STORYMIRROR

Ankita Mukherjee

Romance Crime Thriller

3  

Ankita Mukherjee

Romance Crime Thriller

মাংসাশী

মাংসাশী

4 mins
171

অফিসের কিছুদিন কাজের খুব চাপ ছিল। নাক মুখ গুজে একভাবে ল্যাপটপে ডুবে প্রেজেন্টেশন তৈরি করায় লেগে ছিল ঝিলিক। আজ অফিসে কলিগেরা তার প্রেজেন্টেশনের খুব প্রশংসা করায় তার নিজের উপরে কনফিডেন্টটা আরও বেড়ে গেলো। মেসে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল। আধ ঘণ্টা পরে ওর রুমমেট এসে ওকে জোর করে তুলে দিলো, ওর সাকসেস সেলিব্রেট করার জন্যে।

নাইটক্লাবে ঢোকার পরেই ঝিলিকের রুমমেট চিকু ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পা-মেলাতে ড্যান্স ফ্লোরে চলে গেলো। ঝিলিক আর কি করে, ভিওগ্নিয়েরের গ্লাসটা হতে নিয়ে ক্লাব চেয়ারে বসে-বসে সাদা তরল পান করতে লাগলো। দ্বিতীয় গ্লাসে চুমুক দিতেই সে অনুভব করলো তার সিকুইন টপের স্ট্রিপের উপর শক্ত একটা হাত। ঝিলিকের বুঝতে অসুবিধা হলোনা যে সেটা কোনো পুরুষের হাত। তার চারপাশটা ভিলেন এ্যাও ডের গন্ধে বুরবুর করছে।

গ্লাস হাতে নিয়েই পিছন ফিরলো ঝিলিক, আর শেভ করা ফর্সা দাড়ির সবুজ অংশটা দেখে তার চোখ জুড়িয়ে গেলো। শক্ত চোয়াল দুটোর নেশায় যেনো তাকে আরো পেয়ে বসছে।


ঝিলিক একটু কুশলী করে প্রশ্ন ছুড়ে দিল তার দিকে। উত্তরে সে বললো, "নাম তো রাজ রণ, তুমি রণও বলতে পারো"। গ্লাসটা উচুঁ করে একবারে পুরো তরলটা গলায় ঢেলে দিয়ে নেশাটা বাড়িয়ে নিলো ঝিলিক। গ্লাসটা তার হাত থেকে নিয়ে নামিয়ে রাখলো রণ। তারপর তাকে দুই বাহুতে জড়িয়ে ধরে নিজের ঠোঁট দিয়ে তার ঠোঁট দুটো স্পর্ষ করলো। ঝিলিক রণের গরম ঠোঁটের স্পর্শ পান করলো। সৃত লালায় মুখ ভরে গেলো তাদের।

যেকোনো পুরুষের ছোঁয়াই তার কাছে সুখকর, কিন্তু রণের এই অন্তরঙ্গের মাঝে ঝিলিকের কেমন যেন অস্বস্তি বোদ হতে লাগলো। এই মুহূর্তটা সে যেনো উপভোগ করতে পারছেনা।


রণের ছোঁয়ায় ঝিলিকের ঠোঁট দুটো গরম হতে লাগলো, সেই সঙ্গে তার অস্থিরতাও বেড়ে উঠলো।

বাঁশি-পচা খাবারে তার অ্যালার্জি আছে ঠিকই, কিন্তু পুরুষের ঠোঁটে চুমমন করলেও যে তার অ্যালার্জি ভাব হতে পারে, এ বিষয়ে সে মনেমনে কিছুটা অবাকই হলো। এ কাজ তো সে প্রথমবার করছে তা নয়, এমন সে প্রাই করে থাকে নাইটক্লাব বা পার্টতে এলে। এমনকি প্রমোশন গুলো সে এইভাবেই পায়।


অস্থিরতা কাটাতে রণের থেকে এক পা পিছিয়ে আলিঙ্গন মুক্ত হলো। কিন্তু রণের মনে অন্য কিছুই আছে সেটা বুঝতে পারেনি ঝিলিক। রণ তাকে ভিওগ্নিয়েরের অফার করে তার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব টাও করলো। তিন নম্বর গ্লাসটা ঠোঁটে ছোঁয়াতে নেশাটা আরও বেড়ে গেল ঝিলিকের। কিন্তু শত নেশাতেও সেই ওই প্রস্তাবে রাজি হলোনা।


পীড়াপীড়িতেও কাজ হাসিল হলোনা দেখে তাকে রীতিমত জোরা-জরি করতে আরম্ভ করলো রণ। কিন্তু রণ তো জানতো না, যে ছেলে চরানো মেয়ে ঝিলিক, তাই তাকে এত সহজে কাবু করা সম্ভব না। ফল স্বরূপ তার উপরে মলেস্টেশনের কমপ্লেইন করার হুমকি দিতে বাধ্য হলো ঝিলিক। কিন্তু তাতে ব্যাপারটা আরো বিগ্রে গেলো। রণ সত্যিই তাকে টানাটানি করতে শুরু করলো। তাকে নিয়েই যাবে নিজের বাড়িতে, এই জেদ তার চেপে গেলো। ঝামেলা দেখে ইতি মধ্যে বাউন্সারাও হাজির। বাউন্সারের কাজ হলো নাইটক্লাব বা পার্টিতে সুরক্ষা নিশ্চিত করার। কেউ মদ খেয়ে ঝামেলা না করে, বা বেআইনিভাবে বয়স লুকিয়ে না ঢুকতে পারে এইগুলোই দেখা তাদের কাজ। কিছু ক্ষেত্রে বাউন্সারদের নির্দেশও দেওয়া থাকে, কেনো ব্যাক্তি অসভ্যতা বা খারাপ আচরণ করলে, যাতে ক্লাবের রেপুটেশন নষ্ট হতে পারে, তাকে বের করে দেওয়া ক্লাব থেকে। ঠিক এমনটাই হলো রাজ রণের সাথে। ছেলেটা এতই বাজে আর বখে যাওয়া ছেলে যে, কোনো কিছুই মানেনা। বাউন্সারদের সাথে মারপিট করে, শেষমেশ নিজেই গলা ধাক্কা খেল।


তাকে ক্লাব থেকে তাড়িয়ে দিয়ে যখন বাউন্সাররা এন্ত্রন্সটা বন্ধ করে দিলো, তখন তার মাথায় খুন চেপে গেছে। সে তেরে গেলো দরজা ভেঙ্গে ঢুকতে। আর বিপত্তিটা ঠিক তখনই ঘটলো। পুলিশ রেড করতে এসে সবার আগে তাকেই ধরলো, তার সাথে ক্লাব থেকে কজোন ড্রাগ ডিলার্সকে অ্যারেস্ট করলো।


পরের দিন নিউজপেপারে চোখ বোলাতেই বড় একটা লামিনেট করা ছবিও চোখে পড়লো। ভিতরের খবরটা পড়তে যাচ্ছে এমন সময় ওর রুমেমেট ওকে বলল, "খবরটা তোর আগেই আমার পড়া হয়ে গেছে। কাল যে ফেরোসিয়াস-হ্যান্ডসামটার সাথে সময় কাটাছিলিস, পুলিশ ওই ড্রাগ ডিলার গুলোর সাথে তাকেও খুঁজছিল। ফাইনালি পেয়েও গেলো। প্রথমেতো আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না, কিন্তু এটাই সত্যি। কিছুদিন যাবত শহরে যে যুবতী মেয়েদের অপহরণ হয়েছে তাদের পচাগলা, আধ খাওয়া, চামড়া ওপড়ানো মৃত দেহ ওই ছেলেটার বাড়িতে পাওয়া গেছে। পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট অনুসারে মেয়েগুলোর ধমনীতে মাত্রাধিক ড্রাগ পাওয়া গেছে। বোঝাই যাচ্ছে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ক্লাব থেকে নিয়ে যেত মেয়েগুলোকে, তারাও নেশায় বুদ থাকতো, বুঝতেই পারতোনা কোথায় যাচ্ছে, কি হচ্ছে, তারপর তাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে, নিজের রক্ত পিপাসা মেটাতো। টোটালি স্পাইকো-কিলার। পুলিশ এটাই জানিয়েছে যে ওই ড্রাগ ডিলারদের থেকে ড্রাগের সাপ্লাই নিত ছেলেটা, কি যেনো নাম রণ না রাজ"। "হ্যা, রাজ রণ" ঝিলিকের মুখ দিয়ে অস্ফুটে নামটা বেরিয়ে গেলো। চিকু ওর পাসে বসে বললো "হ্যা ওই রাজ রণ"। তবে তুই বেছে গেছিস, নইলে ভাব ছেলেটা যদি তোকে নিয়ে যেত তাহলে......আই ক্যান্ট ইভেন থিঙ্ক"।

ঝিলিকের কাছে এবার সব ব্যাপারটাই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। কেনো রণ নামক স্পাইকোটার ঠোট স্পর্শ করতেই তার অ্যালার্জিক সিম্পটম দেখা দিয়েছিল। তবে এরকম ঠান্ডা মাথার শয়তানদের চেনা খুব মুশকিল। সে মনেমনে ভাবলো প্রাণে বেঁচে গেলেও এই অ্যালার্জি তাকে বেশ কিছুদন ভোগাবে। আর ছেলে দেখলেই মেকআউট করাটা কদিন বন্ধই রাখবে সে। তাছাড়া এই অতিমারিতে দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance