Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Sonali Basu

Tragedy Romance

3  

Sonali Basu

Tragedy Romance

জুঁইয়ের গন্ধ

জুঁইয়ের গন্ধ

6 mins
900


বোলপুর স্টেশনে নেমে খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো শ্রীপর্ণা। কারো আসার অপেক্ষায় নয়, জায়গাটার কত পরিবর্তন হয়েছে সেটা দেখার জন্য। পরিবর্তন হয়েছে অনেক, অনেক কিছুই আগের সাথে মিলছে না। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। এখনকার ওকে দেখলে কি আগের শ্রীপর্ণার সাথে কেউ মেলাতে পারবে? না, আগে ও ছিল তন্বী আর এখন পয়তিরিশ বছরের মহিলা। হাসিই পেয়ে গেলো কথাটা মনে হতে। ও আর না দাঁড়িয়ে হ্যান্ডব্যাগ হাতে এগিয়ে গেলো স্টেশন থেকে বাইরে যাওয়ার গেটের দিকে। তারপর রিক্সা চড়ে বসলো। ও যাবে কঙ্কালিতলা, পুজো দিতে রবিদার নামে। শনি মঙ্গলবার আসতে পারতো কিন্তু সেদিন মায়ের মন্দিরে ভিড় হয় খুব তাই সোমবার দেখে এসেছে। আজ ও মন ভরে মায়ের পায়ে পুজো দিতে চায় রবিদার নামে। আজ ও ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চাইবে যা ভুল করেছে তার জন্য। রবিদা ক্ষমা করে দিয়েছে কিনা আর জানার উপায় নেই তাই ঠাকুরের কাছেই চাইবে যদি ঠাকুর দেয় ক্ষমা করে।     

কাল গোলাপের পরিচর্যা করছিলো শ্রী যখন ফোনটা এলো। ওর স্কুল আর কলেজের বান্ধবী রূপসা ফোন করেছে, মাঝেমাঝেই করে। ফুলের গাছে জল ঢালতে ঢালতেই ও জিজ্ঞেস করলো “কি রে কেমন আছিস?”

অন্যদিন উচ্ছাসিত গলায় বলে “ভালো” কিন্তু কাল কেন জানি ওর আওয়াজ খুব ঝিমানো মনে হল। বলল “আছি”

“কি ব্যাপার রে তোর কি শরীর খারাপ?”

“না”

“তবে কি মন খারাপ?”

“হ্যাঁ”

“কেন রে সন্দীপ বাড়ি নেই বুঝি?”

“না ও এখানেই। কারণটা অন্য। হ্যাঁ রে তোর রবিদার কথা মনে আছে তো যার কাছে আমরা কোচিং নিতাম ইংরেজি সাহিত্যের”

“হ্যাঁ কেন মনে থাকবে না। হঠাৎ ওর কথা তুললি কেন? তোর সাথে দেখা হয়েছিল নাকি এর মধ্যে”

“না অনেকদিন দেখা হয়নি তবে মাঝে মধ্যে খবর পাই ব্যাচের বন্ধুদের থেকে। সেই রবিদা পরশু সন্ধ্যায় রেললাইনে কাটা পড়েছে। তবে আমার যতদূর মনে হয় কাটা পড়েনি, রবিদা আত্মহত্যা করেছে”

শ্রী চমকে উঠলো, গলা চিরে ছিটকে গেলো প্রশ্ন “আত্মহত্যা?” 

“হ্যাঁ আত্মহত্যা। তোর যখন বিয়ে হয় তখন তো রবিদা বোলপুরেই ছিল না। তাই নাকি তোর বিয়েতে যেতে পারেনি। পরে শুনছিলাম আমাদের ব্যাচ বা অন্য ব্যাচের কোন মেয়ের সাথে কিছু হয়েছিল তারপর থেকে কেমন মনমরা হয়ে থাকতো। আস্তে আস্তে সব কাটিয়ে উঠেছিল, বেশ ছিল ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে কিন্তু হঠাৎ কি হল কে জানে! তুই জানিস কিছু?”

“না তো” শ্রী নিঃশব্দে ফোনটা নামিয়ে রেখেছিল। হঠাৎ জুইয়ের গন্ধ এসে লেগেছিল নাকে।

জুঁই ফুলের খুব ভক্ত শ্রী। এতটাই পছন্দ ওর যে চারতলার ফ্ল্যাটের ঝুল বারান্দার টবে জুঁইয়ের চারা পুঁতেছে। প্রতিদিন সযত্নে ওর পরিচর্যা করে। সুব্রত হাসে, বলে “এমন এক গাছ পুঁতলে যেটা অনেক জায়গা নেবে। তার চেয়ে গোলাপ ভালো। দেখলে মনও ভরে গন্ধও দারুণ” শ্রী প্রতিবাদ করেনি। সুব্রতর আনা রক্ত রঙা গোলাপেরও জুঁইয়ের মতোই সমান পরিচর্যা করে। এই রঙের গোলাপ তোড়ার দিয়েই সুব্রত ওকে জানিয়েছিল ওর ভালোবাসা।

তখন ও থার্ড ইয়ারের ছাত্রী, কলেজে কালেভদ্রে যায় কিন্তু রবি স্যারের কোচিং ক্লাসগুলো নিয়মিত করে। এক সন্ধ্যায় যখন স্যারের ক্লাস থেকে বেরোচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে ক্লাসঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো একটা বাইক। বাইকচালক হেলমেট খুলে ওকে সামনে দেখেই বলল “রবিদা আছে?” ও তাকিয়ে দেখলো ছেলেটিকে। তবে ওকে ঠিক চিনতে পারলো না। কে জানে কোন ব্যাচের ছেলে।

ও উত্তর দিলো “হ্যাঁ স্যার আছেন” ছেলেটা ওকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে গেলো। ও ওর সাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এরপর থেকে স্যারের ক্লাসেই ওই ছেলেটার সাথে বারেবারেই দেখা হয়ে যেতে লাগলো। আস্তে আস্তে পরিচয় হল, নাম সুব্রত সিংহরায়। এম ফিল করছে তাই রবিদার কাছে মাঝেমাঝে পড়াশোনা নিয়েই আলোচনা করতে আসে। রবিদার সাথে পরিচয় কারণ একই কলেজের ছাত্র ছিল ওরা, রবিদা দুবছরের সিনিয়ার। শ্রী কাউকে নিয়েই বেশি মাথা ঘামায় না, ওর একটাই উদ্দেশ্য ভালো ফল করতে হবে।

রবিদা বছরে একদিন, শিক্ষক দিবসে ছাত্রছাত্রীদের নেমতন্ন করে খাওয়াতেন। সে বছর ওরা সবাই গিয়েছিল নিমত্রণ রক্ষা করতে। শ্রীকে শাড়িতে আর শান্তিনিকেতনি সাজে সুন্দরী লাগছিলো। সবাই একবার করে ঘুরে তাকাচ্ছিল ওর দিকে। কিন্তু একজনের দৃষ্টি যে ওর ওপরেই গেঁথে রয়েছে তা আগে না হলেও পরে উপলব্ধি করেছিল ও। ও অবাক হয়ে দেখেছিল তাকে। রবিদা! কিন্তু ও ভাবতেই পারেনি রবিদা ওকে ছাত্রী ছাড়া অন্য চোখেও দেখে। বয়েস কম, দারুণ অন্যরকম লেগেছিল সেই মুগ্ধ দৃষ্টির মালিককে, রবিদাকে। সে রাতে রবিদার বন্ধু সুব্রত একটু পরে এসেছিল নিমত্রণ রক্ষা করতে। কিন্তু সুব্রত দেরীতে এসেও খুব তাড়াতাড়িই সবার সাথে আলাপ করে নিয়েছিল গল্প হাসি ঠাট্টাও বাদ যায়নি। শ্রী বুঝতে পারছিলো সুব্রত ওকেও আকর্ষিত করতে চেষ্টা করছে। হাসি গল্প খাওয়া দাওয়ার ফাঁকে সুব্রত ওকে কিছু বলতেও চেয়েছিল কিন্তু ভিড়ের কারণে সেটা বলা হয়ে ওঠেনি।

শ্রী রবির থেকে সুব্রতর দিকে বেশি আকর্ষিত হয়েছিল। কারণটা বোধহয় সুব্রতর খোলামেলা হৈহৈ করা স্বভাব। কিন্তু সুব্রতর সাথে প্রেম প্রেম খেলাটা জমে ওঠার মুখেই সুব্রত চলে গেলো অন্য শহরে চাকরির সন্ধানে। ওর পড়া মাঝ রাস্তায় বন্ধ হল কারণ হঠাৎ অনেকদিন শয্যাশায়ী থাকার পর সুব্রতর মা মারা গেল। তার পরপরই ওর বাবার পেটে ক্যান্সার ধরা পড়লো। শ্রীর মনটা খুব খারাপ হয়েছিল।

পড়ায় মন বসতো না। ওদিকে পরীক্ষাও এগিয়ে এগিয়ে আসছিলো তাই রবিদার ক্লাস গুলো করতে আসতো ও। সেরকমই এক সকালে ও গিয়ে উপস্থিত হয়েছে কিন্তু বাকিরা তখনো আসেনি। রবিদা বাড়ির সামনে ছোট্ট বাগানের পরিচর্যা করছিলো। ওকে দেখে হেসে বলল “তুমি বসো আমি এখনি আসছি” খানিক পরে রবিদা এলো একমুঠো জুঁই নিয়ে। ওর দিকে এগিয়ে বলল “হাত পাতো” খানিক বিস্মিত হয়েই ও হাত পেতেছিল। জুঁইগুলো ওর হাতে দিয়ে বলল “আজ তোমাকে জুঁইয়ের মতোই স্নিগ্ধ লাগছে তাই এগুলো তোমায় দিলাম” শ্রী অবাক হয়ে তাকিয়েছিল রবির দিকে। বুঝতে পারছিলো ভালোবাসা কতটা গভীর। আস্তে আস্তে দুজন দুজনের এগিয়ে গেল। কলেজের পরীক্ষা একসময় শেষ হল।

এরপর তো আর দেখা হওয়ার কোন রাস্তা খোলা রইলো না, কারণ বাড়ি থেকে বেরোনোর অজুহাত কি দেবে ও। রবি বলল “আর অজুহাতের দরকার নেই। এই সপ্তাহ শেষে আমার বাবা তোমাদের বাড়ি যাবেন তোমার বাবার সাথে কথা বলতে”

কিন্তু কথায় বলে কোন কাজ পরে করবো বলে ফেলে রাখতে নেই। তাতে অনেক কিছু বিগড়ে যেতে পারে। তাই হল। এরমধ্যে সুব্রত ফিরে এলো আর এসেই শ্রীর বাড়িতে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলো। শ্রী যাতে আপত্তি না করতে পারে তাই এক বিকেলে চায়ের নেমতন্ন করে গোলাপের তোড়া দিয়ে ওর ভালোবাসার কথা জানালো। এবার শ্রী বলতে চেয়েছিল ওর আর রবির ভালোবাসার কথা। বলতে চেয়েছিল ও সুব্রতকে ভুলে গেছে এখন ও রবিকে ভালোবাসে। বাড়িতে মাকে সব জানিয়েছিল। মা বলেছিল বাবাকে জানাবে কিন্তু জানায়নি। কি দরকার! শ্রীর আপত্তি শুনছে কে। সুব্রত শ্রীর বাড়িতে জানিয়েছিল ওরা অনেকদিন ধরেই একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। কিন্তু রোজগারের পথ স্থির না করে এগোতে পারছিলো না। এখন একটা চাকরি জুটেছে যার মানে এখন ও প্রেমিকার সব দায় দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এরকম চাকুরীরত ছেলেকে ছেড়ে কেউ যে মাস্টারি করে সংসার চালায় সেরকম রোজগেরের হাতে মেয়ে দেয়? পাগল না কি? সব হাত ছাড়া হতে যাচ্ছে দেখে শ্রী রবিকে সব জানালো। তারপর বলল “তোমার বাবাকে নিয়ে আজই এসো আমাদের বাড়ি। কথা বলে চেয়ে নাও তোমার ভালোবাসাকে”

রবি সব শুনে খানিকক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর বলল “তুমি তো কোনদিন জানাওনি যে সুব্রত আর তোমার মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে তাহলে আমি অন্তত এগোতাম না”

শ্রী বলেছিল “কিন্তু সে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছি অনেকদিন। এখন আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তুমিও আমাকে ভালোবাসো তাই আমি তোমাকে বাবা মায়ের কাছে যেতে বলছি”

“সেটা হয় না শ্রীপর্ণা। তুমি সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এলেও সুব্রত তো এখনও সেই সম্পর্ক সত্যি ভেবেই তোমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে। তোমার বাবা মাও এই সম্পর্ক স্বীকার করে নিয়ে বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেছেন। তাই আমি বলবো তুমিও ফিরে যাও তোমার ভালোবাসার কাছে”

তার কিছুদিন পরেই শ্রীর বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর বোলপুর ছেড়ে ও সুব্রতর সাথে চলে এলো কলকাতায়। রবির খবর আর নেওয়া হয়নি কিন্তু ভুলতেও পারেনি ওকে। সেই কারণেই জুঁইগাছ পুঁতেছিল টবে। প্রথম প্রথম যেরকম ভালোবাসার জোয়ার দেখা গিয়েছিল সুব্রতর মধ্যে এখন ততটাই ভাটা। সুব্রতকে বলতে গেলে বলে “কিসের অনুযোগ তোমার? যা চেয়েছ কিছুই তো বাদ রাখিনি দিতে তাহলে?” একজন স্ত্রী কি শুধুই টাকাপয়সা গয়না শাড়ি এগুলোই চায় আর কিছু নয়। ওর তো শুধু স্বামীর সাহচার্য্য দরকার ছিল। ছেলে মেয়ে বড় হচ্ছে নিজের নিয়মে। ওর আজও মনে হয় রবি ওর স্বামী হলে ও বেশি সুখী হত।

রিক্সা মন্দিরে পৌঁছতে ও নেমে এল। পুজো দিলো মায়ের পায়ে তারপর প্রাণ ভরে কাঁদলো। এই মন্দিরে ও আর রবি কতবার এসেছে। তখন মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছে ওদের বিয়ে হলে এখানে এসে পুজো দিয়ে যাবে। আজ যদিও বা এলো কারণটা সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে গেলো। পুজো শেষে ও মন্দিরের বারান্দায় এসে বসলো, কিছুক্ষণ বসবে আগের মত। হঠাৎ জুঁইয়ের গন্ধ ভেসে এলো নাকে। আসেপাশে জুঁই গাছ আছে? প্রশ্ন করে জানলো ফুল নয় ধুপকাঠি, ও ঠাকুরের পায়ে যে ধুপকাঠির প্যাকেট নামিয়ে দিয়ে এসেছে মন্দিরের পুরোহিত সেগুলোই ধরিয়েছেন! ও মনে মনে বলল ‘তুমি যেখানেই থাকো জেনে যাও আমি আজও তোমায় মনে রেখেছি আর চিরদিন রাখবো ওই জুঁইয়ের মাধ্যমে’


Rate this content
Log in

More bengali story from Sonali Basu

Similar bengali story from Tragedy