Rima Goswami

Romance Others

4.0  

Rima Goswami

Romance Others

গাঁদা ফুলের মালা

গাঁদা ফুলের মালা

4 mins
316


যখন রোজ রোজ ডিউটিতে যেতে হতো তখন খুব বিরক্ত লাগত , রবিবারের অপেক্ষায় থাকতাম । প্রকৃতির পরিবর্তন বা পথেই পড়ত ভিক্টোরিয়া মেমরিয়াল কোনটাই আমাকে টানতো না । আমি রোজনামচার জীবনে ছিলাম অতিষ্ঠ , বিরক্তি আমাকে গ্রাস করত । তার পর আজকের দিনটা কত আলাদা না আগের দিন গুলোর থেকে । কোন ডিউটি নেই , প্রত্যেক দিনগুলোই রবিবার । আজকের সাথে গত দিন গুলোর কি পার্থক্য জানিস ? সেদিন আমি সক্ষম ছিলাম আর আজ আমি অক্ষম । কথা গুলো একটানা বলে গেল ইচ্ছামতি তার এক্স বয়ফ্রেন্ড শ্রাবনকে । ইচ্ছামতি গভর্মেন্ট সার্ভিস কর্মী , রিসেন্ট এক্সিডেন্ট তার দুটি পা ছিনিয়ে নিয়েছে । এককালে যে ছেলেটা বেকার বাউন্ডুলে বলে ইচ্ছা তাকে ছুড়ে ফেলে ছিল আজ সেই এসেছে তার প্রিয়তমার খবর নিতে । সাহিত্য প্রবন ছেলেটা বিএড করে টেট পাস করে অপেক্ষমান চাকরির । ইচ্ছার মনে হয়েছিল শ্রাবণ কোনদিনই চাকরি পাবে না আর সে একজন চাকুরিতা ।


তার পর একদিন ব্রেকাপ হলো , আসলে কার ভালোলাগে দিনরাতের সাহিত্য চর্চা , কবিতার বর্ষা , কফি হাউসের আড্ডা ! আজ কাল উইন্ডো শপিং , মলে কোল্ড কফি , মাল্টিপ্লেক্স এ বসে আধা পর্ন মুভি এনজয় এগুলোই তো ট্রেন্ড ! শ্রাবণ ওসবের ধারে কাছেও যেত না । ভ্যালেন্টাইন ডে পালনে তার আপত্তি , অষ্টমীর দিন তার রেস্টুরেন্টে আমিষ খেতে আপত্তি , ইচ্ছার স্বল্প পোশাকে আপত্তি .... কত দিন ভালো লাগত ইচ্ছার ? শ্রাবণ ইচ্ছামতির জন্য এনেছে খাদির শাড়ি হট প্ল্যান্টের বদলে , গোলাপের বদলে মাথার খোঁপা তে সাজিয়ে দিয়েছে হলুদ গাঁদা ফুলের মালা । ইচ্ছামতির ভালো লাগেনি এসব , ও চেয়েছে হট এন্ড হ্যাপেনিং লাইফস্টাইল । ইচ্ছার কাছে সরকারী চাকরি আছে , বাবা মায়ের অগাধ সম্পত্তি আছে , পস ফ্ল্যাট আছে । শ্রাবণ চেয়েছিল ওসব ছেড়ে ইচ্ছা আর শ্রাবণ সুন্দরবন এলাকাতে গিয়ে থাকবে , ওখানকার মানুষদের জন্য কিছু করবে । ইচ্ছা বার বার বুঝিয়েছে শ্রাবণ চ্যারিটি বিগেন্স এট হোম ... তবে শ্রাবণ সেটা মানে নি । তাই ব্রেকাপ তো অবসম্ভাবি ছিলই ?


তার পর ইচ্ছার সাথে এই দুর্ঘটনা ঘটে যায় , যারা ওকে উস্কে ছিল চিল লাইফ স্টাইল এনজয় করার জন্য তারা কেউ একবারও আসেনি ওকে দেখতে । হুইল চেয়ারটা সম্বল করে ইচ্ছার দিনপাত হচ্ছে এই পস ফ্ল্যাট নামক জেল খানাতে । বড্ড আকাঙ্ক্ষা ছিল শ্রাবনের কোলে মাথা রেখে একটু বসার , সেই শান্ত সহজ দিনগুলোতে ফিরে যাবার কিন্তু সাহস হয়নি ওকে ফোন করার । শ্রাবণ যাই হোক সে তো ইচ্ছার মত পঙ্গু নয় , কেন আসবে সে ফিরে ওর জীবনে ?


ইচ্ছামতির সব ধারণা ভুল প্রমাণিত করে শ্রাবণ এলো ওর কাছে , ওর স্বাস্থ্যের খবর নিতে । ইচ্ছার এক্সিডেন্ট এর সময় শ্রাবণ ছিল সুন্দরবনের বিধবা গ্রামে । মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বা মীন ও কাঁকড়া ধরতে গিয়ে সুন্দরবনে বহু মানুষকে বাঘের পেটে যেতে হয়। বাঘের আক্রমণে ওই এলাকার বাসিন্দা দের মৃত্যুর জন্য বহু নারী বিধবা ওই গ্রামে । ওদের জন্য শ্রাবণ চেষ্টা করে কিছু করার আর সেই সময় ওদের কাছে থাকার কারণে শ্রাবণ জানতে পারেনি ইচ্ছার কথা । তার পর আজ ইচ্ছার কাছে এসে তাকে এভাবে দেখে বুক ভেঙে যাচ্ছে শ্রাবনের । বলব না বলব না করেও বলে ফেলে ও , আমি জানি ইচ্ছা তোর ভালো লাগেনা এই সব সাহিত্য চর্চা তবু আমি হলাম বাউন্ডুলের জাত । তোকে দেবার জন্য কিছুই আনতে পারিনি , যদি তুই রাগ না করিস তোকে আমি একটা কবিতা পাঠ করে শোনাতে পারি । আমি শিওর তোর শরীরের ক্ষতে প্রলেপ না লাগলেও মনের ক্ষত একটু হলেও সেরে উঠবে ।


ইচ্ছা এক চোখ জল নিয়ে বলে , তুই আমার মত বেয়াদপ কে তোর কবিতার বারি ধারায় স্নাত করবি শ্রাবণ ?

কেন করবো না আমার ইচ্ছামতি নদী ? এ শ্রাবনকে তুই ছেড়ে চলে গেছিলি পাগলী হয়ত তোর অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগেনি । আমি তো আমার ইচ্ছামতিকে কাল ও ভালোবাসতাম আজও ভালোবাসি । নদী পূর্ন বর্ষাতেই সুন্দরী কে বলেছে , শীতের রুক্ষতাতে ও যে তার রূপ মোহময়ী । পাগলী তোর পা দুটো গেছে তো কি হয়েছে ? আমার দুটি পা বইতে পারবে সারা জীবন তোর ওই কোমল দেহ পল্লবী খানি । কি রে দিবিনা অনুমতি ?


ইচ্ছা কিছুই বলতে পারে না , মুখ গুজে দেয় শ্রাবনের কোলে ।

শ্রাবণ কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করে .....

আমার বাদল দিনে অঝোর ধারায় তুই যে বয়ে যাস ,

আমার মনের ক্যানভাসে বং তুলিতে তোরই শুধু আশ ।

আমি সুর বদলাই , রং বদলাই ভুলতে না পারি তোরে ,

আমার সতকাহনের সুরের তরী তোরই তীরে ভেড়ে ।

আমি ভালোবাসি তোরে শুধু ভালোবাসি তোরে ,

আমার পাগল মনের অচিন পাখি তোরই সনে ওড়ে ।

ভালোবাসা ফিনিক্স পাখি , শেষ নেই যে তার ,

ইচ্ছামতির ধার ঘেঁষে তাই শ্রাবন দিনের বাস ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance