STORYMIRROR

AKKAS .

Horror Romance Thriller

3  

AKKAS .

Horror Romance Thriller

হৃদয়ে মম

হৃদয়ে মম

5 mins
148


৬ বছর পর জেল থেকে আজ ছাড়া পেল আকাশ। দীর্ঘ ৬ বছর পর বাইরে বের হলো। বাইরের আলো-বাতাস, প্রকৃতি নতুন রূপে যেন সেজেগুজে আকাশকে স্বাগত জানাচ্ছে। এমনটা মনে করতে পারে আকাশ। কিন্তু ৬ বছর জেলে থাকা কোন অপরাধীর জন্য প্রকৃতি এমন সুন্দর রূপ কখনো ধারন করবে না সেটাও জানে। এমনটা সম্ভব নয়। অবশ্যই প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। ভাল-খারাপ, যাই হোক না কেন প্রকৃতি কারো জন্য থেমে থাকবে না।


জেলার সাহেব আকাশকে দেখে সামনে এগিয়ে এলেন। বললেন-


- এই নেয় আকাশ তোর কথা মতো সব করেছি আমি। নেয় এই চিঠিটা নেয়। এই ঠিকানায় আজ কালকের মধ্যে পৌঁছে যা। আলতাফ মাহমুদ চৌধুরী আমার বন্ধু। বান্দরবান শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। ওনি তোকে নিরাশ করবেন না। ওর ফোন নাম্বার নেই আমার কাছে। না হলে ফোনে বলে দিতাম। তবে চিঠিটা দিলে ওনি তোকে কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিবেন। 


বান্দরবান শহরে পৌঁছে নীলাচল নামে একটা পর্যটন কেন্দ্র আছে। সোজা সেখানে চলে যাবি গাড়ি নিয়ে। সেটা পার হয়ে পূর্ব দিকে এগুলে একটা মসজিদ দেখতে পাবি। মসজিদ পার হয়েই কতগুলো বাড়ি, মানে একটা পাড়া দেখতে পাবি। পাশাপাশি স্কুল ও আছে। সেখানে গিয়ে বা মসজিদের ওখানে গিয়ে কারো কাছ থেকে আলতাফ স্যারের বাড়ি কোনটা বললে যে কেউ দেখিয়ে দিবে।


- আংকেল আপনি চলে যাবেন কেন? আমাদের সাথে থাকেন। আপনি চলে গেলে আমাকে পড়াবে কে? (জেলারের মেয়ে)


- আরে মামনি আমি কোথায় চলে যাচ্ছি? কোথাও যাচ্ছিনা তো। কিছুূদিন পর আবার আসব। এখন তোমাকে নতুন স্যার পড়াবে। দুষ্টুমি করবে না একদম নতুন স্যারের সাথে। হোমওয়ার্ক ভালোভাবে করবে। মামণির কথা শুনবে। বাবার কথাও শুনবে। তাহলে তুমি ভাল মেয়ে হতে পারবে। (আকাশ)


কথাগুলো বলতে বলতে আকাশ অশ্রু মুছতে লাগল।


- আচ্ছা স্যার আমি এবার যাই। আপনি আমার জন্য যা করলেন তা কখনো ভুলবো না। একজন আসামিকে এভাবে সাহায্য করা কোন মামুলি ব্যাপার না। (আকাশ)


- কে বললো তুই আসামি আকাশ? তুইতো আমাকে সুযোগই দিলি না তোকে নির্দোষ প্রমাণ করে মুক্ত করার। আমার এখনো একটা জিনিস নিয়ে খুব আফসোস হয় জানিস তো, তোকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলাম না তোরই কারণে। (জেলার স্যার)


- রাখেন না স্যার এসব এখন। ওসব নিয়ে কখনো কোন কথা কাউকে বলবেন না। (আকাশ)


- নে ধর। এই টাকাগুলো রাখ। আর এই নেয় তোর বান্দরবান যাওয়ার টিকেট। ফোনে যোগাযোগ রাখিস সবসময়। কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে জানাস। (জেলার স্যার)


- ঠিক আছে স্যার। (আকাশ)


স্যারের থেকে বিদায় নিয়ে বাস ষ্টেশনের দিকে রওনা দিতে অটোতে উঠল আকাশ। রাস্তায় এখন আগের থেকে জ্যাম বেশি হয়ে গেছে। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই ঢাকা শহর আর ৬ বছর আগের ঢাকা শহরের মধ্যে অনেক পার্থক্য পরিলক্ষিত। সায়েদাবাদ বাস ষ্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগল। যাই হোক কাউন্টার খুঁজে নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়ল। 


অল্প কিছুক্ষণ পর বাস ছেড়ে দিল। ঢাকা টু বান্দরবান। বাস চলতে শুরু করল। বাই বাই ঢাকা। 


কখন ঘুমিয়ে পড়ছিলো জানতেই পারেনি, বাসের হেলপারের ডাকে জেগে উঠল আকাশ। চট্টগ্রামে বাস থেমেছে।


- মামা কি লাগবে কিনে নেন। ২০ মিনিট বিরতি। (হেলপার)


ঘড়িতে দেখল দুপুর ১ টার মতো হয়েছে। ২টা কলা, ১টা ২০ টাকা দিয়ে পাউরুটি এক বোতল পানি নিয়ে আবার বাসে নিজের সিটে এসে বসলো আকাশ। বসে বসে কলা, পাউরুটি খেতে লাগলো। বাসের অন্যান্য যাত্রীরা সবাই উঠতে লাগলো আবার তাদের কাজকর্ম, খাওয়া-দাওয়া সেরে। বাস চলতে শুরু করলো। প্রায়ই বিকাল ৪টার দিকে বাস বান্দরবান ষ্টেশনে থামলো। একে একে সবাই নেমে পড়লো। আকাশ একটা সিএনজি নিয়ে নীলাচলের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বেশ কিছুক্ষণ পর পৌঁছে গেলো। 


ওখানে গিয়ে জেলার স্যারের কথামতো রাস্তা খুঁজতে লাগল। কিন্তু দ্বিধায় পড়ে গেলো। অনেকগুলো রাস্তা দেখে কোনটা তার কাঙ্ক্ষিত পথ সেটা বুঝতে পারছিলো না। এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় অনেক রাস্তা। আকাশ নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের গেইটে এসে দাঁড়ালো এবার। পাশে একটা বসার বেঞ্চ আছে। ওটাতে বসে পড়লো। সেখানে একটু পর আরেকটা মানুষ এলেন। ওনাকে চাচা ডেকে আকাশের এখানে আসার কারণটা বলল। আরো বলল আলতাফ স্যারের কথা। আলতাফ স্যার ওখানকার সম্মানীয় মানুষ সেটা বুঝল আকাশ ঐ লোকটির কথায়। তিনি আকাশকে রাস্তা দেখিয়ে দিলেন আর তেমনটা বললেন যেমনটা জেলার স্যার বলছিলো। 


আকাশ ঐ লোকটাকে ধন্যবাদ দিয়ে ওনার দেখানো পথ ধরে হাটতে লাগলো। বেশ বড় চওড়া রাস্তা। ইটের পাকা রাস্তা। ১০-১৫ মিনিট হাঁটার পর দূর থেকে মসজিদ দেখা গেল। বেশ আভিজাত্যপূর্ণ বাহারি রঙের ডিজাইন করা মসজিদটি দেখে এক পলকে মন-প্রাণ শীতল হয়ে গেল। মসজিদের অপর পাশে অনেকগুলো বিভিন্ন বয়সী মেয়ে-ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটু কাছে যেতে বুঝল এরা পানির জন্য অপেক্ষা করছে। গভীর নলকূপ বসানো আছে এখানে। সেখান থেকে গ্রামবাসীরা মনে হয় খাবার পানি নেয়। 


পানি দেখে একটু থামলো আকাশ। একটু চোখ-মুখে পানি দেবে। মুখ-হাত পরিষ্কার করবে। পানি খেয়ে তৃষ্ণার্ত প্রাণটা সতেজ করবে। এটা ভেবে দাঁড়ালো আকাশ। মহিলারা একে একে সবাই পানি নিয়ে যাচ্ছে বোতলে, কলসিতে, বালতিতে, মাটির কলসিতে করেও। আকাশের দিকে কারো কোন নজর নেই। এক এক দল করে আসছে। প্রত্যেক দলে ৩-৫ জন করে সদস্য আসছে। পানি নিয়ে চলে যাচ্ছে। এদিকে আকাশের পানির তৃষ্ণা বেড়েই চললো। কিন্তু জ্যামের কারণে ওদিকে যেতে পারছিল না। 


জ্যাম বলতে মহিলাদের ভিড়। এবার মনে হয় একটু ফাঁকা দেখা গেলো। আর দেরি না করে সেদিকে যেতে লাগলো। একটা বয়স্কা মহিলার মত হবে, সে আকাশের দিকে কেমন যেন চোখে তাকাল। ওদিকে না তাকিয়ে আকাশ নলকূপের সামনে গেলো। কাঁধের ব্যাগ পাশের একটা উঁচু ঢিবির উপর রাখলো। নলকূপের সামনে গিয়ে হাতল ধরে চাপ দিবে এই মুহুর্তে আবার কয়েক জনের অট্টহাসির আওয়াজ শুনে পেছনে ফিরে সেদিকে তাকালো। ৪ টা মেয়ে আসছে কোমরে কলসি নিয়ে। অষ্টাদশীর আশে-পাশের মতো হবে সকলের বয়স। আকাশ তাদেরকে জায়গা করে দিতে তাড়াতাড়ি করতে লাগলো। নলকূপের হাতল ধরে জোরে চাপ দিয়ে পানি তুলে নিজের হাত-পায়ে পানি দিতে লাগলো। এবার খাওয়ার জন্য পানি নিতে সমস্যা হচ্ছিলো। কারণ নলকূপের যে পাশ থেকে পানি উঠছিল সে পাশ বা সেই জায়গাটা ছিল অনেক বড়। সোজা কথা নলকূপের পানি উঠার মুখটা অনেক বড়। এক হাত দিয়ে হাতল ধরে পানি উঠালে অপর হাত দিয়ে পানি উঠার মুখে ধরে আছে। কিন্তু সব পানি পড়ে যাচ্ছে নিচে। এরকম অনেকবার চেষ্টা করল কিন্তু কোনমতেই পারলো না। কলের চাপে পানি উঠার সাথে সাথে সেগুলো মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল। তারপরও যা পাচ্ছিল খেতে লাগলো। 


না, এভাবে মনে হয় আর পারবে না। তৃষ্ণা মিটবে না। অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে। এটা ভেবে পেছনে তাকাতে দেখে মেয়েরা সব তার দিকে তাকিয়ে আছে। শুধু তাকিয়ে নেই, আকাশের এই অবস্থা দেখে সবাই মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগলো। এখনো হাসতে লাগল। এসব দেখে আকাশ বেশ লজ্জা পেলো। সাথে সাথে খারাপও লাগল যে এরকম অবস্থায় কি করে হাসছে? একটা মানুষ বিপদে পড়ছে তাকে উদ্ধার না করে আরো হাসাহাসি করছে। এসব ভাবতে ভাবতে আকাশের মনে হল তাকে কেউ ডাকছে। পানি নিতে আসা, হাসাহাসি করা ঐ মেয়েদের মধ্যে কোন একজন আকাশকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করলো। 


- নিন ভাইয়া আসুন পানি খাবেন। আপনাকে আমি সাহায্য করছি। (পানি নিতে আসা এক মেয়ে)


চলবে


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror