arijit bhattacharya

Romance

3  

arijit bhattacharya

Romance

হারানো প্রেম যখন ফিরে আসে

হারানো প্রেম যখন ফিরে আসে

10 mins
1.6K


সঞ্জীবস্যারের বাড়ি থেকে একাকী হেটে আসছে অভিজিত। আজকে আর সাইকেল নেয় নি, তাই হেটেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। কানে ভেসে আসছে ঢাকের বাজনা। আকাশে বাতাসে ভাসছে পুজোর গন্ধ । মাইকে গান বাজছে , "আকাশের চাঁদ মাটির বুকেতে জোছনা ঝরে পড়ে / আমার জীবনে কেন বারে বারে...................................................."।আজ মহালয়া। আকাশ বাতাসে ভেসে আসছে আগমনীর সুর। পাড়াতে আজ থেকেই সুরু পুজোর তোড়জোড় । বাঙ্গালীর সেরা উৎসব 'দুর্গোৎসব'। পৃথিবীকে শুভময় করে তোলার জন্য এবং অশুভের বিনাশের জন্যই তো মর্তে দেবী দুর্গার আগমন। 'মহিষাসুরমর্দিনী, চন্ডমুণ্ডবিদারিণী'। মাঝে মাঝে মাইকে বাজছে মনকে আবেগমথিত করে দেওয়া বীরেন্দ্রকৃষ্ঞ ভদ্রের 'মহিষাসুরমর্দিনী'র মন্ত্রোচ্চারণ । নতুন সাজে সেজেছে প্রকৃতি। আকাশে ভাসছে সাদা তুলোর মত মেঘপুঞ্জ। বাড়ির বাগানে ফুটেছে স্থল পদ্ম।

ভেসে আসছে শিউলি ফুলের গন্ধ। অভিজিতের মনে একটাই নাম সপ্তপর্ণা, ক্লাস সেভেনে পার্থস্যারের বাংলা আর ইতিহাসের কোচিং এ পড়তে গিয়ে প্রথম আলাপ। প্রথম নজরেই সপ্তপর্ণার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল অভি। বলতে গেলে একেবারে লাভ আ্যট দ্যা ফার্স্ট সাইট।

মাথায়কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, টানা টানা একজোড়া চোখ, যার আড়ালে হাজার প্রশ্ন, মুখের হাসি যেন চাঁদের জ্যোৎস্না ,পড়াশুনায় তুখোড়। কন্ঠে মৃদু স্বর ,কোকিলের মতো। প্রথম নজরেই সপ্তপর্ণা মন কেড়ে নিয়েছিল অভির। তারপর অভিজিত ওর বন্ধু কুণালের কাছ থেকে জেনেছিল সপ্তপর্ণা বারাসত গার্লস স্কুলের ফার্স্ট গার্ল, বিজ্ঞান আর ম্যাথসে তুখোড়।

অভিজিত চিরকালই সায়েন্সে দুর্বল, কিন্তু সাহিত্যে বরাবরই ও ভালো রেসাল্ট করে। বাংলা আর ইতিহাসে তো ও বরাবরি ক্লাসের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে, বলতে গেলে এক কথায় অপরাজেয়।কিন্তু ইতিহাস আর ভূগোলে ভালো রেজাল্ট করলে কি হবে, অঙ্কে ও রীতিমতো দুর্বল, টেনেটুনে কোনোমতে পাশ করে। এজন্য মা আর দাদু-দিদার কাছে কম বকা শুনতে হয় না।

অভিজিতের মনে হল সপ্তপর্ণার মন জয় করতে হলে বিজ্ঞান আর গণিতে ভালো হতে হবে, দক্ষ হতে হবে, ভালো রেজাল্ট করতে হবে।তাহলেই সে তার পর্ণার মন জয় করতে পারবে, সফল হবে তার প্রথম দর্শনের একতরফা ভালবাসা, পরিণতি পাবে তার প্রেম।

সে দিনটাও ছিল সেপ্টেম্বর মাসের কোনো এক দিন,শরৎকাল। পার্থস্যারের ব্যাচের ইতিহাস পরীক্ষার খাতা বেরিয়েছিল, হায়েস্ট পেয়েছে অভিজিৎ। মৃদুস্বরে সপ্তপর্ণা বলে উঠল , " অভি, একটু তোর খাতা টা দে তো।" আর এই কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল অভি, তার মনের মধ্যে বেজে উঠল হাজার অজানা রাগ-রাগিনী।কানে যেন ভেসে আসছে কোকিলের কুহুকন্ঠ।

ধীরে ধীরে অভি অঙ্ক আর বিজ্ঞানেও উন্নতি করতে লাগল। ক্লাস এইট। অভিজিৎ এখন ক্লাসের ফার্স্ট বয়, কঠিন পরিশ্রমের ফলে অঙ্ক আর বিজ্ঞানেও তুখোড়। তার ধারেকাছে কেউ আসতে পারে না। সে অতুলনীয়।

একদিন পার্থস্যারের কোচিংএ তখনো বাদবাকি কেউ এসে পৌঁছায় নি, শুধু অভি আর তার পর্ণা।কি মনে হতে অভি বলে উঠল , " জানিস পর্ণা, অঙ্ক আর বিজ্ঞানে আমার এত ভালো হওয়ার পেছনে কার হাত আছে, সে হল তুই। হ্যাঁ, সে হল তুই।" অবাক হল সপ্তপর্ণা, বলল, "মানে ,সেটা আবার কিভাবে, খুলে বল। "

হেসে বলল অভি, " মানেটা বুঝলি না! তুই এত ব্রিলিয়ান্ট, এত ইন্টেলিজেন্ট, তো তোর বন্ধু হতে গেলে আমারো তো সামান্য স্কিল আর ক্যালি দরকার। বুঝলি তো, তাই ম্যাথস্ নিয়ে পরিশ্রম করা শুরু করলাম, সময় দিলাম সাবজেক্ট টায়। আর আসল সাফল্য।"তাকে চমকে দিয়ে সপ্তপর্ণা বলে উঠল , " না অভি, আমি সেই কথা মানি না।সব সাবজেক্টই ভালো। সাবজেক্ট যেমন ভালো -খারাপ বলে কিছু হয় না, তেমন জীবনে নম্বর দিয়ে সবকিছু বিচার করা যায় না, একেবারেই না।" সপ্তপর্ণা আরও বলল, " জীবনে যেটা প্রয়োজন, সেটা হল ভালোবাসা।ভালোবেসে শুধু নিজের কাজ করে যাওয়া। তাহলেই আসবে সাফল্য।শোন্, ভালোবাসার চাইতে মহান, ভালোবাসার থেকেও শক্তিশালী এই জগতে আর কোনও বস্তু নেই। ভালোবাসলে পরকেও আপন করে নেওয়া যার, ভালোবাসা দিয়ে গরলকেও অমৃতে পরিবর্তিত করা যায়।"

সপ্তপর্ণা আরও বলে চলল, "তাই তো বলছি, যেটা করা উচিত, সেটা হল ভালবেসে নিজের কাজ করে যাওয়া। আমরা যদি সেটা করতে পারি, তবে সাফল্য আপনা থেকেই আসবে, সাফল্যের পেছনে আর ছুটতে হবে না।"অবাক হল অভিজিৎ , সে বলল , " এ আবার কেমন কথা! তাহলে মা- বাবা কেন বলেন যে, এই সাবজেক্ট টা ভালো, আর ওই টা খারাপ। আর্টস্ গ্রুপ খারাপ, আর সায়েন্স ভালো! আর্টসের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, আর সায়েন্সের আছে! "

সপ্তপর্ণা উত্তর দিল, " দ্যাখ, এটা ওনাদের সম্পুর্ণ ভুল ধারণা, কিন্তু এজন্য ওনারা দায়ী নন। ওঁরা আমাদের শুভচিন্তক, আমাদের ভালই চান।হয়তো ওনারা মনে করেন, সায়েন্সে যতো সহজে সাফল্য পাওয়া যাবে, আর্টসে হয়তো যাবে না।আর হয়তো চাকরির ক্ষেত্রেও আর্টসের স্কোপ কম, ওনাদের এই ধারণার জন্য দায়ী আমাদের সামাজিক অবস্থা।" চুপ করল সপ্তপর্ণা।

অভিজিৎ বলল," তাহলে তুই বলতে চাস, সব সাবজেক্ট ই সমান গুরুত্বপূর্ণ!" সপ্তপর্ণা বলল," একদমই তাই! ঠিকঠাক পরিশ্রম না করলে হয়তো কোনোমতে চাকরি জোগাড় করে নেওয়া যায়, কিন্তু জীবনে কোনো দিন সফল মানুষ বা আদর্শ মানুষ হওয়া যায় না,এর জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়, যেটা পরিশ্রম না করলে জীবনে আসে না।"চমকে উঠল অভি, হ্যাঁ এই মেয়েই যোগ্য তার জীবনসাথী হবার। এ তো সামান্যা কোনো কিশোরী নয়, বরং এক অসামান্যা নারী। আবেশে মুগ্ধ হয়ে উঠল তার হৃদয়।

স্বপ্নের মতো কেটে গেল ক্লাস নাইন- টেনের দিনগুলি।এগিয়ে এল মাধ্যমিক।বাড়িতে বাবা মা ,দাদু-দিদারা যতোই ' মাধ্যমিক, মাধ্যমিক' বলে চেঁচাক না কেন, অভি তো হাল্কা মনেই থাকল।যতোই মা বলুক না কেন, " তোর মধ্যে তো আমি কোনো সিরিয়াসনেস ই তো দেখি না, আমি শিওর যে তুই এবার থার্ড ডিভিশন ই পাবি। কেউ বাঁচাতে পারবে না তোকে।"বাড়িতে দাদুর চেঁচামেচি , " হবে না। ওরে তোর কিচ্ছু হবে না। তুই ডাহা ফেল করবি। আমরা কতো খাটতাম, আর তোরা! সারাদিন খেলা আর ঘোরা। পড়াশুনার কোনো চাড়ই নেই। "দাদু আরও বলেন," এটা মনে রাখবি বোর্ডের পরীক্ষা, স্কুলের পরীক্ষা নয়। সুতরাং, সাবধান।" অভিজিৎ ও কম যায় না, সে বারাসত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ফার্স্ট বয়।সে বলল," কিন্তু দাদাই স্কুলের প্রশ্নপত্র তো অনেক বেশি কঠিন হয়। এখানে তো সহজ।" দাদু বললেন ," ওরে আহাম্মক , তুই মনে হয় আর মানুষ হলি না। হে ভগবান , আমার নাতিকে তুমি বাচাও।"

শুরু হয়ে গেল মাধ্যমিক, প্রচন্ড উদ্যম নিয়ে পরীক্ষায় বসল অভি। বাংলা ফার্স্ট পেপারে সবই ঠিকঠাক হচ্ছিল, কিন্তু প্রবন্ধ রচনাটা মনের মতো হলো না। সামান্য হতাশ হয়ে পড়ল অভি। সেকেণ্ড পেপার টা ভালো হল। ইতিহাসের দিন হয়ে গেল একটা গণ্ডগোল।পাল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজার নাম লিখতে গিয়ে সে সেন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজার নাম লিখে ফেলল ভুল করে। ইতিহাস পরীক্ষার পর ভেঙ্গে পড়ল সে। কিন্তু এই সময় সপ্তপর্ণার কথা মনে পড়ল তার- সপ্তপর্ণা তাকে বলেছিল যে, ভালোবেসে মন দিয়ে নিজের কাজ করে যেতে পারলে সাফল্য আসবেই। কেউ আটকাতে পারবে না। তাই হার মানল না সে, দাঁতে দাঁত চিপে লড়ে গেল। বাকি পরীক্ষাগুলোয় তার সেরাটা দিল । শেষ হল পরীক্ষা ।

পরীক্ষার পর তিন মাস টানা ছুটি। জমিয়ে এনজয় করলো অভি। সকালে উঠে ক্রিকেট খেলতে যাওয়া, তারপর বাড়ি এসে খেয়ে দেয়ে জমিয়ে রেস্ট , তারপর টিভি,বিকেলে সাইক্লিং করতে বেরোন।কখনো কখনো পর্ণাদের বাড়ি যাওয়া ।সপ্তপর্ণার বাবা জয়দীপ চক্রবর্তী ৤ যিনি একজন আই এ এস অফিসার , জামশেদপুরে পোস্টিং , কিন্তু মাঝে মাঝে কর্মসূত্রে বাড়িতে আসেন তার সাথেও পরিচিত হয়েছে। দারুণ কাটছিল দিনগুলি। এই সময় আমন্ত্রণ এল রাজস্থানের আমের নিবাসী প্রিয়াঙ্কা দির কাছ থেকে। অবশেষে বাবার সাথে আজমের গামী শিয়ালদা- আজমের সুপারফাস্টে উঠে বসল অভিজিৎ।

আজমেরে গিয়ে সুফীসাধক খাজা মইনুদ্দীন চিস্তির স্মৃতিবিজড়িত আজমের শরীফ দর্শন করে মন ভরে গেল অভির।ইতিহাসে সে পড়েছে আজমেরের কথা। দিল্লীর শেষ হিন্দু সম্রাট পৃথ্বীরাজ চৌহানের জন্মস্থানই তো এই আজমের। আর শুধু বীরত্ব নয় , পৃথ্বীরাজ তো প্রেমেরও প্রতীক।সে দিক থেকে দেখলে আজমের তো প্রেমেরও শহর।

আজমের থেকে অভিজিৎ রা এল ' পিঙ্ক সিটি ' জয়পুর। গোটা জয়পুর শহর টাই মার্বেল পাথরের দুর্গে ঘেরা। জয়পুরে গিয়ে অভিজিৎ দেখল সওয়াই মান সিং স্টেডিয়াম, যে মাঠে ওর প্রিয় ক্রিকেট তারকা মহেন্দ্র সিং ধোনি ১৮৩ করেছিলেন। বহুদিন ধরেই অভির ইচ্ছা এই মাঠ টা নিজের চোখে দেখার। আজ সেই ইচ্ছা পূরণ হল।

জয়পুর থেকে আমের মাত্র ১৫- ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে। অভি জানতে পারল ,এই আমের শহর টাই ইতিহাসের অম্বর, এখানে রাজত্ব করতেন অম্বররাজ মানসিংহ, যিনি সম্রাট আকবরের বহুবিধ সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

অপূর্ব স্থান এই আমের, গোটা শহরটাই পাহাড়ে ঘেরা। চারপাশে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনানী, আর ধূসর পাহাড়শ্রেণী। প্রিয়াঙ্কা গাঙ্গুলী , অভিজিতের পিস্তুতো দিদি তো এই পাহাড়েই ট্রেকিং করে।

আমেরের মূল আকর্ষণ হল আমের দুর্গ, দূর- দূরান্ত থেকে দর্শক সমাগম হয়। আর নাহারগড় - বিশালগড় তো খুব কাছেই।

এছাড়াও, যে জিনিসটা এখানে উল্লেখযোগ্য, সেটা হল বিশাল জলাধার যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে শরণার্থীরা স্নান করতে আসে।

আমেরে দিনগুলি খুব সুন্দর কাটছিল অভির। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই সপ্তপর্ণাকে মিস করতে শুরু করল। সবই আছে, কিন্তু চারপাশে কি যেন নেই, জীবনটা কেমন যেন শূন্য হয়ে যাচ্ছে। 

প্রিয়াঙ্কাদির সাথে কয়েকদিন পাহাড়ে ট্রেকিং করলেও, আর ভালো লাগে না কিছু! বেশিদিন আর আমেরের মনোরম মনোহর প্রকৃতির শ্যামলিমা আর ভালো লাগলো না অভির। আমেরে একমাস কাটিয়ে অভিরা ফিরে এল বারাসতে।


অবশেষে বেরলো মাধ্যমিকের রেজাল্ট । বাড়ির সকলকে চমকে দিয়ে অভিজিৎ পেয়েছে আটশোর মধ্যে সাতশো সাতান্নো।স্কুলের মধ্যে সে দ্বিতীয় হয়েছে, অঙ্কেতে একশোতে একশো তো পেয়েছেই, এমনকি ভূগোলে আর ভৌত বিজ্ঞানে রেকর্ড মার্কস পেয়েছে। বাংলা ফার্স্ট পেপার যেটায় ও ভাবছিলো লেটার পাবে না, সেটাতেও লেটার পেয়েছে। ওর এই রেজাল্টে ওদের স্কুলের স্যার রাও খুব খুশি হয়েছেন। রেজাল্ট পেয়েই আনন্দে নেচে উঠলো অভির মন।

বাড়িতে যখন এই রেজাল্ট দেখালো ,তখন চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল মা আর দাদুর। একমাত্র কিছু বললেন না বাবা, তিনি জানতেন ছেলে একদিন না একদিন ভালো রেজাল্ট করবেই।

রেজাল্ট হাতে পেয়েই অভি ঠিক করল এবার সে সপ্তপর্ণাকে

তার মনের কথা বলবেই।এতদিন ধরে সে চেপে রেখেছে , কিন্তু আর সে পারবে না।পর্ণাকে রেজাল্টের খবর দিতেই পর্ণা জড়িয়ে ধরল অভিকে। অভির জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ের আলিঙ্গন ,প্রিয়তমার হৃদস্পন্দনকে খুব কাছ থেকে ভালো করে অনুভব করল অভি। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বরে জানালো তার মনের করা। সম্মতি জানালো পর্ণা।

পর্ণা বলল,"জিৎ ,আমি তো কবে থেকেই তোকে ভালোবাসি। হ্যাঁ, ভালোবাসি আমি শুধুই তোকে। পেতে চাই,নিজের করে পেতে চাই তোকে।" দৃঢ় হল আলিঙ্গন ,মিলনের এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে লাগলো আকাশের চাঁদ।

ক্লাস ইলেভেনে উঠে সপ্তপর্ণা নিল আর্টস ,আর মায়ের জোরাজুরিতে অভি নিল সায়েন্স। আর নতুন রং নিল দুজনের প্রেম।

ক্লাস ইলেভেনে ওঠার সময় অভি প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, এর জবাব সে দেবেই।সাহিত্যের জগতেও সে নাম করে দেখাবে।

অভি আর পর্ণার লাভস্টোরি এগোতে থাকলো। স্কুল ছুটির পর একসাথে দেখা করা, একসাথে সিনেমা দেখতে যাওয়া, মাঝে মাঝে প্রিন্সেপ ঘাটে গঙ্গার ধারে বা মাঝে মাঝে দীঘার সৈকতভূমে একসাথে সময় কাটানো, কখনো বা এসপ্ল্যানেড ঘুরতে যাওয়া একসাথে। কখনও বা হাতে হাত ধরে পুজোতে প্যান্ডেলে- প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানো। বেশ কাটছিল দিনগুলি।

দুর্গাপূজাতে অষ্টমীর দিন সপ্তপর্ণাদের পাড়ায় ঘুরতে যাওয়া, নবমীতে রেস্টুরেন্টে একসাথে চিকেন বিরিয়ানি আর মাটন চাপ খাওয়া- এককথায় ভোলা যায় না সে সব অভিজ্ঞতা ।আকাশের চাঁদের কাছে প্রতিজ্ঞা করে একসাথে গেয়ে ওঠা , " চাঁদ নে কুছ কাঁহা,রাত নে কুছ সুনা............................।"

আর কালীপূজাতে তো কথাই নেই, এককথায় গোটা বাংলার মধ্যে অন্যতম সেরা বারাসতের দিওয়ালি আর কালীপূজা।এই উৎসব উপলক্ষে অমাবস্যার অন্ধকার রাতের তীব্র আলোকচ্ছটায় সেজে ওঠে গোটা বারাসত, সারা শহরটা যেন স্বর্গের রাজধানী অমরাবতী।সেই মায়াবী রাতে পর্ণার হাত ধরে গোটা বারাসতে ঘুরে বেড়াতো অভি।

কখনো নবপল্লী, কখনো পাইওনিয়ার, আর কখনো বা ব্যায়াম সমিতি!

কি রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতা! কখনো আলুকাবলি, কখনো দইফুচকা তো আছেই; আবার কখনো রেস্তোরাঁয় একসাথে ফ্রিশফ্রাই বা মোগলাই! শীতে একসাথে পিকনিক ।মাঝে মাঝে ঘনিষ্ট চুম্বন আর আলিঙ্গন তো আছেই।কি মধুর সে সব অভিজ্ঞতা!

এরপর এল উচ্চ মাধ্যমিক। আবার দারুণ রেজাল্ট করল অভি। ফিজিক্সে পেল ৯৩ আর অঙ্কে পেল একশো।দুর্দান্ত রেজাল্ট করল পর্ণাও । 

এরপর ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে পর্ণা ভর্তি হল যাদবপুরে আর আই আই টি পড়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মায়ের জোরাজুরিতে ভর্তি হতে হল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে। না এরপর আর দেখা হয়নি পর্ণার সাথে।

মা সরস্বতীর আশীর্বাদ ঝরে পড়েছে তার মাথার ওপর। ফিজিক্সে এম এস সি করেও ক্ষান্ত হয়নি সে, সাহিত্যের জগতেও নাম করেছে সে, তার লেখা প্রবন্ধ আর কবিতা দেশ- বিদেশের নামী জার্নালে ছাপা হচ্ছে। চারদিকে এখন একটাই নাম - অভিজিৎ ব্যানার্জী!

কিন্তু এতো কিছু সত্বেও জীবনটা খালি খালি লাগে তার! সে তার প্রেমকে মিস করে- সপ্তপর্ণাকে। সপ্তপর্ণা ছাড়া তার জীবনটাই বৃথা।

তার জীবনেও নারী এসেছে, অনেকে তাকে প্রপোজও করেছে। সে সবাই কে না করেছে। সপ্তপর্ণা ছাড়া সে কাউকে ভালোবাসতে পারবে না।

বাড়ি ফিরে অভি দেখা করেছে তার বাবা আর মায়ের সাথে। দাদু একবছর হল মারা গেছেন।

মায়েদের বিশেষত: বাঙালী মায়েদের কোনো তুলনা হয় না। নিজের সন্তানকে নিজের প্রাণের চাইতেও ভালোবাসেন। অভির মা অভিকে দেখেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন।

মা-বাবার সাথে দেখা করে অভি ঠিক করল যে, তার স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক সঞ্জীবস্যারের সাথে দেখা করবে।

শিক্ষাগুরুও খুশি প্রিয় ছাত্রের কৃতিত্বে।

সঞ্জীবস্যারের বাড়ি থেকে অভি বাড়ি ফিরছিল সপ্তপর্ণাদের পাড়ার মধ্য দিয়ে।আকাশ- বাতাসে আগমনীর সুর, দূর থেকে ভেসে আসছে পুজোর গন্ধ।পরে অভিজিৎ সপ্তপর্ণাকে খুঁজেছে ফেসবুকে , কিনতু পায় নি। নিজের চিন্তায় বিভোর হয়ে হাঁটছে অভি, চোখ ভরে আসছে জলে।

এইসময় পেছন থেকে নারীকন্ঠে কে যেন বলল, "আরে, অভি না!কেমন আছিস?" পেছন ফিরে তাকিয়ে চমকে গেল অভি। সে পিছন ফিরে যা দেখল সেটাকে অত্যাশ্চর্য বললেও কম বলা হবে । হাসিমুখে তার দিকে চেয়ে আছে সপ্তপর্ণা।

সপ্তপর্ণা জানালো, কাজের মধ্যে প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিল সে। এম এ করার সময়ই সে এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারে ইউ এস এর 'Writers of The Future' প্রতিযোগিতার ব্যাপারে।থ্রিলার লিখে অনলাইনে জমা দিয়েছিল সে। নিজের প্রচেষ্টা তো ছিলই,ভাগ্যদেবী প্রসন্ন ছিল তার ওপর, সাফল্যও এল ।

তিনমাস পরে ফলাফল প্রকাশিত হতেই সে দেখল যে,সে থার্ড হয়েছে। অ্যামেচার হিসাবে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু সে থার্ড হয়েছে। ফলস্বরূপ, বিশাল আর্থিক মূল্যের পুরস্কার, আর সারা বিশ্বজোড়া খ্যাতি। কেরিয়ারের এক নতুন দিগন্ত খুলে গেল তার সামনে।

না, এবার ঠিক করেছে অভিজিৎ, ফিরে পাওয়া প্রেমকে সে আর হারাবে না। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে সপ্তপর্ণার সাথে, আর কোনো বাধা-বিপত্তি কে পাত্তা দেবে না সে। তারা দুজনেই এখন জীবনে সফল, তাই মাকে বোঝাতেও বেশি বেগ পেতে হবে না।

সপ্তপর্ণা জানালো, কাজের মধ্যে প্রচণ্ড ব্যস্ত ছিল সে। এম এ করার সময়ই সে এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারে ইউ এস এর 'Writers of The Future' প্রতিযোগিতার ব্যাপারে।থ্রিলার লিখে অনলাইনে জমা দিয়েছিল সে। নিজের প্রচেষ্টা তো ছিলই,ভাগ্যদেবী প্রসন্ন ছিল তার ওপর, সাফল্যও এল ।

তিনমাস পরে ফলাফল প্রকাশিত হতেই সে দেখল যে,সে থার্ড হয়েছে। অ্যামেচার হিসাবে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু সে থার্ড হয়েছে। ফলস্বরূপ, বিশাল আর্থিক মূল্যের পুরস্কার, আর সারা বিশ্বজোড়া খ্যাতি। কেরিয়ারের এক নতুন দিগন্ত খুলে গেল তার সামনে।

না, এবার ঠিক করেছে অভিজিৎ, ফিরে পাওয়া প্রেমকে সে আর হারাবে না। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে সপ্তপর্ণার সাথে, আর কোনো বাধা-বিপত্তি কে পাত্তা দেবে না সে। তারা দুজনেই এখন জীবনে সফল, তাই মাকে বোঝাতেও বেশি বেগ পেতে হবে না।

হ্যাঁ, সপ্তপর্ণা হবে তার জীবনসঙ্গিনী। আবার ফিরে আসবে পুজোর সোনালি দিনগুলি। ফিরে আসবে প্রেমের রঙিন মুহূর্ত। আকাশের বুকে কালো মেঘ এখন পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন। আকাশ এখন সুনীল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance