Manik Goswami

Romance Tragedy

4.0  

Manik Goswami

Romance Tragedy

হারানো বসন্ত

হারানো বসন্ত

9 mins
284



আজ দুবছর হয়ে গেলো অনিন্দিতা অবসর পেয়েছে চাকুরী থেকে | এরই মধ্যে স্বামীকে হারিয়ে একেবারে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছে | ছেলে দুজন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে জীবনে, সেটাই সান্ত্বনা | দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে | নাতি-নাতনীও এসেছে ঘরে | তারাই এখন অবসর জীবনের খেলার সাথী | বেশ সময় কেটে যায় ওদের সাথে | একাকিত্ব অনুভব করার সময়টা তো ওরাই কমিয়ে দিয়েছে |

মুঠোফোনটা বেজে উঠলো হঠাৎ | অপরিচিত নম্বর | ধরবো? ফ্রড নয়তো | যা যুগ পড়েছে, মানুষ নিজের পরিচিত লোকজনের ওপরই ভরসা রাখতে পারছে না, ভয় পাচ্ছে | নাহ, অনেকক্ষণ থেকেই বেজে চলেছে ফোনটা | ধরেই দেখি না কে বলছে, কি বলতে চাইছে | কোনোরকম ইনফরমেশন না দিলেই তো হলো | কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীও তো হতে পারে | ধরেই দেখি তাহলে | অনেক সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে অবশেষে ফোন কলটা রিসিভ করলো অনিন্দিতা |

- হ্যালো, কে বলছেন |

- আমি কি অনিন্দিতার সঙ্গে কথা বলতে পারি |

- হ্যাঁ, আমি অনিন্দিতাই বলছি | কি বলবেন, বলুন |

- অনিন্দিতা, তুমি হয়তো এখন আমাকে আর চিনতেই পারবে না | আমার কথাও হয়তো আর তোমার মনেই নেই | মনে থাকার কথাও নয় | এতগুলো বছর পার হয়ে গেছে তো | মনে না থাকাটাই তো স্বাভাবিক |

- কে আপনি ? কি বলতে চান, বলুন | আপনি কি আমাদের পরিচিত কেউ | ঠিক বুঝতে পারছি না |

-আগে বলো, তুমি কেমন আছো | বিয়ে করে সংসারী তো হয়েছো শুনেছি | যাই হোক, তোমার কথা এখন শোনাও আমাকে | কিভাবে এতগুলো বছর পার করে দিলে, জানাও, বলতে থাকো |

- মানে, আপনার পরিচয়টাই পেলাম না এখনো পর্য্যন্ত | জানতে পারলাম না আপনি কে | আর একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে আমি আমার জীবন কাহিনী শোনাতে বসবো, এরকম অন্যায় আবদার আপনি করছেনই বা কেন | দেখুন, আমি আমার চাকুরী জীবন শেষ করে এখন অবসর জীবন যাপন করছি | সুতরাং, আপনার মনে যদি অন্য কোনোরকম ভাবনা চিন্তার উদ্রেক হয়ে থাকে, এখনই সেটা সম্বরণ করুন, নয়তো অযথা আপনার সময়ের অপব্যবহারই হবে |

- হ্যাঁ,  ঠিকই বলেছো | তোমার বয়স তো এখন বাষট্টি তেষট্টি হবারই কথা | আমি তো সত্তরে পৌঁছেই গেছি | মাঝে এতগুলো বছর যে কোথা দিয়ে, কিভাবে পার হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না | এখনও তো চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় এই তো সেদিনের কথা | যাক, মাসিমা, মেসোমশাই সকলে কেমন আছেন বলো |

- মাসিমা, মেসোমশাই মানে | আপনি কি আমার বাবা-মায়ের কথা বলছেন | আপনি তাদের চেনেন নাকি |

- না, এখন আর দেখলেও চিনতে পারবো না | তবে এককালে আমি তাদের ভালো ভাবেই চিনতাম | দুজনেই আমার শ্রদ্ধার পাত্র | তাদের কি এ জনমে আমি ভুলতে পারি ?

- আপনার কথার হেঁয়ালি আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না | তবে জেনে রাখুন, বাবা আর আমাদের মধ্যে নেই | মা আছেন, তবে একেবারে শয্যাশায়ী | চলাফেরা করতেই পারেন না |

- মাস্টারমশাই মারা গেছেন? অবশ্য বেঁচে থাকলে বয়স তো প্রায় নব্বই ছুঁই ছুঁই হতো |

- আপনি কি করে জানলেন যে আমার বাবা মাস্টারি করতেন |

- জানবো না কেন ? উনি তো প্রাইমারি সেকশনের হেড মাস্টার ছিলেন | আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন | সদ্য কলেজ পাস করা এক ছেলে যখন ওরকম একটা অজ পাড়াগাঁয়ে স্কুলের চাকুরী পেয়ে কৃষ্ণনগরের মতো শহর ছেড়ে অকূল পাথারে গিয়ে পড়েছিল, তখন উনিই তো আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তার নিজের ঘরে | গ্রামের স্কুলে চাকুরী করতে গেলে তো থাকার ব্যবস্থা নিজেকেই করে নিতে হয় | আমি যখন কোথাও কোনোরকম ব্যবস্থা করে উঠতে পারছিলাম না, তখন উনিই তো নিজে থেকে এগিয়ে এসে আমাকে তাদের সঙ্গেই থাকতে বললেন | তার এই সহযোগিতা, অসহায় পরের ছেলেকে আপন করে টেনে নিয়ে নিজের ঘরে আশ্রয় দেওয়া, আমি আমার সারাজীবনে ভুলতে পারিনি, ভুলতে পারবোও না |

- দাঁড়ান, দাঁড়ান | আমি যেন একটু একটু মনে করতে পারছি বলে মনে হচ্ছে | আপনি কি তাহলে আমাদের প্রদীপ স্যার?

- হ্যাঁ, আমি প্রদীপ চৌধুরী, তোমাদের প্রদীপ স্যার | একুশ বছর বয়সে যখন আমি চাকুরী পেয়ে গাঁয়ের স্কুলের মাস্টার হয়ে তোমাদের ওই সুন্দর, ছিমছাম গ্রামে গিয়ে উঠি, তখন গ্রামটাকে আর গ্রামের সাধারণ মানুষজনকে আমার এতো ভালো লেগেছিলো যে জীবনের ওই সেরা চারটি বছর আমার স্মৃতিতে আজও অক্ষয়, অমলিন হয়ে রয়ে গেছে | আজও ভুলতে পারিনি সে সব দিনগুলোর কথা |

- আপনি, আপনি প্রদীপ স্যার | কেমন আছেন স্যার? এমা ছি, ছি | আপনাকে অপরিচিত ভেবে কি না কি বলে দিয়েছি | আমাকে মার্জনা করবেন স্যার | কিছু মনে করবেন না প্লিজ |

- না, না | আমি কিছু মনে করিনি | আর, মনে করতেই বা যাবো কেন? একজন অচেনা, অজানা মানুষের সঙ্গে কি প্রথমেই সহজভাবে কথা বলা যায় | কে ফোন করেছে, কেন ফোন করেছে, সব জানতে হবে তো | আমি তো তোমার কোনো দোষ দেখতে পাচ্ছি না | যাই হোক, তোমাদের স্কুলে মাস্টারি করতে গিয়ে কত ভালো ভালো মানুষজনের সংস্পর্শে এসেছি, কত আনন্দ পেয়েছি, যা আমার মনকে এখনও দোলা দিয়ে যায় | পরে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন স্কুলে ট্রান্সফার হয়ে পড়াতে গিয়ে তেমন আনন্দ আর কোথাও পাই নি | মনে আছে, আমি যখন সদ্য চাকুরী পেয়ে তোমাদের স্কুলে যাই, তখন তুমি ক্লাস এইটে পড়ো | তোমাদের স্কুলে ক্লাস টেন পর্যন্তই পড়ানো হতো | তারপরে উচ্চশিক্ষার জন্যে গ্রাম ছাড়তেই হতো | তোমাকে এখনও মনের কোণে জায়গা দিয়ে স্মৃতিতে রেখে দেওয়ার পেছনে তিনটে কারণ রয়েছে | তুমি লেখাপড়ায় খুব ভালো ছাত্রী ছিলে | তোমার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ, নিষ্ঠা, আমাকে মুগ্ধ করে রাখতো | একটা আজ পাড়াগাঁয়ের একরত্তি এক মেয়ের লেখাপড়া করার অদম্য ইচ্ছে শক্তি ও মেধা আমাকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলেছিল | আবার তোমাদের বাড়িতে থাকার জন্য জায়গা পাওয়ায় এবং ক্লাস এইট থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত তোমাকে পড়ানোর সুযোগ পাওয়ার সূত্রে, স্কুলে এবং বাড়িতে, আমি তোমার অনেক কাছাকাছি আসতে পেরেছিলাম | অনেক কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম তোমাকে | তারপর ক্লাস টেনের পরীক্ষায় পাস করেই তুমি গ্রামের বাইরে চলে গিয়েছিলে হায়ার ক্লাসে ভর্তি হওয়ার জন্য |

- হ্যাঁ স্যার, মাধ্যমিক পাস করেই আমি টাউন স্কুলে চলে যাই | সেখানে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করি | বারো ক্লাস ভালোভাবে অতিক্রম করেই আমি কলকাতায় মামার বাড়ি চলে যাই | সেখানে, কলকাতার কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন ও পরে মাস্টার ডিগ্রী পুরো করে চলে আসি গ্রামেরই স্কুলে মাস্টারি করতে | আজ আমি অবসর জীবন যাপন করছি | তবে, আমি অস্বীকার করতে পারি না যে, আমার এই উচ্চশিক্ষা লাভ, ও পরে মাস্টারি করা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আপনার অনুপ্রেরণায় | আজও মনে পরে, ক্লাস এইট থেকে ক্লাস টেন পাস করা পর্যন্ত আপনি আমার পড়াশোনা নিয়ে কতটা চিন্তিত ছিলেন, কত পরিশ্রম করেছেন আমাকে ভালো রেজাল্ট করানোর জন্য | যেটুকু সাফল্য আমি আমার ছাত্রী জীবনে এবং পরবর্তীকালে শিক্ষকতার মাধ্যমে অর্জন করতে পেরেছি, তা সম্ভব হয়েছে শুধু আপনার জন্য | আপনার অবদান আমি কোনোদিন ভুলতে পারিনি স্যার | একজন সাধারণ গাঁয়ের মেয়েকে আপনি সাফল্যের আসনে বসানোর জন্য যে অসম্ভব পরিশ্রম করেছেন, যে ভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, তার মূল্য আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না | অবশ্য শোধ করার মতো ধৃষ্টতাও আমি দেখাতে পারবো না | আজ আপনার ফোন পেয়ে আমার কি যে ভালো লাগছে, আর কতটা আনন্দ পেয়েছি তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না | আমার মতো একজন সাধারণ গ্রামের মেয়েকে আপনি এখনও যে মনে রেখেছেন ,আপনার স্মৃতিতে ধরে রেখে যে সম্মান, যে মর্য্যাদা আপনি দিলেন, তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি কোনোদিন |

- আচ্ছা, আচ্ছা; ঠিক আছে | এত বেশি করে আমার গুণকীর্তন করার কোনো দরকার আছে কি? অবশ্য অল্প করে করলেও আমি লজ্জিত হতাম | তোমার নিষ্ঠার কাছে আমার অবদান নিতান্তই তুচ্ছ একটা ব্যাপার | মনে পড়ে, তুমি শহরে চলে যাবার পর থেকেই আমার মন দিয়ে পড়ানোর ইচ্ছেটাও কেমন ধীরে ধীরে কমতে থাকে | কিছুই আর ভালো লাগতো না | মনের উতলা ভাবটাকে দমিয়ে রাখতাম কোনোভাবে | আর বেশিদিন নিজেকে এইভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম না | এক বছরের মধ্যেই ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেলাম তোমাদের গ্রাম ছেড়ে, তোমাদের বাড়ি ছেড়ে, তোমাকে ছেড়ে | অবশ্য তোমার খোঁজ খবর আমি ঠিকই রাখতাম | একদিন জানতে পারলাম তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে | পাত্রের খোঁজ খবরও নিয়ে ছিলাম | জানতে পারি যে সে আমার থেকেও অনেক উঁচু দরের | অবশ্যই অনেক গুণে ভালো আমার থেকে | হাই স্কুলের এসিস্ট্যান্ট হেড মাস্টার | উচ্চ শিক্ষিত | তুমি এমন একজনের হাতে পড়েছো জেনে ভালো লাগলেও অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন | ভেতরে ভেতরে একটা চাপা বেদনার অনুভূতি হয়েছিল প্রকট | নিজেকে বড্ডো ছোট মনে হয়েছিল সেদিন | আর সেইজন্যেই তো ধীরে ধীরে তোমাদের থেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে | খোঁজ খবর নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলাম | ধিক্কার জানিয়েছিলাম নিজেকে | দোষারোপ করতে শুরু করেছিলাম নিজেকেই | বারে বারে মনে হচ্ছিলো যে কেন আমি ওই গ্রামের স্কুলে পড়াতে গেছিলাম | কেনই বা তোমার মতো একজন ঝকঝকে মেয়ের সান্নিধ্যে এসেছিলাম | তোমাকে না পাওয়ার স্মৃতি আমাকে শুধু বেদনাই দিয়ে গেছে | কি যে বেদনা সেটা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না |

- স্যার, আপনি ভাবাবেগে ভেঙে পড়ছেন | থাক না এখন সেসব কথা | অতীতের স্মৃতি শুধু বেদনাই বাড়িয়ে দিতে পারে | তার চেয়ে আপনি এখন আপনার কথা বলুন | আমার ফোন নম্বরটা আপনি পেলেন কিভাবে ? এখন তো মোবাইলের যুগ, আপনি আমার মোবাইল নম্বরটা জানতে পারলেন কি করে ?

- না, না | নম্বরটা পাওয়ার তো কথাই নয় | হঠাৎই সুযোগটা এসে গিয়েছিলো | আসলে আমি আমাকে এই জগৎ সংসার থেকে একদম আলাদা করে নিয়েছিলাম | কিছুই ভালো লাগতো না | সবসময়ই একটা আক্ষেপ, হ্যাঁ, না পাওয়ার একটা বেদনা, আমাকে কিছুতেই স্বস্তি এনে দিতে পারতো না | সেই জন্যেই তো সমস্ত কিছু ভুলে থাকতেই চেয়েছিলাম |কিন্তু ভগবান বোধহয় তোমার সঙ্গে আমার অন্তত একবার কথা বলার ব্যবস্থাটা পাকা করেই রেখেছিলেন | তাই ফোন নম্বরটাও পেয়ে গেলাম আর তোমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগটাও এসে গেলো |

- হ্যাঁ, কিন্তু সেটা কিভাবে স্যার |

- আমি কৃষ্ণনগরেই থাকি, জানতো নিশ্চয়ই | তো সেদিন লোকাল একটা ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চে গেছি, কিছু কাজ ছিল | একজন ভদ্রলোক, ব্যাঙ্কেরই কর্মী, আমার সে কাজটা করে দিতে আমাকে অনেক সহায়তা করেছিল | অনেকটা সময় ভদ্রলোকের সাথে কাটানোর সুবাদে এবং কথাবার্তায় আলাপ পরিচয়ের মাধ্যমে জানতে পারি যে তার বাড়ি তোমাদেরই গ্রামে | গ্রামের নামটা শোনার সাথে সাথেই তোমার ছবি আমার মনের মধ্যে ভেসে উঠতে থাকলো | আমি তাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম যে সে ওই গ্রামের অনিন্দিতা নামের কোনো মহিলাকে চেনে কি না | অবাক হলাম যখন জানতে পারলাম যে সে ভদ্রলোক তোমার ভাই | আমি দ্বিগুন উৎসাহে বারে বারে তোমার কথা জানতে চাইলাম | সে তোমার সম্বন্ধে অনেক কথাই আমাকে জানালো যখন আমার পরিচয়টা জানতে পারলো | দেখলাম, মনেও রেখেছে আমাকে | যখন আমি বারে বারে জানতে চাইলাম যে কিভাবে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে, তখন সেই আমাকে তোমার মোবাইল নম্বরটা দিলো | তখন এতো আনন্দ, এতো উত্তেজনা হয়েছিল শরীরের মধ্যে যে মাস্টারমশাই, মাসিমা এমন কি তোমার কথাও আর জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে নি | মনের মধ্যে একরাশ অতীত স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ফিরে এসে সময় বার করে তোমাকে ফোন করলাম | শরীরের মধ্যে এখনও যে উত্তেজনা জাগে, শিহরণ জাগে, আনন্দে উদ্বেল হয়ে মনটা এখনও যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সেটা বুঝতে পারলাম তোমার খবর পেয়ে আর তোমার সাথে মন উজাড় করে কথা বলতে পারার সুবাদে |

- স্যার, আপনি বড়ই আবেগ প্রবন হয়ে পড়ছেন | অবশ্য সেটাই তো স্বাভাবিক | এতগুলো বছর পরে পুরোনো দিনের ভালো লাগার স্মৃতি মনকে তো আবেগ প্রবন করে তোলেই | মনের আর দোষ কি | সংসার নামক অথৈ সাগরের জলে হাবুডুবু খেতে খেতে খড়কুটোর মতো অতীত স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে মন আবার নতুন করে বাঁচতে চায় | নতুন করেই ভালোবাসার হারিয়ে যাওয়া স্বাদ কে তাড়িয়ে তাড়িয়ে অনুভব করতে চায় | কিন্তু স্যার, আপনি তো আপনার অভিব্যক্তির কথাই শুধু বলে গেলেন, অথচ একবারও তো আপনার নিজের কথা, নিজের জীবনের ফেলে আসা এতগুলো বছরের কথা, কিছুই তো জানালেন না | আপনার নিজের সংসার জীবন, গিন্নির খবর বা ছেলেমেয়েদের খবর, তারা এখন কে কি করছে, এই সব কথা কিছু বলুন | শুনি | শুনতে তো ভালোই লাগে | তাড়াতাড়ি বলুন, আমি বড়ই উৎসুক হয়ে পড়ছি শোনার জন্য |

- কি বলবো বলো | আমার তো নিজের কথা বলার মতো কিছুই নেই | আলাদা কোনো সংসার জীবনই নেই আমার | যৌবনের শুরুতেই আমার ডিঙি নৌকার পাল টা সেই যে ছিঁড়ে গেলো, আর মেরামত করাই হয়ে ওঠেনি | বেসামাল নৌকা হাওয়ার তেজে এদিক ওদিক ভাসতে ভাসতে সংসার সমুদ্রে দিশা হারিয়ে ছন্নছাড়া হয়ে ঘূর্ণির মতো শুধু ঘুরেই বেরিয়েছে | এখনও ঘুরছে, এখনও ভাসছে | হাল ধরে স্থিতিশীল করে তোলার মতো কোনো সুদক্ষ মাঝির সন্ধানই করে উঠতে পারলাম না | যাক, আমি বেশ আছি | তুমি ভালো থেকো | আমিও এইভাবেই ভালো থেকেই কাটিয়ে দিতে পারবো আমার জীবনের আর শেষ কয়েকটা বসন্ত |


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance