গর্ত রসিক ইঁদুর
গর্ত রসিক ইঁদুর
প্রতিবেশী অনিমা কাকীমার সাথে মিতার বড় ভাব। রসিক অনিমা অশ্লীলকে শ্লীল ভাষায় জোক করে বলার তুলনা নেই।
সেদিন মিতা বলে "জানেন কাকীমা,ওরা দেওর বৌদি মিলে স্নানের আগে মাঝেমধ্যেই ঘরে খিল দিয়ে ইঁদুর মারতে লাফঝাপ করে,তারপর একটা ধেড়ে ইঁদুর মেরে বের করে!"
"কতক্ষণ ইঁদুর মারতে লাগে বৌমা!"
"যেদিন যেমন, পনের মিনিট কোনদিন কুড়ি মিনিট!"
"তোমার শ্বশুর শাশুড়ি কী বলে!"
"শাশুড়ি নটা হলেই ঠাকুরঘরে একঘন্টা কাটায়, শ্বশুর তাসের আড্ডায় ছোটে!"
"ভাসুর আট হলেই ডিউটি যায় তাই তো!"
"হ্যাঁ কাকীমা ঠিকই বলেছেন।"
"তুমি বোকা নির্বোধ! কোনদিন ঘরে ইঁদুর দেখছ!"
"না! আমার নজরে পড়ে না,পাকা ঘরে গর্ত কোথায় যে ইঁদুর ঢুকবে! অথচ একটা করে ঠিক ইঁদুর মারে ওরা!"
"তুমি যেমন ন্যাকা! ঐ ইঁদুর যতবার মারুক মরবে না, আবার ঘরে ঢুকবে ,আর মরলে তোমারও সর্বনাশ।"
"কেন কাকীমা?"
"ঐ ইঁদুর তোমার গর্তেও ঢোকে।"
"আমার গর্তে ইঁদুর ঢোকে !কীসের গর্ত ! কী বলছেন কাকীমা!"
"তুমি তো কচিখুকী নয়! দুদিন পর মা হবে ,কিছুই বোঝা না! "
খানিকক্ষন চিন্তা ভাবনা করে উত্তেজিত হয়ে মিতা বলে,"বুঝেছি আমাদের মানে মেয়েদের গর্ত --"
কথা থামিয়ে অনিমা বলে "থাক বৌমা আর ঘেঁটে গন্ধ বের করো না।"
মিতার মুখচোখ ক্ষোভে লাল হয়ে ওঠে,"দেখছি আজ ওর সাহস ! ছোটলোকটা ইঁদুর বাইরে থেকেই নিয়ে আসে বুঝেছি!"
অনিমা খুব হাসছিল। "পারলে ইঁদুরটাকে এমন কামড়ে দাও,দশদিন ব্যাথা যন্ত্রণায় যেন কাতর থাকে।বুঝিয়ে দেবে ঐ ইঁদুরের শুধুমাত্র তোমার অধিকার, তোমার গর্ত ছাড়া অন্য গর্তে ঢোকার সাহস যেন না পায়।"
প্রতিবেশী অনিমা সব জানে। মিতার শ্বশুর শাশুড়ির নিরীহ। বড় ছেলে সুধীর হাওড়ায় রেল পুলিশ সপ্তাহে চারদিন সকল আটটা রাত দশটা ডিউটির জন্য বাড়িতে থাকত না। দুদিন রাত ডিউটি। এই সুযোগে অবিবাহিত দেওর বৌদির সম্পর্ক।
দেওর নিকটেই এক স্কুলের শিক্ষক। বৌদির সখ মেটাতে গহনা , দামী শাড়ি দিত, আর বিনিময়ে অধীর পেতো সুন্দরী বৌদির যৌবন। বাবা মা বুঝলেও কিছু বলতে পারত না।
একরকম জোর করে বড় বৌমার চেয়েও সুন্দরী মেয়ে মিতার সাথে অধীরের বিয়ে দিয়েছিল।সেটাও সুধীরের বিয়ের তিন বছর পর।
সুধীরের একটা কন্যার ছিল ।পাড়ার মানুষের বিশ্বাস ওটাও অধীরের।
সুধীর নিরীহ, স্ত্রী সুধীরকে নিজের স্বভাব চাপার জন্য এতটাই যত্ন করত, সুধীর স্ত্রীকে বিশ্বাস করত । হাতে নায়ায়ন শীলা নিয়েও স্ত্রীকে সতী নারী বলতে রাজী।
সেদিন রাতে মিতার তীব্র কান্নার আওয়াজ, আর স্বশব্দ চপেটাঘাতের আওয়াজে প্রতিবেশীদের ঘুম ভাঙ্গে। মিতা তার দুষ্ট পোষা ইঁদুরটাকে কামড়েছিল কীনা কে জানে!
পরদিন সকালেই মিতা বাবার বাড়ি চলে গেছিল।কোর্ট কাছারী, ডিভোর্স খোরপোষ,কতরকম জল্পনা ! মিতার পুত্র সন্তানের জন্মের পর পরিস্থিতি পাল্টায়।
বাবা মা আর পরিস্থিতির চাপে সুধীর সতী স্ত্রীকে নিয়ে তার কর্মস্থলে চলে যায়। মিতা শ্বশুরবাড়িতেই ফিরে এসেছিল। তার নিজস্ব ইঁদুর পোষ মানে, অন্য গর্তে না ঢোকার সপথ করেছিল। এখন মিতা সুখী।
সমাপ্ত

