কর্তব্যবোধ
কর্তব্যবোধ


পাশ দিয়ে গাড়ি গুলি চলে যাচ্ছে। সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় পরিহিত মানুষদের যাতায়াত। তার দৃষ্টি স্থির। নামহীন ব্যক্তি। নেই তার বাড়িঘর, নেই তার পরিবার, খোলা আকাশই তার আশ্রয়স্থল। কৃপা করে কেউ কিছু দিলে তাই সম্বল। দৃষ্টিতে লুকিয়ে আছে এক অজানা কষ্ট, মাথার চুল জটা ধারণ করেছে, পরনে ছেঁড়া জামা, শীর্ণকায় জীর্ণ দেহ। সে যেখানেই যায় সেখান থেকেই তাকে তাড়িয়ে দেয় সমাজের তার থেকে সচ্ছল ব্যক্তিরা। তারা মনে করে নামহীন ব্যক্তিটি সমাজের বোঝাস্বরূপ। হায়! ভারতবর্ষের এতো করুন অবস্থা? একি ভারতের আদর্শ? না পুরো সমাজ ভারতীয় আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। একদিন রাস্তার ধারে সে বসে আছে, তাকে দেখে এক কলেজছাত্রী তার কাছে এগিয়ে এলো। নাম তার ঋতমা। ব্যক্তিটি তার দিকে করুণ নয়নে তাকিয়ে বলল,"মা কিছু খেতে দেবে? কতদিন খাইনি।" ঋতমা তৎক্ষণাৎ হাতে থাকা প্লাস্টিক থেকে পোলাও ও মাংসের প্যাকেটটা দিয়ে দিল। ব্যক্তিটি দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করে বলল,"বেঁচে থাকো মা! বেঁচে থাকো! ভগবান তোমার মঙ্গল করুক।" ঋতমা চলে যেতে গেলে ব্যক্তিটি বলে উঠলো,"আচ্ছা তুমি সব খাবার আমাকে দিয়ে দিলে তুমি কি খাবে?" শুনে ঋতমা বলল,"আমার আছে। আপনি খান।" বলে চলে গেল। যেতে যেতে ঋতমার মনটা ওই ব্যক্তির করুণ দশা দেখে অস্থির হয়ে উঠল। মনে মনে ভাবলো, আমরা এত কিছু নিজেদের সুখের জন্য খরচ করি, অথচ এই ধরনের ব্যক্তিরা শুধু খাওয়ার জন্য হাহাকার করছে। ঋতমা ছোটোবেলা থেকেই পরশ্রীকাতর। সে ভারতীয় আদর্শে বড়ো হয়েছে। আর ভারতীয় আদর্শই হলো একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বাড়ি ফিরল ঋতমা কিন্তু অন্যমনস্ক। মা বললেন,"হাতমুখ ধুয়ে পোলাওটা খেয়ে নেয়ে।" কথাগুলো তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করল না। সে চিন্তা করছে। মা আরেকবার বললেন। তখন তা শুনে ঋতমা খাবার টেবিলে বসলো। কিন্তু তার খেয়াল নেই তার খাবার দিয়ে দিয়েছে। মা বলে উঠলেন,"ব্যাগ থেকে খাবারটা বার কর।" শুনে ঋতমা উত্তর দিল,"ও খাবার? খাবার আমি একজন পথে থাকা মানুষকে দিয়ে দিয়েছি। জানো মা লোকটি কত দিন কিছু খাইনি। কত কষ্ট তার। আচ্ছা মা তার কষ্ট লাঘব করতে পারবো না আমি?" "কি করে করবি?"- শুনে মা উত্তর করলেন। কিন্তু সে মনে মনে ঠিক করেছিল কিছু একটা করবেই। প্রতিদিন সে নিজের টিফিন ওই ব্যক্তিকে দিয়ে আসে। এরপর বন্ধুদেরকে নিয়ে একটা গ্রুপ বানিয়ে প্রত্যেকের বাড়ি থেকে কিছু কিছু করে খাবার এনে তাকে দিত। ক্রমে ঋতমা তার বন্ধুদের নিয়ে ঠিক করল রেস্টুরেন্ট থেকে বেঁচে যাওয়া খাবার নিয়ে এসে রাস্তায় থাকা মানুষদের মধ্যে বিতরণ করবে। সেই মতো কাজ শুরু করে দিলে তারা। আস্তে আস্তে সমাজের অন্য অনেক মানুষ তাদের সাথে যুক্ত হলেন। এইভাবে ঋতমা পথে থাকা ৫০০ জন মানুষকে প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করে দিলো। তাকে একজন বলল,"তুমিতো অনেক বড়ো কাজ করছ।" নিরহংকারী ঋতমা স্মিত হেসে বলল, "এটা কোনো বড়ো কাজ নয়। এটা আমাদের কর্তব্য।"