STORYMIRROR

Sharmistha Mukherjee

Inspirational Others

4  

Sharmistha Mukherjee

Inspirational Others

জীবন জিগীষা ( পর্ব ১ )

জীবন জিগীষা ( পর্ব ১ )

17 mins
403


যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে


 জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে ॥


সব যে হয়ে গেল কালো 


, নিবে গেল দীপের আলো,


 আকাশ-পানে হাত বাড়ালেম কাহার তরে ।


  অন্ধকারে রইনু পড়ে স্বপন মানি।


  ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজা তাই কি জানি!


সকালবেলা চেয়ে দেখি , দাঁড়িয়ে আছ তুমি এ কি,


  ঘর-ভরা মোর শূন্যতারই বুকের 'পরে ।। 



জানলার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরের অঝোর ধারা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আপন মনে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে ইন্দ্রানী । বাইরের বারিধারার মতো ওর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা । পৃথিবীর সাথে যেনো সব সম্পর্ক ছিন্ন করে, সব মায়া কাটিয়ে চলে যেতে চায় মায়ের আদরের ইন্দু । পিছনে অনেকক্ষণ এসে দাঁড়িয়ে আছেন ইন্দ্রাণীর মা । মেয়ের কাঁধে হাত রেখে বলেন , " ইন্দু মা আমার , এভাবে কি নিজেকে শেষ করতে চাইছিস মা ? একবারও কি আমার আর তোর বাবার কথা ভাববি না ? আমরা যে তোকে এই অবস্থায় আর দেখতে পারছি না , বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমাদের । " এই কথা শুনে মায়ের দিকে ফিরেই মাকে জরিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে ইন্দু । ইন্দুর মা মাথায় হাত বুলিয়ে মেয়েকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে বলেন , " মা রে! আমাদের জীবনকাল নানা চড়াই - উতরাইয়ের মধ্যে দিয়েই কাটে , আঘাতে ভেঙে না পড়ে তা সহ্য করে আবার উঠে লড়তে

 হয় । সুখ - দুঃখ, হাসি - কান্নাকে মেনে নিয়ে জীবনকে জয় করার ইচ্ছে নিয়ে বাঁচতেই হয় আমাদের সকলকেই । আমি জানি তোর পক্ষে সবকিছু এতো সহজ না, কিন্তু এভাবে তো বাঁচা যায় না মা । দ্যাখ আমার আর তোর বাবার বয়স হয়েছে, আমরা আজ আছি কাল নেই । আমাদের দুজনের কথা ভেবে আবার নতুন করে জীবনটা শুরু কর , তোর সবরকম সিদ্ধান্তের সাথে আমি আর তোর বাবা সবসময় তোর পাশে থাকবো ।এবার ঘুমিয়ে পড় মা, কালকের ভোরের সূর্যের সাথে সাথে নতুনভাবে নিজেকে রাঙিয়ে তোল । " ইন্দু কথা শুনতে শুনতে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে মাকে বললো , " অনেকদিন তোমার গান শুনিনি, একটা গান শোনাবে মা । " ইন্দুর মা মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে গান ধরলেন , --



শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে,

পড়ুক ঝরে


তোমারি সুরটি আমার মুখের পরে,

বুকের পরে


শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে,

পড়ুক ঝরে


পুরবের আলোর সাথে পড়ুক প্রাতে,

দুই নয়ানে 


নিশীথের অন্ধকারে গভীর ধারে,

পড়ুক প্রাণে


নিশিদিন এই জীবনের সুখের পরে,

দুখের পরে


শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে,

পড়ুক ঝরে ।। 


গান শুনতে শুনতে মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে ইন্দ্রাণী । দুই গালে চোখের জলের দাগ তখনও স্পষ্ট । 




মায়ের কোলেই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে ইন্দু । ইন্দুর মা মেয়ের মাথাটা আস্তে করে বালিশের উপর রেখে কপালে একটা চুমু দিয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে চলে যান ।ইন্দুর মা নিজের শোবার ঘরে ঢুকে স্বামীকে বলেন , " জানো তো মেয়েটা আজকে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে নয়তো বহু রাত কেটেছে না ঘুমিয়ে । তুমি শুয়ে পড়ো, আমি মেয়ের কাছে শুতে যাচ্ছি । নয়তো আবার সেই দুর্ঘটনার কথা মনে পড়লেই ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করবে । আমি ঠিক সামলে নেবো, তুমি চিন্তা কোরো না । " এই বলে তিনি ধীরে ধীরে গিয়ে মেয়ের পাশে শুয়ে পড়েন । পরের দিন ভোরে ঘুম ভাঙলে দ্যাখেন ইন্দু বিছানায় নেই । উনি ভয় পেয়ে ছুটে মেয়ের শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দ্যাখেন ইন্দু রান্নাঘরে জলখাবারের আয়োজন করতে ব্যস্ত । ইন্দু মাকে দেখে বলে , " ওহ্ ! মা উঠে পড়েছো ? তুমি আর বাবা গিয়ে বসো আমি চা করে আনছি , তিনজনে একসাথে বসে খাবো । " আদরের ইন্দুর এই মানসিক পরিবর্তন দেখে ইন্দুর মা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বসার ঘরে গিয়ে বসেন । অনেক দিন পর তিনজনে একসাথে বসে চা খায় , তারপর ইন্দু বলে , " মা তোমরা বসে কথা বলো ,আমি যাই জলখাবার বানিয়ে ফেলি । আজকে তোমাদের জন্য লুচি আর ছোলার ডাল বানাবো । অনেকদিন হয়ে গেল রান্নাঘরে ঢুকিনি " এই বলে ইন্দু রান্নাঘরে চলে যায় । আজকে মেয়েকে আবার নতুন ভাবে দিন শুরু করতে দেখে ইন্দুর মা - বাবা খুব খুশি । জলখাবারের পালা শেষ হলে ইন্দু নিজের ঘরে চলে যায় । চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় নিজের resume জমা দিতে থাকে । কয়েকদিন লাগাতার ইন্টারভিউ দেওয়ার পর একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি পেয়ে যায় । ইমেইল মারফৎ স্কুলের চাকরিটার নিশ্চিতকরণ হবার পর ইন্দু ছুটে যায় বাবার ঘরের দিকে । ইন্দুর বাবা অবনী বাবু তখন আরাম কেদারায় চোখ বন্ধ করে বসে আছেন , পাশে চলছে ভূপিন্দর সিংয়ের গান -


" জিন্দেগী - জিন্দেগী মেরে ঘর আনা আনা জিন্দেগী  

জিন্দেগী মেরে ঘর আনা জিন্দেগী "


গানটা আগাগোড়াই ইন্দুর খুব পছন্দের তাই বাবার ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে চুপ করে গানটি শুনতে থাকে । গানটা শেষ হলে অবনী বাবু চোখ খুলে দ্যাখেন ইন্দু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে , " কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো , কিছু বলবি ? আয় আমার কাছে একটু বসবি " । ইন্দু চেয়ারটা টেনে নিয়ে বাবার পাশে বসে বললো , " বাবা আমি কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য দরখাস্ত ও ইন্টারভিউ দিচ্ছিলাম । একটু আগে একটি বেসরকারি স্কুল থেকে মেইলে এসেছে । পরের সপ্তাহে সোমবার থেকে জয়েনিং , তাই তোমাকে জানাতে 

এসেছিলাম । ইন্দুর বাবা - মা মেয়ের চাকরির খবর শুনে খুশি হয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরেন । 


মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে স্নানে চলে যায় ইন্দু , আজকে চাকরির প্রথম দিন । ঠাকুর ও বাবা - মাকে প্রনাম করে স্কুলের জন্য বেরিয়ে পড়ে । ইন্দুর মা রীতা দেবী দুই হাত জোড় করে প্রনামের ভঙ্গিতে বলেন , " দূগ্গা দূগ্গা , সাবধানে যাবি , সময়মতো খেয়ে নিবি কিন্তু । "


জীবনের আরেকটি অধ্যায়ে পা রাখলো ইন্দ্রাণী বসু । জীবনের খুব খারাপ অধ্যায়কে বাবা - মায়ের কথা ভেবে কিছুটা জোর করেই মুছে ফেলার চেষ্টা করছে ইন্দু । অবনী রায় ও ইন্দুমতী রায়ের একমাত্র সন্তান ইন্দ্রাণী বসু , ও ছাড়া বৃদ্ধ বাবা - মায়ের আর কেই বা আছে ! তাই ইন্দু নিজের মনকে শক্ত করে বাবা - মায়ের খুশির জন্য নিজেকে হাসি - খুশি দেখানোর প্রয়াসের প্রথম দিন শুরু 

করে । 


প্রথম দিন স্কুলে সকল শিক্ষিকাদের সাথে আলাপ হয় , কতো ছাত্রীদের সাথে পরিচয় হয় । মোটের উপর স্কুলে শিক্ষকতার হাতেখড়ির দিন ভালোই কাটে । এভাবে রোজ স্কুলের অন্যান্য শিক্ষিকা ও নিজের ক্লাসের সকল ছাত্রীদের সাথে সারাটা দিন বেশ লাগে তার , রবিবার ছুটির দিনটা বাড়িতে বাবা - মায়ের সাথে গল্প - গুজব, হাসি - মজা করে কাটায় । কিন্তু দিনের শেষে রাতে বিছানায় শুতে গেলেই যেন এক সমুদ্র কষ্ট মনের মধ্যে উদ্দাম ঢেউ তোলে , সমস্ত দুঃখগুলো হৃৎপিন্ডটাকে যেন অজস্র ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত করে তোলে। রোজ রাতে চোখের জল ফেলতে ফেলতে যে কখন ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় তা ইন্দু নিজেও জানেনা , সকালে ঘুম থেকে উঠে জোর করে একগাল হাসি নিয়ে শুরু করে আরেকটি নতুন দিন । সারাদিন সবার সাথে হাসিমুখে থাকা মেয়েটি রাতের বেলায় একেবারে নিঃসঙ্গ । দেখতে দেখতে শিক্ষকতার জীবনের এক মাস কেটে যায় । 


স্কুলের সকল শিক্ষিকাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও গার্গী দেবরায়ের সাথে একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইন্দুর । একদিন বিকালে স্কুল ছুটির পর গার্গী আর ইন্দু মিলে জমিয়ে আড্ডা দিতে চলে যায় স্কুলের কাছাকাছি একটা Cafe Coffee Day তে । গার্গী নিজের ফ্ল্যাটে একাই থাকে তাই ওর কাউকে কৈফিয়ত দেবার প্রয়োজন নেই কিন্তু ইন্দু নিজের বাবা - মাকে জানিয়ে এসেছে ফিরতে দেরি হবে তাই যেন ওনারা চিন্তা না করেন । ইচ্ছে করেই শনিবার দেখে আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিল ওরা । যেহেতু শনিবার স্কুলের হাফ ডে তাই অনেকক্ষণ জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে তার উপর পরেরদিন রবিবার ছুটির দিন । দুজনে দু কাপ কফি খেতে খেতে গল্প জুড়ে দিলো । নানা কথা বলতে বলতে হঠাৎ গার্গী ইন্দুকে জিজ্ঞাসা করলো , " এই ইন্দ্রাণী তোরা বাবা - মায়ের পদবী রায় কিন্তু তোর পদবী বসু ? r u married ? " প্রশ্নটা শুনেই কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে যায় ইন্দু , চোখের কোলে টলটল করে ওঠে অশ্রু । গার্গী বুঝতে পারে ইন্দুর কষ্ট হচ্ছে তাই " Sorry dear, আমি আসলে এমনি জিজ্ঞাসা করেছি । Don't mind please . " গার্গীর কথার মাঝেই ইন্দু বলে ওঠে , " আমার husband নেই , আমাকে একা ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে । কথা দিয়েছিল সারাজীবন পাশে থাকবে , বুকে করে আগলে রাখবে আমাকে তাও আমাকে ফেলে পালিয়ে গেল । সব মিথ্যে, সব , সব, সবকিছু মিথ্যে । ও কথা দিয়েও কথা রাখে নি । " 


ইন্দুর কথাগুলো শুনে গার্গী ভাবে ইন্দুর স্বামী বোধহয় ওকে ঠকিয়ে অন্য কারো সাথে চলে গেছে । তাই একটু রাগ দেখিয়ে ইন্দুকে বলে , " শোন, যে চলে গেছে তার জন্য মন খারাপ করে লাভ নেই , একেবারে অসভ্য লোক । যেই লোকটা তোর ভালোবাসার দাম না দিয়ে, তোকে ঠকিয়ে চলে গেছে তার জন্য আবার তুই কাঁদছিস ? " গার্গীর কথা শুনে ইন্দু ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর বলে , " মানে ! কি বলছিস তুই ? আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে পালিয়ে যায় নি , আজ থেকে ছয়মাস আগে অফিস থেকে ফেরার পথে একটা বাসের সাথে ওর মোটর সাইকেলের অ্যাক্সিডেন্ট হলে ও সাথে সাথেই মারা যায় । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ও দেয় নি । " এই কথা বলতে বলতে অঝোরে কাঁদতে থাকে ইন্দু । অনেকক্ষণ ধরে বুঝিয়ে বুঝিয়ে গার্গী ওকে শান্ত করে , তারপর আরও দুটো কফি অর্ডার করে ইন্দুকে বলে " ইন্দু তোর মনের সব চেপে রাখা কথাগুলো আমাকে বল, দেখবি মনটা অনেকখানি হালকা লাগবে । দুঃখের কথা ভুলে শুধুমাত্র সুখের স্মৃতিগুলোকে আগলে বাঁচার চেষ্টা কর, দেখবি ভালো থাকবি । কোনো কিছু মনের ভেতরে চেপে রেখে গুমরে গুমরে না কেঁদে আমাকে বিশ্বাস করে বলতে পারিস । " কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ইন্দু হঠাৎ বলে , " তুই শুনবি আমার কথা ? " গার্গী বলে , " ওমা ! কেনো শুনবো না । বল , বল সব শুনবো । তার আগে এটা বল তোর Arrange Marriage ছিল না Love Marriage ? "


ইন্দু কফির কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করলো । " আমি তখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি । আমার ছিল বাসন্তী দেবী কলেজ ।আমার বাবার কড়া নজর তাই গার্লস স্কুল শেষ করে আবার গার্লস কলেজে ভর্তি করানো । তবে আমি যেই কোচিং সেন্টারে পড়তাম সেখানে তো আর ছেলে- মেয়ের আলাদা কোনো ব্যাপার ছিল না । ওই কোচিং সেন্টারে ফাইনাল ইয়ারের ব্যাচে পড়তো আলাপ , আলাপ মুখার্জী । দারুণ হ্যান্ডসাম ছিল । যেমন ছিল পড়াশোনায় তেমন গানের গলা । আমাদের ব্যাচ যখন ছুটি হোতো তখন ওদের ব্যাচের ক্লাস শুরু হোতো তাই আমরা কোচিং থেকে বেরোতাম আর ওরা ঢুকতো । জানিস গার্গী , কোচিংয়ের সব মেয়েগুলো রোজ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো কখন আলাপ আসবে আর ওকে দেখে যেন ওরা শান্তি পেতো । আমি শুধু ওদের দেখে হাসতাম আর বলতাম , " উফ্ ! তোরা পারিস বটে , কি এমন সুন্দর রাজপুত্র যে তাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে যাস । " এভাবে 

দু - তিন মাস বেশ কাটার পর আমি আমার একটা নতুন রোগ আবিষ্কার করলাম । " 

 গার্গী কথার মাঝে ফুট কেটে বলে , " নতুন রোগ ? মানে ! কি হয়েছিল ? " গার্গীর কথা শুনে ইন্দু একটু হেসে বলে , " আরে বুঝলি না ? ওদের মতো রোজ আলাপকে দেখার রোগটা আমারও হয়েছিল । তবে আমি দেখতাম একটা গাছের আড়াল থেকে লুকিয়ে । " একথা বলার পর গার্গী আর ইন্দু দুজনেই হেসে গড়িয়ে পড়লো । হঠাৎ ইন্দু খেয়াল করে কাফের সবাই ওদের দিকেই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে , সাথে সাথে ওরা নিজেদের সংযত করে আবার গল্প শুরু করলো । গার্গী বললো , " তার মানে 

আলাপ দা সত্যিই খুব হ্যান্ডসাম ছিল । " ইন্দু শুধু উপর - নীচে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় তারপর আবার বলতে শুরু করে । 

" এভাবে আরও কয়েক মাস কেটে যায় । এর মধ্যে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে একটা ছোট্ট ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল । আমি একটা নাচ করেছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে । গানটা ছিল -


" মন মোর মেঘের সঙ্গী,


 উড়ে চলে দিগ্‌দিগন্তের পানে


 নিঃসীম শূন্যে শ্রাবণ বর্ষণ সঙ্গীতে


 রিমিঝিম রিমিঝিম রিমিঝিম॥ "


নাচের সময় আমি খেয়াল করেছিলাম আলাপ অপলক দৃষ্টিতে একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে , যেন চোখের পাতা ফেলতেই ভুলে গেছে । ওর চোখের চাহনির মধ্যে ছিল অসাধারণ মুগ্ধতা । সেদিনই আমি প্রথম আলাপের গান শুনেছিলাম , আজও ওর সেই গানটা আমার মনে আছে । ঐ যে রবি ঠাকুরের প্রেম পর্যায়ের গানটা - 


" কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া

তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া।

চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি

গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।

ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের দেবতা,

কেমনে তোমারে কব প্রণয়ের কথা।

ভেবেছিনু মনে মনে দূরে দূরে থাকি

চিরজন্ম সঙ্গোপনে পূজিব একাকী–

কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়,

কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়।

আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি,

কেমনে প্রকাশি কব কত ভালোবাসি॥ "


গার্গী সেদিন আমি ওর গানে এতোটাই মোহিত হয়ে গেছিলাম যে বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম । গান শেষ হবার পর বন্ধুদের ধাক্কায় আমার সম্বিত ফেরে । পরে বন্ধুদের মুখে শুনেছিলাম আলাপ গান গাইতে গাইতে বারবার আমার দিকেই দেখছিল । এরপর থেকে বেশ কিছুদিন আমি আলাপকে দেখলেই কখনো পালিয়ে যেতাম , কখনো বা লুকিয়ে পড়তাম । আমার বোকামির কথা ভেবেই আলাপের সামনে যেতে খুব লজ্জা করতো । 

প্রায়ই লক্ষ্য করতাম আলাপ আমার বন্ধুদের কাছে জিজ্ঞাসা করতো , " আজকে ইন্দ্রাণী আসে নি ? " বন্ধুরা রোজ বলতো , " হ্যাঁ এসেছে কিন্তু তোমার আসার আগেই ও হয় পালিয়ে যায় নয়তো লুকিয়ে পড়ে । আসলে অনুষ্ঠানের দিনে তোমার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকার ব্যাপারটা নিয়েই ইন্দ্রাণী তোমার সামনে আসতে লজ্জা পায় । " একথা শুনে আলাপ একটু হেসে চলে যেতো । একদিন হয়েছে কি রোজকার মতো ক্লাস শেষ হতেই আমি ছুটে পালাচ্ছিলাম , কোচিং গেটের সামনে যেতেই হঠাৎ কোথা থেকে আলাপ এসে আমার পথ আটকে দাঁড়ায় । আমি কিছুতেই পাশ কাটিয়ে যেতেই পারছিলাম না । তারপর আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় কোচিংয়ের থেকে একটু দূরে । আমি বললাম , " কি হোলো এটা ? আমাকে এখানে টেনে আনার কারণ জানতে পারি ? " আলাপ উত্তর দিলো , " আচ্ছা, আমি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে এড়িয়ে পালিয়ে যাও । সেদিন শুধু তুমি একাই বোকামি করোনি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে , তোমার নাচের সময় একি বোকামি আমিও করেছি । কি করবো বলো, তোমাকে এতোটাই সুন্দর লাগছিল যে আমি তোমার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছিলাম না । " কথাগুলো শুনতে শুনতে আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন মাটির নিচে ঢুকে যাচ্ছি । যেই আলাপকে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম , যাকে দেখলে পালিয়ে যেতাম এখন আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে তার মুখেই নিজের প্রশংসা শুনছি । যাইহোক কোনোরকমে সেদিন পালিয়ে বাঁচলেও পরের দিন থেকে রোজ কোচিং শেষ হবার আগে থেকেই ও এসে দাঁড়িয়ে থাকতো আর নানা অছিলায় আমার সাথে কথা বলতো । এভাবে আস্তে আস্তে দুজনের মনের তার কিভাবে যে জুড়ে গিয়েছিলো টেরই পাই নি । এভাবেই শুরু হোলো আমাদের দুজনের জীবনের নতুন অধ্যায় । সেই বছর ও পাশ করে NMIMS University - তে ভর্তি হোলো MBA করার জন্য । দুজনার পড়াশোনার পাশাপাশি প্রেমটাও চলতে থাকে । আমার বাড়িতে শুধু আমার মা আর ওর বাড়িতে শুধু ওর পিসি এবং পিসতুতো দিদি সবটাই জানতো । আমার গ্রাজুয়েশন শেষ করে বাংলায় M. A করলাম আর আলাপ একটা ভালো প্রাইভেট ফার্মে চাকরি শুরু করলো । আমাদের সম্পর্কের তখন প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেছে, এর মধ্যে মায়ের দৌলতে আলাপের সাথে বাবার একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয় । আমাদের বিয়ের প্রস্তাব উঠতেই বেঁকে বসলেন আলাপের বাবা - মা দুজনেই । কারণ কি জানিস ? ওনারা ব্রাক্ষ্মণ কিন্তু আমরা ব্রাক্ষ্মণ নই , আর একই বর্ণ না হলে কি বিয়ে হয় ? আলাপের বাবার বক্তব্য ছিল , " না না এ বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না । এক গাছের ছাল অন্য গাছে লাগে না । আমি বেঁচে থাকতে ব্রাক্ষ্মণ ছাড়া অন্য বর্ণের মেয়ে এই বাড়িতে ঢুকতে পারবে না । " আলাপ মাস তিনেক ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও কিছুতেই ওর বাবা - মায়ের মন গলাতে পারে নি । অসম্ভব রকমের জেদ ছিল ওনাদের বর্ণভেদ নিয়ে । আলাপের পিসি, পিসেমশাই আর পিসতুতো দিদি পর্যন্ত ওনাদের অনেক বুঝিয়েছেন যে আজকাল এসব কেউ মানে না , তোমাদের আশীর্বাদে ওরা সুখী হোক, ভালো থাকুক এটাই তো কাম্য । কিন্তু না কোনো লাভ হয় নি । অনেক চেষ্টা করেও কোনো লাভ না হওয়ায় আলাপ আমাকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । আমার বাবা বিয়ের দিন সকালে আমার শ্বশুরমশাইকে ফোন করেছিল সেদিনই বিয়ে হচ্ছে আমাদের, ওনারা উপস্থিত থাকা মঙ্গলজনক তাই যেন ওনারা অতি অবশ্যই আসেন । প্রত্যুত্তরে উনি বলেছিলেন , " ওনার কোনো ছেলে নেই, মারা গেছে " ।   

আলাপের বাবা সেদিন ফোন কেটে দেওয়ার পর আমার বাবা আলাপকে বলেছিল , " আলাপ তোমাদের বিয়ের পর তোমরা দুজনে গিয়ে তোমার বাবা - মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে এসো । তোমার বাবা যা বলেছেন সেটা রাগ করে বলেছেন তা নিয়ে মন খারাপ কোরো 

না । " এই কথাগুলো বলে বাবা আলাপের মাথায় একটু হাত দিয়ে চলে যায় । সেদিন আমার সাথে আলাপের দেখা হয়নি কারণ একই বাড়িতে থেকে বিয়ে হচ্ছে তাই আমাকে একরকম ঘরবন্দী করেই রেখেছিল সবাই । তবে ফোনে কথা হয়েছিল আমাদের । আলাপ সেদিন ফোনে আমাকে বলেছিল , " ইন্দু, তোমার বাবা বলেছেন বিয়ের পর গিয়ে আমার বাবা - মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে আসতে , তুমি কি বলো ? " আমি বলেছিলাম , " বাবা তো ঠিকই বলেছে । ওনারা আমাদের গুরুজন তাই ওনাদের আশীর্বাদ নিতে যাওয়া উচিত । " আমার কথা শুনে আলাপ বলেছিল , " কিন্তু ওখানে গেলে যে তোমাকে অনেক অপমানিত হতে হবে । বাবা - মা তোমাকে তো মেনে নেবে না শুধু শুধু ................ । " আমি বলেছিলাম , " ঠিক আছে যা হবে দেখা যাবে , আর তুমি যখন সাথে থাকবে তখন আমার কোনো ভয় নেই । " বিয়ের দিন সব আচার অনুষ্ঠান খুব ভালো করেই হয়েছিল । আমাদের বাড়ির ছাদে আলাদা করে দুটো গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছিল , মানে আমার আর আলাপের গায়ে হলুদ একসাথেই হয়েছে কিন্তু মাঝে ছিল পর্দার অন্তরাল । জানিস গার্গী আমার তখন ইচ্ছে করছিল মাঝের আড়ালটুকু একটু সরিয়ে একবার দেখি হলুদ মেখে আলাপকে কেমন লাগছে । কিন্তু কিছু করার নেই অগত্যা মনের ইচ্ছেটাকে কিছুটা জোর করে চাপা দিয়ে দিলাম । রাতে যখন বিয়ের পিঁড়িতে আলাপের মুখোমুখি বসলাম জানি না কেনো লজ্জায় আলাপের চোখের দিকে তাকাতে পারিনি । যাইহোক বিয়ে শেষ হতে হতে রাত একটা বেজে গিয়েছিল । পরের দিন সকালে আমরা দুজন জলখাবার খেয়ে একটা গাড়ি নিয়ে আলাপের বাড়িতে যাই । গাড়ি থেকে নেমে আর বাড়ির ভিতরে ঢোকা হয় নি , গেটের সামনে থেকেই অনেক বাজে কথা বলে অপমান করে আমাদের বের করে দেওয়া হয় । আলাপের মা বলেছিল , " বাবু তুই ভিতরে আসতে পারিস কিন্তু ঐ মেয়ে ঢুকতে পারবে না । " আলাপ ওর মায়ের কথা শুনে বলেছিল , " না মা, আমিও বাড়ির ভিতরে ঢুকবো না । যেখানে আমার স্ত্রীর প্রবেশ নিষেধ সেখানে আমি কি করে ঢুকবো ? পারলে আমাদের আশীর্বাদ কোরো । আমরা চলে যাচ্ছি । " আমরা দুজন যখন বাড়ি থেকে বেরোতে যাবো তখন আলাপের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল , " ঐ মেয়ে আমাদের থেকে আমাদের একমাত্র সন্তানকে দূর করেছে । আমি অভিশাপ দিচ্ছি ঐ মেয়ের সংসার পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে , কিছু থাকবে না । " আলাপ কোনো কথা না বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে আসে । সেদিন বাড়িতে ফিরে খুব মন খারাপ ছিল । পরের দিন আমাদের ফ্ল্যাটে ঘরোয়া বৌভাতের অনুষ্ঠান করে আলাপ । সেদিন থেকে শুরু হয় আমাদের দুজনের নতুন সংসার । 


ফুলসজ্জার দিন রাতে আলাপ আমাকে জড়িয়ে ধরে গান শুনিয়েছিল । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত প্রেমের গান -


  " ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে


   আমার নামটি লিখো-- তোমার


     মনের মন্দিরে।


আমার পরানে যে গান বাজিছে


   তাহার তালটি শিখো-- তোমার


     চরণমঞ্জীরে॥


ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে


   আমার মুখর পাখি-- তোমার


     প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥


মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো


   আমার হাতের রাখী-- তোমার


     কনককঙ্কণে॥


আমার লতার একটি মুকুল


   ভুলিয়া তুলিয়া রেখো-- তোমার


     অলকবন্ধনে।


আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে


   একটি বিন্দু এঁকো-- তোমার


     ললাটচন্দনে।


আমার মনের মোহের মাধুরী


   মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার


   অঙ্গসৌরভে।


আমার আকুল জীবনমরণ


   টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-- তোমার


     অতুল গৌরবে॥ "


আদরে - সোহাগে ভরিয়ে দিয়েছিল আমার শরীর - মন - প্রাণ । আজও মনে পড়ে সেই রাতের প্রত্যেকটা মূহুর্ত । আমার কপালে - চোখে - গালে - ঠোঁটে - গলায় আদর এঁকেছিল আলতো ঠোঁটের ছোঁয়ায় । একটু একটু করে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল আমাদের দুজনের শরীর । 


 বিয়ের পর আনন্দ , হাসি - ঠাট্টা , আদর , অফুরন্ত ভালোবাসা আর আলাপের গানের মধ্যে দিয়ে একটা বছর দূর্দান্ত কাটলো । এক বছর পর থেকেই জীবনে ঘনিয়ে আসতে শুরু করলো অশনি সংকেত । গার্গী একটু শশব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো , " অশনি সংকেত মানে ? না অশনি সংকেত মানে আমি জানি কিন্তু আমি বলতে চাইছি কি ঘটেছিল ? " ইন্দু একটু অন্যমনস্ক ভাবে বললো , " সব বলবো, কিভাবে একটু একটু করে আমার সব শেষ হয়ে গেল । " এই বলে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে আরো দুকাপ কফি অর্ডার করে সব ঘটনা বলতে শুরু করলো । 


বিয়ের পুরো এক বছর পর আলাপ হঠাৎ একদিন অফিস থেকে ফোন করে বললো , " ইন্দু একটা ভালো খবর আছে । বাবা ফোন করেছিল , তোমাকে ওনারা বাড়ির বৌ হিসাবে মেনে নিয়েছে । কালকে রবিবার আমার ছুটি, তাই তোমাকে নিয়ে সকাল সকাল যেতে বলেছে । " আমি সব শুনে বললাম , " এটা সত্যিই খুব ভালো খবর । তুমি আবার তোমার বাবা - মায়ের কাছে যেতে পারবে । আমার এতোদিন নিজেকে অপরাধী মনে হোতো , মনে হোতো আমার জন্য তুমি তোমার বাবা - মায়ের থেকে দূরে সরে গেছো । আজকে মনের ভার অনেকটা কমে গেল । আমরা কালকে সকাল সকাল যাবো , আমি সবাইকে রান্না করে খাওয়াবো । " আমার কথা শুনে আলাপ সেদিন আনন্দে আমাকে কতোবার যে " I Love You " বলেছে তার ইয়ত্তা নেই । পরের দিন সকাল সকাল সব কাজ সেরে আমরা দুজন রওনা দিলাম আলাপের বাড়ির দিকে । বাইকে আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম । বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি আলাপের মা আর পিসি বরণডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে সেদিন নতুন বৌয়ের মতো বরণ করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় । সেদিন আমি আলাপের মুখে একটা শান্তির হাসি দেখেছিলাম অনেকদিন পর । বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে মেনে নেওয়া আর একবছর পর বাবা - মায়ের কাছে ফিরে আসা আলাপকে খুব মানসিক শান্তি দিয়েছে । আমি , আলাপের পিসি আর পিসতুতো দিদি সেদিনের রান্নার দায়িত্ব নিলাম । রাজসিক খাবারের আয়োজন হয়েছিল সেদিন । দুপুর বেলায় খাবার টেবিলে গল্পের আসরে হাসির তুফান উঠেছিল 

সেদিন ।খাবারের শেষে বসার ঘরে বসেছিল গল্প - গানের আসর । সেদিন আলাপ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গান শুনিয়েছিল -



 " আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও।


     আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও ॥ "



সকলকে খুব খুশি দেখে, বিশেষ করে আলাপকে ভীষণ খুশি দেখে আমি যে কতোটা স্বস্তি বোধ করেছিলাম বলে বোঝাতে পারবো না । আমার শ্বশুর অবশ্য আমার সাথে বেশি কথা বলেনি কিন্তু শ্বাশুড়ী অনেক গল্প করেছিল । সেদিন আমরা দুজন রাতের খাবার সেরে নিজেদের ফ্ল্যাটে ফিরেছিলাম । তারপর থেকে আমরা দুজন প্রায় প্রত্যেক ছুটির দিন ঐ বাড়িতে যেতাম । ভালোই কাটছিল দিনগুলো । কিন্তু বুঝতে পারিনি ঐ আনন্দের মধ্যেই ছিল কালো ছায়ার করাল হাতছানি । 

ছুটির দিনে বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি যাতায়াত করে, সবার সাথে সময় কাটানোতে দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল । তার মধ্যে হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা মাসের menstruation হয় নি । আমি আমার মাকে ফোন করে জানাতেই মা বললো একবার pregnancy test করে দেখে নিতে , তারপর কোনো Gyenocologist - এর সাথে যোগাযোগ করতে । মায়ের কথামতো বাড়িতে একটা pregnancy kit নিয়ে এসে পরীক্ষা করি , তাতে রিপোর্ট পজিটিভ আসে । তবে যেহেতু অনেকের কাছে শুনেছিলাম pregnancy kit - এর রিপোর্ট সবসময় শত শতাংশ ঠিক হয় না , তাই আবার একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করাই । তাতে ধরা পড়ে আমি সত্যিই গর্ভবতী ।আলাপকে এই কথা জানাতেই আনন্দে সারা বাড়ি যেন মাথায় তুলে নেয় । তারপর একদিন একজন Gyenocologist - এর সাথে যোগাযোগ করি । ডাক্তার প্রথম পাঁচ মাস আমাকে খুব সাবধানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল তাই প্রথম পাঁচ মাস আমি আমার মায়ের কাছে থাকতাম । আমার সাথে আলাপও থাকতো আমার বাপের বাড়িতে ।  



   ********** To Be Continue




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational