গল্প : ভূত অদ্ভূত।
গল্প : ভূত অদ্ভূত।
আমি শ্রীমান সৌমেন চক্রবর্তী নিবাস বালি হাওড়া সন 2019 , এই আমি যদি বলি যে ভূত বলে কিছু হয় না মশাই । এই কথা শুনে, আমার অতি বড় নিন্দুক ও না হেসে থাকতে পারবে না। যাক এসব বাজে কথায় কাজ নেই এবার আসল ঘটনাটা সরাসরি খুলেই বলি আপনাদের । বিগত 21 বছর আগেও আমি এনাদের মানে এই অশরীরী অর্থাৎ কিনা যার শরীর নেই সেই প্রেত লোকের বাসিন্দাদের অস্তিত্ব যে আছে এ কথা জোর করে বলতে পারতাম না ,কিন্তু 21 বছর আগের একটি ঘটনা আমার মনের যে পরিবর্তন ঘটেছিল যা আজও মনে করলে সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে।
তখন আমি কলেজের ফার্স্ট ইয়ার স্টুডেন্ট, দর্শন সাহিত্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে মন একদম ঘেটে আছে ঠিক সেই সময় আমার বাবা ও বাবার বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে পুরি ঘুরতে যাওয়ার টুর অর্গানাইজ করলো।সব মিলিয়ে তা ধরো 60-65 জন হলো ।জুলাই মাস নাগাদ আমরা সবাই মিলে বাসে করে বেরিয়ে পড়লাম পুরীর উদ্দেশ্যে, আমরা বলতে মা এক ভাই আর 2 বোন সেই দলে শামিল ছিল বাবা তো অর্গানাইজার হিসেবে ছিল।
আমাদের হোটেল ঠিক হয়েছিল স্বর্গদার এর থেকে বেশ কিছুটা দূরে সমুদ্র থেকে 200 মিটারের মধ্যে হোটেল সোনালীতে । হইচই করতে করতে পরের দিন দুপুরবেলা বাস পৌঁছালো হোটেল সোনালীতে , রাস্তা থেকে হোটেল দেখে তো বাসের সব যাত্রী খুব খুশী এই সুন্দর আর দামি হোটেল এত সস্তায় পেয়ে সবাই খুশি সবাই হোটেলে ঢুকলো কিন্তু আমি হোটেলে ঢুকতে গিয়ে কেমন একটা অদ্ভুত গন্ধ পেলাম আমার মনে হল যে হোটেলটি বড় নিস্তব্ধ এখানকার বাতাস যেন বড্ড ভারী আর হোটেলের চারদিক থেকে শেওলাধরা গন্ধটা হঠাৎ এসে নাকে ঢুকতে লাগল ।ভীষণ ক্লান্ত এবং একই সাথে আনন্দে সেসব গ্রাহ্য না করে আমরা সবাই যে যার রুমে ঢুকে গেলাম ।আমি ক্লান্ত হলেও সমুদ্র স্নানে যেতে আমার কোন কষ্ট নেই সমুদ্রে ঘন্টা দুই চান করার পর খিদে জবরদস্ত পেয়েছিল তাই ফিরে দুপুরের খাওয়ার পর হোটেলের বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
ও হ্যাঁ হোটেল এর বর্ণনা তো দেয়াই হয় নি আপনাদের, বলি শুনুন হোটেলটি চারতলা এল শেপের মুখোমুখি ঘর আর মাঝখানে বারান্দা ।বারান্দার শেষ প্রান্তে গেলে সেখান থেকে সমুদ্র দেখা যায় ।আমি মা আর বাবা তিন তলার একটা ঘর এবং দুই বোন আর ভাই পাশের ঘর নিয়েছিলাম আমরা ছাড়াও আরেকটি দম্পতি ছিল দিলীপ কাকুরা এছাড়া আর কোন অথিতি ছিল না সেই হোটেলে। যাইহোক আবার ঘটনাতে ফিরে আসা যাক আসল ঘটনাটা শুরু হয়েছিল রাত্রিবেলা ডিনার করে যে যার রুমে শোয়ার পর।
রাত ঠিক 12 টা হবে হঠাৎ ঘুমটা জানিনা কি কারণে ভেঙে গেল, আধো ঘুমে আধো জেগে শুনতে পেলাম অনতিদূরে সমুদ্রের গর্জন এবং এর সাথে সাথেই স্পষ্ট শুনতে পেলাম কেউ যেন বারান্দায় চটি পড়ে হাটছে একবার বারান্দায় প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ।আমি অবাক হলাম এত রাতে নিশ্তব্দ এই বারণদায় হাঁটছে কে?
দ্বিতীয় পর্ব
একবার ভাবলাম যে ভাই ও বোনেরা কি ঘুম আসছে না বলে হাঁটছে?নাকি আমাদের রুম এর বিপরীত দিকে কাকু হাওয়াই চটি পড়ে হাটছে কিন্তু প্রতিবারই শুনতে পেলাম চটির আওয়াজ টা আমাদের রুমে এস
ে থেমে যাচ্ছে ,জানিনা কেন আমার সারা গায়ে কাটা দিয়ে উঠল এরপর চটি পড়ে পায়চারি করাটা হঠাৎ থেমে গেলো।
সেদিন বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ায় বিকেলের দিকে আমার একটু জ্বর এসেছিল তাই আবার চেষ্টা করলাম ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু হঠাৎ অনুভব করলাম, যে আওয়াজটা দরজার ওপারে পা ঘষতে ঘষতে চলছিল তা হঠাৎ করে আমার বেডরুমের চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। আমার সারা গায়ে একটা শিহরণ খেলে গেল স্পষ্ট অনুভব করলাম যে কেউ একজন অদৃশ্য জিনিস আমার মাথার চারিপাশে ঘোরাফেরা করছে একবার ভাবলাম আমার জ্বর এর বিকার নয় তো,? ভালো করে গায়ে চিমটি কেটে দেখলাম আমি জেগে আছি না ঘুমিয়ে ।স্পষ্ট দেখছি চিমটি টা বেশ লাগলো তখন বুঝলাম যে আমি সজ্ঞানে আছি তারপর আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করলাম কেউ যেন আমার মাথার পাশে বসলো ।তার অদৃশ্য অনুভূতি স্পষ্ট ভাবে টের পেয়ে আমি ভয়ে মায়ের দিকে গা ঘেসে মাথা আপাদমস্তক চাদর চাপা দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
এরপর ঘুমিয়ে পরে আর কিছু মনে নেই পরদিন ভোরবেলা নিজেকে খুব ফ্রেশ লাগলো ভাই বোন বা অন্যান্যদের কিছু বললাম না খামোকা ভয় পেয়ে যাবে কি দরকার; এরপর যে কয় দিন ওখানে ছিলাম ঠিক করে নিয়েছিলাম যাই হোক একথা ভাই বোনকে বলা যাবে না ,নিজেও ভয় পেলে চলবে না । আমি আমার মতো থাকি আর ভূত তার বায়োবীয় আকার নিয়ে ভূতকালে অবস্থান করুক ক্ষতি কি?
এরমধ্যে কানাঘুষো অনেক কথাই শুনলাম আমল দিলাম না , সত্যি সেই হোটেলে কোন বিশ্রী ব্যাপার ঘটেছিল কিনা ,?যেমন কেউ মাডার বা সুসাইড হয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টাও করেছিলাম সেখানকার এক নেপালি দারোয়ান কে খাতির যত্ন করে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলাম অবশেষে সেই হোটেল থেকে বিদায় বেলা আসন্ন হোলো। যেদিন আমরা সকালে হোটেল ছাড়বো তার আগের রাতের একটি ঘটনা ঘটেছিল আমার ভাই বোনের সাথে সেটি আমি বলছি শুনুন আমার বোনের কথাটাই এখানে তুলে দিলাম। সেদিন বেশ রাত করে আড্ডা ইয়ার্কি মেরে ভাই আর আমার আর এক বোন( কাকার মেয়ে )শুয়ে পড়েছে, আমার বোন একটু দেরি করে শোবে বলে কিছুক্ষণ বাদে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে লাইট অফ করে বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিয়েছে এমন সময় হঠাত লক্ষ্য করলো যে ,একটু আগেই যে বাথরুমের লাইট নিভিয়ে এসেছে সেটি হঠাৎ করে সুইচ অন হয়ে গেছে এবং বাথরুমে কল খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল বোন ভাবল যে ভুল করে বোধহয় লাইট অন করে এসেছে এই ভেবে যে উঠে যাবে অমনি লাইট নিজে থেকেই অফ এবং কল থেকে জল পড়ার আওয়াজ টাও বন্ধ হয়ে গেল।
ভয়ে ভয়ে বোন চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তেই সেই হাওয়াই চটি পড়ে ঘষ ঘষ করে চলার অনুভূতিটা সারা ঘরে প্রবল ভাবে ছড়িয়ে পড়ল। বেশ কয়েকবার অদৃশ্য আত্মাটা পায়চারি করার পর হোটেলের ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে স্থির হয়ে গেল এর পরের ঘটনা বোনের আর কিছু মনে নেই।
এই ঘটনার অনেকদিন বাদে ও আমি যুক্তি-তর্ক দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি। আপনারা বিচার করবেন জাগতিক এবং পার্থিব জগতের বাইরে অন্ধকারময় সূক্ষ্ম এক জগত সত্যিই আছে কি? যা আমাদের অজানা।