STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Thriller Others

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Thriller Others

হার জিত

হার জিত

3 mins
222

খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে, বসে ছিলাম হাঁ করে অবাক দৃষ্টিতে। গিন্নী এসে মুখ ঝামটা দিয়ে গেলো - আজ বুঝি বেরোবার তাড়া নেই? গ্যাঁট হয়ে বসে আছো যে?

বললাম - গিন্নী, ব্যস্ত হয়ো না। আজ অপিসের গাড়িতে আমায় কোর্টে নিয়ে যাবে।

গিন্নী - তা সেটা নাওয়া খাওয়া না করেই, যাওয়া চলবে তো - ঐ হাওয়াই চটি ফটফটিয়ে, স্যাণ্ডো গেঞ্জি আর পাতলুন পরে?

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ন'টা বাজতে গেলো! আমার এখনও স্নান খাওয়াই হয়নি। একটা কেসের হীয়ারিং অ্যাটেণ্ড করতে যেতে হবে বারাসাত। গাড়ি করে এক অফিসার ফাইলটা নিয়ে আসছে, আমায় বাড়ি থেকে পিক-আপ করে নেবে।

দ্রুত বাথরুমে ঢুকে হুড়োহুড়ি করে, স্নান সেরে এসে দেখি গিন্নী কোট, জামা, প্যান্ট, আণ্ডারওয়্যার, ঘড়ি, চশমা, মোজা সব সাজিয়ে রেখে খাবার বাড়ছে। সত্যি গিন্নীর আমার তুলনা হয়না - আমার সবদিকে খেয়াল তার, বড্ড ভালোবাসে কিনা!

যাক গে, কোর্ট থেকে ফেরার পথে - আমি আবার বাড়িতেই ড্রপ নিয়ে নিলাম। চিন্তিত মুখে বাড়ি ঢুকতেই, গিন্নী ধরলো - কি গো, কি হলো আবার? কোর্টে কোনো গণ্ডগোল - কেসে হেরে গেছো?

বললাম - না গিন্নী, এই শর্মাকে কোর্টে হারানো কি অত সহজ? আসলে বিষয়টা অন্য জানো, অদ্ভুত এক চিন্তা হচ্ছে একটা আসামীর জন্য!

গিন্নী - আসামীর জন্য তোমার চিন্তা হচ্ছে? এরকম অদ্ভুত কথাই তো জীবনে শুনিনি। তোমার ভয়ে তো আসামীরা এই কোর্টে আসতেই চায়না। আর তুমি করছো তাদের চিন্তা?

পরনের পোশাকটা বদলাতে বদলাতে বললাম - তুমি শুনলে, তুমিও চিন্তায় পড়বে। রনি বিশ্বাস নামে ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়ে, হঠাৎ স্কুল পালিয়ে বিয়ে করে রবিউল বলে একটি ছোকরাকে। যা হয় আর কি, কচি বয়সের অবুঝ প্রেম, প্রেম তো নয় মোহ।

যাক গে, তো তার বছর পাঁচেক বাদে, এই গত মাসে সে অ্যারেস্ট হয়েছিলো - চোরাই সোনা পাচার করতে গিয়ে! গত সপ্তাহেই ছাড়া পেয়েছে। তার এখন নতুন নাম হয়েছে রুবিনা খাতুন। বছর চারেক আগেই, তার বর সেই প্রেমিক ছোকরা নাকি, কেটে পড়েছে তাকে একা প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ফেলে তালাক দিয়ে।

স্থানীয় ক্লাবের লোকজনের সহায়তায়, হাসপাতালে গিয়ে সে একটা শিশুকন্যার জন্ম দেয় তার কয়েক মাস পরে। তারপর থেকে কখনও রেল স্টেশন, কখনও হাটে ভিক্ষে করে কাটিয়েছে ছ'মাস। পরে নাকি লোকের বাড়ি ঝিয়ের কাজ করেও বাঁচার চেষ্টা করছিলো, কিন্তু যেভাবেই হোক সেকাজেও টেকে নি।

ইতোমধ্যে, পাড়ার কোন শুভাকাঙ্খী স্মাগলার দাদার সহায়তায় একটু আলোর মুখ দেখছিলো, সরকারী গোয়েন্দারা সেটাও বন্ধ করে দিলো - তাকে হাতে-নাতে ধরে, জেলে পুরে দিয়ে!

পনেরো দিনও হয়নি সে বেল পেয়েছে, আজ আবার কাঠগড়ায় উঠেছে সে - এবার শিশু পাচারের অভিযোগে! ভাবতে পারছো - যার নিজের ঘরে একটা ঐটুকু বাচ্চা আছে, সেই মহিলাই কিনা শিশু পাচার করছে - নিজের বাচ্চাকে মানুষ করার জন্য? এরা কি মানুষ?

গিন্নী - বাচ্চাটাকে কি করলে?

আমি - কি আবার, একটা অনাথ আশ্রম মানে সরকারী হোমে আপাতত রাখা হয়েছে। তার বাপ মায়ের পরিচয় জানা গেলে ভালো, নয়তো ওখানেই থাকবে। তার ওপর আবার, রামকৃষ্ণ মিশনের এক মহারাজ, সেদিন ঘটনাস্থলে থাকায়, তাঁরও বিশেষ সহানুভূতি আছে ঐ শিশুটির ওপর!

গিন্নী - তাহলে তো ঐটুকু মেয়ের বুকের পাটা আছে বলতে হবে - তোমার মত দুঁদে উকিল, পুলিশ এমনকি স্বামীজীর চোখেও ধুলো দিয়ে, নিজের কার্যসিদ্ধি করে নিয়েছে।

আমি - মানে?

গিন্নী - ঐ বাচ্চাটা নিশ্চয়ই বছর তিনেকের একটা মেয়ে, তাই না?

আমি - হ্যাঁ, কিন্তু তুমি.... ওহো, তার মানে ও নিজের মেয়েকেই পাচার করতে যাবার নাটকে করে, পুলিশের হাতে ইচ্ছে করে ধরা পড়েছে - যাতে, তার মেয়েটা সরকারী হোমে ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকে, মানুষ হয় ঠিক ভাবে! কারণ, ওর পক্ষে তো আর সেটা করা এখন কোনমতেই সম্ভব নয়! বাঃ, মাস্টার স্ট্রোক। মেয়েটার বুদ্ধি দেখে সত্যিই অবাক লাগছে।

কিন্তু, হেরে যাওয়া তো চলবে না আমার। ন্যূনতম শাস্তির ব্যবস্থা তার জন্য না করতে পারলে, আমারও পরাজয় আর তার মমতারও। এই কেসটায়, সে বোধ হয় হেরে গিয়েও জিতে যাবে, আর আমি জিতে গিয়েও হেরে যাবো গিন্নী। তবু, এই হারটাতে কোন কষ্ট হবে না জানো, আজীবন জিতে আসার পর আজ বুঝলাম - হারেতেও সুখ আছে!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama