Lotus
Lotus
এক থালা গরম ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি নিয়ে মা এতক্ষণে এসে বসলো আমার পাশে.. লোকনাথ বাবার উৎসব আজ.. এই গত তিন বছর ধরে দেখছি মা এই দিনটায় ভোগ দেয়.. সারাটা দিন খুব ব্যস্ততার মধ্যেই কাটে ... পুজোর জোগাড়যন্ত্র, ভোগ রাধা সবই একা হাতে সামলায় মা.. সব সারা হলে পর আশে পাশের কিছু বাড়িতে শাল পাতার থালায় করে খিচুড়ি প্রসাদ দিয়ে এসে তবে গিয়ে একটু দম ফেলার সময় পায় ...
"তোমার এতক্ষণে খাওয়ার সময় হলো?বেলা সেই কখন পড়ে গেছে.. "..
"আরে বাবা সারা বছরে তো এই একটা দিনই ... এই দিনটা আসলেই মনার কথা মনে পড়ে রে.. ".. মা খেতে খেতেই স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বিষণ্ন গলায় বললো...
আমারও মনটা ভারী হয়ে এলো কেমন .. আমাদের বাড়ির দুটো বাড়ির পরেই মনা পিসিদের বাড়ি..লোকনাথ বাবার উৎসব প্রতি বছর বেশ বড় করেই করতো মনা পিসি, আশে পাশে সবার নিমন্ত্রণ থাকতো দুপুর বেলা .. সেই ছোট থেকে তাই দেখে এসছি.. পরের দিকে বয়স হয়েছিলো..পেরে উঠতো না.. তখন অবশ্য শম্পা দিও হাল ধরেছিলো কিছুটা.. শম্পা দি মনা পিসির একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে, পেশায় হাই স্কুলের শিক্ষিকা,পাড়ার সবাই বলে ও নাকি গোবরে পদ্মফুল, সেই জ্ঞান হওয়া থেকে শুনে আসছি ...
ছোটবেলা শুনতাম মাঝে মাঝেই ওদের বাড়ি থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসতো... মা, কাকিমারা আমাদের বাড়ির সামনের বারান্দায় গিয়ে তখন উকি ঝুঁকি দিলেও.. আমাদের বাচ্চাদের তা নিয়ে আগ্রহ দেখানো ছিলো কড়াভাবে নিষিদ্ধ, একেবারে নৈব নৈব চ.. তা নিয়ে ছোটবেলায় একটা ক্ষোভও ছিলো মনে মনে... পরে বড়ো হওয়ার সাথে সাথে যখন নিষেধের বেড়াজাল শিথিল হয়ে জীবনে চলার পরিধিটা বড়ো হলো তখন আর অজানা কিছুই রইলো না..
মনা পিসি এককালে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো অজিত পিসো কে.. কিন্তু তার ঠাঁই হয়নি শ্বশুড় বাড়িতে.. কারণ মনা পিসির নাকি না ছিলো রূপ, না ছিলো বিদ্যার জোর.. একেবারে এরকম এলেবেলে কাউকে কি আর তাদের গ্রামের শক্ত পোক্ত জোয়ান ছেলের পাশে মানায়.... সে ছেলের রূপ গুণ নাই থাকতে পারে, তাতে কি? আরে বাবা ছেলে হলো সোনার আংটি.. তার আবার সোজা আর বাঁকা!... তাই মনা পিসি এসে উঠেছিলো তার বাপের বাড়িতে স্বামী কে নিয়ে..তা নিয়ে প্রায়ই খোটাখুটি লেগেই থাকতো মা মেয়েতে...
মনা পিসির বাবা গত হয়েছিলেন নাকি অনেক ছোটবেলায়.. মা আর দুই দিদিকে নিয়েই ছিলো ওদের টানাটানির সংসার .... দু দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর এখন মা আর স্বামী অজিত পিসোকে নিয়ে শুরু হলো মনা পিসির দ্বিতীয় অধ্যায়.. আরেক সংগ্রাম... অজিত পিসো কে আমরাও কোনোদিন কিছু করতে দেখিনি... মনা পিসি বাধ্য হয়েই রান্নার কাজ নিয়েছিলো... কিন্তু তাতে সুরাহা কতটা হয়েছিলো জানা নেই..তবে স্বামী স্ত্রীর অশান্তি লেগেই থাকতো... মনা পিসির মা গত হওয়ার পর ওদের বাড়ি থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ টা ক্রমশ বেড়ে গিয়ে তা একসময় আশে পাশের বাড়িগুলোর গা সওয়া হয়ে গেছিলো... কেউ আর শেষের দিকে আগ্রহও দেখাতো না... একবার আমার ডাকাবুকো ছোটোকাকাকে বলতে শুনেছিলাম, "পাড়া টা একেবারে spoil করে দিলো.. এই তো সেদিন হারুর দোকানের পাশে দেখলাম অজিতকে কোন এক মহিলার সাথে অন্ধকারে.. বিশ্রী অবস্থায়..".. বাবা গম্ভীর মুখে কথাগুলো শুনে আফসোসে মাথা নেড়েছিলো সেদিন...
এতকিছুর মধ্যে ওদের বাড়ির একমাত্র আশার আলো ছিলো শম্পা দি, মনা পিসি অজিত পিসোর সব অসভ্য আচরণও মেনে নিয়েছিলো ওই মেয়ের দিকে তাকিয়েই ..কয়েকবার আমাদের বাড়ির ছাদে আচারের কৌটো রোদে দিতে এসে মায়ের কাছে দুঃখ করে বলতে শুনেছি, "শমু টা বড় হইতাসে না কও.. এই নিয়া অশান্তি করলে ওর মনে কি লাগব.. তাই চুপ থাকি.. আমার তো যা কপাল পোড়ার পুড়সে, শুধু মাইয়াটার মুখ চাইয়া বাইচ্যা আসি ".. ...
এসবের মধ্যেই মনা পিসির একান্ত যত্নে শম্পা দি বড় হচ্ছিলো, মেয়ের সব দিকেই ছিলো মনা পিসির কড়া নজর.. কোথায় কোন পরীক্ষা, কোন গানের প্রোগ্রাম, সব জায়গায় মনা পিসিকেই ওর সাথে সাথে ছুটতে দেখেছি, শম্পা দি কি ভালোবাসে তা কাজের বাড়ি থেকে ফেরার সময় ছোটো ব্যাগে ঝুলিয়ে আনতেও দেখেছি.. অজিত পিসো কোনোদিন এসবের ধারে কাছেও ঘেঁষতো না... মা, কাকিমাকে নিজেদের মধ্যে অবসরে গল্প করতে শুনেছি, "মনা নিজে কষ্ট করলেও মেয়েটাকে বুঝতে দিতে চায়না গো.. ও পড়াশোনায় এত ভালো বলে দেখোনা প্রতিবার কতো বড় সরস্বতীর প্রতিমা এনে পুজো করে,খুব কষ্ট করে বড় করছে গো, শম্পা টা বড়ো হোলে যদি মনার একটা গতি হয় .."... এভাবেই শম্পা দি যতো বড় হচ্ছিল, তার সাথে সাথে ওর পড়াশোনার সুখ্যাতিও সারা পাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছিলো.. এখনও মনে আছে দিনটা.. মনা পিসি আমাদের বাড়ি এসে আমার ঠাকুমাকেই প্রথমে ক্ষয়াটে জীর্ণ হনু উচিয়ে থাকা মুখে উজ্জ্বল গর্ব মাখা এক বেমানান হাসি হেসে বলেছিলো শম্পা দির স্কুলের চাকরি পাওয়ার খবর টা.. শুনে খুব খুশি হয়েছিলো ঠাম্মি.. বলেছিলো, "সবই তো দেখলাম এই চোখে রে মনা.. একা হাতে কত কষ্ট সহ্য করে বড়ো করলি মেয়েটাকে.. অজিত কে তো কিছুই পোহাতে হোলো না কোনদিনই.. সেই কোন ছোটো থেকে কতো কাঠ খড় পুড়িয়ে এত দূর এলি.. এবার একটু সুখ কর.."..
পাড়ার অনেকেই শম্পা দির কাছে পড়তে আরম্ভ করলো.. আমরাও যেতাম.. আমি, আমার বোন, কাকুর ছেলে সবাই.. শম্পা দি ইংলিশ পড়ায়, বেশ ভালো পড়ায় .. আমরাও পড়ে বেশ সন্তুষ্ট..
একদিন সন্ধ্যায় পড়তে গেছি.. দেখি শম্পা দি কোথায় যাবে তৈরী হচ্ছে.. আমাকে দেখে বললো," আজ পড়াবো না রে, একটা প্রোগ্রাম আছে.. আমায় সম্বর্ধনা দেবে.. ডেকেছে.."..
আমি কিছু বলার আগেই মনা পিসি বলে ওঠে, " আমারেও তো যাইতে কইসিলো .. না রে? এতক্ষণ কস নাই তো যে ওইখানে যাইতাছোস.. দাড়া তাড়াতাড়ি শাড়ি টা পইড়া নি"..
"তুমি গিয়ে কি করবে, দরকার নেই .. তাছাড়া ওখানে আমার collegues রাও থাকবে.. তুমি গেলে আবার.. "
" তো কি যাম্ না? ".. মনা পিসির সরল করুণ প্রশ্ন টাকে গ্রাহ্য না করেই সেদিন আয়নায় নিজের মুখ দেখে যত্ন করে শাড়ীর সাথে ম্যাচিং টিপ টা পড়ে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে গেছিলো শম্পা দি...
বাইরে ততক্ষণে অন্ধকার নেমেছে... খেয়াল করেছিলাম তার সাথে পাল্লা দিয়ে সেদিন মনা পিসির মুখেও নেমেছিল অস্বাভাবিক মনভাঙা কালো অন্ধকার.. আমার মনেও কোথাও যেন সেদিন চিড় ধরেছিল...আর না দাঁড়িয়ে ফিরে এসেছিলাম বাড়ি....
হঠাৎ একদিন রাতে খেতে বসবো তখন , ওদের বাড়ি থেকে আবার আওয়াজ ভেসে এলো..জোরে কান্নার শব্দ... না পরিচিত অজিত পিসোর গলার আওয়াজ শোনা গেলো না.. শুধুই কান্নার শব্দ, তবে কান্নাটা মনা পিসির, তাতে সন্দেহ নেই ...ওদের বাড়ির স্বাভাবিক ঘটনা ভেবেই গা করেনি কেউ...
এর দিন পাঁচেক পরেই আমার কাউন্সিলর ছোটোকাকা এসে বাড়ির সবাইকে বললো, "ওদের আর শম্পার কাছে পড়তে যেতে হবে না বুঝলে.. আর পাঠানোর দরকার নেই.."..
বাড়ির বড়রা কারণ জিজ্ঞেস করতেই আমাদের ভিতরে যেতে বলেছিলো ছোটো কাকা... ওদের চোখের আড়াল হলেও পাশের ঘরে লুকিয়ে শুনেছিলাম কাকা বলছে, "একদম উচ্ছন্নে গেছে মেয়েটা.. ভেবেছিলাম ও আলাদা হয়েছে.. এত পড়াশোনা করে স্কুল টিচারি করে.. কিন্তু রক্তের দোষ আর যাবে কোথায়! .. ওই c ব্লকের একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক.. চিনি ভালো করে ছেলেটাকে.. ফালতু ছেলে একটা! বিয়ে করা বউ বাড়িতে রেখে শম্পার সাথে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে.."... কথাগুলো শুনে চিড় টা জোরালো হয়ে পুরু ফাটল ধরলো আমার মনে ...ফলতঃ আমাদের পড়তে যাওয়া বন্ধ হলো.. দু একদিন আমাদেরও চোখে পড়লো ব্যাপারটা.. শম্পা দি প্রায়ই একটা লোকের বাইক থেকে নেমে রাত করে বাড়ি ঢোকে... তার সাথে চোখে পড়ার মতো করে বাড়ছিলো মনা পিসির শরীরের ক্ষয়...দেহের হাড়, শিরা সমস্ত যেন যত্নের অভাবে, অবহেলায়, অবসাদে, অনিদ্রায় আরো বেশি করে মাথাচারা দিয়ে উঠছে দিনের পর দিন.. খুব একটা দেখা যায় না আজকাল মনা পিসিকে , বেরোয় না আর আগের মতো..জীবনের সব না-পাওয়া গল্পরাও যেন নিঃশেষ হয়ে এসেছে, তাই আগের মতো রাস্তার মোড়ের দোকানে দাঁড়িয়ে বা পাশের বাড়িতে কোনো দরকারে গিয়ে নিজের দুঃখের কথা বলতে দাঁড়ায় না আর দু দণ্ড , চেনা কাউকে দেখলেও ডেকে খোঁজ নেয় না আর আগের মতো , প্রচন্ড গলা তুলে অনেকক্ষন দর কষাকষি করে বাড়ির সামনে থেকে যাওয়া ফেরিওয়ালার প্লাস্টিকের 'হরেকমাল'এর সস্তার জিনিস রাখে না..... পাড়ার আর সব পিসি, মাসি, কাকিমাদের সাথে সরল নিঃস্বার্থ সখ্যতাও ফুরিয়েছে...
ভালো মনে আছে সেদিনটা ছিলো মহালয়া.. সারাদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মনা পিসিকে.. শম্পা দিও ব্যস্ত হয়ে খোঁজ করছে ,বিরক্তও হচ্ছে খুব .. আমাদের বাড়িতে খোঁজ নিতে এসে মা কে সবশেষে বলেছিলো , "এত কেয়ারলেস না!! .. এই বয়সে এখন কোথায় গিয়ে বসে আছে..কোথায় খুঁজবো বলতো? কোনো sense আছে! "...
সন্ধ্যায় যখন খবরটা এলো পাড়াটা থমথমে... সুইসাইড করেছে মনা পিসি, রেলে কাটা পড়া দেহ টা যখন আনা হলো সারা পাড়া গিয়ে জড়ো হয়েছিলো, কিন্তু কি নিশ্চুপ সেই ভিড়.... স্তব্ধতা যে এত ভয়ানক বিষাদময়, বেদনাতুর হতে পারে সেদিন টের পেয়েছিলাম আমি ভিড়ে অনেক পেছনে দাঁড়িয়ে.... মনা পিসির দিদি এসে যন্ত্রণায়, মনকষ্টে আকুল হয়ে কেঁদে বলেছিলো সেদিন , "মনার কপালে সুখ নাই রে.. স্বামীর লাথি ঝাটা সহ্য কোরসে .. ঐটাতো মানুষই না.. মাইয়াটাই সব ছিলো, ওইটাও একটু সুখ দিলো না ওরে, ভালো বেবহার করতো না.. তার নাকি সরমে লাগে মায়রে নিয়া.. চোখের সামনে এই অনাছিস্টি মানতে পারে নাই, ওই বিয়ালা পোলাটার লগে... আমারে তো কইতো গিয়া....তুই কেন চইল্যা গেলি......."..
সারাপাড়া সেদিন শুনেছিল সেই দুঃখ বিলাপ... নিঃশব্দে অনেকেরই চোখ ভিজে উঠেছিল সেদিন.. শুনেছিলাম শম্পা দি নাকি শেষ বারের মতো মুখও দেখেনি মনা পিসির....ওর মায়ের জন্যই তো সবার সামনে ওর সোনা মুখ পুড়েছে... ক্ষমা করা কি এত সহজ.. নির্বিকার ভাবেই সব কাজ বাবা মেয়ে মিটিয়েছিলো, কোনো বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ ছাড়াই.. তবে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে কিছুরই খামতি ছিলো না... বড় করে প্যান্ডেল করা থেকে শুরু করে আয়োজন, মেনু...মনে আছে দুপুর বেলায় এসে ঘটা করে নিমন্ত্রণ করে গিয়েছিল শম্পা দি, যেতে বলেছিলো বারবার... অনুষ্ঠানের দিন আত্মীয়রা বলতে মাসিরা কেউ আসেনি, বাবার দিকের কারো সাথেই কোনোদিন যোগাযোগ ছিলো ওদের... পাড়ার লোকও খুব একটা কেউ ঘেঁষেনি, তবে আমরা দেখেছিলাম বড় বড় গাড়ি হাকিয়ে শম্পা দির স্কুলের collegues রা এসেছিলো অনেকই ...
তারপর কেটে গেছে আরো ছ'টা বছর... এখন শম্পা দি এক নাম করা প্রফেসরের গৃহিনী, বিয়েটা নিজে দেখে শুনে আরেক দফা ভালোবেসেই করেছে.. মা মারা যাওয়ার বছর তিনেক পর নিজেই তদারকি করে ওর মায়ের আমলের চলটা ওঠা দু কামরার দুর্বল, জীর্ণ বাড়িটাকে সুন্দর করে তৈরি করে গুছিয়ে বিয়েতে বসেছিল শম্পা দি.. তখন আবার সবাই নতুন করে জয়ধ্বনি দিয়েছিলো.. "না সত্যি.. এই মেয়ের ক্ষমতা আছে, একটা মেয়ের পক্ষে কি এতসব করা চাট্টিখানি কথা! কতো সুন্দর মার্বেল বসানো দোতলা বাড়ি করেছে.. গৃহ প্রবেশও কতো বড়ো করে করলো বলো .. সত্যি গোবরে পদ্মফুল.. মাঝখান থেকে মনাটা শুধু শুধু কি একটা কান্ড বাধিয়ে বসলো.. মেয়েটাকে একেবারে একা করে দিয়ে চলে গেল.."...
"কিরে জুই, ....কি ভাবছিস এত , মনে আছে তো.. আজ কিন্তু মনা পিসির বাড়ি রাতে নিমন্ত্রণ.. শম্পা টাই এখন একা সব করে... স্কুল, শ্বশুড় বাড়ি, কোলের বাচ্চা সব সামলে..মনা আজ থাকলে কতো খুশি হতো.. কেন যে শুধু শুধু মরতে গেলো... "..
মায়ের কথায় খেয়াল হলো এতক্ষণে... ও হ্যা, আজ তো ওদের ওখানে রাতে নিমন্ত্রণ.. শম্পা দি প্রতিবার এখানে এসেই পালন করে লোকনাথ উৎসব.. আগের থেকেও বড় করে... অনেককে বলতে শুনেছি ও নাকি মনা পিসির থেকেও এসব ব্যাপারে অনেক বেশি পটু.. মনা পিসির চালচুলো আর কতটুকু ছিলো.. শম্পা দিই সেই পূজো এত বড় করেছে, এখন সারা পাড়া খায় ওই বাড়িতে , আর শম্পা দি তাদের ঝুড়ি ঝুড়ি আশীর্বাদ কুড়োয় উজ্জ্বল হাসি মুখে... তাছাড়া এখন বিয়ের পর আরো লোকের সমাগম বেড়েছে.. ওদের স্কুল কলেজের চেনা পরিচিতদের সাথে সাথে ওর শ্বশুড় বাড়ির লোকজনও আসে বিস্তর....
সন্ধ্যার কিছু পর মনা পিসির বাড়িতে বাবা, মা, বোনের সাথে ঢোকার সময় সাজানো গেটের পাশের ছোট্ট মার্বেলের চৌকো খোপটায় আমার চোখ পড়তেই, একটা ছোট চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে.... কালো হরফে লেখা " মনা-নিবাস"..
ভিতরে ঢুকেই দেখলাম প্রতিবারের মতো অনেক লোকের ভিড়, বিশাল আয়োজন.. আর দেখলাম ছোটো কাকাকে, পাশে কাকিমাকে বলছে, " দেখলে.. কি করেছে সব,এবারের decoration টাও তো দারুণ .. তাও একার হাতে সবটা.. সত্যি তুই গোবরে পদ্মফুল রে শম্পা, বেঁচে থাক মা ..." সামনে দাঁড়িয়ে বুদ্ধিদীপ্ত মুখে বিজয়িনীর হাসি হাসছে শম্পা দি....
অবাক হলাম... একদিনের উচ্ছন্নে যাওয়া মেয়েটাই আজ পদ্মফুল....... সাথে সাথে মনে পড়ে গেল কথাটা ......ও হ্যা, ছোটো কাকার পার্টির ফান্ডে আর প্রত্যেকবার এ পাড়ার পুজোয় ওই তো সবচেয়ে বেশি টাকা দেয়........... ওর মায়ের নামে, মায়ের হয়ে ॥
***************সমাপ্ত**************
