ভৌতিক প্রেমের গল্প : দাদু
ভৌতিক প্রেমের গল্প : দাদু
এই ধরনের অদ্ভুত ব্যাপার গুলো এর আগে কোনদিন ঘটেনি সায়ন্তিকার সাথে কিন্তু এখন ঘটে। ব্যাপার গুলো একের পর এক এমনভাবে ঘটছে তার জীবনে, যে সে বেশ বুঝতে পারছে গত একমাস ধরে। কারণ তার অতি প্রিয় দাদু মারা গেছে আজ থেকে পুরো এক মাস আগে।
দাদু তার জীবনের একটা বিরাট অংশজুড়ে বর্তমান ছিল এখন অতীত ।দাদু গত হবার দিন 15 পর সেই দিন প্রথম যখন মামার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে লেক মার্কেট এর অফিস থেকে বেরিয়ে কিছু ফুল আর মিষ্টি কিনে মেট্রো ধরে যখন দমদম স্টেশনে নামে তখন ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা বা আর কিছু বেশি হবে। সে নেমে সোজা হাঁটা দিল তার প্রিয় চেনা পাড়ার দিকে , হাঁটতে হাঁটতে যখন মামা বাড়ির কাছাকাছি আসলো হঠাৎ তার চেনা কুকুরগুলো তার দিকে তেড়ে এলো ওগুলো তো তার খুব পরিচিত এর আগে যখনই মামারবাড়ীতে আসতো তখন এই পাড়ার মোড়ের মাথায় কুকুরগুলোকে আদর করে যেত আর কুকুর গুলো তাকে খুব পছন্দ করত কিন্তু আজ হঠাৎ হল কি সবার? সবকটা কুকুর যেভাবে ঘেউ ঘেউ করে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তার দিকে তেড়ে এলো এবং দাঁত মুখ বার করে ফুলের প্যাকেটটা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য ঝাঁপলো তাতে শুধু অবাকই নয় বেশ ভয় পেয়ে গেল সায়ন্তিকা এরকম তো এর আগে ঘটেনি।
সেদিন কোন রকমে ছুটে মামার বাড়িতে পালিয়ে বাঁচলো কিন্তু কাকে দেখে কুকুরগুলো ওরকম তেড়ে এল আর ফুলের প্যাকেটটার ওপরই তাদের কেন আক্রোশ সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না এরপর থেকে তার সব কটি ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে থাকতো । সেদিন অফিস থেকে বাড়ি পৌঁছে কোন রকমে হাত পা ধুয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল সে । দাদুর জন্য তার বুকের মধ্যে কষ্টটা সত্যি দলা পাকিয়ে কান্না হয়ে ঝরে পড়ল তার দুচোখ বেয়ে, মনে মনে বলল দাদু আমাকেও নিয়ে যাও তোমার কাছে তোমাকে ছাড়া আমি সত্যি বাঁচবো না। সেদিন অফিসের কয়েকজন সহকর্মী কেও কথা গুলো সে বলেছিল কবে যাব? কিভাবে যাব দাদুর কাছে? সৌমেন দা এক ধমক দিয়ে বলেছিল যে এইসব চিন্তা মাথা থেকে বের কর আর যেতে চাইলে যাস তবে আজ থেকে 70 বছর পর শুনে হেসে ছিল সায়ন্তিকা।
আজ অফিস থেকে ফেরার সময় কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে ভিড় হয়েছিল খুব , সেই ভিড়ে সায়ন্তিকা আস্তে আস্তে এক পা এক পা করে যখন সিঁড়ির ধাপগুলো পার হচ্ছিল তখন প্রতিটি ধাপ নামার সাথে সাথে দাদুকে সে খুব মনে করছিল সেই কারণে কিছুটা আনমনা ছিল সেই সুযোগে এক মাঝবয়েসী লোক তার গা ঘেঁষে হাঁটছিল আর বার বার ইচ্ছা করে তাকে ধাক্কা দিচ্ছিল। সায়ন্তিকা আর সহ্য করতে না পেরে যখনই লোকটাকে কিছু বলবে বলে তাকালো সে স্পষ্ট দেখল একটা অদৃশ্য হাত এসে তার পাশ থেকে লোকটাকে মারল এক ধাক্কা । লোকটা সিড়ি থেকে গড়িয়ে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল প্লাটফর্মে । সায়ন্তিকা চোখ বড় বড় করে তাকালো পড়ে যাওয়া লোকটার দিকে আর মনে মনে একটু অনুতপ্ত হল সে। ভাবল সে নিজেই কি লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল? ঠিক এমনি সময়ে তার অতি আদরের দাদুর গলার আওয়াজ ফিসফিস করে বলল দিদি ভাই ভয় নেই আমি আছি আমি থাকবো।