STORYMIRROR

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Romance Tragedy Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Romance Tragedy Thriller

একটি মেয়ে.. (পর্ব পাঁচ)

একটি মেয়ে.. (পর্ব পাঁচ)

6 mins
390


চঞ্চলের ঘুম ভাঙলো তখন বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। কত তা বুঝতে পারলো না,কারণ ঘর অন্ধকার। চঞ্চলের মনে পড়লো আজকে আলো না নিভিয়েই ও শুয়ে পড়েছি ও,তাহলে ঘর আঁধার কেন? মনে ভাবলো হয়তো লোডশেডিং হয়েছে। কিন্তু টেবিল ল্যাম্পের সুইচে হাত ছোঁয়াতেই বাতি জ্বলে উঠে। চঞ্চল অবাক না হয়ে পারে না, লোডশেডিং হয়নি তো, তবে কি বাতিটা নষ্ট হয়ে গেল নাকি।এই ভেবে তাড়াতাড়ি খাট থেকে নামার সময় টেবিল ঘড়িতে চোখ পড়তে দেখে সোয়া এগারোটা বেজে গিয়েছে। ঘরের বাতির দিক হাত পড়তে চমক লাগে আরেকবার, ঘরের বাতির সুইচ নেভানো। সে ভালো করে ভেবে দেখে ওর ঠিক মনে আছে ও বাতি নেভায় নি। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে আলো জ্বালালো চঞ্চল। দেখলো টেবিলে খাবার ঢাকা রাখা রয়েছে। চোখে মুখে জল দিয়ে খাবার খেতে বসলো। রুটি আর মাংস। ঠান্ডা হয়ে গিয়ে রুটিগুলো বেশ শক্ত হয়ে গিয়েছে।খিদে পেয়েছিলো, তাই খিদের পেটে খেয়ে নিলো। খেয়ে নিয়ে হঠাৎ কি মনে হওয়াতে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে ঘরের বাতিটা বন্ধ করে আগেরদিনের মতো জানালায় চোখ রাখলো।বাইরে কিছুই চোখে পড়লো না,বেশ জোছনা ছড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ করে মনে হলো একটা মেয়ে চুল ছেড়ে উঠোনের দিকে মুখ করে অর্থাৎ চঞ্চলের দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।


চঞ্চল বেশ অবাক হয়ে গিয়েছে, কিছুক্ষণ আগেই তো কাউকে সে দেখতে পায়নি, হঠাৎ করে কেউ আসলো কি করে? যেন মনে হলো হলো মাটি ফুঁড়ে বেড়িয়ে এসেছে মেয়েটি। সবচেয়ে অবাক লাগলো এই কথাটা ভেবে রাত বারোটায় একটা যুবতী মেয়ে ওমন করে একাকী দাঁড়িয়ে থাকবে কেন? সামান্য কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়েছে সে, হঠাৎ করে মনে হলো মেয়েটি জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে, চঞ্চল চমকে জানালার পর্দা ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে যেতেই সে অনুভব করে পেছনে কেউ যেন এসে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে কেন জানিনা চঞ্চলের ভয় লাগতে শুরু করে, টেবিল ল্যাম্পের হালকা হলদেটে আলোতে ঘরখানা কেমন অচেনা লাগতে থাকে। চঞ্চলের পেছনে তাকানোর সাহস হয়না। কিছুক্ষণ ওমনি করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে, বেশ কিছুক্ষণ পরে চোখ খুলতেই দেখে একটা মেয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মুখটা দেখা যায়না,চুল খোলা। চঞ্চল এতোক্ষণ নিজেকে সংবরন করে রেখেছিলো, এবারে চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। 


চঞ্চলের যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন সকাল হয়ে গিয়েছে। চঞ্চল দেখলো সে নীচে শুয়ে রয়েছে। সে উঠে বসলো সেখানেই, মাথাটা বেশ যন্ত্রণা করছিলো, হাত দিয়ে দেখলো ফুলে রয়েছে। এবারে চঞ্চল কিছুক্ষণ সেখানে বসেই কালকের ঘটনাগুলো ভাববার চেষ্টা করলো। ভাবতেই ওর ভয়ের পরিবর্তে খুব রাগ হলো মনে। সকালের আলোর সাথে সাথে কাল রাতের বিভীষিকা কেটে যাওয়াও হচ্ছে হয়তো সেই কারণ। চঞ্চলের মনে হলো এতোদিন যা ঘটনা ঘটেছে তা ওর কোনো কল্পনা বা স্বপ্ন নয়,এটা বাস্তব। ওই বাড়ির মেয়েটা কোনো গোপন পথ দিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করত, বাইরে দেখলে এমন ভাব করে যেন সে চিনতেই পারছেনা ওকে। চঞ্চল কিছু না ভেবে প্রথমে ওর ঘর দিয়ে সরাসরি ঢোকার চেষ্টা করে, কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় ঘুরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। প্রথম সে ওদিকে এসেছে। বাড়ি ভাড়া ঠিক করার সময়ও দরজার কাছে দাঁড়িয়ে করেছে। চঞ্চল চিৎকার করে বললো " বাড়িতে কেউ আছেন?"


চঞ্চল বেশ চিৎকার করে কথা বললো, চঞ্চলের চিৎকার শুনে ওই বাড়ির কাজে সাহায্য করা মাঝবয়সী মহিলাটি বেড়িয়ে এলেন সন্ত্রস্ত হয়ে।


অবশ্য আগে থেকে একে চিনে চঞ্চল, ওর ঘরে উনি খাবার পৌঁছে দিয়ে আসেন। তিনি বললেন " আপনি এখন এই সময়? "


তারপর কি ভেবে সাথে সাথেই বললেন " ও খাবার এখনো দেয়নি সেজন্য?"

চঞ্চল ওর কথার উত্তর না দিয়ে বললো " বাড়িতে আর কেউ নেই? "

মহিলাটি সংকোচের সাথে বললেন " না মানে দাদাবাবু তো বাজার করতে গিয়েছেন।"

" সে বুঝতে পারলাম, তোমার দিদিমণিকে ডেকে দাও।"

অবাক হয়ে সেই মহিলা বললেন "দিদিমণি!"

" হ্যাঁ দিদিমণি.."

মহিলা তবুও কিছু বললো না কিংবা গেলো না, চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।


চঞ্চল ক্ষেপে উঠে বললো " কি হলো দাঁড়িয়ে কেন? বলছি যে যাও গিয়ে ডেকে আনো।"


মহিলাটি বাড়ির ভেতরে চলে গেল, বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলেও যখন কেউ আসছে না দেখে চিৎকার করে ডাকতে যাবে,এমন সময় সাধারণ সালোয়ার পরনে একটি মেয়ে এসে দাঁড়ালো। চঞ্চল চিনতে পারলো কালকে রাস্তায় দেখা মেয়েটি। মেয়েটা চঞ্চলের দিকে একবার তাকিয়ে মুখটা ঢেকে নিলো। এবারে চঞ্চলের খুব অপমানিত মনে হলো,সে এগিয়ে এসে বললো " আপনি কি শুরু করেছেন বলবেন?"

মেয়েটি নিরুত্তর।

মেয়েটির চুপ থাকাটা চঞ্চলের রাগে ঘৃতাহুতির কাজ করলো, সে আরও ক্ষেপে গিয়ে বললো

" অদ্ভুত ভদ্রতা তো আপনার! রাতে এক রূপ, দিনে অন্য রূপ। মুখ আর মুখোশ বুঝি একেই বলে।"


এতোকিছু বলার পরেও চঞ্চল দেখলো মেয়েটি একইভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে, শুধু বার কয়েক ওড়নার ফাঁক দিয়ে চঞ্চলের দিকে চেয়েছে মাত্র। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটি বললো " আপনি কিসব বলে যাচ্ছেন, কিছুই তো বোঝা যাচ্ছেনা.."

চঞ্চল হাত তুলে বললো "আপনি থামুন, আপনাকে কিছু বলা হয়নি, যাকে বলছি সে ঠিক বুঝতে পেরেছে, তাই সে চুপ রয়েছে।"

এবারে একজন মাঝ বয়সী ভদ্রমহিলা ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বললেন " চুপ থাকা মানে মেনে নেওয়া না, চুপ মানুষ অন্য কারণেও থাকতে পারে। যাই হোক যে কথা বলতে এসেছ বলো"

এবারে চঞ্চল সংকোচে পড়লো, মায়ের বয়সী ভদ্রমহিলার সামনে এসব বলতে সংকোচ হলো। চঞ্চলকে চুপ থাকতে দেখে ভদ্রমহিলা বললেন "কি কথা বলছ না কেন? আপনার মেয়ে তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে শুনি তুমি বাড়ি বয়ে এসে এতো কথা বলছো?"

চঞ্চল বললো " সে আপনি নিজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করে নিন না কেন?"

" সে বাবা আমি যা নেওয়ার নেবো, তুমি যা বলতে আসছো সেটা বলে যাও।"

চঞ্চল কিছু না বলে বেড়িয়ে এলো, আর মনে মনে বললো " আজকে খুলে দেবো আপনার মেয়ে রূপ খানি প্রমাণ সহ।"

দরজায় দেখতে পেলো বাড়ির মালিককে, সাথে একটা বছর ছয়-সাতেকের একটা বাচ্চা। যাকে আগের দিন দেখেছে ওই মেয়েটির সাথে।

তিনি বিস্ময় এসে চঞ্চলকে দেখে বললো " বাবা এদিকে হঠাৎ, কোনো দরকার আছে? "

চঞ্চল খালি বললো " যার সাথে দরকার তাকে বলে দিয়েছি" বলে অন্য কথার সুযোগ না দিয়ে চঞ্চল চলে গেল সেখান থেকে।

চঞ্চলের ঘরে বসে ইচ্ছে হলোনা, স্নান সেরে না খেয়েই চলে গেল। 

সারাদিন কোনমতে কাটলো চঞ্চলের,দুপুর বেলায় কাল অজ্ঞানের সময় মাথায় চোট পেয়েছিল সেখানে বেশ যন্ত্রণা হলো। বিকেলের অফিস থেকে একটু আগে বের হয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য। ডাক্তার দেখিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বেজে গেল। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছিলো,আর ঘরে ঢোকার আগে ডাক্তারের চেম্বারে অপেক্ষা করার সময় বাড়ির ফোন সেরে নিয়েছিলো, তাই সেই নিয়ে ভাবনা নেই।তাই ওষুধ খেয়ে একটু গড়িয়ে নেওয়ার জন্য শুতেই ঘুমিয়ে পড়লো। ঠিক এগারোটার দিকে ঘুম ভাঙ্গলো চঞ্চলের, আজও ওর জন্য খাবার দিয়ে গিয়েছে দেখে বিস্মিত না হয়ে পারলো না।তবে ও মনে মনে একটি পরিকল্পনা করেই রেখেছিল,সেই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসলো না সে। পরিকল্পনা মতো সে তার ক্যামেরার স্ট্যাণ্ডে ওর সব সময়ের সঙ্গী ক্যামেরাটা আঁটকে দিলো। থালা উঠিয়ে দেখলো ডিম কষা, সুজি আর রুটি দিয়েছে। খেতে ইচ্ছে করলো না ওর।এই প্রথম ও খাবার নষ্ট করলো, চঞ্চল খাবার নষ্ট করা শেখেনি।একটু সামান্য কফি আর বিস্কুট খেয়ে ক্যামেরাটা চালু করে দিয়ে, আলো বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। তার আগে পূর্ব পরিকল্পনা মতো ওই বাড়িতে যাওয়ার সরাসরি ঘরের দরজাটা খুলে রাখলো। অবশ্য ওই দিক থেকে বন্ধ রয়েছে, ঠেলা দিয়ে পরখ করতে গিয়ে বুঝতে পারলো। আর বিছানায় আজকে কেনা বেশ শক্তিশালী টর্চখানি পাশে রাখলো। সময় এগিয়ে চললো, আর চঞ্চলের হৃদ স্পন্দটা বাড়তে লাগলো, আজ ভেবেই রেখেছে ও না ঘুমিয়ে সত্যের উদঘাটন করবে। সেজন্য অফিসে বলে এসেছে শরীর ভালো নেই, কাল নাও আসতে পারে সে। একটু হয়তো চোখ লেগে এসেছিল, এমন সময় সেই আগের দিনের মতো অনুভব করলো ঘরে কেউ এসেছে। তবে কিভাবে আজও বুঝতে পারলো না। কেউ যেন তারা সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দিলো, আজকে চঞ্চল চুপ করে শুয়ে রইলো। অন্য দিনের মতো আজকে সেই মানুষটা চঞ্চলের সাথে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে আসেনি তা চঞ্চল বুঝতে পারলো যখন সেই মেয়েটি চঞ্চলের বুকের উপরে বসলো। এবারে চঞ্চল একটু অন্যরকম অস্বস্তি অনুভব করলো, ঠিক জানেনা এই অস্বস্তির কারণ। হঠাৎ করে করে চঞ্চলের মুখের কাছে এগিয়ে এসে গলার হাত দিতেই চঞ্চল বুঝতে পারলো তার আশু বিপদ। সে সদ্য কেনা টর্চটা জ্বালিয়ে মুখে ফেলতেই চঞ্চল গগন বিদীর্ণ চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।


চলবে...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance