ক্যাব নাম্বার 3452
ক্যাব নাম্বার 3452
সেই সকালবেলা রঞ্জন ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গেছে। এখনো ফেরার নাম গন্ধ নেই। বেরোনোর আগে রূপা পইপই করে বলে দিয়েছিল "রঞ্জন, আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরো, আজ অফিসে একটু তাড়া আছে"। কে শোনে কার কথা?
ছেলেকে প্রতিদিনই রঞ্জন স্কুটারে করে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসে সকালবেলা। তারপর ফিরে রূপাকে রূপার অফিসে নামিয়ে নিজের অফিসে যায়। ফেরার সময় রূপার তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেলে নিজেই চলে আসে, আর দেরি হলে রঞ্জন ফেরার সময় স্কুটারে রূপাকে তুলে নেয়।। আজও রোজকার মতোই ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গেছে, গিয়ে নিশ্চয় অন্য অভিভাবকদের সাথে গল্পগুজব জুড়ে দিয়েছে চা খেতে খেতে। একটু বিরক্ত হয়েই রূপা ফোন করল রঞ্জনকে।
- কিগো! আজ বললাম একটু তাড়া আছে। কোথায় আছো? কখন ফিরবে?
- রূপা, শোনো না আমার স্কুটারটা খারাপ হয়ে গেছে মাঝরাস্তায়। আমি হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে মেকানিকসের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। শোনো না, ক্যাব বুক করে নিয়ে একটু চলে যাবে আজ?
- কি বলব বলো? ক্যাবটা বুক করে দিয়েই উদ্ধার করো। কিছু বলার নেই তোমাকে, জানো তো।
- প্লিজ! আজকেই খারাপ হতে হল স্কুটারটাকে। আমিও নিরুপায়।
- ঠিকাছে, ঠিকাছে। বাদ দাও। ক্যাবটা বুক করে দাও। গাড়ির নাম্বার আর পিনটা হোয়্যাৎস্যাপ করে দিও। আর শোনো, ব্রেড ওমলেট করা আছে। এসে খেয়ে তারপর বেরিও।
- আচ্ছা। সরি গো। আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি ক্যাব নাম্বার আর পিন।
- ওকে।
ফোন রেখে দিল রূপা। একটু নিজে থেকেও তো ফোনটা করতে পারত রঞ্জন। ওকে এসব বুঝিয়ে লাভ নেই। ও আজীবন ক্যাজুয়ালই থাকবে। ফোনে নোটিফিকেশনের শব্দে বুঝল নিশ্চয় রঞ্জন ক্যাব বুক করে দিয়েছে।
দরজার সামনে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি রূপাকে। ওই তো লাস্টে 3452 নাম্বার। ক্যাবে উঠে পড়ল রূপা। বাঃ! ঝাঁ চকচকে নতুন গাড়ি। রোজ স্কুটারে অফিস যেতে হয়। একদিনের জন্য এই স্বাদবদল বেশ লাগল রূপার। ফেরার সময় রঞ্জনের স্কুটার ঠিক হয়ে যাওয়াতে আর কোনো অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়নি সেদিন।
পরদিন সকালটা ঠিকঠাক শুরু হলেও অফিসে পৌঁছে এরকম যে একটা অদ্ভুত বিপদ অপেক্ষা করে থাকবে তার জন্য তা রূপা কল্পনাতেও ভাবেনি। সকালবেলা কিছু মিটিং ছিল, সেগুলো শেষ করে কিছু ডকুমেন্টস বানিয়ে রূপা তানিয়ার সাথে একটু গল্প করছে তখন। লাঞ্চে যাবার সময় হয়েছে। রূপা, তানিয়া আর সুমিতা, ওরা তিনজনে একসাথে লাঞ্চে যায়। সুমিতা বলল ও একটা কাজের মধ্যে রয়েছে, মিনিট পাঁচেক লাগবে। তাই ওর জন্য অপেক্ষা করতে করতে তানিয়ার সাথে একটু গল্প করছে।
হঠাৎ এইসময় ম্যানেজারের গলা পেয়ে একটু অবাকই হল রূপা।
- রূপা
- ইয়েস স্যার
- রূপা তোমার নামে একটা এস্কেলেশন আছে। সো, শ্যাল উই ডিসকাস হিয়ার?
রূপা আর তানিয়া মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। আজ পনেরো বছর হতে চলল রূপা এই অফিসে চাকরি করছে। এতটা দায়িত্ব নিয়ে গুছিয়ে কাজ করে রূপা, যে ওর নামে আজ অবধি কেউ ত্রুটি খুঁজে পাওয়া তো দূরে থাক, না মুগ্ধ হয়ে থাকতে পারে না। সে হঠাৎ এমন কি করল! তানিয়া "আমায় একটা কল করতে হবে" বলে উঠে চলে গেল বটে, কিন্তু সেও খুবই বিস্মিত। রূপা এমন কি করল! রূপাও একটু অবাক হয়ে বলল
- বলুন স্যার।
- রুলস অনুযায়ী কেউ তার গাড়ি অফিসে আনলে সেই গাড়ি যদি মোর দ্যান টুয়েন্টি ফোর আওয়ারস কেউ রাখে অফিস প্রেমিসিসে তবে পারমিশন করাতে হয়। সিকিউরিটি ম্যানেজার বলল তোমার গাড়ি এখানে রয়েছে টুয়েন্টি ফোর আওয়ারস হয়ে গেছে, কিন্তু তুমি পারমিশন করাওনি।
- মানে?
আকাশ থেকে পড়ল রূপা।
- আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে স্যার। আমার গাড়ি কোথা থেকে আসবে
রূপার মুখ বিস্ময়ে হাঁ হয়ে রয়েছে।
- আমিও তাই ভেবেছিলাম। ইনফ্যাক্ট সিকিউরিটি ম্যানেজারের মেইলে রিপ্লাইও দিয়েছিলাম যে ডাবল চেক করতে। তো ওনারা যে আইডি পাঠালেন সেটা তোমার আইডিই।
- বাট স্যার, আমি তো গাড়ি আনিনা। আমার তো গাড়িই নেই। হাজব্যান্ডের স্কুটারে আসি।
- আমি জানি রূপা। আমিও কিন্তু ততটাই অবাক হয়েছি তুমি যতটা হচ্ছ। বাট সিসিটিভি ফুটেজে এটাই স্পষ্ট যে ওটা তোমারই গাড়ি। তুমি কাল সকাল ন'টা বাইশে ওই গাড়িটা করে ইন করেছ অফিস প্রেমিসিসে। তারপর থেকে গাড়িটা ওখানেই পার্ক করা আছে। তোমার ড্রাইভার গাড়ি লক করে ওখান থেকে চলে যান।
- কাল স্যার আমার হাজব্যান্ডের স্কুটার খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমি একটা ক্যাব বুক করে আসি, সেটা ঠিক। কিন্তু ক্যাব ড্রাইভার হঠাৎ কেন চলে গেলেন সেটা কি করে বুঝব বলুন তো স্যার।
- রূপা, কিছু একটা প্রবলেম হচ্ছে রূপা। তুমি বলছ, গাড়িটা তোমার নয়, তুমি ক্যাব বুক করে এসেছ। কিন্তু অফিস প্রেমিসিসে তো কোনো কমার্শিয়াল গাড়ির পার্কিংই অ্যালাওড নয়।
- তো সেটা তো সিকিউরিটি লোকজনের ফল্ট।
- হুমম, সেরকম হলে অবশ্যই সিকিউরিটি লোকজনের ফল্ট। আমি কথা বলে তোমায় জানাচ্ছি রূপা। তুমি লাঞ্চ করে এসো।
রুমের বাইরে তানিয়া আর সুমিতা অপেক্ষা করছে। রূপার মুখ চোখের অবস্থা দেখে ওরা বুঝতে পারল যে রূপা বেশ চিন্তায় আছে।
- কিরে রূপা? কি হল? কিছু সিরিয়াস?
- বড্ড অদ্ভুত।
- শেয়ার করা যাবে?
রূপা পুঙ্খানুপুঙ্খ ঘটনাটা বর্ণনা করল ওদের। তিনজনে তিনজনের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে তাকিয়ে আছে তখন। মানে? এটা আবার কি করে হয়! নিশ্চয় কোথাও ভুল হয়েছে, এই মনে করে ঘটনাটা আপাতভাবে মন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে লাঞ্চে গেল ওরা। অবশ্য এই চিন্তা, বিস্ময়ের মাঝেই সুমিতা হেসে বলল "আবার আমাদের ট্রিট দেবার ভয়ে রূপা নতুন গাড়ি কিনে আমাদের বলছে না, সেরকম নয় তো?" রূপাও হেসে জবাব দিল "গাট্টা খাবি?"
না! মজার রেশটা লাঞ্চের পর থাকল না। লাঞ্চ থেকে ফিরতেই ম্যানেজার ওদের তিনজনের সামনেই বলল
- রূপা, ওরা গাড়ি চেক করেছে। কাল তুমি যে গাড়ি করে এসেছ, সেটা কমার্শিয়াল কার নয়। সেই জন্যই পার্কিং করতে দেওয়া হয়েছে। তুমি যে গাড়িতে এসেছ সে গাড়ির নাম্বার বলতে পারবে? আই হোপ ক্যাবের নাম্বার তোমার বুকিং অ্যাপের হিস্ট্রি থেকে পেয়ে যাবে।
- আমার হাজব্যান্ড বুক করেছিল আসলে। আচ্ছা, আমি ক্যাব নাম্বার বলছি। ও হোয়্যাৎস্যাপে পাঠিয়েছিল। ওখানে পেয়ে যাব।
হোয়্যাৎস্যাপ দেখে রূপা ক্যাব নাম্বার বলল ম্যানেজারকে।
- ইটস 3452 স্যার।
ম্যানেজার একটু হেসে অবাক হয়ে বলল
- সিকিউরিটি ম্যানেজার যে ক্যাবটার এগেইনস্টে এস্কালেট করেছে রূপা সেটাও সারপ্রাইজিংলি 3452। প্লিজ একবার সিকিউরিটি ম্যানেজারের রুমে যাও।
- ওকে।
তানিয়া আর সুমিতার দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকাল রূপা। রূপার কাঁধে হাত রাখল তানিয়া।
- নার্ভাস হোস না। চ, আমরাও যাচ্ছি।
রূপা তানিয়া আর সুমিতার সাথে সিকিউরিটি ম্যানেজারের রুমে গেল। অনেকটাই যে নার্ভাস হয়ে আছে, সেটা বুঝতে না দিয়েই রূপা সিকিউরিটি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করল
- ডেকেছিলেন?
- হ্যাঁ ম্যাডাম, আপনারই কি গাড়ি 3452? একটা পারমিশন..
- দেখুন, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আসলে কাল আমি একটা ক্যাব বুক করে এসেছিলাম।
- আমার মনে হয় আপনার ম্যানেজার আপনার সাথে এই নিয়ে ডিসকাস করেছে। দেখুন, আমাদের তো এত টাইম নেই আবার সেম জিনিস ডিসকাস করার।
- না, আপনি আমার দিকটা বুঝজেন না।
বেশ জোর গলায় রূপা উত্তর দিল। সিকিউরিটি ম্যানেজার আরো জোর গলায় বললেন
- ম্যাডাম, প্লিজ! আপনার দিকটা বোঝা তো আমার কাজ নয়। কিছু রুলস আছে। সেগুলো আপনাকে ফলো করতে হবে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে দেখে তানিয়া রূপার হাতটা ধরল।
- রূপা, উনি যা বলছেন তা আপাতত করে দে এখন। এখানে সিন ক্রিয়েট করে তো লাভ নেই। আমরা এখান থেকে বেরিয়ে আলোচনা করব।
- মানেটা কি তানিয়া? তোরাও আমাকে বিশ্বাস করছিস না।
- না রে। দ্যাখ, তুই শুধু শুধু রাগ করছিস। ওরা কি একটা ফর্ম দিচ্ছে। তুই ফিলাপ টা করে দে আপাতত। আমরা বেরিয়ে আলোচনা করছি। ক্যাব ডিটেইলস দিয়ে ক্যাব অ্যাপটায় ফোন করলেই তো সমস্যা মিটে যাবে।
যদিও মাথা কাজ করছে না, তবুও তানিয়ার কথা অনুযায়ী কার পার্কিংয়ের এক্সট্রা-টাইম পার্কের ফর্মটায় সাইন করল রূপা। সিকিউরিটি ম্যানেজার অত্যন্ত ভদ্রভাবে বললেন
- থ্যাংক ইউ ম্যাডাম। এনি টেনটেটিভ টাইম আপনি কখন গাড়িটা নেবেন?
রূপা চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটাকে প্রতিহত করল। সুমিতা রূপার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কথা না বাড়তে দিয়ে বলল
- টুডে এইট পি এম.
- থ্যাংক ইউ।
ওখান থেকে বেরিয়ে বেশ বিরক্তির সুরেই রূপা অভিযোগ জানাল
- এবার?
- ক্যাবের ওখানে ফোন করতে হবে। তুই রঞ্জনদাকে একটা ফোন কর বরং। করে ক্যাব যে বুক করেছিলিস, তার স্ক্রিন শট চা।
- ওকে, এটা ভালো বলেছিস।
রঞ্জনকে ফোন করল রূপা। এই সময় তো রূপা সাধারণত ফোন করে না। অসময়ে ফোন দেখে বেশ বিচলিত হয়েই ফোন ধরল রঞ্জন। রঞ্জন ফোন ধরতেই রূপা পুরো ঘটনাটা রঞ্জনকে জানিয়ে রঞ্জনের থেকে ক্যাব অ্যাপের হিস্ট্রি ডিটেইলস থেকে কালকের ক্যাব ডিটেইলসের স্ক্রিন শট নিয়ে পাঠাতে বলল। মিনিট পাঁচেক হয়ে গেলেও রঞ্জনের থেকে কোনো ফোন বা ম্যাসেজ না পাওয়ায় রাগ, হতাশা একটু হলেও বাড়লো রূপার।
- এরকম একটা টাইমেও দ্যাখ, একটু যে তাড়াতাড়ি পাঠাবে, তার কোনো ব্যাপার নেই। ও কেন এতটা ক্যাজুয়াল! ক্যাজুয়াল তো না। একটা ক্যাবলা। অকম্মার ঢেঁকি।
- দাঁড়া, দাঁড়া, রাগ করিস না রূপা। আরেকবার ফোন কর।
রঞ্জনকে দ্বিতীয়বার ফোন করার পর যেটা শুনল রূপা সেটার জন্য ওরা কেউই প্রস্তুত ছিল না।
- রূপা, একটা মুশকিল হচ্ছে। হিস্ট্রি ডিটেইলসে সব হিস্ট্রি আছে, কিন্তু সামহাউ কালকের ক্যাবের কোনো ডেটা নেই।
- মানে? কি বলছ তুমি? তুমি জানো, গাড়িটা কমার্শিয়াল কারও ছিল না। মানে রীতিমত হোয়াইট নাম্বারপ্লেট। আমি চেক করলাম জাস্ট
- আহা! তুমি ক্যাবে ওঠার আগে দেখবে না এটা!
- তাড়াহুড়োয় ছিলাম! খেয়াল করিনি। আমি কি করব এখন?
- আমিও তো বুঝজি না। আমি ভালো করে খুঁজলাম, কিছুই পেলাম না।
- তুমি রাখো। আমি ওদের ফোন করছি। কি পেয়েছেটা কি ওরা!
কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না রূপার। ক্যাবের ওখানেও ফোন করে লাভের লাভ যে কিছু হল না, সেটা বলাই বাহুল্য। ওরা পরিষ্কারভাবেই বলল "না, ওই নাম্বারে কোনো গাড়ি আমাদের নেই"।
পড়ন্ত দুপুরে তিন বন্ধু অফিসের বাইরের চায়ের দোকানে তখন বসে আছে। রোজকার কাজের চিন্তা, গসিপ, এসব আজ শত যোজন দূরে। মাথায় আস্ত একটা গাড়ির চিন্তা এখন ওদের। বেশ খানিকক্ষণ ভাবনাচিন্তা করেই ওরা সিদ্ধান্ত নিল ব্যাপারটা পুলিশে জানানোই শ্রেয়। ম্যানেজারের কাছে পারমিশন নিয়ে ওরা পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে বেরোতে যাবে সেই সময় আবার একবার রঞ্জনের ফোন।
- হ্যালো
- কিগো, গাড়ি রহস্যের কিছু কূল পাওয়া গেল?
- না, আমরা এখন পুলিশ স্টেশন যাচ্ছি।
- না, মানে সেসবের কি দরকার বল!
- মানেটা কি? তবে কি করব?
- গাড়িটার যখন কোনো দাবিদার নেই, তখন তুমি নিয়ে নাও গাড়িটা। আমার স্কুটারটার যা তথৈবচ অবস্থা। এইসময় একটা গাড়ি! ভাবা যায়! আবার তুমি বলেছিলে কাল, একদম নাকি নতুন ঝাঁ চকচকে গাড়ি।
- এইসময় ইয়ার্কি মেরো না রঞ্জন।
- ইয়ার্কি কোথায়! আর তাছাড়া তুমি তো ড্রাইভিং জানোই। তো গাড়িটা ড্রাইভ করে নিয়ে চলে এস বাড়ি।
- রঞ্জন! সবকিছুর একটা লিমিট আছে। এখন রাখো, পুলিশ স্টেশন যাচ্ছি।
- না, গাড়িটা ড্রাইভ করতে তোমার অসুবিধা কোথায়! ও, চাবি? নিজের ব্যাগটা ভালো করে খোঁজ। পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।
- কি সব বলছো?
- আমার একটা মিটিং আছে রূপা। পরে কথা বলব। জানিও কি হল পুলিশ স্টেশনে।
ফোন কেটে দিল রঞ্জন। চলতে চলতে একটু থেমে দাঁড়ালো রূপা। কি বলল রঞ্জন? ব্যাগ খোঁজ। ও কি কিছু জানে ক্যাব রহস্যের সমাধান। ব্যাগের সাইড চেনটা খুলতেই রূপা দেখল ব্যাগের ভিতর একটা চাবি। বিস্ময়ে থমকে গেল রূপা। সাথে একটা সাদা কাগজ। তাতে লেখা আছে " প্রিয় রূপা, কেমন লাগল সারপ্রাইজটা। বেশ নাকানি চোবানী খাওয়ালাম তাহলে। বেশ করেছি। যেমন আমায় সমানে ক্যাবলা, ক্যাজুয়াল এসব বল। আমার শুনতে ভালো লাগে নাকি? প্রতিশোধ নিলাম। কাল গাড়িটা ড্রাইভ করেছিল সুকান্ত। তুমি ভাগ্যিস চিনতে পারোনি। তোমার মুখটা নিশ্চয় হাঁ হয়ে গেছে এখন। বন্ধ কর। এটা আমাদের নতুন গাড়ি। বাকি কথা বাড়ি এসে হবে।
তোমার রঞ্জন।"
রূপা টের পেল সত্যিই ওর মুখ হাঁ হয়ে আছে। ততক্ষনে তানিয়া আর সুমিতা দৌঁড়ে গিয়ে অটো ধরেছে একটা।
- এই রূপা, আয়। এই অটোটা পুলিশ স্টেশন যাবে।
রূপার এখনো কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।
- কিরে রূপা। দাঁড়িয়ে গেলি কেন? আয়।
রূপা সম্বিত ফিরে পেয়ে উত্তর দিল
- ওকে ছেড়ে দে।
- কেন? যাবি না?
- যাব, তবে পুলিশ স্টেশন নয়, রেস্টুরেন্টে।
- মানে? তা গেলে এই অটোটাতেই চ না।
- উঁহু, তোরা এদিকে আয়। আমরা গাড়িতে যাব।
পশ্চিম আকাশের কোলে ঢুলে পড়া সূর্য তখন খিলখিলিয়ে হাসছে রূপার হাসির সাথে তাল মিলিয়ে।