Nityananda Banerjee

Romance Classics Fantasy

4  

Nityananda Banerjee

Romance Classics Fantasy

জ্বলদর্চি ( পঞ্চম ভাগ )

জ্বলদর্চি ( পঞ্চম ভাগ )

3 mins
359



কিশোর ভার্মার গোঁয়ার্তুমির জন্য লাগাতার আন্দোলন শুরু করে দিল কর্মচারী ইউনিয়ন। পরের সপ্তাহ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট। তারও প্রস্তুতি চলছিল তলায় তলায় । 

অতুলদা গেলেন সৃজার নিকট। কোন খবর এই সময় কারও কাছ থেকেই পাওয়া যাচ্ছে না । সি জি এম রক্ষিত সাহেব চেয়ারম্যানকে বললেন - ইউনিয়নের দাবী নিয়ে কি ভাবছেন ?

- ওদের ধর্মঘটে যেতে দিন। কোন আলোচনা হবে না; এমনকি ধর্মঘটী কাউকেই ডাকা হবে না। প্রয়োজনে কোম্পানী নতুন রিক্রুটমেন্ট করবে।

ব্যাপার বুঝতে রক্ষিতের সময় লাগল না। ভার্মাসাহেব যে কোম্পানীকে পথে বসিয়ে দিতে চলেছেন এ'কথা সৃজার মাধ্যমে যথাস্থানে পৌঁছে দিলেন। কোম্পানীর বোর্ড অব ডিরেক্টরস ভার্মাকে বোঝাতে অসফল হল। তখন তাদের পক্ষ থেকে গণ-পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল । এর অর্থ কোম্পানীর মালিক চেয়ারম্যানকে সরাতে বাধ্য হবেন। 

সৃজা এ সব কাজে দারুন পটু। সে নিজে একজন পদত্যাগী বলে কাজটা আরও সহজ হল । সরাসরি মালিককে ফোন করে কোম্পানীর বর্তমান অবস্থা জানিয়ে দিল ।মালিক সি এম ডিকে ডেকে পাঠালেন। ভার্মা মালিকদের বোঝাতে লাগলেন কোম্পানীর প্রতিটি কাজে কর্মচারীদের ইনভলভ করা মানে ভবিষ্যতে ওরাই মালিকের মাথায় ছড়ি ঘোরাবে। সৃজা জানে ভার্মার ভাষা। তাই আগে থেকে মালিকদের বলে দিল; যেহেতু এক আধটা সামান্য আর্থিক দাবী দাওয়া আছে যার খরচ কোম্পানীর নিকট নগণ্য; তা নিয়ে ভার্মাসাহেব অযথা জল ঘোলা করে কোম্পানীর ক্ষতি ডেকে আনছেন। এই যে প্রোজেক্টটা তুলে আনা হল তার জন্য সৃজা কম পরিশ্রম করেনি; কিন্তু বিনিময়ে ঘি পান করল মি. ভার্মা। এমনকি আয়োজন খরচের বিলটাও এখনো আটকে রেখেছেন। এদিকে বোর্ড অব ডিরেক্টরস সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা মাস রেজিগনেশন দিয়ে ব্যাপারটি মালিক পক্ষের নজরে তুলতে চেয়েছেন। এবার আপনারা ডিশিসন নেবেন প্রোজেক্ট ধরে রাখা হবে নাকি ফেরৎ করে দেওয়া হবে। ফেরৎ দিলে ক্ষতিপূরণ সমেত দিতে হবে আর ধরে রাখলে কর্মচারীদের আংশিক অনুদান দিতে হবে যা হিসেব করে দেখা গেছে ক্ষতিপূরণের এক দশমাংশও নয়।

মালিকপক্ষ ভার্মাকে সরিয়ে দিলেন। অবশ্য তাঁর পূর্বের এচিভমেন্টের কথা বিবেচনা করে পুনরায় একজন চিফ জি এম হিসেবে রেখে দিলেন।

সৃজাও এরকমই চেয়েছিল । পেয়েও গেছে। সে রেজিগনেশন তুলে নিয়েছে এবং ইচ্ছে করে ভার্মাকে দেখানোর জন্য রক্ষিতের সঙ্গে মাখামাখি বাড়িয়ে দিয়েছে।

এক্ষেত্রে অবশ্য ভার্মাকে বেচারাই বলতে হয়। প্রোজেক্ট তোলার দিন ক্লায়েন্টের সঙ্গে যে মেয়েটি ফষ্টিনষ্টি করেছিল সে সৃজা নয়; পতিতালয় থেকে ভাড়া করা একজন বেশ্যা। যে সৃজার নকল করে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছিল । ভার্মার চোখে সেটাই পড়েছিল। আবার ক্লায়েন্ট বাবাজী ভার্মা সাহেবের বউয়ের সঙ্গে রাত কাটানোর যে স্বপ্ন দেখেছিল তাও ঠিকমত কাজে এসেছিল।

প্রোজেক্টে সাইন করামাত্র ভার্মার টনক নড়ে। সৃজা এমন করতে পারল ! তাকে ঠকিয়ে দিল ! ক্ষোভে অভিমানে ভার্মা সাহেব সৃজার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে লাগলেন। তাকে যখনতখন বদলি করে এবং শেষমেশ অপমান করে তাড়িয়ে দিলেন।

সৃজা এখন মি. রক্ষিতের বাগদত্তা। রক্ষিতকে অনুপুঙ্খ সব ঘটনা জানিয়ে সে বিয়েতে রাজী হল। কিন্তু তার ভাগ্যে মিসেস সেনগুপ্তা হওয়া জুটল না এক্ষণে মিসেস রক্ষিতা হয়েই থাকতে হবে - এটাই যা আফশোষ।

মি. অরবিন্দ সেনগুপ্ত একটা অন্য কোম্পানীতে কাজ করেন। উঁচু পদেই রয়েছেন তবে তিনি ইঞ্জিনিয়ার। এরকম ম্যানেজমেন্টের লোক নন। প্রতিদিন তিনিও সৃজার সঙ্গে একই বাসে যাতায়াত করেন। সেই সুত্রে আলাপ এবং পরিচয় ; শেষে বাগদান। সৃজা এক সাধারণ মধ্যবিত্তের মেয়ে হয়ে এটা গ্রহন করেছিল। পরে চাকরিতে জয়েন করে এরূপ পদ পেতে তার মনের বাসনায় চিড় ধরে। 

অরবিন্দ তো বলেই দিত - কি মিসেস সেনগুপ্তা! কেমন লাগছে? 

সেনগুপ্তা টাইটেল পাবে ভেবে প্রথম দিকে বেশ উত্তেজিত ছিল । কিন্তু কর্মস্থলের পরিপ্রেক্ষিত তাকে অনেক অনেক উপরে নিয়ে গেল। যেখান থেকে অরবিন্দকে লক্ষ্য করা যায় কোনো পাতাল গহ্বরে। আর সৃজা যেন আকাশের নীলে।

বয়স কম হলে যেমন বুদ্ধিতে পাক ধরে না; তেমনি দুর্বুদ্ধিগুলো বেশ পরিপক্ক হয়ে যায় । সৃজারও তাই হল। বড় বড় সাহেব সুবোদের ছত্রছায়ায় থেকে ওর নিজের বুদ্ধিটা অকালে পেকে টইটম্বুর হয়ে উঠল ।তবে তা' শুধু টাকা রোজগারের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। চরিত্রগত দিকে সৃজা তখনও অক্ষতযোনী ।কিশোর ভার্মাকে নাচাতে নিজে নর্তকী সাজল। আর কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের আইডিয়াটা কিন্তু কিশোর নয় ; সৃজারই। আসলে এই জাতীয় বিবাহ একজন নারীকে উপার্জন বৃদ্ধিতে হেল্প করলেও নারীত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। সৃজা তেমনই এক মেয়ে। 




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance