কাঞ্চনজঙ্ঘা
কাঞ্চনজঙ্ঘা


বিয়েটা নিয়ে অভিষিক্তার কোনো আগ্রহই ছিলনা তাই স্বাভাবিক ভাবেই হানিমুনে যাওয়ার কোনো প্ল্যানিং যে শৌভিকের সাথে আগে থেকে করেনি এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হানিমুনের নামে যে এতবড় একটা সারপ্রাইজ তার কপালে জুটবে সে ভাবতেও পারেনি।
—আমার তোমার কাছে একটা অনুরোধ আছে তুমি কিন্তু একদম জানতে চাইবেনা যে আমরা হানিমুনে কোথায় যাচ্ছি। কি তুমি কিছু বলছোনা তো?
—ঠিক আছে।
—থ্যাঙ্কস।
যথারীতি অষ্টমঙ্গলার পরের দিন অভিষিক্তা আর শৌভিক রওনা দিল দার্জিলিং-এর পথে।
ট্রেনে ওঠার সময় অভিষিক্তা জানতে পারলো যে তারা হানিমুনের জন্য দার্জিলিং যাচ্ছে। আর এটা জানার পর থেকেই অনেকদিন পরে আবার মনের ক্ষতটা তাজা হয়ে উঠলো। সে নিজের অজান্তেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো।
অভিষিক্তার এই মানসিক পরিবর্তন শৌভিকের নজর এড়ালোনা। কিন্তু সে অপেক্ষায় রইলো উপযুক্ত সময়ের।
অভিষিক্তার মনে পড়লো শায়নের কথা। স্কুলে ক্লাস ইলেভেনে পড়ার সময় শায়ন ওকে প্রোপোজ করেছিল। ক্লাস টুয়েলভে পড়ার সময় স্কুল থেকে এডুকেশনাল ট্যুরে ওদের দার্জিলিং এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শায়নের কিছু অসুবিধা থাকায় ওর যাওয়া সম্ভব হয়নি আর সেইজন্য অভিষিক্তাও নিজের যাওয়া ক্যান্সেল করে দিয়েছিল। অনেকবার তাকে শায়ন বলেছিল যাওয়া ক্যান্সেল না করতে। কিন্তু সে কিছুতেই শায়নকে ছাড়া যেতে রাজি হয়নি।
শায়ন একদিন কোচিং ক্লাস থেকে ফেরার পথে অভিষিক্তার হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলেছিল,
—তুই একটা পাগলী মেয়ে আমি যেতে পারলাম না বলে তুইও গেলি না। আমি তোকে কথা দিচ্ছি আমাদের হানিমুনে আমরা দার্জিলিং এই যাবো আর তুই যখন দুচোখ ভরে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখবি আমি তখন দুচোখ ভরে তোকে দেখবো।
—তুই আমাকে দেখবি কেন শায়ন?
—কারণ তুই পৃথিবীতে আমার জন্য সবথেকে সুন্দর তাই।
—শায়ন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তুই বাড়িতে আমাদের কথা মানে আমাদের সর্ম্পকের কথাটা বলবি তো?
—হ্যাঁ রে বলবো।
এরপর দুজনে ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করলো কিন্তু শায়ন জয়েন্টে চান্স পেয়ে ইন্জিনিয়ারিং পড়তে ব্যাঙ্গালোরে চলে গেলো। শায়নের যাওয়ার আগের দিন অভিষিক্তা কান্না ভেজা চোখে বলেছিল,
—আমি জানি তুই বাইরে চলে গেলে আমাদের সর্ম্পক আর থাকবেনা।
—ধুর পাগলী। আমি তোকে কোনোদিন ছাড়বোনা।
কিন্তু তাকে দেওয়া কথা শায়ন রাখেনি। প্রথম প্রথম কিছুদিন যোগাযোগ রাখলেও আস্তে আস্তে সেটা কমতে কমতে একসময় বন্ধ হয়ে যায়। শায়নের বন্ধু আকাশের কাছে জিজ্ঞাসা করে অভিষিক্তা জানতে পারে যে শায়ন হিয়া নামের একটি মেয়ের সাথে রিলেশনে আছে।
হঠাৎ শৌভিকের ডাকে অভিষিক্তার হুশ ফেরে।
—কি ভাবছো এতো এক মনে। এই নাও কফি। এই বলে শৌভিক একটা কফির কাপ তার দিকে এগিয়ে দেয়। আর বলতে শুরু করে,
—আমি লক্ষ্য করছি যে যখন থেকে তুমি ট্রেনে উঠেছো তখন থেকেই তুমি কেমন অন্যমনস্ক। তবে তুমি যদি বলতে না চাও আমি জানতেও চাইবোনা। আমি শুধু বর্তমান ও ভবিষ্যতে বিশ্বাস করি আর তুমিই আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত।
অভিষিক্তার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো তবে শায়নের জন্য নয়। শৌভিকের মতো একজন মানুষের জন্য।
অভিষিক্তা আর শৌভিক দুজনে কাঞ্চনজঙ্ঘার সামনে এসে দাঁড়ালো। শৌভিক দুচোখ ভরে দেখতে লাগলো কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য আর অভিষিক্তা দেখতে লাগলো সুন্দর মনের অধিকারী পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মানুষ শৌভিককে।