Akash Karmakar

Drama Tragedy Inspirational

3  

Akash Karmakar

Drama Tragedy Inspirational

লক্ষ্মীদর্শন

লক্ষ্মীদর্শন

2 mins
384


---মা এই দরজায় একটু আল্পনাটা দিয়ে দে না মা; দেখতে ভালো লাগবে।

 ---হ্যাঁ মা এই তো দিই গো, তুমি বসো, আমি সব জোগাড় করে দিই, তারপর তুমি পুজোয় বসবে। 

---আচ্ছা মা, তাই হবে রে। হ্যাঁ রে বুড়োটা কোথায় গেল দেখেছিস? 

---বাবা মনে হয় বাগানে পায়চারি করছে। ডাকব মা? 

---না না ছেড়ে দে, মানুষটা নিজের মতন করে একটু থাকুক।


     শংকর বাবু আর মিতালী দেবীর দাম্পত্য জীবনের প্রায় পয়ত্রিশটা বসন্ত অতিক্রান্ত; জীবনটা বরাবর সোজাপথেই চলছিল, বাধ সাধল বছর দুয়েক আগে। পৃথ্বীশ মহারাষ্ট্র নিবাসী কর্মসূত্রে, সুযোগ পেলে ছুটিতে অবশ্যই বাড়িমুখো হওয়া তার বেশ পছন্দের। মায়ের হাতের রান্না, বাবার সাথে রাজনীতি- তরজা– সবেতেই বেজোড় কাটছিল সময়। বছর দুয়েক আগে দশেরার ছুটিতে বাড়ি ফিরছিল পৃথ্বীশ, একেবারে লক্ষ্মীপুজো পার করে ছিল ফিরে যাওয়ার কথা। হাওড়ায় নেমেই চটজলদি উঠে পড়ে বাসে, পুজোর মরশুমে ভিড়ের উপর ভিড়, ঠাসাঠাসি করে কোনোক্রমে দাঁড়িয়ে থাকা। কিছুটা আসার পরই অন্যদিক থেকে আসা এক দ্রুতগামী বাসকে কাটাতে গিয়ে এই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গিয়ে পড়ে বাইপাসের পাশের খাদে। সোজাপথে চলা জীবনে প্রথম পড়ে এক পূর্ণচ্ছেদ। পৃথ্বীশ চোট পায় মাথায়, দীর্ঘদিন নার্সিংহোমে থাকলেও সমস্ত স্মৃতিশক্তি সে হারিয়ে ফেলে। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পরও ফলাফল শূন্য, এখন সে গৃহবন্দী। ছুটিই ছুটি, ইঁদুর দৌড়ের জীবনে এখন শুধু বিশ্রাম আর বিশ্রাম। এই সব নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাগানে ঘাসের উপর বসে পড়েছিলেন শংকর বাবু, সম্বিত ফিরল মেয়ে তনুজার কন্ঠে। 


---বাবা, তোমার চা। 

---ও এনেছিস মা। আচ্ছা রাখ। আচ্ছা তোর সব কাজ হল? 

---হ্যাঁ বাবা, প্রায়ই শেষ সব। আর কয়েকটা পানিফল ছাড়িয়ে দিলে পরে মা পুজো করে নিতে পারবে। 

---তুই আছিস বলেই মা এখনো এই বুড়ো বাপটা আছে রে। 

---এরকম বলতে নেই বাবা। তুমি আর মা আমার কাছে কি তোমরা কি তা জানো না বলো। আমি কে ছিলাম বলো-কেউ না। একটা কেউ না পরিচয়হীনা মানুষকে তোমরা নাম দিয়েছ, পরিচয় দিয়েছ, বেঁচে থাকতে শিখিয়েছ।

---সত্যি রে মা, সেদিন লক্ষ্মীপুজোয় যদি তোর মা মন্দির যাওয়ার বায়না না করত তাহলে এই লক্ষ্মী মা আমার বাড়িতে আসত কি! ঈশ্বর আছেন, ঠিক আছেন। তোর মাধ্যমেই তো আমি তোর মা আবার নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করছি। হ্যাঁ রে মা, তোর দাদা কি আর ভালো হবে না বল? 

---মা লক্ষ্মীর কৃপায় একদিন দেখবে বাবা, দাদা আবার ঠিক আগের মতনই সুস্থ হয়ে উঠবে গো। এটা তো একটা লড়াই, লড়তে হবে আমাদের সবাইকে একসাথে। আর এই যে তুমি আমাকে মা লক্ষ্মী বলো, তাহলে আমার উপর ভরসা রেখো বাবা। তোমার সন্তানকে একদিন ঠিক আমি ভালো করবই। তোমরা যে আমাকে আজ পড়াশোনা শিখিয়ে নিউরোসার্জেন করছ আমি যথাসাধ্য তার সম্মান রাখব বাবা। দাদাকে আমি সুস্থ করে তুলবই গো একদিন, দেখো। আচ্ছা চলো, সন্ধ্যা হয়ে এলো। মায়ের পুজোর সময় হয়ে আসছে। 

---তুই সত্যি আমার মা লক্ষ্মী। নাড়ীর টানের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে ভালোবাসার টান-সম্পর্কের টান। পূর্ণিমার জোছনায় মন্দিরের সিঁড়িতে তোর সেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠার মুখটা দেখেই তো কোলে তুলে নিয়েছিলাম, এই গৃহস্থের সব আঁধার তোর আলোয় মুছে যাবে একদিন ঠিক। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama