Aparna Chaudhuri

Drama

3  

Aparna Chaudhuri

Drama

কুট্টুন ৫

কুট্টুন ৫

5 mins
1.4K


সকাল সাতটার সময় ঘুম ভেঙ্গে গেলো কুট্টুনের। একপাশে মা আর অন্য পাশ বাবা অগাধে ঘুমোচ্ছে তখনও। তিড়িং  করে লাফিয়ে উঠে দু আঙুল দিয়ে মায়ে চোখটা ফাঁক করে জিজ্ঞাসা করলো,” তুমি কি ঘুম কোচ্চ?”


নির্মলা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,” হ্যাঁ ...তোর বাবাই কে তোল।“ 

ওমনি ও শেখরের গায়ে এক ঠেলা মারলো। শেখর “উমমহ” আওয়াজ করে পাশ ফিরে শুলো। ব্যাস আর যায় কোথায়, কুট্টুন সোজা চড়ে গেলো শেখরের ওপর। তারপর ওর গায়ে ঝাঁকানি দিয়ে বলতে লাগলো,” বাবাই ওত...... গিফট গুলো খুলতে হবে তো... ওতো... ওতোনা থিগ্ গিল।“

অগত্যা বাবাই আর মাম্মা দুজনকেই উঠতে হল। নির্মলা বলে উঠলো, “ আগে দাঁত ব্রাশ করে দুধ খাবে তারপর গিফটে হাত দেবে। নইলে আমি কাউকে গিফট খুলতে দেবো না।“

রেকর্ড টাইমে দাঁত ব্রাশ করে দুধ খাওয়া হয়ে গেলো। তারপর এক এক করে খোলা হতে লাগলো গিফট গুলো। কোনোটায় জামা, কোনোটায় খেলনা, কোনোটায় রঙ পেন্সিলের সেট। নমিতা দেবী আর কমল বাবুও এসে বসলেন ঘরে। কুট্টুনের আনন্দের সীমা নেই। ওর সবচাইতে বেশি পছন্দ হল একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ী। নমিতা দেবী মজা করে বললেন ,” দাদু আমায় ওটা দাওনা।“ কুট্টুন শুনতে না পাওয়ার ভান করে ওটা তাড়াতাড়ি তুলে নিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলো। সবাই হেসে উঠলো।

এমন সময় দরজায় বেল বাজলো। নির্মলা গেলো দরজা খুলতে। দরজা দিয়ে ঝড়ের মত ঢুকলও সোনালি, নির্মলার মাসতুত বোন।

“ নিমি দি তোদের কখন ফ্লাইট? আরে আর বলিস না কাল একদম আস্তে পারিনি তাই আজ চলে এলাম আমাদের কুট্টুন সোনা কে দেখতে।“ বলতে বলতে সারা ঘর পারফিউম এর গন্ধে ভরিয়ে সে বাইরের ঘরের সোফায় এসে বসলো। শেখর ঘরে ঢুকতেই, “আরে জাম্বু ! কেমন আছ?” বলে উঠে গিয়ে শেখরকে হাগ করলো সোনালি। সোনালি ডাকসাইটে সুন্দরি, কনভেন্টে পড়া, এখন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে এম এ পড়ছে। নীল জিনসের উপর টকটকে লাল টপ আর খোলা চুলে ওকে দারুণ দেখাচ্ছে। নমিতা দেবী আর কমল বাবু বাইরে আসতেই সোনালি ওনাদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।


“ বস বস, খুব ভালো করেছ এসে, তা খেয়ে যাবে তো?” জিজ্ঞাসা করলেন নমিতা দেবী।

“না না মাসিমা, আমার ইউনিভার্সিটিতে আজ একটা প্রোগ্রাম আছে। তাই আমি একটু বাদেই চলে যাব।“

“সেকি...... আচ্ছা তাহলে লুচি ভাজা হচ্ছে , আমাদের সাথে জলখাবার খেয়ে যাও।“

“ কুট্টুন কই? মা রা তো কাল বাড়ী গিয়ে সমানে ওর কথাই বলছে। “

দেখা গেলো কুট্টুন দরজা দিয়ে উঁকি মারছে। ওকে দেখতে পেয়েই সোনালি ছুটে গিয়ে ,” এই তো আমাদের কুট্টুন সোনা”, বলে ওকে কোলে তুলে নিলো। তারপর ওর গালে একটা সশব্দে চুমু খেল। কুট্টুন একটা সলজ্জ হাসি হেসে মাথাটা নিচু করে নিলো তারপর হাতদিয়ে নিজের গালের লিপস্টিকের দাগটা মুছতে লাগলো। সোনালি ওকে কোলে নিয়ে সোফায় এসে বসলো। কুট্টুন সোনালির কোলে বসে মুগ্ধ দৃষ্টিতে সোনালিকে দেখতে লাগলো। একটু পরে কোল থেকে নেমে ছুটে ঘরের ভিতর থেকে সেই রিমোট কন্ট্রোল গাড়িটি নিয়ে এসে সোনালির হাতে দিলো।

“ তুমি এটা আমায় দিচ্ছ?” সোনালি হাসি হাসি মুখে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞাসা করলো।

কুট্টুন একটু লাজুক হেসে মাথাটা ঢক করে নেড়ে দিলো, তারপর আবার সোনালির কোলে গিয়ে বসলো। নমিতা দেবী হেসে জিজ্ঞাসা করলেন,” হ্যাঁ রে একটু আগে আমি চাইলাম গাড়ীটা তুই দিলি না তো?”

কুট্টুন কোন জবাব না দিয়ে সোনালির কাঁধে মুখ লুকলো।

সোনালি ওকে জড়িয়ে ধরে হেসে বলল,“ ও আমরা ফ্রেন্ড তো তাই ও আমাকে এই গিফটটা দিয়েছে। তাই না? আমিও তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি।“ বলে সোনালি ওর ভ্যানিটিব্যাগ থেকে একটা বড় চকোলেট বার করে ওর হাতে দিলো।

“কি পছন্দ?”

কুট্টুন আবার ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলল।

“তুমি তো আমার সাথে কথাই বলছ না।“


কুট্টুন হেসে বলল,” তুমি কি থুন্দল থেদেছ... থোতে, চোকে কত কি মেখেচ...... মাম্মা কিচ্চু মাকে না।“

“তোমার মা এমনিই সুন্দর। তোমার মাকে কিছু মাখতেই লাগে না।“ বলল সোনালি।

সবিতা এসে বলল,” আপনেরা সব খেতে আসেন।“

জলখাবার খেয়েই সোনালি চলে গেলো। কুট্টুন ওর ঠাম্মির কোলে চড়ে সোনালিকে টাটা করতে করতে বলল,” আবাল আব্বে।“

সোনালি ,”আসবো সুইট হার্ট...।“ বলে হেসে ওর দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেলো।

সোনালি চলে যাবার পর থেকে কুট্টুন কেমন একটা উদাস উদাস মুখ করে ঘুরে বেড়াতে লাগলো। আর সেরকম ছোটা ছুটি করছে না দেখে কমল বাবু বললেন, ” আজ ব্যাপার কি? বাড়িটা হঠাৎ বেশ শান্ত শান্ত লাগছে !”

নমিতা দেবী হেসে বললেন,” কারুর মন খারাপ।“ তারপর উঠে গিয়ে ধরে নিয়ে এলেন কুট্টুন কে,” এই ওই মাসিটা কেমন রে? ভালো?”

কুট্টুনের সলজ্জ উত্তর,” থুন্দল।“

নমিতা দেবী আর কমল বাবু সজোরে হেসে উঠলেন উত্তর শুনে । ওনাদের হাসির আওয়াজে নির্মলা আর শেখর ছুটে এলো বাইরে ঘরে আর কুট্টুন দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো।

নমিতা দেবী শেখরকে হাসতে হাসতে বললেন,” বুঝলি বুম্বা তোর ছেলে বড় হয়ে গেলো, বলে কি সোনালি মাসি সুন্দর......”

বিকাল তিনটে নাগাদ ওরা বেরিয়ে পড়ল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। নমিতা দেবী আর কমল বাবুও চললেন সাথে। স্বাতিলেখা দেবী আর অবনী বাবুও আসছেন সোজা এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্টে নেমে শেখর ট্রলি আনতে চলে গেলো। হরিদা জিনিষ পত্র ট্রলিতে তুলে দিলো। শেখর নির্মলা ওনাদের প্রণাম করে ট্রলি নিয়ে এগোতেই ওনাদের সকলের চোখ ছলছল করে উঠলো।

এতক্ষণ কুট্টুন খুব মজায় ছিল। সবাই রয়েছে। গল্প হচ্ছে। যেই ওরা তিনজন রাস্তা পেরিয়ে গেটের দিকে চলতে শুরু করলো, ও জিজ্ঞাসা করলো,” ওলা দাবে না?”

নির্মলা বলল,” না বাবা, ওরা তো এখানেই থাকে। “

“ আমি দাব নাআআআআ।“ চিল চিৎকার করে কুট্টুনের কান্না শুরু। ওর কান্না শুনে সবাই ছুটে এলেন। “কি হয়েছে বাবা? কেঁদো না ...... আমরা তো আসবো তোমাদের বাড়ী। তারপর তুমি আসবে আবার...... তাই না?”


অনেক বোঝানর পর কোনোরকমে ওরা কুট্টুন কে নিয়ে গেটের ভিতর ঢুকলও। কাঁচের বাইরে ওনারা চারজন হাত নাড়ছেন। একহাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আর অন্য হাতে ওদের টাটা করতে করতে কুট্টুন জিজ্ঞাসা করলো,” আমলা আবাল কবে আববো মাম্মা?”

“শিগগিরই......” বলে নির্মলা চেক ইন এর লাইনে দাঁড়ালো।

“থাম্মি দাদু কবে আব্বে?”

“এই তো শীতকালে।“ ব্যাগ থেকে আইডেন্টিটি প্রুফটা বার করতে করতে বলল নির্মলা।

“আল দিদুন দাদান?”

“ওরাও তারপরেই আসবে ।“

বোর্ডিং পাস গুলো নির্মলার হাতে দিয়ে শেখর বলল, “ তুমি কুট্টুন কে আমার কাছে দাও।“

কুট্টুন বাবার কোলে চড়েই বাবার কানে কানে জিজ্ঞাসা করলো,” বাবাই থোনালি মাথি আব্বে না আমাদের বালি?”

“ অ্যাঁ! এটা তো ভালো বলেছিস…। উফ বাপকা বেটা।“ বলেই হেসে উঠল শেখর।

“ কি বলছে গো?” জিজ্ঞাসা করলো নির্মলা।

“ ও আমাদের বাপ বেটার প্রাইভেট টক। তাই না?” বলে শেখর কুট্টুনের দিকে চেয়ে দুষ্টু দুষ্টু হাসি হাসল। কুট্টুন কি বুঝলো কে জানে সেও বাবার সাথে হেসে উঠলো । ওরা সবাই সিকিউরিটি চেকের দিকে পা বাড়াল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama