Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sonali Basu

Drama

4  

Sonali Basu

Drama

ঝামেলার অবসান, ভুলভ্রান্তিও

ঝামেলার অবসান, ভুলভ্রান্তিও

7 mins
2.4K


কেক তৈরির পদ্ধতিটা আরেকবার ভালো করে পড়ে নিলো সুচেতা গুগুলে তারপর সব হাতের কাছে জোগাড় করে নিলো। আজ ও ঠিক করেছে কেক বানাবে। প্রতিদিনের সেই এক রান্নার মধ্যে সুচেতা সেরকম নতুনত্ব খুঁজে পায় না। তাই স্বাদ বদলের জন্য ও মাঝে মধ্যেই মোবাইলে ইন্টারনেট ঘেঁটে নতুন নতুন পদের সন্ধান করে তারপর সেটা তৈরিতে মন দেয়। এসব খাওয়ার জন্য একজন রয়েছে, ওর স্বামী তন্ময়। বেচারাকে প্রতিদিনের ডাল ভাতের ওপর এইসব অসাধারণ খাবারও গলধকরণ করতে হয়। সুচেতা রান্না খারাপ করে, তা নয় কিন্তু বরং প্রতিদিনের রান্না যেমন সুস্বাদু হয় তেমনই এগুলোও হয়। আজ যখন কেকে তৈরি হল তখন সুগন্ধে ওরই জিভে জল চলে এলো। কিন্তু না আগে তন্ময় খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে তারপর ও খাবে। রান্নাঘর থেকে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়তে ওর শ্বাশুড়িমা টিভি দেখতে দেখতে গলার স্বর চড়িয়ে বললেন “কি রান্না করছো সুচেতা, সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে”

ও রান্নাঘর থেকে উত্তর দিলো “কেক বানাচ্ছি”

“ও, ... আমাকে এক কাপ চা খাওয়াবে?”

“হ্যাঁ এই তো নিয়ে যাচ্ছি” বলেই ও দুকাপ চায়ের জল চড়িয়ে দিলো। চা বানিয়ে শ্বাশুড়িমা যেখানে বসে সেখানে নিয়ে এলো। তারপর মাকে চায়ের কাপ আর বিস্কুট ধরিয়ে দিয়ে নিজেও এক চুমুক দিলো। শ্বাশুড়িমা চায়ের কাপ সামনে রেখে আবার টিভিতে মন দিলেন। গরম চা খাওয়ার ওনার অভ্যেস নেই, একটু ঠাণ্ডা হলে ঠোঁটে ছোঁয়াবেন। চোখ আবার আটকে গেলো যে পর্ব চলছে তার ওপর। বিকেল থেকে রাতের খাওয়া অব্দি সেটাতে যতরকমের ধারাবাহিক হয় সব উনি পরপর দেখেন। সুচেতার অবশ্য এইসব ধারাবাহিকের নেশা নেই, তার বদলে ও মোবাইলে ফেসবুক নয়তো ওয়াটস্ এ্যাপ খুলে বন্ধুদের টুকটাক হাই হ্যালোর উত্তর দেয় নয়তো কেউ অন থাকলে গল্প করে। ওর এতেই বেশ সময় কেটে যায়।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে এক চোখ শ্বাশুড়িমায়ের ধারাবাহিকে তো আরেক চোখ ফেসবুকের পাতায় এভাবে দুদিকেই তাল দিচ্ছিলো ও, এমন সময় টিং আওয়াজ সহকারে মেসেজ এলো। ও খুলে দেখলো ওর দিদি সুচরিতা লিখেছে – কি রে কি করিস?

ও উত্তর দিলো – এই একটু আগে কেক বানালাম, এখন বসে চা খাচ্ছি। কাল গুগুলে একটা নতুন কেক বানানো শিখলাম তাই আজকে চেষ্টা করলাম

- তুই তো আগেই কেক বানাতে পারিস তাহলে

- অভেন নয় প্রেসার কুকারে করলাম

- ও। বান্টি ফোন করেছিল

- হ্যাঁ ওর পড়াশোনা ভালোই চলছে, খুব ব্যস্ত। এই গরমে চেষ্টা করবে আসতে

- এবারই ফাইনাল সেমেস্টার তো

- হ্যাঁ। এরপর তো ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ

সেই মুহূর্তের প্রদীপের মেসেজ এলো – কি করছো বৌদি?

- কি আবার টিভি দেখছি

- দাদা?

- এখনো ফেরেনি অফিস থেকে

- ও ... দাঁড়াও তোমায় একটা জিনিস দেখাই (বলেই ও একটা ছবি আপলোড করলো।) একটা দামী কেকের ছবি দেখে সুচেতা লিখলো – এ তো কেকের ছবি

- হ্যাঁ এটা আমার জন্মদিনে কুহু আমায় গিফট করেছে

- হুম। ফোনটা রাখো

- কেন বৌদি?

- আর কেন, তোমার জন্মদিন ছিল তার নেমতন্ন কোথায়? শুধু কেকের ছবি দেখিয়েই হয়ে গেলো? তার ওপর তোমার হবু স্ত্রী এসেছিলো, তার সাথেও আলাপ করালে না

- না মানে তন্ময়দা তো

- এখন তন্ময়দার কথা তুলে প্রসঙ্গ ঘোরাচ্ছ?

- না না সরি, পরেরবার অবশ্যই করবো

- থাক আর করতে হবে না। আমি নিজেই কেক বানাতে পারি, আজ বানিয়েছিও, খেয়ে নেবো, তোমায় আর কষ্ট করে নেমতন্ন করতে হবে না।

- তুমি কেক বানিয়েছ? ছবি কই?

সুচেতা রান্নাঘরে গিয়ে কেকের ছবি তুলে আপলোড করলো।

- আরিব্বাস। খাওয়াবে না?

- চলে এসো

এই কথোপকথনের মাঝে তন্ময় এসে পৌঁছালো অফিস থেকে। কিন্তু সুচেতা মোবাইলে ব্যস্ত। খানিকক্ষণ চুপচাপ দেখলো ব্যাপারটা তারপর বলল “এবার কি চা দেওয়ার সময় হবে তোমার?”

সুচেতা মুখ তুলে ওকে দেখে বলল “হাত মুখ ধোয়া হয়ে গেছে? বসো চা দিচ্ছি” তারপর শ্বাশুড়িকে প্রশ্ন করলো “মা আপনি আর এক কাপ চা খাবেন কি?”

“দিয়ো তবে অল্প”

খানিক পরে ও যখন এলো দু কাপ চা নিয়ে তখন দেখল ওর স্বামী মুখ গম্ভীর করে বসে আছে, আর শ্বাশুড়িমা টিভি দেখছেন। কি ঘটেছে বুঝতে পারলো না ও তবে জিজ্ঞেস করলো না কিছু। চুপচাপ চা পর্ব শেষ হলো। তারপরই তন্ময় ঘরে চলে গেলো। সুচেতা বুঝলো এখন ও অফিসের কাজ করবে ল্যাপটপে তাই ও রান্নাঘরে ফিরলো রাতের রান্না করতে। রুটি তরকারি করতে করতে রাত ন’টা বাজলো।

“মা খেতে চলুন”

“চলো... খোকা টেবিলে বসেছে?”

“না... আপনি বসুন আমি ডেকে নিয়ে আসছি”

ও ঘরে এসে দেখলো তন্ময় চুপচাপ শুয়ে আছে। ব্যাপারটা কি, ভাবতে ভাবতে ও বলল “খেতে এসো”

তন্ময় চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে বলল “খিদে নেই, খাবো না, মাকে দিয়ে দাও”

“কি হয়েছে? শরীর খারাপ যখন তখন আগে বললে না কেন?” উদ্বিগ্ন সুচেতার প্রশ্ন।

“আমার শরীর নিয়ে তোমার যেন কত মাথা ব্যাথা” ব্যঙ্গ ঝরে পড়লো ওর গলা থেকে।

“তোমাকে নিয়ে ভাববো না তো আর কি নিয়ে ভাববো?”

“মনে তো হয় না”

“এরকম মনে হওয়ার কারণ কি? তুমি যেমন পছন্দ করো সেরকমই থাকি বাড়িতে যা যা ভালোবাসো তাই রান্না করি। আজ যেমন কেক বানিয়েছি। তাহলে এ কথার মানে কি?”

“কেক যার জন্য বানিয়েছ তাকে খাওয়াও”

“কার জন্য বানিয়েছি? তোমার জন্যই তো বানালাম”

“উঁহু বানিয়েছ তো প্রদীপের জন্য”

“কি বলছো উল্টোপাল্টা”

“উল্টোপাল্টা বলছি, তাহলে এগুলো কি?” বলেই সন্ধ্যায় সুচেতা আর প্রদীপের কথোপকথন দেখালো তন্ময়। সুচেতার রাগ হয়ে গেলো “পুরোটাই তো পড়েছ তাতে কি কোথাও লেখা আছে যে কেক ওর জন্য বানিয়েছি?”

“সে কথা বাদ দাও। তুমি ওকে নেমতন্ন করলে কি ভেবে? তুমি জানো না ওদের সাথে আমাদের কোন কথাবার্তা নেই”

“সে তো বেশীদিনের কথা নয় ভুলবো কি করে। কিন্তু তাই বলে কেউ যদি কথা বলতে চায় বলবো না? এতটা অভদ্র আমি হতে পারবো না”

“তা হবে কেন? তাহলে ফষ্টিনষ্টি করবে কি করে?”

“তুমি আমার চরিত্রর দিকে আঙ্গুল তুললে?”

“বেশ করেছি! যা সত্যি তা বলতে দোষ কোথায়?”

“তাহলে বলো আর কার কার সাথে এরকম সম্পর্ক আছে আমার?”

“সময় হলে সব বলবো ... এখন থেকে তোমার ফোন ব্যবহার করা বন্ধ, এটা আমার কাছে থাকবে” বলে সুচেতার মোবাইলটা নিজের আলমারিতে বন্ধ করে রাখলো তন্ময়। এতো কথার পর সুচেতা আর একটাও কথা উচ্চারণ করেনি। চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে।

ছিঃ ছিঃ এতো বছর হয়ে গেলো বিয়ে হয়েছে তার পরেও এ কথা শুনতে হল? ধিক, জল গড়িয়ে পড়লো ওর চোখ থেকে। কিন্তু চোখের জলের স্পর্শ পেতেই ওর মন বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। অন্যায় করেনি যখন ও, তখন কাঁদবে না, এর শেষ দেখে ছাড়বে।

এর আগেও এরকম হয়েছে। সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে হাত ওঠা পর্যন্ত। এক সময় সুচেতা ঠিকই করে নিয়েছিল এ বিয়ে ভেঙ্গে ও বেরিয়ে যাবে। সেই ভেবে ও ফিরেও গিয়েছিল মায়ের কাছে। ডিভোর্স ফাইল করবে বলে উকিলের সাথে কথাও বলে এসেছিলো। কাগজও চলে এসেছিল এ বাড়িতে, এমন এক দিনে তন্ময় এসেছিল ওর সাথে একান্তে কথা বলতে। স্বীকার করেছিল ও ভুল করেছে তার জন্য শাস্তি পেতে রাজি ছিল তবে ডিভোর্সের মতো বড় শাস্তি নয়। তন্ময় ক্ষমা চেয়ে বলেছিল আরেকবার ভেবে দেখতে।

সব শুনে সুচেতার মা দিদি জামাইবাবু সবাই বলেছিল ওকে আরেকবার ভেবে দেখতে। সুচেতাও ভাবনায় পরে গিয়েছিল। তন্ময়কে ও খুব ভালোবাসে তার ওপর ও মা হতে চলেছে। যে আসছে তার তো বাবা মা দুজনকেই প্রয়োজন। এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে ও তো একা বাঁচতে পারবে না। নতুন কাউকে পছন্দ হলে তখন এই বাচ্চাটার কি হবে। নতুনজন তাকে বাবার স্নেহ দিতে পারবে কি না তার নিশ্চয়তা কি। শেষ অব্দি নিজের মনকে বুঝিয়ে ফিরে এসেছিল এ বাড়িতে।

এতদিন চুপচাপ যাওয়ার পর আবার কেন সন্দেহ রোগ চেপে বসলো ওর মাথায়?

পরেরদিন থেকে আবার সেই নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। কোন কিছুতেই ফাঁকি দেয় না সুচেতা, তবে চুপচাপ। বাড়ির আবহাওয়া এতোটাই থমথমে হয়ে রইলো যে সামান্য শব্দ বোধহয় বিকট আওয়াজের মতো শোনাবে। হঠাৎই একজনের কথা মনে পড়লো ওর, শান্তনুদা, ওর আর তন্ময়ের খুব পরিচিত দাদা। ওনাকে সব বললে সমাধান হতেপারে ভেবে তাকে শ্বাশুড়ির মোবাইল থেকে ফোন করে সব জানালো ও। তিনিও আশ্বস্ত করলেন সব ঠিক হয়ে যাবে বলে।

পরেরদিন সন্ধ্যায় সুচেতা বেরোলো সেজেগুজে। যে ক্যাফেতে গিয়ে ঢুকলো সেখানে কোণার টেবিলে শান্তনুদা একাই বসে আছেন। ও এগিয়ে এসে বসলে উনি বললেন “কি খাবে চা না কফি?”

“কফি”

“আর কিছু অর্ডার দিই?”

“না আমি আর কিছু খাবো না, আপনি নিতে পারেন আপনার যা ইচ্ছে”

“ঠিক আছে, যে কারণে তোমার সাথে দেখা করতে চাইলাম সেটাই তাহলে এবার শুরু করি। আমি তন্ময়কে অনেকদিন আগে থেকেই চিনি, শুধু চিনি বললে ভুল হবে, ওর মনের অনেক কথাই জানি। যাইহোক তোমাদের এই সাম্প্রতিক ঝামেলার ব্যাপারটা জানতে চেয়েছিলাম ওর কাছে। বলল ও, সবই বলল। কি বলেছে সেটা সবই জানাবো তোমায় কিন্তু তার আগে তোমার কাছে একটা প্রশ্ন করছি, তার উত্তর দাও। আচ্ছা সুচেতা তুমি যদি এই মুহূর্তে জানতে পারো যে তন্ময় আর কোন মহিলার দিকে ঝুঁকে পড়েছে তোমার কেমন মনে হবে?”

সুচেতা লাফিয়ে উঠলো “ও এই ব্যাপার, তাই আমার দিকে আঙ্গুল তুলে ও নিজের দোষ ঢাকতে চাইছে?”

“আরে দাঁড়াও দাঁড়াও এখনি পুরোটা বলিনি। বসো বসো। এবার দেখো তুমি যেমন সহ্য করতে পারছো না যে ওর আর কোন সম্পর্ক আছে বা হয়েছে তেমনই ও সহ্য করতে পারেনি যে তোমার সাথে কোন অন্য পুরুষের সম্পর্ক রয়েছে”

“কিন্তু এটা তো দেওর বৌদি সম্পর্ক আর ...”

‘ঠিক দেওর বৌদি সম্পর্ক আর এতে কোন কুরুচিকরও কিছু নেই কিন্তু প্রদীপের সাথে ওর সম্পর্ক ঠিক নেই তাই ও এটাও মেনে নিতে পারেনি তাৎক্ষণিকভাবে”

“দাদা আপনি ওর পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন”

“আমি কারো পক্ষ নিয়েই কথা বলতে চাইছিনা। ওকেও বুঝিয়েছি এবার তোমায় বোঝাচ্ছি। বয়েস হচ্ছে তো তাই হীনমন্যতায় ভুগছে যে তুমি ওর থেকে সরে যাচ্ছ, আরও আকর্ষণীয় কারো প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছ। প্রায় বারো বছর হয়ে গেলো তোমাদের বিয়ে হয়েছে, এতদিনে তো নিজেদের মন ছবির মতো পড়তে পারো। তাহলে? যাক তন্ময়কে ডেকেছি। ও এসেও পড়েছে। কথা বলো মন খুলে যাতে ভুলভ্রান্তি মেটে”

তন্ময় এসে বসলো সীটে, সান্তনুদা উঠলেন। বলে গেলেন “নাও এবার গুটি তোমাদের হাতে, দেখো দান ঠিকমতো ফেলতে পারো কি না” খানিক নিস্তব্ধতার পর তন্ময় বলল “খুব ভুল হয়ে গেছে। আসামী ক্ষমাপ্রার্থী। এবারের মতো ক্ষমা পাওয়া যাবে কি দেবী?”

রাগতে গিয়েও হেসে ফেলল সুচেতা। গুমোট আবহাওয়ার অবসান ঘটলো।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sonali Basu

Similar bengali story from Drama