Neha Karmakar

Horror Crime

4.5  

Neha Karmakar

Horror Crime

কুঞ্জ বাড়ির আতঙ্ক

কুঞ্জ বাড়ির আতঙ্ক

16 mins
533


আজ যে ঘটনাটা আপনাদের বলতে চলেছি তা আমার জীবনের এক ভীষণই বিভীষিকাময় ঘটনা। সবাইকে আমার এই ঘটনা বলে বেড়ালে সবাই নির্ঘাত আমায় পাগলই ভাববে।ঘটনাটা ঘটে প্রায় ৩ বছর আগে।কিন্তু এখনও ঘটনাগুলো যেন আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় সে যেন আমার বিছানার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।আমার দিকে একভাবে চেয়ে আছে।কি ভয়ানক সেই দৃষ্টি আর তার সঙ্গে তার পৈশাচিক হাসি।কার কথা বলছি ভাবছেন তো?বুঝে যাবেন।শুধু গল্পটা প্রথম দিয়ে শেষ অবধি মন দিয়ে পড়ুন।



তিন বছর আগে :-


তখন সবে সবে কলকাতায় চাকরি পেয়েছি।মাইনেটাও বেশ খাসা।আমি অবশ্য থাকি মালদাতে।কিন্তু এই চাকরিটা আমার ভীষণই দরকার ছিল।তাই মায়ের হাজারটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি চাকরিটা নিয়েই নিলাম।তাছাড়া বাবা রিটায়ারমেন্ট নিয়েছেন।শরীরটাও ঠিক নেই।বোনের পড়াশোনার খরচও আছে। তাই শেষমেশ মা রাজিই হয়ে গেলেন।

কলকাতায় সেরম কেউ আমার জানাশোনা নেই।বাবার এক বন্ধু থাকেন কলকাতায় শুনেছি,কিন্তু তা আমার অফিস থেকে বড়ই দূরে। তাই অফিসের কাছাকাছি জায়গায় খোঁজ করতে করতে একটা বাড়ি পেলাম।দোতলা বাড়ি।ওপরতলায় বাড়ির মালিক অমলেন্দু ভট্টাচার্য থাকেন।নীচতলাটা তিনি ভাড়া দিয়েছেন।পেপারে দেওয়া অ্যাডটা দেখেই মনটা খুশি হয়ে গেল কেননা ওই বাড়ি থেকে আমার অফিসের দূরত্ব মাত্র আধঘন্টা,আর জায়গাটাও বেশ নিরিবিলি।এরকম বাড়িই তো আমি চেয়েছিলাম।

পেপারে দেওয়া অ্যাডরেস অনুযায়ী আমি গিয়ে হাজির হলাম ওনার বাড়ি।বাড়ির নেমপ্লেটে লেখা "কুঞ্জ ভবন"।

আগেই ওনাকে ফোন করে দিয়েছিলাম,তাই উনি আমার বেল বাজানোর আগেই এসে দরজা খুলে দিলেন।ওনাকে দেখে বেশ খুশি খুশি মনে হলো।


"আসো আসো বাবা,ভেতরে এসো" অমলেন্দুবাবু বললেন।


আমি ভেতরে ঢুকলাম।ভেতরে ঢুকেই বাঁদিক দিয়ে একটা সিড়ি ওপরে উঠে গেছে দেখলাম। আর সামনে একটা দরজা যার ভেতর দিয়ে দুটো ঘর দেখা যাচ্ছে।একটা বেডরুম আর একটা কিচেন। দরজা আর সিড়ির মাঝখানে একটা মোটামুটি ভালো স্পেস আছে সেখানেই একটা বড় সোফা,পাশে ছোটো সোফা আর একটা সেন্টার টেবিল রাখা।অমলেন্দু বাবু গিয়ে ছোটো সোফাতে বসলেন আর আমাকে বললেন এসে পাশে বসতে। আমিও গিয়ে পাশে বসে পড়লাম।

তারপর তিনি বললেন "তা বাবা কোথায় থাকা হয়?ফ্যামিলিতে কে কে আছেন?"

"আমি থাকি মালদাতে।আর আমার পরিবারে আছেন বলতে আমার মা,বাবা আর বোন"

"মালদা??!!আরে সে তো বেশ খাসা জায়গা!! এবারে গরমের ছুটিতে গেলে আমার জন্য মালদার আম নিয়ে আসতে হবে কিন্তু"


আমিও হেসে বললাম "বেশ বেশ নিশ্চয়ই আনবো"


সত্যি বলতে কি লোকটিকে কিন্তু আমার বেশ লেগেছে। যেমনি সুন্দর ব্যবহার তেমনি অমায়িক ভদ্রলোক। খুব সহজে মানুষকে আপন করে নিতে পারেন।আমার তো কলকাতা আসার সময় বেশ টেনশন হচ্ছিল যে কিরকম বাড়িওয়ালা হবে!!কিন্তু ইনি আমার সব ভয়ই দূর করে দিলেন।মনটা ভারী খুশি হয়ে গেল।

অমলেন্দু বাবু আবার বললেন, "তা বাবা ঘর দেখবে তো?দাঁড়াও আমি গোপালকে ডেকে দিই।ওহ হ্যাঁ গোপালের রান্নার হাত কিন্তু খুব ভালো। খুব কাজের ছেলে।কখনও কিছু খেতে ইচ্ছে করলে ওকে বলো ও করে দেবে"।


এই বলে তিনি গোপালকে হাঁক দিলেন।

গোপাল আসার পর অমলেন্দুবাবু ওনাকে বলে দিলেন আমাকে ঘরটা দেখিয়ে দিতে।লক্ষ্য করলাম গোপাল যেন একটু ভয় পেয়ে গেল।একবার আমার দিকে আর একবার অমলেন্দুবাবুর দিকে তাকালো।তারপর বললো "ঠিকাছে দাদাবাবু।আসেন আমার সাথে আসেন"।


আমি অমলেন্দুবাবুকে বললাম" আপনি যাবেন না?"

উনি একটু চমকে গিয়ে বললেন"ইমম..না বাবা আমার একটু কাজ আছে,এক্ষুণি যেতে হবে"এই বলে তিনি গোপালকে আরও একবার ঘরটা ভালো করে দেখাতে বলে চলে গেলেন।আমি ওনার আচমকা এই পরিবর্তনকে অতো গুরুত্ব দিলাম না তখনের মতো। আমি গোপালের সাথে চলে গেলাম ঘরটা দেখতে।

ভেতরে ঢুকে বুঝলাম ঘর বলা একে ভুল হবে।আলাদা করে বেশ বড় কিচেন,ডাইনিং আর একটা বেডরুম আছে।দেখে মনে হয় যেন একটা একতলা বাড়ি। সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো। কি মনে হতে আমি গোপালকে বলেই ফেললাম"বাব্বা এতো পুরো একতলা বাড়ি!!"


গোপালও বললো "আজ্ঞে এই বাড়িটা আগে একতলাই ছিল। পরে বড়বাবু দোতলা বানান।নীচতলা ভাড়া দেবেন বলে"।


" হ্যাঁ ভদ্রলোকের তো বয়স হয়েছে অনেক।রিটায়ারমেন্টও হয়ে গেছে মনে হয়।তা ওনার স্ত্রী নেই?"


এই কথাটা শুনে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো গোপাল।তোতলাতে তোতলাতে বললো "না...না...মানে মানে আ..আমি জা..নি না জা..."


"আরে আস্তে আস্তে কি হলো হঠাৎ তোমার?এই নাও জল খাও" বলেই পাশে টেবিলের ওপর থাকা জাগটা গোপালের দিকে এগিয়ে দিলাম।

গোপাল চুক চুক করে এক গ্লাস জল খেয়ে নিয়ে গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে দিল।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো "আজ্ঞে বাবুর স্ত্রী অনেক দিন আগেই মারা গেছেন।তারপরেই উনি ওপর তলাটা তৈরী করেন নীচ তলাটা ভাড়া দেওয়ার জন্য"


"আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম, ঠিকাছে। এতে অমন তোতলানোর কি হলো? এবার তুমি যেতে পারো।আমি দেখে নিচ্ছি"

"আপনি কি খান তা যদি বলে দিতেন..."

"যা রান্না হয়েছে তাই খাব,আমার জন্য আলাদা কিছু করার দরকার নেই"


"আচ্ছা তাহলে আসছি"

গোপাল চলে যেতেই আমার ট্রলিটা একপাশে রেখে বেডরুমটায় ঢুকলাম।ঢুকেই আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল।এটা ঘর??!!এতো আস্ত বাড়ি।ঘরের ঠিক মাঝ বরাবর একটা বিশাল দামী খাট,দুপাশে দুটো ছোটো টেবিল,তার ওপরে বেশ সুন্দর দুটো ল্যাম্প। এক কোণায় একটা স্টাডি টেবিল,ঘরের দুপাশে দুটো মাঝারি মাপের জানলা,আর এক পাশে একটা বেশ বড়সড় ওয়াড্রব। কোনো ভাড়া বাড়িতে এসছি নাকি সাজানো গোছানো কোনো ফ্ল্যাট বাড়িতে বুঝেই উঠতে পারলাম না।কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর হুঁশ ফিরলো। তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তারপর দুপুরে লাঞ্চ সেরে এসেই বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলাম। ভীষণই ক্লান্ত লাগছিল তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরলাম।


সন্ধ্যেবেলায় ঘুম ভাঙতেই একটু আড়মোড়া ভেঙে বাইরে এলাম, দেখলাম অমলেন্দুবাবু বাইরেই বসে চা খাচ্ছেন।আমাকে দেখেই পাশে বসতে বললেন।

"চা খাবে তো?"

"তা হলে মন্দ হয় না"

"বেশ বেশ, এই গোপাল একটা কড়া করে চা নিয়ে আয় তো।তা বাবা ঘর কেমন লাগলো? অসুবিধা হচ্ছে না তো?"


"না না আপনার ঘর তো দারুণ। ঘর তো নয় যেন পুরোটাই বাড়ি।সত্যি এই ঘরের বাইরেটা এমন না থাকলে যে কেউ ঢুকে এটাকে ঘর ভাববে না, বাড়িই ভাববে"

দেখলাম আমার কথাতে তিনি অতোটাও উচ্চবাচ্য করলেন না,শুধু একটু ফিক করে হাসলেন,ব্যাস।


কিছুক্ষণের মধ্যেই গোপাল চা,সিঙ্গারা নিয়ে চলে এলো।সেইসব খেতে খেতেই বেশ ভালো মতো আড্ডা স্টার্ট হয়ে গেল।রাত ৮ টা নাগাদ,গোপাল এসে অমলেন্দু বাবুকে বললো "বাবু রাতের খাবার হয়ে গেছে,একটু গরম করে নেবেন,আমি যাচ্ছি তাহলে"

"সে কি গোপাল তুমি এই বাড়িতে থাকো না?" জিজ্ঞেস করলাম আমি।

"আজ্ঞে না দাদাবাবু। আমি রাতে চলে যাই আবার ভোরবেলায় আসি"

"তোমার কি এখানে কেউ থাকে?মানে পরিবার?!

" না না আমার পরিবার তো গাঁয়ে থাকে,আমি একাই থাকি"

"তাহলে এই বাড়িতে থাকতে সমস্যা কোথায়?এতো বড় তো বাড়ি, এই বাড়িতে থাকলেই হয়।কি বলেন অমলেন্দু বাবু?.."

"আ..আ..হ্যাঁ আমি তো বলেছিলাম ওকে,কিন্তু ও তো নিজেই...."

"না না আমি এই বাড়িতে থাকবো না" অমলেন্দু বাবুর কথা শেষ হওয়ার আগেই বেশ জোড়েই বলে উঠলো গোপাল।

"কেন এই বাড়িতে কি এমন আছে?"

"আপনি বুঝবেন না দাদাবাবু,আপনি বুঝবেন না"

হঠাৎ মনে হলো অমলেন্দু বাবুর চোখটা একটু জ্বলেই যেন নিভে গেল।সেই জ্বলন্ত দৃষ্টিটা যে গোপালের দিকেই তিনি নিক্ষেপ করলেন তা বুঝতে বাকি রইল

না। গোপাল আর কিছু না বলেই সোজা বেড়িয়ে গেল।


"গোপালটা বড়ই অদ্ভুত। কথায় কথায় এতো ভয় পায় কেন?" জিজ্ঞেস করলাম আমি।

"ও গ্রামের মানুষগুলোই ওরম।তুমি অতো ভেবো না তো।তুমি বরং বলো তোমার কাজের কথা।তা কাল থেকে জয়েন করছো তো?"

"হ্যাঁ কাল থেকেই জয়েনিং "

"বেশ বেশ"

এরম বেশ খানিকক্ষণ কথা হল।কথার মাঝখানেই একবার আমার অমলেন্দুবাবুর হাতে লাগানো একটা অদ্ভুত তাবিজের দিকে চোখ গেল।মনটা বেশ ক্ষুন্ন হলো ওনার প্রতি। শিক্ষিত লোক হয়েও এইসবে বিশ্বাস রাখে তা জেনে আমার মনে মনে একটু কষ্টই লাগলো। আমার মনের কথা বুঝতে পেরে তিনি নিজেই বললেন "ওতে আমারও বিশ্বাস নেই।কিন্তু ওই যে ছোটবেলায় মা পরিয়ে দিয়েছিলেন তারপর দিয়ে এরমই আছে,হে হে"। তিনি বললেন বটে ছোটোবেলার কিন্তু তাবিজটা দেখেই মনে হয় তা কিন্তু নতুন,অতটাও পুরোনো নয়।

সে যাই হোক,অমলেন্দু বাবু ৯ টা নাগাদ ডিনার করতে চলে গেলেন।লোকটা ভিষণই ডিসিপ্লিন্ড।তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরেন।আমিও ঘরে ঢুকে একটু মাকে ফোন করে সবার খবর নিলাম।

রাত দশটা নাগাদ আমিও গিয়ে খেয়ে নিলাম।আসার সময় দেখলাম ওপর তলায় লাইট তখনও জ্বলছে।ভদ্রলোক ডিনার করে নিয়েছেন একঘন্টা আগে, বললেন তাড়াতাড়ি শুয়ে পরেন, এখনও শোননি দেখে একটু অবাক হলাম।তারপর ভাবলাম হয়তো ঘুমাতে যাওয়ার আগে বই-টই পড়েন বুঝি।আমিও আমার ঘরে এসে বেশ আরাম করে শুয়ে পড়লাম।সেই রাতটা নির্বিঘ্নেই কেটে গেল।গন্ডগোলের শুরুটা হয় পরেরদিন থেকেই।

সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই সবচেয়ে অদ্ভুত যে ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম তা হলো ঘরের ভেতর যে দুটো জানলার কথা বলছিলাম সেই জানলা দুটো খোলা।অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি আগের দিন রাতে জানলা দুটো বন্ধ করেই শুয়েছিলাম।জানলা খুলে শোয়ার অভ্যেস আমার কোনোকালেই নেই। যে যত গরমই পরুক না কেন,কিন্তু এই ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত লাগলো। সে যাই হোক, উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম,আজ অফিসে প্রথম দিন তাই টাইমে পৌঁছাতে হবে।

অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে প্রায় ৭ টা বেজে গেল।

নিজের ঘরে এসে বসতেই দেখি গোপাল এসে হাজির। মাথাটা খুব ধরে ছিল তাই গোপালকে বললাম এক কাপ কড়া করে চা বানাতে।গোপাল চলে গেলে আমিও ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।এসে বেশ আয়েস করে বসে গোপালের রেখে যাওয়া চা খেতে লাগলাম।আজ অমলেন্দু বাবুকে দেখতে না পেয়ে বেশ অবাক হলাম।গোপালকে ডেকে জিজ্ঞেস করাতে সে বললো অমলেন্দুবাবুর নাকি শরীর খারাপ তাই শুয়ে পরেছেন।আমি গিয়ে দেখে আসব কি আসব না ভাবছি আমাকে অবাক করে দিয়ে গোপাল নিজেই বললো যে তিনি নাকি ওনার ঘরে কেউ যাক পছন্দ করেন না,উনি একটু একা থাকতেই ভালোবাসেন।আমি আর এই শুনে কিছু বললাম না,চুপচাপ নিজের অফিসের কাজ করতে লাগলাম।রাত ১০ টা নাগাদ আমিও খেয়ে শুয়ে পরলাম। জানি ঘুম আসবে না তবুও কোনো কাজ না থাকায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম।


কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম খেয়াল নেই আচমকা দারুণ যাতনায় আমার ঘুমটা তৎক্ষনাৎ ভেঙে গেল।কি অসহ্য চাপ আমায় গলায়।কেউ যেন দুহাত দিয়ে চেপে ধরেছে আমার গলা,দম নিতে পারছিনা।হাতের চাপটা এতটাই বেশি যে কিছুতেই সেটাকে সরাতে পারছিনা,মনে হচ্ছে যেন গলার শিরা উপশিরা ছিঁড়ে ঢুকে যাবে সেই হাত আমার শ্বাসনালী লক্ষ্য করে।মুখের ওপর সমানে একটা গরম নিঃশ্বাস পরে চলেছে, তার ধরন দেখে মনে হলো যেন ভীষণ রাগে সে আমার ওপর আজ ঝাপিয়ে পরেছে।কিছুতেই এর হাত দিয়ে নিস্তার নেই।অথচ আমি চোখ খুলে কাউকেই দেখতে পেলাম না।উফ কি অসহ্য যন্ত্রণা। আর সহ্য করতে পারছি না।আমার মুখ দিয়ে জীব বেরিয়ে এলো।নিজের গোঙানি নিজেই শুনতে পারছিলাম।


যখন ভাবছি এই রাতই আমার শেষ রাত, কোনোভাবেই এই মৃত্যুযম থেকে পালাবার উপায় নেই ঠিক তখনই আমায় অবাক করে গলার ওপর দিয়ে চাপটা সরে গেল।ধরমর করে বিছানায় উঠে বসলাম।কিছুক্ষণ প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে নিলাম।এতোক্ষণ ধরে যে আমার সাথে কি হলো কিছুই মগজস্থ হলো না।এও মনে হলো যে আমি কি কোনো স্বপ্ন দেখলাম??!বিস্ময়ে হতচকিত হয়ে বসে রইছি ঠিক তখনই আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে দরজায় নক করার শব্দ হলো। আমি চমকে উঠলাম। একবার,দুবার,তিনবার!!!নক হয়েই চললো।সঙ্গে সঙ্গে উঠে দরজাটা খুলে দিলাম।হিমের মতো ঠান্ডা হাওয়া আমার শরীরটাকে নিমেষে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল, কিন্তু কোথায় কে?আমার সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই।দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এসে আবার শুয়ে পরলাম কিন্তু সারা রাত আর ঘুমাতে পারলাম না।এই ঘটনাটা আমি কাউকেই বলিনি।পরেরদিন সকালে নিজেকে আয়নায় দেখলাম, কি আশ্চর্য কাল রাতে যে আমার গলা টিপে ধরেছিল তার হাতের ছাপ পরে যাওয়ার কথা আমার গলায়।কিন্তু ছাপ তো দূরের কথা কোনো যন্ত্রণাও অনুভূত হলো না। সেদিন আমি তাড়াতাড়ি অফিস চলে যাই। আমার অফিস কলিগ শুভ আমায় দেখে বললো "কি হে? কাল সারারাত ঘুমাওনি নাকি?চোখদুটো তো কোটরে ঢুকে গেছে।চুলগুলো উশকো খুশকো হয়ে আছে,চোখের তলায় কালি,কি ব্যাপার কি?"। আমি ওকে কিছু বললাম না,নতুন জায়গা তাই ঘুম হয়নি বলে এড়িয়ে গেলাম।শুভর যে আমার কথায় বিশ্বাস হলো না তা ভালোই বুঝলাম।তবু আমি কিছু বললাম না,কারণ কাল রাতের ঘটনাটা আমার নিজের কাছেও একটা ধোঁয়াশা।


ওইদিন রাতের পর পরপর দুদিন আর কিছু হয়নি।কিন্তু দুদিন পর থেকেই আবার উপদ্রব শুরু হলো।


রোজ রাত ২ টো নাগাদ প্রত্যেকদিন আমার ঘরে নক পরা শুরু হলো।পরপর তিনবার নক করার পরেই তার পরের নকগুলো যেন আরও জোড়ে পরতে শুরু করলো। যেন কেউ ভীষণ রেগে গিয়ে দরজার ওপর সজোরে ঘুষি মেরে চলেছে।আমি ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম।গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো।ভয়ের চোটে খাটের কোনায় গুটিশুটি হয়ে বসে রইলাম। ধীরে ধীরে প্রায় প্রত্যেক রাতেই এইসব আজগুবি কান্ডকারখানা হতে শুরু করলো। রাতে ঘুম নামক জিনিসটা আমার জীবন থেকে যেন চলেই গেল। প্রায় প্রত্যেকটা রাত আমি জেগে কাটাতে শুরু করলাম।


আস্তে আস্তে আমার মধ্যে একটা যেন ডিস্টার্বেন্স হতে শুরু করেছিল।অল্প কথাতে রেগে যেতাম,মাথা গরম হয়ে যেত খুব তাড়াতাড়ি। অথচ আমি কিন্তু এমন ছিলাম না।কারোর সাথে কথা বলতাম না,আড্ডা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম,কেউ কোথাও যেতে বললে এড়িয়ে যেতাম,আস্তে আস্তে আমার মধ্যে একাকীকত্ব দানা বাঁধলো।কতবার ভেবেছিলাম যে এই বাড়িটা ছেড়েই দেব কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির টানে আমি যেন কিছুতেই বাড়িটা ছাড়তে পারছিলাম না।যতবারই অন্যান্য জায়গায় নতুন বাড়ির জন্য ফোন করি ততবারই কোনো না কোনো ভাবে সেটা কেটে যায় আর নয়তো এরম শুনতে হয় যে বাড়ি বুক হয়ে গেছে বা ভাড়াটে চলে এসছে।


ততদিনে রাতে ঘুমের অভাবে আমার শরীর আরও ভেঙে পরেছে।আমার অবস্থা দেখে আমাকে কয়েকদিনের জন্য অফিস থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হলো, কিন্তু এই ছুটি আমি চাইনি।আমি যতটা সম্ভব ওই ঘরটার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম।


আমার অবস্থা দেখে গোপাল আর অমলেন্দু বাবুও বেশ চিন্তায় পরে গেলেন।অমলেন্দু বাবু বললেন একটা ভালো ডাক্তার দেখাতে।ডাক্তারও দেখালাম কিন্তু তিনি আমার কোনো রোগ ধরতেই পারলেন না।বরং কয়েকটা ঘুমের ওষুধ আমায় দিয়ে দিলেন।


সেইদিন রাতে এসে কিছু খেতে একদম ইচ্ছে করলো না।গোপাল আমাকে বললো যে ওই ঘরে রাতে আর থাকতে হবে না।আমিও গোপালের কথামতো ঘরের বাইরে ডাইনিং-এ রাখা সোফার ওপর শুয়ে পরলাম।


আমার বরাবরের একটা অভ্যাস ছিল সেই ছোটোবেলা থেকেই। ছোটো কোনো পাতলা চাদর মুখের ওপর দিয়ে শোয়া।ছোটোবেলায় ঠাকুমার কাছে ভূতের গল্প শোনার পর রাতে এতো ভয় লাগতো যে মুখের ওপর চাদর দিয়ে ঘুমাতাম আর কিছুতেই চোখ খুলতাম না।সেই অভ্যাস এখনও রয়ে যাওয়ায় আজও আমি সেরম ভাবেই শুলাম।বেশ রাতে আবার আমার ঘুম ভেঙে গেল আর এবারে চাদরের নীচ থেকে চোখ খুলে যা দেখলাম তাতে আমার ভয়ে গায়ের সমস্ত লোম খাঁড়া হয়ে গেল।একটা মুখ,একটা অসম্ভব ফ্যাকাসে মুখ,আমার দিকে তাকিয়ে আছে, হ্যাঁ হ্যাঁ আমার দিকেই তাকিয়ে আছে,তার চোখে মণি বলে কিছু নেই,সে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে।কি পৈশাচিক তার হাসি।দম বন্ধ করে ঠায় তাকিয়ে রইলাম সেইদিকে।হঠাৎ দেখলাম তার মুখের একপাশ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আমার চাদরে ওপর,আমার ঠিক মুখের ওপর এসে পরলো।আমি ধড়ফড় করে উঠে বসলাম,চারিপাশে তাকিয়ে সেই বীভৎস মুখটাকে আর দেখতে পেলাম না। কিন্তু একটা ব্যাপারে আমি হতচকিত হয়ে গেলাম।আমি তো শুয়েছিলাম ডাইনিং-এ কিন্তু আমি আবার ঘরের ভেতর এলাম কি করে?


চারিদিকে তাকিয়ে দেখছি এমন সময়ে আমার পায়ের কাছের দরজাটার সামনে দেখলাম কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে।চাঁদের হালকা আলোয় ঘরের মধ্যে একটা আলো আঁধারি ব্যাপারের সৃষ্টি হয়েছে।আর তাতেই বুঝলাম যে আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে একজন নারী।একটু আগেই যে ভয়ানক মুখটা আমি দেখলাম এটা সেই।হঠাৎ আমার গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো।ঘরের মধ্যে যেন দম বন্ধ হয়ে গেলো।আমি ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম।সেই বিভৎস ফ্যাকাশে রক্তশূণ্য মুখটা এখন আমার এক হাতের মধ্যে এসে দাঁড়ালো,আমার গা হাত পা যেন অবশ হয়ে গেল। সাক্ষাৎ মৃত্যুযম আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।


কিন্ত এক মূহুর্তের মধ্যে যেন আমার সমস্ত শক্তি ফিরে এলো।আমি বিছানা থেকে এক লাফ মেরে নীচে নেমেই উর্দ্ধশ্বাসে বাইরে দৌঁড় দিলাম।কোনোমতে রাস্তায় বেড়িয়ে কয়েক পা দৌঁড়ানোর পরেই আমার সাথে একজনের ধাক্কা লাগলো। দেখলাম একজন পুলিশ অফিসার।সে আমায় কিছু একটা জিজ্ঞেস করছিল।কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি।আমার চোখের সামনে পুরো অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল।


যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন সবে ভোরের আলো ফুটছে।নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা গাড়ির ভেতরে, ভালো করে দেখলাম যে সেটা পুলিশের জীপ।আমি উঠে বসতেই দেখি আমার সামনে একজন পুলিশ অফিসার এসে দাঁড়ালেন।এনাকে আমি চিনি, এনাকে আমি বেশ কিছুবার ওই বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে দেখেছি।

আমি উঠে বসে কাল রাতের সমস্ত ঘটনাগুলো মনে করতে লাগলাম।হঠাৎ অফিসার এক অদ্ভুত কথা বললেন যে আমার নাকি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই বাড়ি ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। কেন উচিৎ সেটা বললেন না।আমি জীপ থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলাম।আমিও মনে মনে ভাবলাম যে সত্যিই এইসব অদ্ভুত ঘটনা আমি যেদিন ওই বাড়িতে এসেছি তবে থেকে হয়ে যাচ্ছে।হঠাৎই মনে পরে গেল অফিসে একবার শুভ বলছিল যে ওর হাতে একটা ভালো বাড়ির খোঁজ আছে।কি মনে হতেই পকেটে হাত দিলাম আর সেই সঙ্গে মনে পরে গেল যে কাল রাতে ফোনটা পকেট থেকে বারই করা হয়নি।ফোনটা নিয়ে শুভদের বাড়ির দিকে হাঁটা লাগালাম।ওই বাড়িমুখো আর হলাম না।কিন্তু গোপালের সাথে মাঝ রাস্তাতেই দেখা হয়ে গেল।সে আমার অবস্থা দেখে হকচকিয়ে গেল।


"এ কী অবস্থা হয়েছে তোমার দাদাবাবু? এমন উস্কখুস্ক চুল,জামার বোতাম ছেঁড়া,চোখের নীচে কালি?"।


" কেন? তোমরা তো এটাই চেয়েছিলে!!!" খুব শান্ত অথচ গম্ভীর স্বরে বললাম।


গোপাল আবার তার চির নেকা নেকা স্বরে বলে উঠলো "একি বলছেন?আমি তো আপনাকে ঘরে না দেখতে পেয়ে খুঁজতে বেরালাম,খুব চিন্তা হচ্ছিল আমার!!"

মূহুর্তে মাথাটা গরম হয়ে উঠলো।একরাশ বিরক্তি এনে জোড়ে বললাম "তোমরাই!! হ্যাঁ তোমরাই আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী। ওই ঘরে কিছু একটা আছে যা আমাকে দিন দিন এইভাবে শেষ করছে,পাগল করে দিচ্ছে। তোমরা জানতে তাও আমায় কিচ্ছু বলোনি।তোমরা সবাই মিথ্যেবাদী, সবাই!!" বলেই গোপালকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেলাম।আমার এই আচরণ দেখে গোপাল কিছুক্ষণ ঠায় ওরম ভাবে দাঁড়িয়ে রইল।


আমি আসার পথে শুভকে ফোন করে সব বলি, তারপর গিয়ে ওর সাথে নতুন বাড়ি দেখেও আসি।সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় দুপুর ৩ টে বেজে গেল।শুভ আমার অবস্থা দেখে আমাকে আর যেতে দিল না,বললো ওর বাড়িতে খেয়ে নিয়ে, এখানেই রেস্ট নিতে,লম্বা একটা ঘুমের প্রয়োজন।সত্যিই শরীরটা এত দুর্বল লাগছিল যে শুভর কথা মেনেই নিলাম।


কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানিনা,কিন্তু ঘুম ভাঙলো শুভর ডাকে। ঘুম থেকে উঠতেই শুভ হন্তদন্ত হয়ে চলে গেল আর আমাকে ডাইনিং-এ আসতে বললো। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ৮:৩৫ বাজে।এতদিন পর খুব নিশ্চিন্তে আজ ঘুমিয়েছি অনেকক্ষণ, শরীরটাও তাই ফ্রেশ লাগছিল।এরপর উঠে আমি ডাইনিং-এ গেলাম।শুভ নিউজ চ্যানেল খুলে বসে আছে।আমি ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটা চেনা জায়গার নাম কানে আসতেই টিভির দিকে ফিরে তাকালাম।যা দেখলাম তাতে আমার চোখ কপাল ছুঁলো।

টিভিতে বলছে "৩৫/১ আর.এন. রোডে চৌমাথার একটা দোতলা বাড়ি থেকে অমলেন্দু ভট্টাচার্য নামে এক জনৈক ব্যাক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে।পুলিশের মতে খুব অস্বাভাবিক ভাবেই মারা গেছেন"।

শুভ আমার দিকে তাকালো, আমি শুভর দিকে।শুভই বললো "যাবি একবার?"

আমি আর শুভ দুজনেই থানায় গেলাম।সকালের সেই অফিসারের সাথে দেখা হয়ে গেল।আমাকে দেখেই তিনি চিনতে পারলেন।আমি তাকে সব ঘটনা খুলে বলার পর তিনি বললেন "মনে হচ্ছে ওই বাড়িতেই আছে!!"

"কী?" বললাম আমি।

"প্রায় এক বছর আগে অমলেন্দু বাবুর স্ত্রী হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান,খুব অদ্ভুত ভাবেই।লোকে জিজ্ঞাসা করলে উনি বলতেন যে তার স্ত্রী নাকি তার মাসির বাড়ি নদীয়ায় গেছেন।একদিন ওনার এক বান্ধবী এসে তার স্ত্রীর খোঁজ করেন,না পেয়ে তিনি ওনার মাসির বাড়ি যান সেখানে গিয়েও তিনি জানতে পারেন যে তিনি এখানেও আসেননি।ঘটনাটা রহস্যজনক ঠেকায় উনি আমাদের থানায় এসে বিষয়টি বলেন।আমরাও গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি।অমলেন্দু বাবু বলেন যে ওনার সাথে ঝগড়া হওয়ার পর তার স্ত্রী নাকি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন।মাসির বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে তার মনে হয়েছে তিনি ওখানেই গেছেন।আমাদের ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি,তাই আমরা লুকিয়ে ওনার বাড়ির ওপর নজর রাখতাম।আশপাশ দিয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম যে ভদ্রলোকটির স্ত্রী নাকি খুব দজ্জাল প্রকৃতির ছিলেন।বিনা কারণেই উনি স্বামীর উপর মানসিক অত্যাচার করতেন।অমলেন্দু বাবু নাকি অনেক বার সুইসাইড করারও চেষ্টা করেছিলেন" এই বলে অফিসার থামলেন।

আমার ক্রমাগতই আজ সকালে দেখা হওয়া গোপালের মুখটার কথা মনে হলো,কেমন অদ্ভুত লাগছিল ওর মুখটা।মনে মনে একবার ভয় হলো ও আবার কিছু করেনি তো?

আমরা বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম।এখন নিজের জিনিসপত্র নেওয়া যাবে না কারণ বাড়ি আপাতত সিল করা।বডি পোস্টমর্টামের জন্য পাঠানো হয়েছে।

রাস্তায় আমরা কেউ কারোর সাথে একটাও কথা বলিনি।চুপচাপ চলছিলাম হঠাৎ একটা চেনা গলার আওয়াজে পিছন ফিরে তাকালাম। দেখি গোপাল দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখে।আমি তাকে দেখেই ছুটে গিয়ে ওর কাঁধ ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বললাম,"আসল ঘটনাটা কি? সব খুলে বল"।

গোপাল বলতে লাগলো, "হ্যাঁ দাদাবাবু আমি সব বলব"

"গোপাল তুমি কি অমলেন্দু বাবুকে??!!"

"না দাদাবাবু আমি কিছু করিনি।

দাদাবাবুর যিনি স্ত্রী ছিলেন তিনি সর্বক্ষণ তার খুঁত ধরে বেরাতেন।লোকের কাছে নিজের স্বামীকে ছোটো করতেন,ভারী দজ্জাল টাইপের মহিলা ছিলেন তিনি।আমি তখন ওই বাড়িতেই থাকতাম,কিন্তু একদিন রাতে আমায় বাড়ি যেতে হয় একটু কাজে।সেই রাতেই ঘটে ঘটনাটা। টাকার ব্যাগটা নিতে ভুলে গেছিলাম তাই আবার ওই বাড়িতে ফিরে যাই আর সেখানে গিয়েই শুনতে পাই স্বামী স্ত্রীর তুমুল ঝগড়া। আমি ভেবেছিলাম টাকার ব্যাগ নিয়েই বেরিয়ে আসব কিন্তু তার আগেই শুনি একটা আর্ত চিৎকার।ছুটে এসে দেখি যে দিদিমণি নীচে পরে আছে,রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর।পাশে দাদাবাবু বসে পাগলের মতো হেসে চলেছে আর বলছে " এবার?এবার বল।এবার চুপ করে কেন?শালীর ভীষণ দেমাক না?সব শেষ আজ,সব শেষ, হা হা হা"।


আমার ভয়ের চোটে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। দাদাবাবু আমাকেও ভয় দেখিয়েছিল যে কাউকে কিছু বললে আমাকেও মেরে ফেলবে।আমার কিছু হলে বউ বাচ্চার কি হবে এই ভেবে আমি আর কাউকে কিছু বলতে পারিনি।কিন্তু এরপর দিয়ে শুরু হয় আর এক সমস্যা।এতদিন ধরে যা আপনার সাথে হয়ে আসছিল তা হতো দাদাবাবুর সাথে।দাদাবাবু সব বুঝে গিয়েছিল যে দিদিমণি মারা গেলেও তার আত্মা তাকে ছেড়ে যায়নি তাই তখনই একজন তান্ত্রিককে ডেকে ওই বাড়িতে পূজা করানো হয়।কিন্তু তিনিও বলেন যে এই বাড়ি থেকে দিদিমণির আত্মাকে সরানো অসম্ভব তবে ওকে আটকে রাখা সম্ভব"


আমি ওর কথার মাঝখানেই বললাম "আর সেই আত্মা এতদিন ওই ঘরেই আটকে ছিল?"

"হ্যাঁ। ওই তান্ত্রিক দাদাবাবুকে একটা মন্ত্রপূত তাবিজও দিয়ে যায়,এই তাবিজটাই এতদিন ধরে ওনাকে দিদিমণির আত্মার হাত থেকে বাঁচাচ্ছিল।আমি তো শুধু এই তাবিজটাই সরিয়ে দিয়েছিলাম" গোপালের মুখে এক সূক্ষ্ম হাসি খেলে গেল। আমি গোপালের দিকে তাকিয়ে রইলাম। গোপাল আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললো " জানেন দাদাবাবু আমারও একটা ভাই ছিল।ঠিক আপনার মতো। কি মিল দুজনের।কথা বলা,হাসি এমনকি চোখ দুটোও" গোপালের গলা ধরে এলো।

"ভাইকে আমি বড় ভালোবাসতাম কিন্তু ভাইটা আমার আর বাঁচলো না গো দাদাবাবু!!!গতবছরেই এক কঠিন অসুখে ভুগে মারা গেলে আর তারপরেই তোমার সাথে দেখা। আমি তোমার এই অবস্থা সহ্য করতে পারছিলাম না আর,তাই আমি...."।আমি গোপালের কাঁধে হাত রাখলাম।গোপাল চোখ মুছে " আসি দাদাবাবু" বলে চলে গেল।

কোথায় যাচ্ছ জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু আর কোনো উত্তর পেলাম না।

বাড়ি আসার পর শুভ আমায় একটা অদ্ভুত কথা বললো।"আচ্ছা সবই তো বুঝলাম কিন্তু লাশটা কোথায়? এত সহজে তো লাশ গায়েব করা সহজ নয়!!"আমারও মনে খটকা লাগলো। ঠিকই তো।শুভর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ কপালে উঠে গেছে।তুতলে তুতলে বললো "ভা..ভাই..ওই ঘ..ঘরেই..লাশটা..ছি..ছিল না তো?!!"

এই শুনে আমারও কপাল দিয়ে দরদর করে ঘাম বেরোতে লাগলো।

পরেরদিন নিউজ খুলে জানতে পারলাম লাশ পাওয়া গেছে। ওই ঘরেই মাটির নীচে পোঁতা ছিল লাশ।বিছানা সরিয়ে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে ভেঙে যাওয়া হাড়গোড়। সেই বিছানা!! হ্যাঁ হ্যাঁ সেই বিছানা যাতে কিনা এতদিন ধরে আমি শুয়েছিলাম।একটা ঠান্ডা স্ত্রোত আমার মেরুদণ্ড বেয়ে নেবে গেল।নিউজ থেকেই জানলাম গোপালকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।পুলিশকে সাহায্য করার জন্য ওর আর কোনোরকম সাজা প্রাপ্য হয়নি।অমলেন্দুবাবুর পোস্টমর্টেম রিপোর্টও চলে এসেছে।তাতে পরিষ্কার লেখা আছে,অমলেন্দু ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে। মারাত্মক উত্তেজনায় তার হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।হয়তো কিছু দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন তিনি!!হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন আপনারা, ভয়!!!!!!

কার ভয়? কিসের ভয়? তা আর জানা যায়নি ।

সেই উত্তর অমলেন্দু ভট্টাচার্য চিরকালের জন্য নিজের সাথে নিয়ে চলে গেছেন!!! চিরকালের জন্য!!!




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror