Scarlett MonaLiza

Horror Romance Thriller

3  

Scarlett MonaLiza

Horror Romance Thriller

লাল গোলাপের শহর

লাল গোলাপের শহর

23 mins
425


"শুরু হয়ে গেলো ফ্রান্সিসের আক্রমণ। সেই সময় যেকোনো যাত্রী-জাহাজ বা পণ্যবাহী-জাহাজ আদেন গাল্ফ দিয়ে লাল সাগরে ঢুকে পড়লে ফ্রান্সিসের হাতেই তাদের ইতি ঘটতো। স্যার ফ্রান্সিস টীচ সোলোষ-নব্বই শতকের নামকরা কুখ্যাত জলদস্যু ছিল। তার উৎপাতে আরব-খার্তৌম বা আরব-আসমারা যাত্রা দুর্গম হয়ে উঠেছিল। সেই সময়কার নাবিকরা আরব থেকে খার্তৌম, আসমারা, ইত্যাদি যাত্রা করতো আদেন গাল্ফ দিয়ে সোমালিয়া বা ইথিওপিয়া হয়ে।

রয়াল পার্ল জাহাজের কুখ্যাত জলদস্যু ফ্রান্সিস খবর পেয়ে লুটতে গেলো ক্যাপ্টেন জ্যাকের পণ্যবাহী গ্রীন ল্যাভেন্ডার জাহাজ। কাজটি যদিও তারা সরাসরি করেনি, কারণ ফ্রান্সিস জানতো জ্যাক ও তার সঙ্গীরা নাবিক হয়েও বম্বেটেদের থেকে কিছু অংশে কম নয়।

গেদারেত থেকে গ্রীন ল্যাভেন্ডার যাত্রা শুরু করেছিল আম্মানের উদ্দেশ্যে। সুদান বন্দর থেকে রওনা দিয়ে লাল সাগর জলপথে দুর্গম পরিস্থিতিতে পরতে হয়নি ক্যাপ্টেন জ্যাক ও তার সঙ্গীদের। কিন্তু লাল সাগরের শেষে আকাবা গাল্ফের মুখেই বিপদের ঢেউ আছড়ে পড়লো তাদের উপর। ফ্রান্সিসের আচমকা আক্রমণ। প্রথমে মস্ত একটা বোম পরে গ্রীন ল্যাভেন্ডারের ডেকে। তারপর আরো দুটো। হতচকিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেয় গ্রীন ল্যাভেন্ডারের অন্যান্য নবিকদল ও জ্যাকের সঙ্গীরা। ক্যাপ্টেন ব্যাপারটা আন্দাজ করে একচোখো দূরবীনের সাহায্যে তাদের থেকে কিছুটা দূরে রয়াল পার্ল জাহাজের মাথায় গাড়হ নীল পতাকায় অঙ্কিত করা কঙ্কাল চিন্হ দেখে বুঝতে পারে তাদের সমূহ বিপদ। কিন্তু দুঃসাহসী ক্যাপ্টেন তাতে দমে যায়নি, একাই কামানে গোলা পুরে পাল্টা হামলা করলো রয়াল পার্লের দেকে। কিছু পরে, সঙ্গী নাবিকদের সাহায্যে ল্যাভেন্ডার গ্রীনের ডেকে রাখা কামান গুলো আগ্নেয়গিরি হয়ে উঠল, যেখান থেকে স্ফুলিঙ্গের মতো গোলা-বারুদ অহরহ উড়ে গিয়ে রয়াল পার্লকে ঝাঁজরা করে দিচ্ছে। উত্তাল সমুদ্র তরঙ্গের মাঝে দুই জাহাজে অহরহ বোমার অগ্নি বর্ষণ হচ্ছে। অবশেষে অন্ধকার ফুরে ল্যাভেন্ডার গ্রীনের পতাকা টিকে থাকল। ধীরে-ধীরে রয়াল পার্লের সমাধি হয়ে গেল। ল্যাভেন্ডার গ্রীনের ডেকে তখন জয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছে সবাই, কারণ তারা ফ্রান্সিসের চালটা ধরতেই পারেনি। ভাবতেই পারেনি ফ্রান্সিস ও তার সৈন্যদল নিজেদের জাহাজটাকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করে ডিঙি নৌকা করে এসে, একপ্রান্তে নোঙর আটকানো দড়ির সাহায্যে ডেকে উঠে ল্যাভেন্ডার গ্রীনকে আক্রমণ করবে। গারহ সবুজ ও কালো পোশাকের ভয়ংকর অবয়ব গুলোকে দেখে নাবিকের দল ভয় পাওয়ারও আবকাস পেলোনা, দস্যুদল ঝাঁপিয়ে পড়লো তাদের উপর। ফ্রান্সিসের হাতে ধারালো কিছু চিকচিক করে উঠলো। তারপরেই রাপিয়ারের আঘাতে ক্যাপ্টেনের মুন্ডুটা ল্যাভেন্ডার গ্রীনের ডেকে গড়াগড়ি খেতে লাগল। কিন্তু মৃত্যুর আগে জ্যাক পাপিষ্ঠ ফ্রান্সিসকে অভিশাপ দিয়ে যায়, জর্ডানের মাটিতে পা দিতেই তারা ভষ্মিভূত হয়ে ছাইতে পরিণত হবে। তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সর্ণ ভান্ডারে বোঝাই ল্যাভেন্ডার গ্রীনের সোনা নিয়েও তারা কিছু করতে পারবে না আর ইতি পূর্বে লুণ্ঠন করা যে সমস্ত জাহাজের ধনসমগ্রি পেট্রার গুহায় রেখেছে সেইগুলিরও ব্যাবহার করতে পারবে না। যতদিন বাঁচবে ল্যাভেন্ডার গ্রীনেই অভিশপ্ত বাকি জীবনটা কাটাবে। আর অভিসপ্ত মৃত্যুর পরে তাকে জক্ষ হয়ে ধনরত্ন আগলে রেখে পাহারা দিতে হবে"।

এই পর্যন্ত বলে রায়ান থামলো। বছর কুড়ির ছেলে রায়ান, দুর্ভিক্ষ জনিত পরিবারের ছেলে হওয়ায় এই বয়সেই তাকে ভূপর্যটকদের গাইডের কাজ করতে হয়। তার এই গল্পঃ বাকি তিন বন্ধু বিশ্বাস করলেও অগ্নির বিশ্বাস হয়নি। কলকাতা নিবাসী অগ্নিজিত রায় ধোনি ব্যাবসায়ী বাবার একমাত্র ছেলে, তার এসব গল্পঃ কথায় কোন আসক্তি নেই। সে শুধু মদ,মেয়ে আর টাকা ভালোবাসে। আর তার ভালোবাসাকেই ভালোবাসে ধ্রুব। যদিও ঈশা তাকে বন্ধুর বেশি কিছুই ভাবেনা। ওর সারা পৃথিবী জুড়ে শুধুই অগ্নি, তাই তার এত নিকৃষ্ট গুণের টর পেয়েও, ঈশা তাকে ছাড়তে পারেনি। সে একবার ধ্রুব, অভয় আর ঈশার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বললো, "আমরা কি আজকে আপনার এই গেজাখরী গল্পঃ আর খাজনেত ফিরাউন গুহার সামনে দাড়িয়েই কাটিয়ে দেবো নাকি?" অগ্নির কোথায় সবার সম্বিত ফিরল। এতক্ষণ ওরা কেমন যেনো শস্তদশ শতাব্দীতে ফিরে গিয়েছিল। রায়ান অল্প হেসে বললো, "তা নয়, কাহিনী জানা থাকলে কাজে এগোতে সুবিধা হয়, তাই বললাম"। "কিসের কাজ" কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো অগ্নি। অগ্নির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তার হাত ধরে থাকা ঈশার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে ঠোঁটের উপর জিভ বুলিয়ে নিয়ে অন্য এক কথা বললো। "এই যে বিখ্যাত খাজনেত ফিরাউন মন্দিরটির দেখছেন, এটির কঠিন পাথরের দেওয়ালের গায়ে গ্রহিত রয়েছে প্রাচীন দালানগুলো"। কথাগুলোর শেষে, ১২ফুট চওড়া গুহা-মাথার পাথরের দেওয়ালের নিচের বালির উপর পাঁচটা ছায়া দেখা গেলো। পরমুহূর্তেই রায়ানের পিছন-পিছন অতি সন্তর্পনে তারাও গুহায় ঢুকে পড়লো। রায়ান আবার বলে উঠলো, "প্রায় চারশো বছর ধরে নাবাটিন সভ্যতা এই জায়গা জুড়ে রাজত্ব করেছে। তৃতীয় শতকের বি. সি. থেকে প্রথম শতকের এ. ডি. ওপদি রাজত্ব করে কোনো এক অজানা কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে"। যদিও রায়ানের কথা যুগলের কানে পৌঁছাচ্ছিল না। অগ্নির হাত ছুঁয়ে যাচ্ছিল পাথুরে দেওয়ালে বোলানো ঈশার আঙ্গুল গুলো। অভয় ঠোঁট উল্টে বললো, "কিন্তু আমি যে পড়েছি রোমান আক্রমণে নাবাটিন জাতি সবংশে ধংস হয়"। ধ্রুব বললো, "হা আমিও তো তাই জানি"। হাঁটতে-হাঁটতেই রায়ান বললো, "ইতিহাসের পাতায় অনেকই গুজব লেখা থাকে যেগুলোর অর্ধেকের বেশিই মিথ্যে"। ধ্রুব অভয়ের দিকে চাইতেই, মুচকি-মুচকি হেসে গলাটা একটু নামিয়ে অভয় বললো, "পিছনে দেক, একেই বলে গুহাপ্রেম"। ধ্রুব পিছনে তাকিয়েই ঈশার কোমরে অগ্নির হাত দেখে মুখ ঘুরিয়ে রায়ানের পিছন-পিছন আরো দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো।

গুহা শেষেই দুধসাদা জলকপাত। পেট্রা টউ অন্দ্রগ্নউ জলধারাটির চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। তার মাঝে জলধারাটি বয়ে গিয়ে মিশেছে দুইনদীর সঙ্গমস্থলে। দৃশ্যপটকে ঘিরে রয়েছে দি-সেতু। দেখেই বোঝা যাচ্ছে পলকা সেতু দুটি প্রাকৃতিক নির্মিত।

কিছুক্ষনের জন্যে তারা এতোটাই খুশিতে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল যে রায়ান গাইডের অন্তর্ধান লক্ষ্যই করেনি। কিছু পরেই অবশ্য সে একটা শক্ত পাথরে বসে এব ওদের ফিরে যেতে তারা দেওয়ায়, ওরা একে-একে ফিরে গেলো।

রাত্রে বনফায়ারের আগুনে মান্সাফ কাবাব ঝলসে আর মস্কো মুলের তরলে ডেস্টিনেশন টুরটার আমেজ বেড়েই চলেছে।

এত কিছুর মধ্যেই ধ্রুবের মনটা ভারাক্রান্ত, কারণ সে জানে একটু পরেই তাবুতে ঈশার সর্বাঙ্গের সাদ নেবে অগ্নিজিত রায়। সে এ ও জানে যে তারা এর আগেও বহুবার মিলিত হয়েছে, কিন্তু তাকে এত কাছ থেকে এগুলো সহ্য করতে হবে বলেই মনের গভীরে কোথাও একটা খেয়ে যাচ্ছে। ঈশা কোনোদিনও তার বান্ধবী ছিলোনা, মেয়েটা প্রথম থেকেই অগ্নির। তাছাড়া ধ্রুব নিজেও কখনো ঈশাকে ভালোবাসার কথা বলেনি। কানের কাছে অভয়ের কণ্ঠ শুনতে পেলো ধ্রুব। ছেলেটা আবার একই কথা বলছে, "ভাই বলেই দেক না কি বলে, অগ্নির থেকে তুই হাজারগুণ ভালো ছেলে, ওর টাকা থাকতে পারে কিন্তু তোর ভালো একটা মন আছে, আর তাতে ঈশা ছাড়া কেউ নেই"। আগে বহুবার কথাগুলো শুনেছে বলেই ধূর্ব এবার তেমন একটা আমল দিলোনা এই কথায়। বরং পকেট থেকে মোবাইল বের করে, ডেটাটা অন করে, গুগলে পেট্রা টউ অন্দ্রগ্নউ লিখে সার্চ করলো। যে তথ্যটা ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো তাতে ওর কৌতুহলটা আরো বেড়ে গেলো। পেট্রার গুহা শেষে এই জলকপাতটি অবস্থিত নয়, বরং গুহা অতিক্রম করে কিছু মিটার দূরত্বে পুরনো কাকোপট্রিয়া নামক জায়গার ধারা। এমনি দিনে পর্যটকদের ভিড়ে জায়গাটা গিজগিজ করে, কিন্তু আজ একদম ফাঁকা, ধূধূ জনশূন্য প্রান্তর। এই বালির শহরে, আর ধূধূ প্রান্তরের মাঝে বনফায়ার ঘিরে বসে থাকা পাঁচজনকে কালো ফুটকি ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। গুগলে সার্চ করা তথ্যগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে যাবে ধ্রুব, এমন সময় জড়ানো গলায় অগ্নি বলে উঠলো, "দ্যাস্ট এনৌফ ফর টুডে, লেট্স গো ইন টেন্ট"। ঘাড় ঘুরিয়ে চোখে জলের আস্তরণ নিয়ে ওদের দুজনকে একসাথে তাবুতে ঢুকতে দেখলো ধ্রুব। "হানিমুন বিফোর ম্যারেজ" বলেই অভয় মুখ টিপে হাসলো। অতঃপর রায়ান মুখ খুললো, আর ওদের দুজনকেও নিশিত নিদ্রায় যেতে বললো। মিনিট খানেকের মধ্যেই তাবু দুটোর আলো নিভে গেলো, আর রায়ানও বনফায়ারে জল ঢেলে দিলো। রাত্রির কালো চাদর গ্রাস করলো গোটা উপত্বকাতাকে।

পাঁচ মিনিট এপাশ-ওপাশ করে উঠে বসলো ধ্রুব। বাইরে যাবে বলে তাবুর বাইরে মুখ বাড়িয়েছে কি অভয়ের বাঙার্থ গলা পেলো। "এত ইচ্ছা সত্বেও পাইনা যে তারে, মাঝে রাতে তাই অন্যের ঘরে উকি দি বারেবারে" বলে মিটিমিটি হেসে উঠলো অভয়। ধ্রুব একটু ক্ষুণ্ণ সরে বললো, "ট্রিপে এসেছিস মজা কর, ফালতু কথাগুলো বলাটা এবার থেকে কমা, তাছাড়া ঈসাকে আমি জোর করে পেতে চাইনা"। অভয় উঠে বসে বললো "পেতে চাসনা না পাবিনা কোনটা। অগ্নির টাকা দেখেই ঈশা ওর দিকে ঝুঁকেছে বুঝলি"। বিরক্তি প্রকাশ করে ধ্রুব বললো, "সেটা ঠিক বলতে পারবোনা, কিন্তু ওকে আমি কখনোই বলিনি যে আমার ওকে ভালোলাগে, বা আমি ওকে ভালবাসি"। ঘনো অন্ধকারেও ধ্রুব দেখতে পেলো, একটা ভ্রু কপালে উঠে গেলো অভ্য়ের। সে বলল, "ভাই দেক, গাইড ছোড়াটাও যদি ভালো ভাবে লক্ষ করে থাকে, তাহলে ওউ ঈশার প্রতি তোর ক্যায়ার আর লাভটা বুঝেছে। তাই আমার মনে হয় ঈশাও নিশ্চই তোর ওকে ভালো লাগাটা ঠিকই বোঝে, কিন্তু নোটের ঢিপিটাকে ছেড়ে তোকে বিশেষ পাত্তা দিতে চায়না"। "এত কিছু আমি জানিনা আর জানতেও চাইনা" বলে ধ্রুব তাবু থেকে বেরিয়ে গেলো। অগত্যা ওপাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়লো অভয়।

তাবুর বাইরে উন্মুক্ত আকাশটাকে বিশাল একটা কালো চাদরের মতো দেখাচ্ছে, আর গোল চাঁদটাকে চকচকে রুপোলি থালার মতো, জার চারিধারে নক্ষত্র গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেনো অসংখ্য প্রদীপ জ্বেলেছে। খা-খা প্রান্তরের মাঝে ধ্রুবের কানে ভেসে এলো আসংলগ্লো নারী কন্ঠ। সেই ভেজা কন্ঠের আওয়াজে তার শরীরে স্ফুলিঙ্গের সঞ্চারনা হলো। সে ধির পায়ে এগিয়ে গেল ভালোবাসার ছোঁয়ায় ভরে উঠা তাবুটার দিকে। তাবুর কাছে যেতেই কিছু অস্ফুট শব্দ শুনতে পেলো ধ্রুব। লালা মাখানো নারী কণ্ঠে বারবার অগ্নির নামেরই উচ্চারণ শুনে ব্যার্থ প্রেমিকের চোখের কোন দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। এমন সময় তৃতীয় তাবুতে আলোর আভাস পেলো ধ্রুব। কালো চাদরে আপাদমস্তক নিজেকে মুরে রেখেছে রায়ান। তাকে লন্ঠন হতে তাবু থেকে বেরিয়ে পেট্রা গুহার দিকে যেতে দেখে ধ্রুব তার পিছু নিলো। একসময় রায়ান থমকে দাড়িয়ে গেলো। সাগরের দিকে মুখ করে লন্ঠনটা বালির উপর রেখে, কোমরে বাধা হতের পাতার সাইজের একটা ছোট্ট ঘরা বের করলো। তারপর সেটার থেকে অল্প-অল্প জল নিজের সর্বাঙ্গে ছেটানো হয়ে গেলে, সেটিকে দুহাতে মাথার উপর ধরে দুর্বোধ্য কোনো ভাষায় কি যেনো আওড়াতে লাগলো। ভাষাটা অপরিচিত হলেও, মন্ত্রের মতো শোনাচ্ছে। ধ্রুবেকে ক্রমশ কেমন যেনো আচ্ছন্নতা গ্রাস করছে। কিন্তু মন্ত্র শেষ হতেই সামনের দৃশ্যে ধ্রুবের আচ্ছোনভাব কেটে একদম সজাগ হয় গেলো। একজোড়া নয়নে সে দেখলো সাগরের জলে এক অতিকায় মনুষ্য চেহারার ধরন খেলে যাচ্ছে। মুহুর্তের মধ্যেই সেই জলোজ শরীর পূর্ণ মানুষের রূপ নিলো। পরপর আরো কতকগুলো। সবারই পরনে গাড়হ সবুজ ও কালো ঝোলা পোশাকের আস্তরণ। মাথায় কঙ্কাল চিন্হ অঙ্কিত করা কালো-কালো টুপি। ফ্যাট্টা বাধা একটা করে চোখ। কোমরে বিভিন্ন রকমের চকচকে অস্ত্র। ধীরে-ধীরে তারা রায়ানের দিকে এগোতে লাগলো। রায়ান কিন্তু স্থির দাড়িয়ে আছে। তারা গোল করে ঘিরে গেলো রায়ানকে, তবুও রায়ানের মনে কোনো ভয় নেই। সে নিজে একসময় নেতৃত্ব দিয়ে পিট্রর ধংশস্তুপের দিকে এগিয়ে চললো যে দিকটা পর্যটকদের ঘোড়ার জন্যে নিষিদ্ধ। কালো-কালো ভয়ংকর দর্শনধারী দস্যুর দল তাকে অনুসরণ করল। কিন্তু তাদের কারোর পা বলি ছুচ্ছে না। তারা যেনো বাতাসে ভেসে যাচ্ছে রায়ানের পিছু-পিছু। অনেকটা দুর থেকে ধ্রুব তাদের পিছু নিলো। তারপর একটা ধংশস্তুপের সামনে রায়ান দাড়াতেই, বম্বেটের দলটাও না এগিয়ে শূন্যে ভাসতে লাগলো। ধ্রুব এত দুর থেকে কিছু বুঝতে না পারলেও গুহামুখ যে খুলে যাচ্ছে সেটা ঠিকই বুঝতে পারলো। বম্বেটের দল তাদের পথনির্দেশকে অনুসরণ করে ঠিক সেই ভাবেই হাওয়ায় ভাসতে-ভাসতে ঢুকে পড়ল।

গুহামুখে দাড়িয়ে ধ্রুব মনে মনে ভাবলো নিচে যাওয়া হয়তো ঠিক হবে না একা। ঘটনাটা বন্ধুদের বলবে কিনা ভাবতেই দ্বিতীয় তাবুর কথাটা মনে পড়তেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। একবার চোখ বন্ধ করে বড়ো একটা নিঃশ্বাস নিয়ে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটটা জেলে অতি সন্তর্পনে অনেকটা নিচে নামতে লাগলো। ভাঙ্গা সিড়ি অতিক্রম করে অনেকগুলো রাস্তা দেখতে পেলো। যদিও ওগুলোকে রাস্তা না বলে ছোটো ছোটো গুহাই বলা যায়। বেসমেন্টের সবকটি গুহার একটা ব্যাপারে খুব মিল ছিল, আর সেটি হলো গুহাগুলির মুখ ভরে আছে ঝকঝকে হলদে আভায়। কোনটায় ঢুকবে বিবেচনা না করতে পারে সিড়ির দিকে এগুতে যাবে এমন সময় নারকীয় হাসির শব্দে সে চমকে ওঠে। তার সর্বাঙ্গ ঘর্মাক্ত হয়ে গেছে। তবুও যেদিক দিয়ে আওয়াজটা এসেছে সেই দিকেই সে এগিয়ে যায়। আওয়াজের উৎস গুহামূখে দাড়াতেই হিরাখনী ও সর্ণভান্ডার দেখে তার চোখ ধাঁধিয়ে যায়।

নিজেকে সামলে নিয়ে, লোভ সম্বরণ করলো ধ্রুব। বম্বেটের দল এখনও রায়ানের কোনো ক্ষতি করেনি। এরা যা হিংস্র, জন্তুর চেয়েও অধম। মানুষ খুন করাটা এদের মশা মারার মত একটা কাজ। তাউ রায়ানকে কিছুই করেনি কেনো? এই প্রশ্নটা ধ্রুবের মাথায় আসতেই উত্তর টাও মাথায় খেলে গেলো। ক্যাপ্টেন জ্যাকের অভিশাপে এরা অশরীরী জক্য হয়ে মুদ্রভান্ডার পাহারা দিচ্ছে, কিন্তু একটি মুদ্রাও ছুঁতে পারছেনা। আর কোনো জাদু বলে এদের নিশিতে জাগিয়ে তুলে এদের দাড়ায় গুহা খুলিয়ে একটু-একটু করে মুদ্রাগুলো করায়ত্ব করছে রায়ান গাইড। মন্ত্র আর ঘরার জল নিশ্চই ভীষণ মাত্রায় পবিত্র তাই পাপিষ্ঠ বম্বেটের দল রায়ানের কোনো অনিষ্ট করতে পারছে না। ঘটনার উপসনহার নিজের মনে ভেবে নিয়েই মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটটা আবার জেলে পা টিপে সিড়ি দিয়ে সোজা উপরে উঠে উন্মুক্ত আকাশের নিচে বেরিয়ে এলো। তাবুতে ঢোকার আগে পিছন ফিরতেই দেখে ভয়ংকর দলটা সাগরের দিকে এগোচ্ছে। দৃশ্যপট আরো আকৃষ্ট করার ধ্রুব তাবুতে না ঢুকে সেখানে দাড়িয়েই দেখতে লাগলো আস্তে-আস্তে বম্বেটের দল সাগরে বিলীন হয়ে গেলো। রায়ানকে তাবুর দিকে ফিরতে দেখেই ধ্রুব তাড়াহুড়ো করে তাবুতে ঢুকে শুয়ে পড়লো। দের-দু মিনিট চোখ বুঝে আসে সে, কিন্তু তার মনে হতে লাগলো একজোড়া রক্ত রঞ্জিত চোখ যেনো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তবুও হাওয়াও ভারী হয়ে উঠেছে। সে এতটাই ভয় পেয়েছে যে চোখ খুলতে পারছে না। একসময় তাবুর ভিতর আবহাওয়া হালকা হলো। ধ্রুবের ভয়টা এখনও কাটেনি, কিন্তু এবার ছেলেটার চোখের পাতা দুটো ভারী হয়ে এলো। ঘুম্পরির কাঠি ছুঁয়ে গেলো তার চোখজোড়ায়।

কয়েক ঘনটার মধ্যেই প্রথম সূর্যেকিরণ দেখা দিল পেট্রার গুহামাথায়। ভারী কণ্ঠে নিজের নাম শুনে আধবোযা চোখে দেখলো অগ্নি তার পাশে বসে আছে। জড়ানো গলায় "সকাল হয়ে গেছে নাকি" বলতেই অগ্নি বললো "কাল রাত জাগলাম আমি আর সকালে পরে পরে ঘুমাচ্ছিস তুই"। ধ্রুব চোখ ডলে উঠে বসতে-বসতে বললো, "কেনো-রে, রাত্রে ভালো ঘুম হয়নি তোর"। "ঈশা ঘুমোতেই দিলো না"। বলেই ধ্রুবের বেজার মুখটা দেখে অগ্নি আবার বলে উঠলো, "আমার তাবুতে গিয়ে দেক ও মরার মত ঘুমোচ্ছে একদম তুই যেমন ঘুমাচ্ছিলি। ওকে দেখে মনেই হবে না কাল সারা রাত আমার নিচে শুয়েছিল"। বিরক্ত কণ্ঠে ধ্রুব বলে উঠলো, "কি বলছিস বল তো। দেক এটা তোদের পার্সোনাল ব্যাপার, সবার সামনে এক্সপোজ করার কি আছে"। পকেট থেকে সিগারেট বের করে তাতে অগ্নি সংযোগ করে একটা লম্বা টান দিয়ে অনেকখানি ধোঁয়া ছেড়ে অগ্নি আবার বললো, "রাগ হচ্ছে ঈসাকে ছুঁতে পারিসনি বলে। আসলে এতে তোর কোনো দোষ নেই ভাই, ওরকম ডাবকা তন্বী দেখলে যেকোন পুরুষেরই চরিত্র স্খলিত হতে বাধ্য। তবে তোর এত দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। ছুতে ওকে তুইও পারবি। আমি ভাই ছোটো থেকেই খুব উদার, তার প্রমাণ তোরা ফার্স্ট ইয়ার থেকেই পাচ্ছিস, এখনও পাচ্ছিস দেখ। ট্রিপে একটুও পেমেন্ট করতে দিয়েছি তোদের বল, এমনকি টিকিটেরও না। সুতরাং ভোগের প্রসাদ তুইও পাবি, কিন্তু আমার খাওয়ায় পর"। অগ্নির কথায় রক্তবর্ণ হয়ে উঠলো ধ্রুবের চোখ দুটো, "ইল মেন্টালিটি তোর অগ্নি, শেমলেশ তুই। যাকে ভালবাসিস, যাকে বিয়ে করবি, তার সম্মন্দে এসব নোংরা কথা বলিস কীকরে"। ধ্রুবের কোথায় অনেকটা ধোঁয়া যেনো অগ্নি গিলে ফেললো। তারপর বদমাইশি হাসি হেসে বললো, "দ্বারা-দ্বারা-দ্বারা তোর কথাগুলো একটু মাথায় সাজিয়েনি। শোন ভাই আমার না লাইফে মেয়েছেলের অভাব নেই বুঝলি। এরকম অনেকেই প্রতি রাতে আমার নিচে শুয়েছে আর সকালে বেরিয়ে গেছে। ওইসব ভালোবাসা, বিয়ে করা তোদের মত মন ভাঙ্গা ব্যার্থ প্রেমিকরা করে, এই আগ্নিজিত রায় ওসব সাব-স্ট্যান্ডার্ড মেয়েদের বিয়ে করে না"। বৃদ্ধি পেল ধ্রুবের রাগটা। সে প্রায় চেচিয়ে উঠে বললো, "তুই কাদের কথা বলছিস আমি জানিনা, কিন্তু ঈশা ওরকম মেয়ে নয়, ওর ব্যাপারে এসব কথা আমি আর যেনো না শুনি। ও তোকে সত্যিই খুব ভালোবাসে। প্লীজ তুই ওকে ডিচ করিস না। সি উইল নট এবেল টু বিয়ার দিস"। অগ্নি শান্ত গলায় বললো, "রিল্যাক্স ব্র, সবই প্যাকেজের কামাল। এনিওয়েস, তুই ঈসাকে ডেকে দে, আমি দেখি অভয় সাগর কিনারে বসে কার চিন্তায় এত মগ্ন"। কথাগুলো বলেই অগ্নি তাবু থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটতে থাকে সাগরপাড় লক্ষ্য করে। ধ্রুবও আর দেরি না করে পাসের তাবুতে ঈসাকে ডাকতে গিয়েই মেয়েটার নগ্ন শরীরটা দেখে চোখ সরিয়ে নেয়। অগ্নির উপর রাগ হয়। কিন্তু রাগ সম্বরণ করে তাবুতে ঢুকে একটা চাদরের আস্তরণে সুকোমল কায়াটি গলা ওপদী ঢেকে দেয়। একটু আগে বলা অগ্নির নোংরা কথাগুলো মনে পড়তে থাকে। সে মনেমনে ভাবে একবার যদি ঈসাকে সে নিজের মনের কথাটা বলতে পারতো। যাই হোক এখন তো আর কিছুই করার নেই তার। আলতো হাত ছুঁইয়ে দিলো ঈশার মাথায়, তারপর সকাল হয়ে গেছে বলে ডাকতে লাগলো। ডাকতে ডাকতে ধ্রুব ভাবলো গতকাল রাত্রের ওই বিভীষিকার কথা অভয় বা অগ্নিকে বললে ওরা বিশ্বাস করবে না, কিন্তু ঈশার তো অকাল্টে ইন্টারেস্ট আছে, ও নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবে। ঈশা আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসতেই চাদর কোমরে পড়ে গেলো। ঈশার খোলা শরীরের ঊর্ধ্বাংশে চোখ পড়তেই ধ্রুব রেগে গিয়ে বললো, "কি হচ্ছে এসব, এত মজে গিয়েছিলিশ যে জমা কাপড়ের খেয়াল নেই"। ঈশা তাড়াতাড়ি নিজেকে চাদরের আস্তরণে মুরে নিয়ে অতি সাভাবিক ভাবে বললো, "আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি ধ্রুব। তুই যখন আমায় ডাকলি, আমি অগ্নি ভেবেছিলাম তাই ড্রেসের দিকে অত খেয়াল করিনি। কিন্তু অগ্নি কোথায়"। "ওরা তো উত্তাল সমুদ্র তরঙ্গ উপভোগ করছে, কিন্তু আমার তোকে একটা খুব দরকারী কথা বলার আছে"। ধ্রুবের মুখ দেখে ঈশার মনে হলো ছেলেটা হয়তো সত্যিই কোনো সিরিয়াস কথা তাকে বলতে চায়। তাই সে জামা-কাপড়ের দিকে অত খেয়াল না করে চাদরে আবৃত থেকেই ওর কথা শুনতে চাইলো। কিন্তু গত রাত্রের ওই বিভীষিকার কথা শেষ হতেই বেশ গম্ভিব ভাবে ঈশা বললো, "নাইস প্লট। তোর কেলি আছে বলতেই হবে। এই সাত সকালে আমার গায়ে কাঁটা দিয়েছে। বাই দা ওয়ে, রায়ান গাইডের সাথে কি তোর কোনো ঝামেলা হইছে। আই মিন ছেলেটাকে ভিলেন বানিয়ে দিলি হটাৎ। বাট ইওর ইমাজিনেসন পাওয়ার ইস রিয়েলি আ্যপ্রিশিয়েবেল"। কোথা শেষে ঈশার মুখে হাসি দেখে ধ্রুব বললো, "তুইও বিশ্বাস করছিস না আমার কথা, ধুর তাহলে আর কাকে বলব। কিন্তু আমার ঐ রায়ান ছেলেটাকে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না"। "আচ্ছা ঠিক আছে বিশ্বাস করলাম তোকে, বাট এখন তো ওদের কাছে চল, আদারওয়াইজ ওরা আমাদের বাদ দিয়েই ব্রেকফাস্ট করে নেবে দেখবি"।

দুপুর ওপদী ঘোরাঘোরি করে, রায়ানকে এত ভয় পাচ্ছিল ধ্রুব যে কপট পেটবেথায়ে তাবুতে বিশ্রাম নিতে চাইলো। কিন্তু অগ্নিজিতের এত একরোখা ভাব যে বন্ধুর সামান্য একটু পেটবেথায়ে একদিনও নিজের ফুর্তি নষ্ট করবে না। বেগতিক দেখে অভয় বললো, "ঠিক আছে তোরা বরং ঘুরে আয় আমি ধ্রুবের কাছে থাকছি"। ঈশা ধ্রুবের কাধে একটা হাত রেখে বলল, "আমরা সবাই একসাথে এখানে ঘুরতে এসেছি, এভাবে একজনকে ফেলে আমরা আনন্দ করবো কিভাবে। তুই যদি একদমই হাঁটতে না পারিস তাহলে আমরা কেউই এখন আর কেভে যাবনা। আগে তোর পেইনটা কমুক তারপর না হয় এভনিংয়ে কেভস্কে যাবো"। ঈসাকে ধ্রুবের প্রতি এত ক্যারিং হতে দেখে অগ্নি ওর ডান বাহু ধরে এক হাচকা টান মেরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো, "নো ওয়ে, আই ক্যান্ট স্টেয় ব্যাক, নাইদার ইউ উইল"। ঈশা বিরক্ত হলো। ও বললো, "তুই ঘুরতেই প্যারিস অগ্নি বাট আমি ধ্রুবকে ছেড়ে যাবনা। হি ইজ ম্যাই ফ্রেন্ড আফটার অল, আর ওর এত শরীরটা খারাপ করছে যে ও সোজা হয়ে দাড়াতেই পারছে না। ওকে একা ফেলে কীকরে যাবো। আই ক্যান্ট বি সো সেলফিশ"। কথাগুলোর শেষেই অগ্নির মুখ দেখে অভয় আন্দাজ করতে পারছিল পরবর্তী সিচুয়েশনটা। এবার তাই নিজে থেকেই বললো, "তোরা বরং যা, কেভ এক্সপ্লোর করে আয়, আই উইল বি উইথ হিম"। অগ্নির পাথুরে মুখের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে ঈশা বললো, "সেটা কখনোই হবে না অভয়, আমরা গ্রুপে এসেছি, একাএকা টুর এনজয় করতে আসিনি, সো তোদের ছেড়ে একাএকা ঘোড়ার জাস্ট কোনো মানেই হয়না"। কথা শেষ না করেই ঈশা ধ্রুবের আরো কাছে গিয়ে বললো, "প্লীজ টেক রেস্ট ধ্রুব, টেন্টে চল, টেম্পোরারি রিলিফ তো পাবি, নইলে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে মুশকিলে পড়বো আমরা সবাই"। অগ্নি ভৎসনার সরে ঈসাকে বললো, "আমার ধর্যচুতি ঘটলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। বাড়াবাড়ি না করে চুপচাপ কেভে চল আমার সাথে"। যদিও ঈশা খোলা মনে, প্রুত্তরে খুব সহজভাবেই বলেছিল, ধ্রুব সুস্থ না হওয়া ওপদি সে তার পাশ থেকে নড়বে না, তাতে অগ্নির রাগ হোক আর মাথা গরম করুক তাতে তার কিছু যায় আসেনা, কিন্তু এইটুকু কথাতেই অগ্নির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। সজোরে এক চপেটাঘাত করলো ঈশার বা-গালে। তারপরেই তার সুকোমল বাহুজরা চেপে ধরলো নিজের একজোড়া মুষ্টিতে। দাঁতে দাঁত চেপে অকত্ত ভাষায় বললো, "আই ওন্ট টলারেট ইওর আনলিমিটেড বর্বারিস্ম ঈশা। তুই আমার মানে শুধুই আমার। আমার কথাই শুনে চলবি। তোর কিসের কমি রেখেছি আমি যে তোকে অন্য পুরুষের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করে দৈহিক চাহিদা মেটাতে হবে"।

ধ্রুবের এতক্ষনে সব ভয় কেটে গেছে। সে এক পা এগিয়ে ঈসাকে অগ্নির আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে ওদের মাঝে দাড়িয়ে বললো, "আনলিমিটেড বর্বারিস্টিক নেচারটা কার সেটা ভালই বোঝা যাচ্ছে"। ঝামেলা যে এবার একটা পাকবেই সেটা বুঝতে পেরে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জলের ধারা মুছে নিয়ে ঈশা বললো, "ধ্রুব প্লীজ ডোন্ট ইন্টারফেয়ার, এটা আমাদের পার্সোনাল ব্যাপার, ইউ বেটার ডোন্ট কাম ইন-বিটুইন"। ঈশার কোথায় ধ্রুব চুপ করলো। তারপর অগ্নির দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ঈসাকে বললো, "সরি, আমার জন্যেই তোকে এত হুমিলিয়েশন ফেস করতে হলো"।

ধ্রুবকে তাবুর দিকে চলে যেতে দেখে অভয়ও ওর পিছু নিলো। অভয় ইতিমধ্যে বুঝে গেছে পেটব্যথার কথাটা ধ্রুবের নিছক একটা মিথ্যে কথা। তবুও সে এই ব্যাপারে কোনো কথা না বলে অন্য এক প্রশ্ন করলো। "কেনো শুধু-শুধু ওদের মধ্যে কথা বলতে গেলি ? ওদের ব্যাপার ওরাই মিটিয়ে নেবে। তোর ভিলেন হওয়ার কোনো দরকার ছিলনা"। "অগ্নি সুইটেবল না ঈশার জন্যে"। ধ্রুবের এই ছেলে ভোলানো কোথায় অভয় বিরক্ত হলো। সে বললো, "তোর তাতে কি দরকার। সে ওরাই বুঝবে কে কার জন্যে সুইটেবল, আর কে তা নয়। দেক ভাই কাউকে ভালোবাসা খারাপ নয়, কিন্তু যে তোকে ভালবাসেনা......"। অভায়কে কথা শেষ করতে না দিয়ে ধ্রুব বলে উঠলো, "আমিও এতদিন তাই ভাবতাম, কিন্তু আজ বুঝলাম ঈশা সত্যিই আমায় ভালোবাসে, নইলে আমার অসুস্থ্যতার কথা চিন্তা করে অগ্নির সাথে ও কথা-কাটাকাটি করতোনা"। অভয় বললো, "তো কি হয়েছে, তুই ওর বন্ধু, তাই ও তোর হেল্থ নিয়ে কনসার্ন ছিলো, এর বেশি কিছুই না। এতই যদি তোকে লাইক করতো তাহলে এতকিছুর পরেও দিব্যি অগ্নির হাত ধরে ঘুরতে বেরত না"।

আবার ফিরে এলো রাত। বনফায়ার ঘিরে পেট্রার বুকে পাঁচটা কালো ফুটকি। অগ্নির মন্সাফ কাবাব শেষ হতেই তাকে মস্কো মূলের বোতলটা ধরতে দেখেই ধ্রুব উঠে দাড়ালো। "কি হলো রে, উঠে পড়ল কেনো" বলতেই, অভয়কে ধ্রুব বললো, "আমার পেট ভরে গেছে, আমি একটু হাটাহাটি করে শুয়ে পড়ব, অ্যান্ড ডোন্ট কাম ফলোয়িং মী"। এই কথা শুনে অভয়ও তাকে একাই উত্তাল তরঙ্গ তীরে একাই ছেড়ে দিয়ে নিজের তাবুর দিকে পা বাড়ালো। যুগলও নিজেদের তাবুতে ঢুকে পড়লো। জনশূন্য প্রান্তরের মাঝে একমাত্র রায়ান জেগে রইলো।

ঝপ করে কিছুটা জল পড়লো আর বনফায়ারের আগুন নিভে গেলো। ঘন্টাখানেক পরে একটা কোমল হাতের স্পর্শ অনুভব করলো ধ্রুবের কাঁধ। পিছনে ফিরতেই রাতের পোশাকে দাড়িয়ে থাকা ঈসাকে দেখলো। কালো নেটের ক্লোকের আস্তরণের নিচে ফর্সা দেহতে কোনো অন্তর্বাস নেই। ক্লোকটা একটা চাদরের মত গায়ে জড়িয়ে রেখেছে মেয়েটা। খোলা কব্জি থেকে কলহাই পর্যন্ত খাড়া রোমকূপ গুলোর দিকে নজর গেল ধ্রুবের। স্নিগ্ধ হাওয়ায় মেশা বালির গন্ধে, ভাসাভাসা কাজলঘেরা চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে সে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। পরম আদরে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলো তাকে। তবে ধ্রুব আশা করেনি যে, সে ও পরম স্নেহের আলিঙ্গন পাবে। এখন দুটি মনে উত্তাল তরঙ্গ ওলোট-পালোট হচ্ছে, তবুও দুজনেরই মুখে কোনো কথা নেই। ঈশার মনে হতে লাগলো, সে বোধয় অগ্নিকে ঠকাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে দাড়িয়ে সে দৈহিক চাহিদা আর ভালোবাসার স্পর্শের পার্থক্যটাও বুঝতে পারছে। এমনটা মনে হতেই আরো শক্ত হলো তার আলিঙ্গন, চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো। আরো আস্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো ধ্রুবকে। ধ্রুব নিজেও চোখ বন্ধ করতে গিয়ে থমকে গেলো। রায়ানের তাবুতে মৃদু লম্পের আলো দেখে। আলিঙ্গন আলগা হলো। তারপর খুলে গেলো। আঙ্গুলের ইশারায় ঈসাকে পিছন ফিরতে বললো ধ্রুব। যুগলের চোখে পড়লো কালো চাদরে আপাদমস্তক মুরে, লন্ঠন হাতে, রায়ান গাইড তাবু থেকে বেরিয়ে পা-পা করে তাদের দিকেই আসছে। ধ্রুব ঈসাকে ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের উপর রেখে চুপ করে থাকতে বললো, আর চুপিসারে তাকে নিয়ে বালির ঢিপির পিছনে লুকিয়ে পড়লো। তারপর তারা একটার পর একটা, যে ঘটনা গুলোর সাক্ষী হতে লাগলো, তাতে ধ্রুবের গত রাত্রের ভয়টা বেশ বেড়ে উঠলো, আর ঈশা তো পলকহীন চোখে মেলে পাথর হয়ে গেছে। ধ্রুবের তাকে সকালে বলা কথাগুলোর এক বর্নও যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ একের পর এক সে পেয়ে চলেছে। অবশেষে, কালো কালো ভয়ংকর দর্শনধারী দস্যুর দল যখন রায়ানকে অনুসরণ করে ভুপর্যটকদের ঘোড়ার নিষিদ্ধ পেট্রা প্রান্তের দিকে এগোলো, ঈশা বাহুতে ধ্রুব একটা আঙ্গুলের খোঁচা খেলো। ইশারায় ছেলেটা বোম্বেটের দলটাকে অনুসরণ করতে বললো।

এতক্ষনে ঈশার বাকশক্তি লোপ পেয়েছে। সে শুধু ধ্রুবের নির্দেশাবলীর অনুসরণ করছে। আর তাদের অনুসরণ করছে একজোড়া চোখ, কিন্তু তারা ঘুণাক্ষরেও তের পাচ্ছে না। গত রাত্রে ঠিক যেভাবে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটের সাহায্যে, অতি সন্তর্পনে গুহামূখ থেকে ভিতরে নেমে যাওয়া ভাঙ্গা সিড়ি অতিক্রম করে অনেকগুলি গুহামুখের সম্মুখে হাজির হয়েছিল। আজও ঠিক তেমন ভাবেই নেমে গেলো, কিন্তু সঙ্গে ঈশা থাকায়, আজ ধ্রুব একটু বেশি মাত্রায় সতর্ক। গুহাগুলোর মুখ দিয়ে বেরনো ঝকঝকে হলদে আভায়ে ঈশার চোখ ধাঁধিয়ে গেলো।

এমন সময় গত রাতের সেই বিভীষিকাময় হাসির শব্দ ধ্রুবের কান ছুঁলো। হৃৎপিন্ডটা একবার গলার কাছে ডিগবাজি খেয়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েও বেরোলো না। ঈশার দিকে চাইতেই, তার ফ্যাকাশে মুখটা দেখে সে বুঝলো মেয়েটার আর চলার শক্তি নেই। ঈসাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো, "সরি ঈশা, আই এম রিএলি সরি, আমি শুধু চেয়েছিলাম অন্তত তুই আমায় বিশ্বাস কর। তাই তুই অগ্নিকে পাশ থেকে উঠে যখন এলি, নিজের অনুভূতি গুলোর প্রমাণ দেখানোর ইচ্ছা হলো তোকে। কিন্তু তুই যে এত ভয় পাবি সেটা বুঝতে পারিনি। ভয় আমিও কাল খুব পেয়েছিলাম। আমরা কালই এখান থেকে চলে যাবো, ডোন্ট ওরি"।

কথা শেষ করেই ঈসাকে বুকে জড়িয়ে রেখেই পিছন ফিরে সিড়ির দিকে এগোলো। কিন্তু সিড়ি দিয়ে দু-পা উঠতেই মুখে কিসের যেনো আলো পড়লো। যুগলের একটা করে হাত আপনা থেকেই উঠে এলো তাদের মুখের সামনে। আলো ঢাকার চেষ্টা করতে করতেই চেনা ক্ষিপ্ত একটা গলার আওয়াজ পেলো তারা। আওয়াজটা বলে উঠলো, "নোংরামির সীমারেখা সব পেরিয়ে ফেলেছিস দেখছি। ঈসাকে পাশে অনুভব না করতে পেরেই আমার ঘুম ভেংগে যায়। তাবু থেকে একটু মাথা বের করতেই দেখ হাত ধরাধরি করে তোরা কোথায় যেনো যাচ্ছিস। তখনি তোদের পিছু নিলাম। আর এখানে এসে দেখি লীলা খেলায় ব্যস্ত তোরা। সকালে ঈশার জন্যে তোর গলায় অত দরদ শুনেই আমার বোঝা উচিত ছিলো। আমার টাকায় ডেস্টিনেশন টুর করবি আর আমারই গীরফ্রেন্ডের মজা নিবি ?"

এতক্ষনে ঈশা ধ্রুবকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ইতিমধ্যে গলায় সে কিছুটা জোর এনে বললো, "ফার্স্ট ইউ ড্রপ অফ দা লাইট, অ্যান্ড সেকন্ডলি, লীলা খেলা করা যার নিত্য কাজ, আজ কিনা সেই অন্যকে জরিপ করছে"। এ হেনো কোথায় মেজাজ হারিয়ে, ফোনটা ছুঁড়ে মাটিতে আছার মারলো অগ্নি। কিন্তু ছোটো গুহাগুলীর মুখ থেকে আলোর মিছিল অন্ধকার হতে ডেনি জায়গাটায়। অগ্নি তরতর করে সিড়ি দিয়ে নেমে ঈশার দিকে একটা হাত তুলে তেড়ে গেলো চর মারার ভঙ্গিতে। কথাবার্তায়, ঈশার সমর্থন পেয়ে ধ্রুবের শক্তি বেড়ে গেছে, তাই অগ্নিকে ঈসার উপর প্রহার করা থেকে সে আটকে দেয়। খপ করে এসে অগ্নির হাতট

 ধরে নিয়ে বলে, "সকালেও আমি তোকে থামাতে পারতাম, কিন্তু তাতে হয়তো তুই ওকে সন্দেহ করবি, তাই কিছু করিনি, কারণ তোদের সম্পর্ক ভাঙতে চাইনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোকে তখন আটকালে, তোর এত বাড় বার্ত না।" জ্বলন্ত ভাটার মতো দুটো চোখে ভস্ম করার চাহনিতে ধ্রুবের দিকে তাকালো অগ্নি। তারপরেই তার মুখে খেলে গেলো একটা কুটিল হাসি। ট্রাউজারের পকেটে ডান হাত ঢুকিয়ে ক্ষণিকের মধ্যে বের করে আনলো একটা পিস্তল, আর বাঁ হাতে চেপে ধরলো ঈশার গলা। ধ্রুবকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললো, "কি যেনো করবি বলছিলিস আমায়"। ঈশার মুখের দিকে তাকিয়ে ধ্রুবের হাঁটু দুটো কেপে উঠলো। ওর অসহায় অবস্থা দেখে অগ্নি খুব জোড়ে হেসে উঠলো। গুহার দেওয়াল জুড়ে সেই হাসির প্রতিধ্বনি হলো। কিন্তু প্রতিধ্বনিতে মিলে আছে একাধিক কণ্ঠস্বর। অগ্নি তো একাই কান ফাটানো হাসি হাসলো, তাহলে তার হাসি চাপিয়ে একাধিক কন্ঠের হাসির শব্দ কীকরে এলো। সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিতে অগ্নির দিকে তাকাতেই, তার বিস্ফারিত চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনে ফিরলো। আর ফিরতেই মনে হলো, তার শরীরের চামড়া ভেদ করে কেউ অজস্র বরফ ঠান্ডা তির বিদ্ধ করলো। গাড়হ সবুজ-কালো পোশাকের আস্তরণে মোরা মনুষ্য মূর্তি মাটির থেকে কিছুতে উপরে হাওয়ায় ভেসে আছে। মাথায় কঙ্কাল চিহ্নে অঙ্কিত করা

কালো-কালো টুপি সবার পরনে। ধ্রুবের জানা আছে ওরা কে। আর ওদের মধ্যে দাড়িয়ে থাকা কালো চাদর গায়ে দেওয়া ছেলেটাকে তো তারা সবাই চেনে। ততক্ষনে অগ্নি ঈশার গলা ছেড়ে দিয়েছে। পিস্তল টাও কোন সময় হাত থেকে খসে পড়েছে সেটা সে লক্ষ্যই করেনি। "রায়ান!" অগ্নির মুখ থেকে নামটা বেরোতেই দুর্বোধ্য কোনো ভাষায় আদেশেসের ভঙ্গিতে কিছু বলতেই রায়ানের চারপাশ থেকে ভাসমান অবস্থায় ত্রয়ীর দিকে ধারালো অস্ত্র তুলে এগিয়ে গেলি। একটুও সময় নষ্ট না করে অগ্নি-ঈশার হাত চেপে ধরে দিকভ্রান্ত ভাবে ছোটো একটা গুহামুখে ঢুকে পড়ল। সর্ণভান্ডারে ভরা এই ছোটো গুহায় অগ্নির চক্ষু স্থির হয়ে গেলো। সে ধ্রুবের হাত ছাড়িয়ে সর্ণমুদ্রাগুলি ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। এত বিপদ সঙ্কুল অবস্থাতেও তার লোভ তাকে হাসাচ্ছে। আরো বড়লোক হওয়ার ইচ্ছা তাকে চেপে ধরলো। ধ্রুব-ঈশা তাকে দুদিক দিয়ে চেপে ধরে সরিয়ে আনতে ও বোঝাতে অক্ষম হলো যে বেছে থাকলে তবেই তো সর্ণভান্ডার কাজে দেবে। ওদের এক ধাক্কায় সরিয়ে দিলো অগ্নিজিতের লোভ। ইতি মধ্যে হার হিম করা ভাসমান বিভীষিকার দলও ঢুকে পড়েছে সেই সর্ণভান্ডারে সুসজ্জিত ছোটো গুহায়। আবার দুর্বোধ্য ভাষায় মন্ত্র উচ্চারণটা তাদের দিকেই এগোতে লাগলো, তার মাঝে কান ফাটানো একাধিক হাসির শব্দ। ঈশার মিশে যেতে ইচ্ছা করলো ধ্রুবের শরীরের মধ্যে। কম্পিত গলায় এই প্রথম সে বললো, "প্লীজ সেভ হিম ধ্রুব"। ধ্রুব একপা এগিয়ে অগ্নিকে ডাকার চেস্টা করবে কিনা ভাবতেই দাড়ালো এক তরবারির কপে বড়লোক ব্যাবসায় বাবার লোভী ছেলের দেহ আর মস্তক আলাদা হয়ে গুহামেঝেতে পড়ে গেলো। কিছুটা রক্ত ছিটকে পড়ল ছেলেমেয়ে দুটোর মুখেও। ধ্রুব বুঝতে পড়লো এবার যদি সে সাহস না করে এগোত

 পারে তাহলে আর জীবনে এই সুযোগ পাবেন। এই ভেবে দুর্বোধ্য ভাষায় মন্ত্রটা আবার শুরু হতেই সে একটা অবিস্মরণীয় কাজ করে বসলো। মন্ত্র উচ্চারিত বেক্তিতির কোমরে বাধা ছোট্ট ঘড়াটা এক টান মারে নিয়ে নিলো। সেই ঘড়ার তরল ঈশার এবং তার নিজের শরীরে ছিটিয়েই মেয়েটার হাত ধরে ভাসমান দলটার মধ্যে দিয়েই এক চুট দিলো। হতচকিত রায়ান সেখানে দাড়িয়েই দুর্বোধ্য ভাষায় সম্ভবত ভাসমান দলটাকে কিছু আদেশ করে বললো। কিন্তু তারা তার আদেশ অগ্রাজ্য করে ঘড়ার নতুন মালিকে অনুসরণ করলো। ঈশার হাত ধরে উন্মুক্ত আকাশের নিচে দাড়াতেই ধ্রুবের আরো কিছুটা সাহস বেড়ে গেলো। ঈশার চোখে জিজ্ঞাসু ভাব দেখে ধ্রুব বললো, "আর একটু কাজ বাকি আছে"। ভাসমান দলটার সদস্যরাও ধীরেধীরে ওদের ঘিরে দাড়াতে লাগলো। আর একবার মেয়েটাকে নিয়ে ছুটলো ধ্রুব সাগরপ্রান্তে। পিছনে ধেয়ে চলেছে ভাসমান দলটাও। তার পিছনে রায়ান।

ছোটো একটা বালির ঢিপির পাসে ঈসাকে বসিয়ে সে আবার ছুটলো সাগরপ্রন্তে। রায়ানের নারকীয় কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে তার কানে। সে তাকে বারবার থানার জন্যে হুমকি দিতে লাগলো। কিন্তু ধ্রুব বালির উপর দিয়ে ছুটে চললো। সাগরপ্রন্তে গিয়ে দাঁড়ালো। আর তাকে ঘিরে রইলো ভাসমান দলটাও। রায়ান ঠিক যখন তার তিন গজের মধ্যে এসেছে তখন সে প্রশ্ন করলো, "কিভাবে এদের শেষ করবো বলো"। কিন্তু রায়ান উদভ্রান্তের মত ঘড়াটা চাইছে দেখে, ধ্রুব আবার বলে উঠলো, "এদের কি অর্ডার দিয়েছিলে, এরা কেনো অগ্নিকে মারলো। ও যেমনি হক, ছেলেটা আমার বন্ধু ছিল। সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে আমরা একসাথে। কেনো মারলে বলো। না বললে কিন্তু আমি এই ঘোড়ার সব তরল বালিতে ছড়িয়ে দেবো"। একথা বলতেই রায়ান একটা হাত বাড়িয়ে ঘড়াটা কেড়ে নিতে গেলো, কিন্তু পারলোনা। ধ্রুব আবার বললো, "ঠিক আছে, তুমি বলবে না তাইতো, তাহলে এবার দেখো আমি কি করি"। কথা শেষ করেই ঘড়ার মুখ খুলে সমুদ্রের দিকে যেতে লাগলো ধ্রুব। রায়ান পিছন থেকে ছুটে গিয়ে ওর ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তবুও ঘড়াটা কেরে নিতে পারলনা। এক ধাক্কায় রায়ানকে সরিয়ে ধ্রুব বললো, "এই ঘরাই যতো নষ্টের মূল। এটার বন্দোবস্ত করলেই সব ঠিক করা যাবে"। এই বলে সে ঘড়া উপুড় করে দিলো লালসাগরে। রায়ান একবার নিজের মাথার চুল চেপে ধরে দুহাতে "নাআআআ" বলে চিৎকার করে উঠলো, কারণ ওই বোম্বেটের দল ছাড়া গুহমুখ খোলা মনুষ্যের কর্ম নয়, অতএব টাকার অভাবে তার সংসার ভেসে যাবে।

ঝুপঝুপ করে একে-একে ভাসমান বম্বেটের দলটা চিরতরে লালসাগরের জলে মিশে যাচ্ছে। ধ্রুব তাড়াতাড়ি সাগরপ্রন্ত ছেড়ে বালির উপর দিয়ে ছুটে এলো ঈশার কাছে। তাকে অক্ষত ভাবে দেখে ঈশার ভালো লাগলো, কিন্তু অগ্নির কোথা মনে পড়তেই কান্নায় বুক ভেঙে গেলো। ধ্রুব তার হাত ওর কাঁধে রেখে বললো, "তোকে সরি বলবনা, কিন্তু আমি একবার যদি বুঝতে পারতাম এমনটা হবে তাহলে অগ্নির জায়গায় আমি দাড়িয়ে থাকতাম। ও যেমনি হোক, হি ওয়াজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড"। কথাটা বলে ঈসাকে বুকে টেনে নিল। প্রতুত্তরে সেও ধ্রুবের গলা জড়িয়ে ধরলো, তার বুকে আশ্রয় নিলো।

অভয়ের ঘুম ভাঙলো একজোড়া গলার ডাকে। তখনো রাত শেষ হতে কিছুটা বাকি আছে। চোখ খুলেই তার মুখের উপর ঝুঁকে থাকা ধ্রুব আর ঈসাকে জিজ্ঞেস করলো, "তোদের চোখে ঘুম নেই?" ধ্রুব ওর দিকে একজোড়া বাইরে পড়ার পোশাক ছুঁড়ে দিয়ে বললো, "তাড়াতাড়ি ড্রেসটা পরেনে ভাই, আমাদের এক্ষুনি বেরোতে হবে এখন থেকে, আর এক মুহূর্তও এখানে নয়"। জামাপ্যান্ট হতে নিয়ে অভয় অভিভূত হয়ে রইলো। এবার ঈশা বললো, "লাগেজ রেডী করা আছে, আমরা বেরোলেই হয়। অভয় প্লীজ একটু তাড়াতড়ি কর। অভয় জামাপ্যান্ট গলাতে-গলাতে প্রশ্ন করলো, "অগ্নি যাবেনা আমাদের সাথে"। ধ্রুব এগিয়ে এসে বললো, "ওর যেখানে যাওয়ার ও সেখানেই চলে গেছে অনেক্ষন আগে। তোকে সব বলবো গাড়িতে যেতে-যেতে"।

পেট্রার গুহামাথায়ে অনেক্ষনই সূর্যকিরণ দেখা দিয়েছে। লালসাগরে স্ফুলিঙ্গের মতো তরঙ্গের পর তরঙ্গ অবিশ্রান্ত ভাবে ভেঙে চলেছে বালির পাড়ের উপর। সমুদ্রের নোনা জলে বালির পাড়ও লবণাক্ত হয়ে উঠেছে। আজ এই পাড়েই বালির চড়ে দেখা যাচ্ছে একটা ছোট্ট, ঠিক যেন হতের পাতার মাপের মুখ আটা একটা জলভরা ঘড়া পড়ে আছে। অবশ্য ঘড়াটি বেশিক্ষণ সেখানে পড়ে থাকলো না। জিনিসটি তুলে গায়ের কালো চাদরটা একটু সরিয়ে একটা মোটা দড়ি দিয়ে সেটিকে নিজের কোমরের সাথে শক্ত করে বেধে নিলো বছর বিশবৈদ্যের এক যুবক।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror