লকডাউন
লকডাউন
বসার ঘরে টিভিতে বারংবার একটি হেডলাইন দেখানো হচ্ছে, "কলকাতা সহ রাজ্যের পুরশহরগুলি আগামীকাল থেকে লকডাউন"। সোফার উপর বসা সুনির্মল শর্মার মুখে এই দুর্দিনেও কেমন হাসি দেখা গেল। সুনির্মল বাবুর বয়স একাত্তর বছর, এক সময় ব্যাঙ্কে কর্মরত ছিলেন তবে বর্তমানে রিটায়ার্ড জীবন কাটাচ্ছেন এক ছেলে, বৌমা এবং নাতি কে নিয়ে। সে অনেক আগের কথা-- তখন স্ত্রী অহল্যা বেঁচেছিলেন, সবে তীর্থ বিয়ে করে বউ এনেছে। কত অতিথি আসতো তখন সকাল বিকেল, অহল্যা ও সর্বদা হাসি মুখে অতিথি আপ্যায়নে লেগে পড়তো। সে সবদিন এখন শুধু অতীতের পাতায়। অহল্যা চলে যাওয়ার পর বৌমা ও ছেলের সাথে তার অফিস যোগ দিল তাই সুনির্মল বাবুর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাই সময় কাটে টিভি দেখে। নাতি যদিও স্কুল থেকে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসে আর ইদানিং তার স্কুল
বন্ধ তাই সে দাদুর কাছেই আছে গোটা দিন। কোনোরকম এইভাবেই কাটছে সুনির্মল বাবুর জীবন। সন্ধ্যা সাতটা পনেরো বাজতেই কলিং বেল এর আওয়াজ শুনে সুনির্মল বাবু ছুটে গেল দরজার দিকে, এক গাল হেসে দরজা খুলে দিল। তীর্থ বাড়ির ভিতরে ঢুকেই এক রাশ বিরক্তির সাথে বলে উঠলো, 'ধুর বাবা কাল দিয়ে সব বন্ধ এই এক নাগাড়ে ঘরে বসে কাটানো যায় নাকি!' বৌমা নীলা ও সেই সাথে বললো, 'সত্যি শুধু রবিবারটাই এই টু বি.এইচ.কে ফ্ল্যাটে কাটাতে দম বন্ধ লাগে তার উপর এতগুলো দিন কি করে যে কাটাবো।' সুনির্মল বাবু টিভিটা বন্ধ করে নিজের ঘরে গিয়ে অহল্যার একটি মালা দেওয়া ছবির সামনে দাঁড়ালো, সেদিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললেন, 'অহল্যা তুমি কেমন করে আমাকে এবং ছেলে কে ছেড়ে সারাদিন এই টু বি.এইচ.কে ফ্ল্যাটে দিনগুলো কাটিয়ে দিতে হাসি মুখে?'