Susmita Sau

Drama

3  

Susmita Sau

Drama

খ্যাতির বিরম্বনা

খ্যাতির বিরম্বনা

3 mins
1.9K


পলাশ চৌধুরী কলকাতার নামী ডাক্তার | দক্ষিণ কলকাতায় নিজস্ব ফ্ল্যাট গাড়ী কি নেই | একমাত্র ছেলে দার্জিলিং এর হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে | স্ত্রী সুচরিতা সুন্দরী ও শিক্ষিতা | কলেজের প্রোফেসর | আপাত দৃষ্টিতে সুখী পরিবার | পলাশের বাবা মারা গেছেন আজ পঁচিশ বছর হল | বিধবা মা থাকেন শ্রীরামপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে | ডাক্তার ছেলের অতবড় ফ্ল্যাটে তার জায়গা হল না |


আজ তিরিশে আষাঢ় পলাশের জন্মদিন | বাড়ী ভর্তি লোক | সব বন্ধু বান্ধব , স্ত্রীর বান্ধবীরা , তার বাপের বাড়ীর লোক এমনকি ছেলের ও কিছু বন্ধু উপস্থিত | হোটেল থেকে খাবার এসেছে | নেই শুধু মহামায়া দেবী , পলাশের মা | আজ পলাশের ভীষণ মায়ের কথা মনে জাগছে | গত বছর পলাশ আজকের দিনে মার কাছে আবদার রেখে ছিল বাড়ীটা তার নামে লিখে দেন যেন | মা নিজে হাতে পায়েস রান্না করে একবাটি পায়েস আর বাড়ীর দলিল টা নিয়ে পলাশের ঘরে ঢুকে ছিলেন | তারপর যত্ন করে পায়েস টা খাইয়ে দিয়ে দলিলটা হাতে দিয়ে বলেছিলেন , তোর জন্মদিনের গিফ্ট | বাবা মারা যাবার পর থেকে প্রতি বছরই তাই করতেন মহামায়া দেবী | পলাশ ঘুম থেকে ওঠার আগেই পায়েস রেঁধে , পূজো দিয়ে প্রসাদ নিয়ে পলাশকে ডাকতেন , সঙ্গে থাকত একটা পছন্দ মতো গিফ্ট |

আজ পলাশের ভীষণ মায়ের কথা মনে পড়ছে | এই বছর সব আছে শুধু মা আর মায়ের রান্না পায়েস নেই | মায়ের দেওয়া গিফ্ট টা কে বিক্রী করেই তো এই ফ্ল্যাট কেনা সুচরিতার বুদ্ধিতে , যেখানে মায়ের জায়গা হয়নি |

বসার ঘরে সোফায় বসে এই সব চিন্তাই করেছিল পলাশ | হঠাত্ ফোনটা অসান্ত স্বরে বেজে উঠল | হাসপাতালের জরুরী বিভাগে পেসেন্ট এসেছে , এক্ষুনিই যেতে হবে |

এখন ঠিক সন্ধ্যে ছটা , সেই সকাল দশটা থেকে পলাশ হাসপাতালে | একটা পেসেন্ট এসেছিল যাকে বাঁচাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে পলাশ | বাড়ী থেকে এর মধ্যে ফোন এসেছিল বেশ কয়েকবার , নাহ পলাশ কথা বলেনি | পেশেন্ট কে ছেড়ে সে একবারও যায়নি |

সুচরিতা পলাশের জুনিয়ার তপোব্রতকে ফোন করে জানতে চেয়েছিল , "স্যার কখন ফিরবে ?"

"আমিও ঠিক বুঝতে পারছিনা ম্যাডাম , একজন বৃদ্ধা , বাসে কার টাকার ব্যাগ নিয়ে নেয় | পাবলিক ভীষণ মারধোর করে | পুলিস হাসপাতালে এনে ভর্তি করে দেন | বাঁচার আশাও নেই , অথচ স্যার সারাদিন না খেয়ে ঐ ভিক্ষারীটা কে সেবা করে যাচ্ছেন |" তপোব্রত জানিয়েছিলেন|

এখন রাত নটা পলাশ বাড়ী ফিরেছে | সব আত্মীয় বন্ধু সবাই চলে গেছেন | সুচরিতা খাবার টেবিলেই অপেক্ষা করেছিল | পলাশ ফিরতেই বলল , "খাবার গরম করি ? "

পলাশ বলল , "না খিদে নেই |"


-"সেকি ? শরীর খারাপ করেছে নাকি? সকাল থেকে কিছু খাওয়া নেই , অথচ খিদে নেই বলছ কেন ?"

- "আমি খেয়েছি সুচি |"

- "কোথায়?"

- "ঐ বৃদ্ধা ভিক্ষারী আমার জন্যেই পায়েস করে আনছিলেন | যে ছেলে তাড়িয়ে দিয়েছে , তার মঙ্গল কামনায় পায়েস রাঁধতে ভোলেনি আমার মা | ওনার সাথে থাকা ব্যাগটা পুলিশ হেপাজতে ছিল | আমি দেখতে চেয়েছিলাম | পায়েসের টিফিন পট টা খুলে মায়ের আশীর্বাদ টুকু আগে নিয়েছি | মাকে আমায় বাঁচাতেই হবে সুচি |"

-"হাসপাতালের সবাই জানে উনি তোমার মা ?"

-" নাহ খ্যাতির শিখরে বসে ওনাকে মা বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করেছিল | তবে ভুল করেছি কাল গিয়ে পুলিশকে বলে আসব সব |"

সুচরিতা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে বলল,"আমায় ক্ষমা করে দাও পলাশ| সব আমার জন্য হয়েছে | আমিও কাল যাব মার কাছে ক্ষমা চাইতে | আমার পরিবারে ওনাকে ফিরিয়ে আনব | উনি ছাড়া এই পরিবার যে অসম্পূর্ন |"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama