Prasun Dutta

Comedy Others

2  

Prasun Dutta

Comedy Others

কবিতার ময়নাতদন্ত

কবিতার ময়নাতদন্ত

4 mins
70


কবি যে কী ভেবে শব্দের থালা সাজিয়ে কবিতা পরিবেশন করেন আর পাঠক‌ই বা কী ভাবে তার রস আস্বাদন করে বাহবা দেয় আমার ছোট বুদ্ধিতে এই বড় জিনিসটা ঠিক ঢোকে না। কবিতা ব্যাপারটা আমার বরাবরই গোলমেলে লাগে। কারণটা বুঝিয়ে বলতেই এই লেখার চেষ্টা। আঁতেল বন্ধুরা অবশ্য বলবে অপচেষ্টা। তা বলুক। আমি তো আর আঁতেল ন‌ই যে আঁতে ঘা লাগবে।

তবে এটা ঠিক কবিতা নিয়ে যাই লিখি না কেন কবিদের আমি শ্রদ্ধা করি। কেননা ওঁরা যা লিখেছেন আমি তা পারব না। তাতে কি‌ই বা এসে যায়। আমরা সাধারণ মানুষ। কুনোর চিতা, বিরাটের ব্যাটিং কি আদানির ব্যাবসা সব বুঝে বিশেষজ্ঞ বা বিশেষ ভাবে অজ্ঞ সেজে মুখে মারিতং জগৎ করি। কবি আর কবিতাকেই বা ছেড়ে দেব কেন?

বিদ্যাপতি দিয়েই শুরু করি। ফস করে বলে ফেললেন,"তাহে বিসরি মন তোহে সমর্পিলু অব মঝু হব কোন কাজে"। নিজেকে এভাবে নিষ্কর্মা ঘোষণা করে ভগবান ভরসায় ছেড়ে দেওয়া কি উচিত হল? ভগবান কি গ্রেস মার্ক দিয়ে জীবন পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেবেন?

"এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে" মাইকেল মধুসূদন, মেঘনাদবধ কাব্য। ইনি আর আমি দুইজনেই দত্ত। ইনি হিন্দুর আর আমি হেয়ারের কলেজ স্ট্রিটের এপারে ওপারে স্কুল। তবুও মনে হল বিষাদে কথাটার মধ্যে যে মামুলি আক্ষেপের ছোঁয়া আছে তা অরিন্দম ‌ওরফে মহাবীর ইন্দ্রজিৎ কে মানায় না। উনি তো জানতেন‌ই কাকা বিভীষণ প্রভু রামের পার্টি জয়েন করেছেন। উনি লক্ষণ কে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ঢোকার ইন্টেলিজেন্স দেবেন এটা অনুমান করা তো খুবই সহজ। সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও সুচারু আর কঠোর করার প্রয়োজন ছিল নিশ্চয়ই।

রবীন্দ্রনাথ নমস্য ব্যক্তি। বলাকা কাব্যগ্রন্থের সবুজের অভিযান কবিতায় লিখেছেন " রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে, আজকে যে যা বলে বলুক তোরে, সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ করে, পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা, ওরে সবুজ, ওরে আমার কাঁচা।" অসাধারণ লেখা। তবে সবুজ মানে ইয়ংদের কি পুচ্ছ মানে লেজ থাকে? এইখানেই রহস্য। আসলে পুচ্ছ হল গাড়ির গিয়ার। মনে করুন জনা কয়েক ইয়ং ছেলে মেয়ে সারা রাত পার্টিতে হুল্লোর করে গাড়িতে ফিরছে। ওদের কবি বলছেন ট্রাফিক লাল আলোর তোয়াক্কা না করে সব নিয়ম ভেঙ্গে পাঁচ নম্বরে গিয়ার তুলে গাড়ি চালাও। আমি বলব সেই সঙ্গে সিটবেল্ট সংক্রান্ত সতর্কবাণীও দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। ন‌ইলে সাইরাসের মত মাইনাস হ‌ওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

জীবনানন্দ লিখলেন, " আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়ি নদী তীরে"। ঠিক আছে। কিন্তু ফিরে এসেছিলেন কি? এলেও কিছু লিখেছিলেন কি? নদীটা বাংলাতেই ছিল। ব্রাজিলে তো আর নয় ? এত পছন্দের ছিল আর একবার দেখে এসে আপডেটেড ভার্সন ২.০ লিখলে অনুচিত হত কি ?

নজরুল মহান কবি। কান্ডারী হুশিয়ার কবিতায় লিখে ফেললেন " দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার। লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার"। আচ্ছা এক রাতে কি একটা দুর্গম পর্বত একটা বিশাল মরুভূমি আর একটা উত্তাল সমুদ্র পার হওয়া সম্ভব? ট্রান্সপোর্ট লজিস্টিকস আদৌ বাস্তবিক হয় নি। পাহাড়ে চড়ার ঘোড়া, মরুভূমিতে চলার উট আর সমুদ্র পেরোনোর মজবুত জাহাজ বহন করে যাত্রীদের গন্তব্য স্থলে পৌঁছে দেওয়া অসম্ভব বলেই আমার বিশ্বাস।

জীবনানন্দ‌ই নাটোরের বনলতা সেনের উদ্দেশ্যে লিখলেন, "চুলে তার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখে তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য "। ষোলো জনপদের একটা ছিল বিদিশা আর একটা শ্রাবস্তী। বিদ্যুৎ ছিল না ঠিক‌ই তবে বিদিশায় কি প্রদীপ‌ও জ্বলত না ? অন্ধকার অপবাদ দিয়ে বিদিশাকে অপমান করা হয়েছে বলেই আমি মনে করি। মুখে কারুকার্য মানে তো মেক আপ। শ্রাবস্তী কি বিউটি পার্লারের জন্য বিখ্যাত ? ওখানকার মেক আপ আর্টিস্ট কি নাটোরে পার্লার খুলেছিলেন? কে জানে?

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। কি সাঙ্ঘাতিক লোক ! ওকে অপদার্থ বলা যাবে না কারণ ও তো পদার্থ। অন্তত পঞ্চাশ কিলো ভর তো হবে। রোদ্দুর হতে হলে ওই ভর রেডিএশন মানে শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। জলের মত পরিস্কার। আইনস্টাইন ই সূত্র দিয়েছেন। রূপান্তরিত শক্তির পরিমান জানতে হলে ভরের মাপ কে আলোর গতির বর্গ দিয়ে গুন করে ফল টা দেখে নাও। হবে সাড়ে চার বিলিয়ন বিলিয়ন জুল। এত শক্তি যে সব জ্বলে পুরে ছারখার হয়ে যাবে। অমলকান্তি রোদ্দুর না হয়ে কী হয়েছে জানি না, তবে মানব জাতির কল্যাণ হয়েছে অবশ্যই।

শক্তির কথায় এল শক্তি চাটুয্যে। দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া, কেবল শুনি রাতের কড়া নাড়া, অবনী বাড়ি আছো? প্রতিবেশীর ঘুম ভাঙ্গিয়ে শুধু বাড়ি আছো কি না জানার জন্য দুয়ারে কড়া নাড়া একেবারেই উচিত নয়। ভাগ্যিস পাড়ার লোকেরা অতিষ্ঠ হয়ে পুলিশে খবর দেয় নি। পরের স্তবকে কবি হঠাৎ জীবনদায়ী জল নিয়ে আসা মেঘের মধ্যে গোমাতা খুঁজে পেলেন। হিন্দুত্বের প্রভাবটা অস্বীকার করা গেল না।

এবার আসি বুদ্ধদেব বসুর লেখায়। উনি লিখেছেন " ঋণ জর্জর জীর্ণ জীবনে শরতের উঁকিঝুঁকি পারে না করতে সুখি।" আরে বাবা ক্রেডিট কার্ডের বিলটা মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাচ্ছে দেখেও দেদার ফালতু খরচ করার সময় মনে ছিল না যে ধার শোধ করতে হবে? মাথার ওপর এত ধারের বোঝা আর ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির হুমকির গুঁতো থাকলে শরৎ কেন কোনো ঋতুই তোমায় খুশি করতে পারবে না।

জয় গোস্বামীর বিখ্যাত লাইন। " আমি তখন নবম শ্রেণী। আমি তখন শাড়ি"। ওই বয়সের মেয়েদের প্রেমে পড়ার ইচ্ছে হবে সেটাই স্বাভাবিক। বেণীমাধব স্মার্ট ছেলে। শাড়ি পড়া ন্যাকা ন্যাকা মেয়ে তার ভাল লাগবেই বা কেন? ড্রেসটা আকর্ষণীয় আর আধুনিক হতে পারত। স্কার্ট ব্লাউজ, জিনস্ টি শার্ট এমন কি সালোয়ার কুর্তাও চলে যেত হয়ত। ফল যা হবার তাই হল। বেণীমাধব পাত্তা দিল না। না দিক, কিন্তু একটা স্কুলে পড়া মেয়েকে অপরিপক্ক রোমান্সের নেশায় মজিয়ে তার দুর্বল অসহায় প্রতিচ্ছবি কবিতায় বিম্বিত করার নারী বিরোধী প্রচেষ্টা মোটেই প্রসংশার যোগ্য নয়। আমি তো মেয়েটাকে বলব প্রেম টেমের ভূত আপাতত ঝেড়ে ফেলে খেলাধুলা বা নাচ গান বা অন্তত রাজনীতি শেখো। জীবনে প্রতিষ্ঠা পেলে অনেক বেণীমাধব তোমার পায়ে গড়াগড়ি দেবে।

ওই যে বলে লেখার কোনো শেষ নাই, লেখার চেষ্টা বৃথা তাই। সুতরাং আর কথা না বাড়িয়ে এখানেই ইতি টানলাম।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy