছু বলবে না থাক । কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয় আজ না বললে কবে বলবে ?

" ঠিকই বলছিলে গো তোমরা । আমি মৌমাছি । মৌমাছির মতোই গায়ের রঙ আমার । তোমাদের মত প্রজাপতি না । অত রূপ , সৌন্দর্য কোন কিছুই নেই । যদি কিছু আছে তা হল হুল । নিজেকে বাঁচাতে সেইটা ব্যবহার করতে পারি । আর শোনো আমি না তোমাদের মতো ফুলের উপর ঘুরে ঘুরে মধু খেয়ে বেড়াই না । সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে নিজের খাদ্য টুকু অর্জন করি । তোমাদের মত এত সুন্দর হতেও চাই না । আমি মৌমাছি , মৌমাছিই থাকতে চাই ।"

বাসটা আসতেই সেটাই ওঠে । ওর মনে তখন আর কোন সুন্দর হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো প্রজাপতির ছবি নেই । ওর মনের কোণায় কোণায় তখন একটাই ছবি ফুটে উঠেছে , কালচে বাদামী রঙের মৌমাছির ছবি ।



Rate this content
Log in

More bengali story from Sumana Sinhababu

Similar bengali story from Abstract