STORYMIRROR

Apurba Kr Chakrabarty

Romance Classics

4  

Apurba Kr Chakrabarty

Romance Classics

জীবন যন্ত্রণা

জীবন যন্ত্রণা

10 mins
498

নবীনকে আজ চরম নৈরাশ্য গ্রাস করেছে। ভাবছিল এ জীবন মূল্যহীন,বেঁচেই কী বা লাভ ! কিন্তু অকাল মৃত্যু আর স্বেচ্ছা মৃত্যু তো এক নয়! আত্মহত্যা নাকি মহাপাপ! আস্তিক নবীন মনে করে এ জীবন বা আয়ু ঈশ্বরের দান।আত্মা নাকি অমর,এই দেহ পোষাকসম, এ শরীর বা দেহ মরলেও আত্মার মৃত্যু নেই । যদি আত্মহত্যার পর দেহ হীন আত্মা থাকে তার কী দশা হবে! ঈশ্বর বলবে তোর বরাদ্দ সময়ের আগে দেহ রূপী পোষাক স্বেছায় ছেড়েছিস এখন থাক উলঙ্গ! সে তো সূক্ষ্ম আত্মা! ভুত বা ছায়া মূর্তি না অপদেবতা!চরম পূন্য আত্মা না হয় ঈশ্বর বা পরমআত্মায় বিলীন হয় সে তো লাখে একজন।তাও সে শর্টকাট পথে আত্মহত্যা করলে হবে না। রোগ যন্ত্রণা জড়া ভোগ করে বহু কষ্টের মরনে যদি ঈশ্বর প্রাপ্তি হয়! অপ মৃত্যুতেও এই ঈশ্বরে বিলীন নাকি সম্ভব নয়!

কী ভয়ঙ্কর আত্মার সব জ্ঞান থাকবে কিন্তু অনুভুতি বোধের দেহ থাকবে না। সবাইকে দেখব, আপন পর, শত্রু মিত্র,তাদের উপভোগ দেখব,নবীন আরও ভাবছিল স্ত্রীর সম্ভোগ সুখ আরাম অন্য পুরুষের সাথে দেখব ! এ বড় অসহ্য। আত্মহত্যার পর ,মরে যে তাকে ভয় দেখাতে পারবই, তেমন নিশ্চয়তা নেই। মৃত্যুর সময়কালের রাশি ক্ষণ তিথি গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থানের উপর অতৃপ্ত আত্মা নাকী ভুত হয়! আমি তো অতৃপ্ত ,আমার আত্মা নিশ্চয়ই অতৃপ্ত! কিন্তু মৃত্যুর সময়কালে যদি ভুত হবার মত অনুকূল পরিবেশ পরিস্থিতি না হয় ! ভুত হতেই পারব না। এই দেহসম পোষাক হীন নগ্ন আত্মা না সূক্ষ্ম আত্মার হাল যে কী করুন হবে, কে জানে! পরপুরুষের সাথে আপন স্ত্রীর সম্ভোগ সুখ সব নিজের চোখে দেখতে হবে !

ঈশ্বরের বরাদ্দ কালের দেহ নিজের হাতে নস্যাৎ করেছি ঈশ্বর ক্ষমা করবে না। সর্প দংশনে,বাঘের কামড়ে,বজ্রপাতে, পথদুর্ঘটনায়, বন্যায় জলে ডুবে, পুলিশের গুলি খেয়ে, হঠকারীতায় কেউ গলা টিপে দিলে, বা সজোরে কেউ গন্ডদেশে চড় মেরে মারলে বা ধনধোলাই মত পাষন্ড নিষ্ঠুরদের দ্বারা হিংস্র নৃশংস যন্ত্রণাদায়ক হত্যা হলেও আমার দায় নেই।ঈশ্বরের কাছে নালিশ করতে পারব, আমার দোষ কী!তোমার দেওয়া দেহ বা পোষাক যাই বলো, আমি নিজে খুলে উলঙ্গ হই নি ,অন্যে টেনে খুলে নিয়েছে!আমার উলঙ্গ দশা বা সূক্ষ্ম দেহ হীন আত্মার আবার দেহ ফিরিয়ে দাও। 

 

চেতনা জ্ঞান নিয়ে, সূক্ষ্ম আত্মা রূপে থাকব না,দাবি করব,দরকারে ধর্নায় বসব। আশি লক্ষ জন্মের পর এই মানব দেহ পেয়েছি, লক্ষ যোনি, ইঁদুর থেকে ছাগল বাঘ, সব শেষে,সহস্র জন্মের তপস্যার ফল এই মানব যোনি নারীরূপী মায়ের কৃপায় এই মানব দেহ পেয়েছি । আর তো আমি ছাগল হবো না! গরু, সিংহ কিছুই হব না। মানুষ যতই জন্ম নিয়ন্ত্রণ করুক আমার দায় নেই।আমি শহীদ আমাকে যে কোন নারীর গর্ভে পাঠাও, আর শহীদে সম্মান,দাবী সব সময় বেশী, আমার ইচ্ছা মত কোন ধনী সচ্ছল সুন্দরীর গর্ভে পাঠাও, যাতে পরের জীবন নিরাপদ আরামের হয় ,দেহ সুন্দর হয়।

কত তো দেখছি! নায়ক নায়িকার ছেলে মেয়েরা মূর্খ হলেও কত মজা!আর মেয়ে হলে তো কথাই নেই!একটু স্বল্প বেশ বা সম্পূর্ণ পোষাক খুলে নগ্ন মডেল হয়ে ক্যামেরার সামনে বা ফ্যাশন শোতে একটু ছমকে হাঁটালেই হল! নাম টাকা আর কত আনন্দ! নিজের শরীরকে কে না ভালোবাসে! সেরা সুন্দর ভাবে।যেমন ভাবেই হোক না!একটা বৈশিষ্ট্য ঠিক খুঁজে বার করবেই, হয় চোখের চাহনি বা ঠোঁট ভ্রু বা দেহের গড়ন অনন্য অবিশ্বাস্য সুন্দর! দোষ কী! বিশ্ব সুন্দরীদরই দেহে মুখে কত খুঁত! তবু কীসের ভিত্তিতে বিশ্ব সুন্দরী ! দেশ জাতি বর্ন এলাকার কোঠা ! যত সব রসীকতা ! তাই সবাই নিজেকে সুন্দর সুন্দরী ভাবার দাবী কেন অন্যায় অযৌক্তিক হবে !

আর সবার সামনে নিজের সদ্য যৌবনের নগ্ন রূপকে উপস্থিত করা তো নিষ্পাপ! অন্যে কোন ক্ষতিসাধন তো হচ্ছে না! সব জীব জন্তু তাই করে! কিন্তু সাধারণ মানুষ,তারা যত সুন্দর, সুন্দরী হোক আকর্ষণীয় হোক না! এভাবে নগ্ন শরীর প্রকাশ্যে বা ক্যামেরার সামনে দেখালেই ,সেই সব সাধারণ মানুষরাই বলবে অশ্লীল অসভ্য! সমালোচনা আর নিন্দার জ্বালায় সমাজে টেকা দায় হবে। 

কিন্তু ওদের বেলা ! এসব অশ্লীল নয় ! সাধারণ মানুষরূপী ওদের ভক্তরা, সাংবাদিককুল সবাই ছেঁকে ধরে ! তাদের কত সব নগ্ন অদ্ধ নগ্ন ছবি ,ভিডিও, নানা ভঙ্গিমায় তোলা হয় ! ক্যামেরা বন্দী করা হয়,সেই সব লাইফ দেখানো হয়, বিখ্যাত ম্যাগাজিনে আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।টাকা খ্যাতি পরিচিতি কত বাড়ে!

ক্যামেরাম্যানরাও কত বড় মহান কাজ করছে ভেবে গর্বিত হয়,খ্যাতি যশ হয় ।কোটি কোটি ডলার উপার্জন করে। মডেল নগ্ন নারীর শরীরের নানা অঙ্গ নানা ভঙ্গিমায় ছবি তোলাও নাকি আর্ট !

আর রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের সন্তান হলে কত মজা,যোগ্যতা থাক বা না থাক দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অবধি হওয়া যায়। শুধু এ দেশে কেন সব দেশেই হওয়া যায়। তাই এই যুক্তিতে অকাল মৃত্যু তবু মানা যায়। ঈশ্বরের কৃপা হলে এজন্মের খেঁদী পেঁচী,পর জন্মে নামী দামী ঘরে জন্মে একই রূপ নিয়ে পরজন্মে,নায়িকা বা মডেল হয়ে জগত কাঁপাবে। টাকার গদিতে শুয়ে থাকবে।কোটি কোটি টাকার পোষাক আর গহনা পরবে ,ঘন ঘন বদলাবে। কোটি কোটি হাভাতে ঘরের মানুষদের শিশু থেকে বুড়ো নয়নের মনি হবে। গা গতর তো দেখাবেই! এখান ওখান রাস্তার মোড়ে সর্বত্র ছবি হাসি মুখে, কখনও করুন মুখে কান্না ভেজা চোখ বা রাগে ক্রোধে আগুন ঝড়া মুখ!কত রূপ যেন দেব দেবী ! ঈশ্বরের সমকক্ষ !

তাদের চেয়েও রূপবান, রূপসী হয়ত রোদে পুড়ে অনাহারে অদ্ধাহারে অকাল বিগত যৌবনা,কোন দিন রূপের পূর্ণ বিকাশ হল না।কঠোর শ্রমে ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে দুমুঠো খেতে পেয়েই তৃপ্ত।

এখন সব নাকি বলছে আত্মহত্যা মানসিক ব্যাধি! কিন্তু ক্যান্সার টিবি এডস্ বা স্ট্রোক যাই হোক এসব এমন রোগ ব্যাধি, এসব রোগ ব্যাধিতে মৃত্যু হলে আমরা তো দায়ী নয়! আত্মহত্যা তো তা নয়! তাই মানসিক ব্যাধি আত্মহত্যা ! সেই ব্যাধিতে আত্মার ইচ্ছায় নিজের স্থুল দেহে ছেড়ে আত্মা নিজেকেই উলঙ্গ করে ছাড়ে ! ঈশ্বরের কৃপা এতে পাওয়া যাবে কী! স্রষ্টা,সে ঈশ্বর,পরমাত্মা যাই হোক, রুষ্ট হবেই! সহজে আর দেহ দেবে না। আর রেগে যদি এমন একটা দেহে আত্মাকে ঢুকিয়ে দেয় ! সেই রকম কোন অভিশপ্ত দেহ! তাহলেই হল।তাই শ্রাস্ত্রে বলেছে আত্মহত্যা মহাপাপ!

হাজার কষ্ট লাঞ্ছনা রোগ জর্জরিত শত অভাব অনাহারে কত মানুষ মরে না,কষ্ট যন্ত্রণার মধ্যেই জীবনকে তারা উপভোগ করে। জীবনের সময় কোঠার শেষ করে তবে দেহ পরিত্যাগ করে।

সে তো আমরাও সুখ আরাম চেয়েও, দুঃখ যন্ত্রণা আর শারীরিক কষ্ট রোগ অসুখ জীবন ভর বেশী ভোগ করি।সুখ আরাম আনন্দ উপভোগ সম্ভোগ সবই ক্ষণিকের ।কিন্তু ঐ যে মোহ! মায়া! সারাদিন অক্লান্ত খেটে কষ্ট করে কিছু উপার্জন করে দুমুঠো খেয়ে একটু রাতে ঘুমাতে পারলেই সে কী পরম তৃপ্তি! জীবনের মোহ!

নবীনের নিজের অভিজ্ঞতায় জানা,এক অন্ধ ভিক্ষুকে সে চেনে। আজও তাকে ঐ ভাবেই ভিক্ষুক বেশে দেখা যাবে, না হলেও পনের ষোল বছর সে দেখে আসছে।মানুষটির কথা ভাবলে তার মন যেন হাঁপিয়ে ওঠে। মনে হয় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে! এই কী জীবন!

ব্যস্ত রাস্তার ধারে বসে হাত বাড়িয়ে সে ভিক্ষা চাইত পথচারীদের উদ্দেশ্যে ,বিরামহীন সকাল থেকে রাত অবধি।একটু দুর দিয়ে বাস লরি,ছোট গাড়ি বাইক কত শত যান শন শন বেগে চলে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।নবীন তখন ছাত্র একদিন একাকী হাঁটছিল আনমনে।কলেজ থেকে অন্যদিন তপসীর সাথে হাঁটার পথে হাজার কথা আর রঙিন ভবিষ্যত স্বপ্নে সে বিভোর থাকে।তপসী সেদিন কলেজ আসেনি।কলেজ থেকে গ্রামের ফেরার বাস ধরতে এইপথেই তারা যাতায়াত করত।যদিও দুজনের গ্রাম আলাদা,অনেকটাই দুর।কলেজে তাদের আলাপ পরিচয়,পরে প্রেম। ভিন্ন বাসরুটের তারা আলাদা বাস ধরে। নবীনকে কাটোয়া রুট বাস ধরে গ্রামের বাড়ি যেতে হয়, আর তপতী যায় সোনামুখী রুটে তার গ্রাম।কিন্ত শহরের বাম টার্মিনাল বা বাস ছাড়ার স্ট্যান্ড তো একই।

হঠাৎই ভিক্ষুকের কাছে এসে সেদিন নবীনের নতুন তারুন্যে বৈপ্লবিক গরীব দরদী মনে আবেগ যেন উথলে ওঠে।পথে ভিক্ষুকের সামনে সহসা থমকে দাঁড়াল, কৌতুহল বশত মেকী দরদী নিয়ে নবীন ঐ ভিক্ষুকক নবীন জিজ্ঞেস করেছিল,

"দাদু তোমাকে আমি দু বছরের বেশী দেখছি, এক স্থানেই বসে ভিক্ষা করছ ! কত বছর আগে থেকে তোমার এই দশা!"

ভিক্ষুক বলল, "বাবুজী আপনার বয়স কত জানি না। আমার বয়স কত তাও ঠিক জানা নেই, তবে আমার বয়স সত্তর আশির কম নয়,জন্ম অন্ধ। এই এক জায়গা বসেই আমার জীবন কাটল।কত বছর এভাবে ভিক্ষা করে আসছি, আমার তাও ঠিক জানা নাই।"

"তোমায় বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেছি, তীব্র গরমে দুপুরের রোদে পুড়তে দেখেছি, আবার তীব্র শীতে খুব সকালে সামান্য শীতের পোষাকে কাঁপতে দেখেছি, এইপথেই আমি কলেজ যাই, আবার রোগ অসুখে হাসপাতালে অথবা ডাক্তারের চেম্বারে যাই, সিনেমায় যাই,বাজার যাই। সব সময়ই দেখি জিটি রোডের ধারে, তোমার ঠিক এই জায়গাটা এলেই দেখি তুমি ভিক্ষা চাইছ। ধুলো বালি ওড়ে, বাস লরি নানা যানের ধোঁয়া আর হর্নের শব্দ। কষ্ট হয় না!"

"আমার কষ্টের মুল্য কী! আমাকে খুব সকালেই দৈনিক এখানে ওরা বসিয়ে দিয়ে যায়। আর রাত আটটার পর নিয়ে যায়।মাঝে দুবার খেতে দিয়ে যায়, ওরাই আবার এঁটো থালা বাসন নিয়ে যায়।"


"কত টাকা ভিক্ষা পাও জানো!"

"আমার জানা নেই, তবে ওরা আমাকে খেতে দেয়, রোগ বালাই হলে ওষুধ দেয়। তবে বড় রোগ তো আমার হয় না ! গাড়ি চাপা ও পড়ি না। "

"তোমাদের জন্য সরকার নাকি মাসিক ভাতা বা পেনশন দেয় জানো !"

"দিতে পারে তাতে আমার কী! আমার বাড়ির মানুষ সে সব নেয় হয়ত।"

"তোমার বাড়ির মানুষ কী তোমার আত্মীয়!"

"জানি না,ওরা কারা, আমি ওদের উপার্জনের বস্তু সারাদিন হাঁক ডাক করে ভিক্ষা চাই, রাতে ওরা বাড়ি নিয়ে গিয়ে খেতে দেয়,খাবার পর বিছানায় নিয়ে যায়,আমি ভীষণ ক্লান্ত থাকি,ঘুমিয়ে যাই।সকালেই উঠে বাথরুম টয়লেট যাই ,স্নান করতে বলে জলের বালতি হাতড়ে স্নান করি,পোষাক বদল করি, তারপর খেতে দেয়,পেট ভর্ত্তি করে খেয়ে আমাকে এই রাস্তার ধারে বসিয়ে দেয়।"


"ওদের কথা কিছু জানো! ওরা কারা!"

"না আমি জানি না,কথাই হয় না,কেউ আমাকে ধরে নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়। কাকু,দাদু পুরুষ গলায়, ওরা সম্ভাষন করে।"

"ভিক্ষা কম পেলে গালমন্দ করে!"

"না,করে না,তবে ওরা আমাকে নিশ্চয়ই নজরে রাখে, ভিক্ষার জন্য হাঁকডাক না করলে বা শুয়ে পড়লে বকা দেয় বলে ,দুরে ছেড়ে দিয়ে আসব , ভয় দেখায়! না খেয়ে, না নিরাপদ আশ্রয়ে শুতে পেয়ে ,কুকুরের মত নির্জন স্থানে একাকী মরবে।মরনকালে জলও কেউ দেবে না। আমার ভয় করে, যদি সত্যিই কোন নির্জন স্থানে ওরা রেখে আসে! এখানে কুকুর গুলো সব আমায় চেনে, চিৎকার শুনি কিন্তু কামড়ায় না,অজানা স্থানে কী জানি কোন কুকুরের দল বা অন্য কোন জীব জন্তু পোকা মাকড় আক্রমন করতে পারে, কামড়াতে পারে।"


"তুমি মৃত্যু চাইছ না !"


"মরন তো শেষ পরিনতি, যত আগে আসে ততই তো আমার মুক্তি,"

"একটু রাস্তার দিকে এগিয়ে গিয়ে লরি বাসের তলায় পড়ে বা ধাক্কা লাগিয়ে মরতে ইচ্ছা হয় না!"


"মরব নিশ্চিত কোথায়! ড্রাইভার সহজে আমাকে ধাক্কা মারবে না,আর যদি মারে মরবই কে বলল! আবার হাত পা কাটা পড়তে পারে,সে আরো তো জ্বালা।যত দিন ঈশ্বর এক জীবনে ভোগ দিয়েছে করব।কত শত মানুষের কত কথা শুনি, কিছু বুঝি,কিছু বুঝি না, নতুন কিছু শব্দ শিখি, মিছিল যায়, বাজনার শব্দ, বাজী বোমার শব্দ পাই, তবে কখনও কেউ আঘাত করেনি। পথের গরু দলিয়ে দেয়নি,বা কুকুর কামড়েও দেয়নি। সব ঈশ্বরের ইচ্ছা, দুঃখ একটাই দেখতে পাই না।

"এ তো নরক ভোগ করছ!"

"হয়ত তাই, "

নবীন এই বুড়ো ভিক্ষুককে এতসব বকিয়ে সেদিন শুধুমাত্র একটি দু টাকার কয়েন দিয়ে চলে আসে।

আজ ভাবছিল, সেই ডিখারীর কথা! তবু সে ভয় পায় মৃত্যুকে!

আর কত ভালো ছেলে মেয়ে, কত কম বয়সে, কত সচ্ছল, কত শিক্ষিত , কত প্রতিষ্ঠিত ,তবু কোন কারনে মানসিক চাপ না নিতে পেরে বা নিছক আবেগ মোহ, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি প্রেম বা উচ্চ কোন আকাঙ্খার ব্যর্থতা বা প্রতারণা, আর্থিক ক্ষতির বা আরো কত শত কারণে হঠাৎই আত্মহত্যা করে বসে ! এটা নাকি ব্যাধি ! আবার কত বাস লরি ফুটপাতে আচমকা উঠে পথচারীদের ধাক্কা মারে, চাপা দেয়, কত নামী দামী প্রান চলে যায়!এর প্রান যায় না!কত অসুখ, কত দুর্ঘটনায় অকালে কত জীবন ঝরে যায়!এর জীবন যেন অক্ষয় অমর !মৃত্যু কী তবে সবার সময় নির্দিষ্ট! হাজার চিন্তা তার মাথায় আজ ঘুরপাক খাচ্ছিল।

মানুষকে বিশ্বাস করা নবীনের স্বভাব ,জীবনে অনেক সে ঠকেছে,তবু এক ভুল সে করেছে বার বার। গ্রামে ফিরে আর যাবে না।বসত বাড়িটা ছাড়া আর জমিজমা বিষয় সম্পত্তি বাপের কিছুই নেই।মা আছে কিন্তু রুগ্ন অসুস্থ নিজেই পরনির্ভর । বাবা গতবারে মারা গেছেন। যজমানী সামান্য আয় উপার্জনে কোন মত তাদের সংসার চলে। দাদা ঐ বাবার যজমানী পেশাকেই সম্বল করে, আর কটা গ্রামের ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট টিউশন করে কোনমত জীবিকা চালায়। বড় সংসার তার মা স্ত্রী তিন সন্তান মিলে ছটা মানুষের ভরনপোষন খরচ তো কম নয়!

নবীন দেখতে শুনতে বেশ ভালো,গৌর বর্ন একমাথা কালো চুল, মুখচোখ ভালো ,লম্বা পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি ছিপছিপে হালকা গঠন কিন্তু রোগা পাতলা বলতে যা বোঝায় তা নয়।কলেজ জীবনে ক্লাসের একটি মেয়ের তপতীর প্রেমে পড়েছিল, বরং বলা ভালো তপতীর দিক থেকেই আগ্রহটা ছিল বেশী। ফিজিক্স বিষয়ের প্রাকটিক্যাল ক্লাসের তারা দুজনে ছিল পার্টনার ।অনেকটাই তার উপর তপতী নির্ভর করত। ডার্ক রুমে আলো সংক্রান্ত প্রাকটিক্যাল ক্লাসে একটি ঘর ছিল।

একদিন ঐ ঘরে তারা দুজন,নির্জন মৃদু লাল আলোয় প্রাকটিক্যাল ক্লাসে তারা শুধুমাত্র দুজন। তপতী কাছে এসে আবেগঘন গলায় বলেছিল,

"তোকে আমার খুব ভালো লাগে জানিস ,মনের কথাটা বলেই ফেললাম তুই কী ভাবলি জানি না!" তারপর তপতী একটু লাজুক হেসেছিল।

তপতীর ভরা যৌবনে আকর্ষণীয় মেয়েলী গঠন একরাশ বাহারি কালো চুল, মিষ্টি হাসি, মৃদু সেন্টের গন্ধ নবীনকে যেন মাতাল করত। রং মাঝারী, মুখ চোখ সাধারণ হলেও দুষ্ট মিষ্টি রূপ সবার নজর কাড়ত।এক আদিম সৌন্দর্যের আকর্ষণ ছিল,সারা শরীর জুড়ে ,চোখের কাজল কালো মিষ্টি চাহনিতে নবীন ছিল মোহগ্রস্থ ,তার সঙ্গতে এক পরিতৃপ্তি অনুভব করত। তাই নবীন দেরী করেনি, বলেছিল,

"আমারও তোকে ভীষণ ভালো লাগে।"

"রিয়েলী ! " বলে তপতী তাকে সেদিন জড়িয়ে ধরেছিল,লাল আলো আধাঁরী ডার্ক রুমে। 

সেই থেকেই সুচনা তখন ফাস্ট ইয়ার মাস তিনেক, কলেজ জীবনের শুরু।বেপরোয়া তপতী ক্লাসের অন্য সহপাঠীদের পাত্তাই দিতো না ,সুন্দর দেখতে শান্ত নিরীহ নবীনকে যেন নিজের কবজার মধ্যে এনেছিল।তপতী মিশুকে আর ভীষণ ধূর্ত চোখে মুখে কথা। সেই বয়স থেকেই তপতীর প্রেমে নবীন হাবুডুবু খাচ্ছিল। এতে বরং তার পরীক্ষার ফল যা হল তার আশানুরূপ নয়। পাস কোর্স ছাত্র আর কী হবে! বাড়ির অভাব ছিল তাই বি এস সি পরীক্ষার পর আর বেকার হয়ে গ্রামে ফিরে বসে যায়নি।

কলেজ থেকে পড়াশোনার শেষে নবীন শহরে প্রাইভেট টিউশন পড়াত,নিজের হাত খরচ থাকা খাওয়া আর থাকার মেস করে কজন বন্ধু মিলে। সরকারী,ব্যাঙ্ক, রেল কতরকম সব চাকরীর দরখাস্ত করত। পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে হায়রান হলেও নবীন কাজ পায়নি।

আর এখন চাকরী প্রায় বয়স নেই ,তার তাছাড়া ধৈর্যও নাই। পাঁচ বছর আগে প্রেমের মোহে সে কলেজ বান্ধবীর কথায় তাকে বিশ্বাস করেছিল । নিজ বাড়ির অমতে একরকম জেদ করে তপতীকে সে বিয়ে করেছিল। রেজিস্ট্রেশন ম্যারেজ।তপতী নার্সের চাকরী পেয়েছিল।আর নবীন শহরে তখন প্রাইভেট টিউশন পড়াত। মেস ছেড়ে স্ত্রীর বাড়িতেই রাতটা থাকত,যেদিন তার নাইট ডিউটি থাকত না।

নবীন মেস ছাড়ে নেই , দিনের মেসের খাওয়ার টাকা নিয়মিত দিত, দিনে মেসেই খেতো, আর সাইকেলটা শহরে বাড়ি বাড়ি প্রাইভেট পড়াতে যাবার বাহন ,সেটা মেস বাড়িতেই রাখত। রাতে সাইকেল মেসে রেখে তপতীর বাড়ি যেতো, রাতের শেষ বাস ধরে যে যে দিন তপতীর নাইট ডিউটি থাকত না।মেসের বন্ধুরা মজা করত,মনে মনে ঈর্ষা করত কিনা কে জানে! বেকার বন্ধুর নার্স চাকুরে বৌ, রাতে শ্বশুর বাড়িতে ভালো খাওয়া দাওয়া, তারপর স্ত্রীর সাথে রাতের বিছানা! কতই না আনন্দ উপভোগ! কত রঙিন স্বপ্নের জাল অবিবাহিত বেকার বন্ধুরা বুনতো! হাসি মস্করা করলে নবীন রাগত না। তপতীর নাইট ডিউটির দিন গুলো মেসেই থাকত। বন্ধুদের খুলে বলত না,এমন ভাব দেখাত, দিন দিন ও সব আমিষ কাজ নাকি তার ভালো লাগে না!


                ক্রমশ 



ଏହି ବିଷୟବସ୍ତୁକୁ ମୂଲ୍ୟାଙ୍କନ କରନ୍ତୁ
ଲଗ୍ ଇନ୍

Similar bengali story from Romance