Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Sonali Basu

Drama

1.0  

Sonali Basu

Drama

কাঁচের চুড়ি

কাঁচের চুড়ি

5 mins
2.8K


রান্নাঘরে কাজ করছিল রত্না যখন রতনলাল ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকে এলো। এসেই জোরে হাতটা মুচড়ে ধরলো তারপর হিসহিসে স্বরে প্রশ্ন করলো “কি বলেছিস বৌদিকে? কাজ পারবি না? এতো সাহস হয় কি করে তোর। মুখে মুখে চোপা? এই মুখ ভেঙে রেখে দেবো হতচ্ছাড়ি”   এতো জোরে রতনলাল চেপে ধরেছিল ওর ডান হাতটা যে কয়েকটা চুড়ি ভেঙ্গে হাতটা কেটে গেল কিন্তু রত্না মুখ টুঁ শব্দটি করলো না। জানে বললে কপালে আরও মার আছে। আট মাস হল বিয়ে হয়েছে আর তারপর থেকেই এই ব্যবহার।

আট মাস আগে এক রাতে ওর নেশাখোর বাবা বাড়ি ফিরেই মাকে বলেছিল “মেয়ের বিয়ে ঠিক করে এলাম” তার আগে কোনদিন বিয়ের কথা ওঠেনি তাই মায়ের মনে বোধহয় সন্দেহের প্রশ্নচিহ্ন ফুটে উঠেছিল তাই প্রশ্ন করলো “কার সাথে?”


“আমার পরিচিত, রোজগারপাতি আছে বাড়ি আছে মেয়েকে সুখেই রাখবে। নামেও দারুণ মিল রতন আর রত্না। ব্যস আর তোমার কি ভাবার আছে? তাছাড়া আরও তো দুই মেয়ে আছে পার করতে” মায়ের আর কোন কথাই দাঁড়াতে জায়গা পায়নি। রত্না কিছু বলার অবকাশও পেলো না। লোকে বিয়েতে আত্মীয়স্বজনকে খবর দেয় হৈচৈ হয় কিন্তু ওর বেলায় সে সব কিছুই হল না। তাড়াহুড়ো করে কালীবাড়িতে বিয়ে দিয়ে পাড়ার লোকদের খাওয়ানো হল। রত্নার মুখে কোন কথাই ছিল না বরের চেহারা দেখেই ওর হয়ে গেছে। বিশালদেহী রুক্ষ চেহারা মনের দিক দিয়ে কেমন হবে এ চিন্তা ওর মন জুড়ে বসেছিল। রতনের সাথে কানুর তুলনাও করেছে মনে মনে আর এটাও ভেবেছে বিয়েই যদি দিল বাবা কানুর সাথে দিলেই তো হত। তাহলে এক গ্রামে থাকাও যেতো। বিয়ের পরেরদিন যখন ট্রেনে চাপছে তখনো কি জানতো যেখানে যাচ্ছে সেখান থেকে ফিরতে পারবে না। বরের বাড়ি গিয়ে যখন পৌঁছালো তখন দেখলো ও কারো কথাই বুঝতে পারছে না। পরে পরে জানলো ওরা অবাঙালি ওদের কথাবার্তা ওদের আদবকায়দা বুঝতেই অনেক কটা দিন পেরিয়ে গেছে। আর বাড়িতে বড় জায়ের কর্তৃত্ব বেশি। সবাই ওর কথাই মানে যদিও শ্বশুর শ্বাশুড়ি বেঁচে। ও ভাবতো বাবা কেন এতো লোক থাকতে এরকম একজনের সাথে ওর বিয়ে দিল। বৌভাতের রাত ওদের কথায় সুহাগ রাত পেরোতেই শুরু হল কথায় কথায় খুঁত ধরা মেরে ফাটিয়ে দেওয়া আরও কত কি। এই মারধোর খাওয়া, খাবার বন্ধ করে রাখাটা নিত্যনিমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওর নেশাড়ু বাপও মাকে বা ওকে সেরকম কোনদিন মারেনি। প্রথম প্রথম অভিমান হত কিন্তু যেদিন থেকে জেনেছে রতনলাল ওকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে তবে থেকে আর একটাও শব্দ করে না।

কাটা জায়গাটা ব্যথা করছে জ্বালাজ্বালা করছে। চোখের জল চেপে রেখে সেখানে একটু ক্রিম লাগাচ্ছিল রত্না। রতনলাল তার আগের মুহূর্তে রুটি তরকারি খেয়ে বেরিয়ে গেছে। ওর সামনে ও হাতের পরিচর্যা করতে পারেনি, রুটি বানাতে বসেছিল সব কটা বানিয়েই উঠেছে। ততক্ষণ হাতটা জ্বালা ব্যথা করলেও ওদিকে মন দেওয়ার চেষ্টাও করেনি। এখন মনে হচ্ছিলো বাকি চুড়িগুলোও খুলে ফেলে কিন্তু তাহলে শ্বাশুড়ির বকা খেতে হবে। চুড়ি নাকি বিবাহিতারা খোলে না, বাঙালীদের শাঁখাপলার মতো। কিন্তু যে বিয়েতে মনের মিল হল না সেখানে এয়ো স্ত্রীর চিহ্নগুলির কি মানে তা রত্না বুঝতে পারে না। কাঁচের চুড়ি পড়তে ও ভালোবাসতো কিন্তু জানতো না চুড়ি পড়ার জ্বালা।


“তোর হাত দুটো কাঁচের চুড়িতে খুব সুন্দর দেখায়” রত্নাকে বলেছিল ছায়া রথের মেলায় ঘুরতে এসে। তার বহুদিন আগে মায়ের কাছে বায়না করে কিছু চুড়ি নিয়েছিল ও, যার বেশীরভাগই ভেঙে গেছে। ছায়ার কথা শুনে ওর আবার চুড়ি কেনার শখ জাগলো। গ্রামের মেলায় ওরা কয়েকজন বান্ধবী এসেছিল বাড়ির বড়দের পটিয়ে এক সাথে ঘুরবে বলে। মা সাবধান করেছিল আগের মতো মেলা আর সাধারণ নেই শহুরে হয়ে উঠছে দিন দিন। শহুরে মেলাই তো দেখার সখ ওদের। কত নকল গয়নার দোকান বসেছে আলো পড়ে ঝিলমিল করে উঠছে, সেগুলো আসলের মতো, খেলনার দোকানের বাহারি পুতুল হাতছানি দিয়ে ডাকছে, নাগরদোলা বসেছে, আর বসেছে কতরকমের খাবারের দোকান হাওয়াই মিঠাই জিলাপি বাদাম ভাজা আইসক্রিম আরও কত কি। বাকিদের মতো রত্নাও ঠাকুর দেখার পর গিয়ে দাঁড়ালো চুড়ির দোকানের সামনে। রঙবেরঙের চুড়িগুলো যেন ঝিলিক তুলে ডাকছিল ওদের কিনে নেওয়ার জন্য। সাহস করে দাম জিজ্ঞেস করলো রত্না। দোকানী বলল “তিরিশ টাকা ডজন”

দাম শুনে চমকে উঠলো ও। মা তো ওর হাতে অত টাকা দেয়নি তাহলে চুড়ি কিনবে কি ভাবে? হঠাৎ পাশ থেকে কেউ বলে উঠেছিল “আমি যদি কিনে দিই, নিবি?”

কখন যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল ও, রত্না জানতেও পারেনি। চাপা আনন্দে বুকটা ভরে গিয়েছিল ওর। সেই সন্ধ্যায় ওর দেওয়া লাল হলুদ চুড়িতে সেজে উঠেছিল ওর হাত দুটো। চুড়ি পড়িয়ে দিয়ে ফিসফিস করে ও বলেছিল “বিয়ের সময়ও তোর হাত এরকম চুড়ি দিয়ে ভরিয়ে দেবো” 

রত্না আঁচলে মুখ চেপে ফিক করে হেসেছিল। ওর হাসির ঝিলিক কানুর মুখেও ফুটে উঠেছিল। কানু ওদের পাড়ার ছেলে, ওর বাবা দর্জির কাজ করে। ওদের ভালোবাসার ফুল পুরো ফুটে ওঠার আগেই তো ঝরে গেলো। রত্না এখন ভাবে কানু কি আর ওকে মন রেখেছে, হয়তো ভুলেই গেছে এতদিনে। আর এ বাড়িতে ওর যা অবস্থা তাতে করে বেঁচে থাকতে যে আর ফিরবে না তা ও বুঝেই গেছে।


কিন্তু ওর কপালে বোধহয় বাঁচার একটা সুযোগ করে দিলো ভগবান। ওর বাধ্য বৌমা হয়ে থাকার ফলে শ্বশুরবাড়ির লোক ভেবে নিতে শুরু করেছিল যে পাখি পোষ মেনেছে তাই দুর্গাপুজার দশমীতে রাবণপোড়া দেখতে বাড়ির লোক যখন মেলার মাঠে সব দল বেঁধে গেলো ওকেও নিয়ে গেলো ওরা। বড় ননদিনীর হাত চেপে ধরেছিল ও এই বলে যে যাতে ভিড়ে হারিয়ে না যায়। তাই ওরা ওর ব্যাপারে একরকম নিশ্চিন্তই ছিল। সবার সাথে রত্না অবাক বিস্ময়ে দেখছিল কি ভাবে রাবণের গায়ে রামের ছোড়া তীর বিঁধলো আর রাবণ দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো। আর রাবণ জ্বলতে শুরু করতেই মাঠ ভর্তি দর্শকের উল্লাসভরা আওয়াজে রত্না চমকে উঠে খেয়াল করলো ননদিনীর হাত কখন ছেড়ে গেছে ওর হাতের মুঠো থেকে। চোখ ঘুরিয়ে দেখলো বাকিদের অবস্থান কোথায়। সবাই এতোটাই ব্যস্ত রাবণ পোড়া দেখতে যে ও কি করছে কেউ খেয়ালও করলো না। রত্নার মাথায় এলো এতো বড় সুযোগ হাতছাড়া না হয়। ভিড়ের সুযোগ নিয়ে ও ভিড়ে হারিয়ে গেলো।


বাড়ি ফিরে আসার আগে ও পুলিশে গিয়ে সব বলে এসেছিল। তাই বাড়িতে ফিরতে ওর বাবা যখন চোটপাট শুরু করলো তখন ও বলতে পারলো “পুলিশবাবু জানে তুমি কি করেছ। এরপর যদি তোমায় ধরে নিয়ে যায় আমরা কিছু বলবো না” ওই কথা শোনার পর ওর বাবা আর মুখ খোলেনি। ওর ফিরে আসা শুনে কানু ছুটে এসেছিল দেখা করতে। বলল “জানিস তোকে বিয়ে করবো বলে কাজ ধরেছিলাম। বাবা সব জেনে বলেছিল তোর বাবার সাথে কথা বলবে। তোর বাবাকে বলেছিলও আমার বাবা তোমার মেয়েকে আমার ছেলের বৌ করতে চাই তাতে তোর বাবা তোকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিল। পরে জানলাম তোকে টাকা নিয়ে বেচে দিয়েছে কিন্তু তোকে ওরা কোথায় নিয়ে গেছে সেটা শত চেষ্টা করেও তোর বাবার মুখ থেকে বার করতে পারিনি”

রত্না বলে “যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আমি আমার মতো করে চলবো। হাতের কাজ শিখবো রোজগার করবো তাহলে বাবা আর চোটপাট করতে পারবে না”

“একটা কথা বলবো রত্না, আমি কিন্তু তোর জন্য চুড়ি কিনে রেখেছি। তুই পরবি না?”

“পরতে পারি এক শর্তে। চুড়িতে যেন আমার মন ফালা ফালা না হয়”

“কোনদিন হবে না, কথা দিলাম”

  


Rate this content
Log in

More bengali story from Sonali Basu

Similar bengali story from Drama