একটি ভৌতিক অভিজ্ঞতা
একটি ভৌতিক অভিজ্ঞতা
-"ঠিক দুপ্পুরবেলা
ভুতে মারে ডেলা"
না দুপ্পুরবেলা ঠিক নয় তবে সম্প্রতি এই কলমচির কপালে ভুতের ডেলা ইয়ে মানে ভুতের দেখা জুটেছিল। ব্যাপারটা যে মারাত্মক সেটা বুঝতে কিন্তু সময় লেগেছিল পাক্কা একদিন আর ব্যাপারখানা বুঝতে পেরে এমন ব্যোমকে গিয়েছিলাম যে এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা নিয়ে যে চমৎকার একখানা গপ্প মানে ইয়ে সত্যি ভুতের গপ্প লেখা যায় তাই মাথায় আসেনি। যাইহোক এক্কেবারে প্রথম থেকে শুরু করি তবে।
ঘটনাটা বর্ষবরণের রাতের,আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করি রাত বারোটা নাগাদ একটু বেড়াতে যাব।বেড়াতে মানে ওই আমাদের মফস্বল শহরের একটা চক্কর খাবো আরকি।সেদিন সম্ভবত ছিল পূর্ণিমার রাত প্রায় নিঝুম শহরে শীতের রাত তায় পূর্নিমা!আমাদের যেন ভুলোতে পেয়ে বসলো।হুজুগের বশে চেপে আমাদের গাড়ির স্টিয়ারিং এগিয়ে চলল অজানার উদ্দেশ্যে।গাড়িতে ঠাট্টাতামাসা চলছে আর ফুল ভলিউমে চলছে-"চলা ম্যায় চলা লে চলা মুঝে রাস্তা"
হাইওয়ের চোখরাঙানী উপেক্ষা করে ক্রমে আমরা এসে পরলাম অরণ্যের কাছাকাছি। সেই রাস্তায় আমাদের গাড়িটার আগে আগে চলছিল একটা মুরগি বোঝাই ছোট ট্রাক, ট্রাকের পেছনে রেডিয়ামের লাল আলো।আমার মনে হচ্ছিল সেই শীতের রাতে জ্যোৎস্না মাখা অরণ্যরাজি যেন দু'হাত বাড়িতে আমাদের ডাকছে। যেন উত্তুরে হাওয়ায় ভেসে আসছে তাদের ফিসফিস, তারা যেন বলছে
-" এসো এসো বাইরে এসো..বন্ধ গাড়ির মধ্যে বসে কি আমার শোভা বুঝবে? বাইরে এসে এই জোছনা ধোয়া রাস্তায় বেরিয়ে দেখো..এস.."
একসময় আমাদের গাড়ী আরও গহীন অরণ্যে এসে পরে।নেটওয়ার্ক চলে যাওয়ায় গান বন্ধ হয়ে গেছে ততক্ষণে, আমরা কেউই তেমন গল্প করছিলাম না আর চারপশের অদ্ভুত গা ছমছমে প্রকৃতি আমাদের মূক করে দিয়েছিল এক্কেবারে। শব্দ বলতে শুধু পাশ দিয়ে চলে যাওয়া দু একটা গাড়ির হুশহাশ আর ঝিঁঝিঁপোকার একটানা ডাক।গাড়ি চলতে চলতে অকস্মাৎ কি হলো বুঝতে পারলামনা আমাদের মনে হলো যেন হঠাৎই একটা ঘন কুয়াশার চাদর যেন আমাদের গাড়িটাকে আঁকড়ে ধরলো! অথচ তার এক মুহুর্ত আগেও আমাদের চারপাশ ছিল একদম পরিষ্কার, স্বচ্ছ।একই ঘটনা একটুবাদে আবার ঘটলো।জানিনা কেন গা টা ছমছম করছিল। গাড়ি যেতে যেতে একটা প্রাচীন মন্দিরের সামনে যায় এরপর আমরা অরণ্যের প্রাচীন নিয়মকে মান্যতা দিয়ে সকলেই গাড়ি থেকেই সেই জঙ্গলের দেবতাকে প্রণাম জানালাম আর জানিনা কেন তবে আমার স্থির বিশ্বাস সেই রাতে অক্ষত শরীরে আমরা সেই দেবতার কৃপাতেই ফিরেছিলাম। যাইহোক মন্দির ছাড়িয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে গেছি ততক্ষণে হঠাৎ খেয়াল করলাম রাস্তার বামদিকে একটা বছর বিশ- বাইশের মেয়ে লাল জ্যাকেট পরে দাঁড়িয়ে আছে যেন!মুখটা অন্যপাশে ফেরানো। অত রাতে ওইভাবে একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে ছিল কেন জানিনা তবে পরমুহূর্তেই আর মেয়েটাকে খুঁজে পাইনি।মেয়েটা কোথায় গেল সেটা ভাবতে ভাবতেই মোবাইলে দেখি রাত দুটো এক বাজে, আমার বন্ধুদের মোবাইলেও তাই দেখায়। বেশ অনেকটা রাত হয়ে গেছে দেখে আমরা ঠিক করি এবার ফেরা যাক।সেই কথামতো গাড়ি ঘুরিয়ে নেওয়া হয় ক্রমে জঙ্গলের সীমা শেষ হয় আর ঠিক তখনই মোবাইলের দিকে চোখ পড়তে দেখি বাজে রাত একটা সাঁইত্রিশ। কেন হলো কিভাবে হলো জানিনা, তবে কি কোনও অতিলৌকিক শক্তি সাবধান করতে চেয়েছিল আমাদের সেই রাতে? বলতে চেয়েছিল
-" আর এগিও না পথিক, এই রাস্তাটা রাত-বিরেতে জ্যান্ত হয়ে ওঠে..ফিরে যাও..ফিরে যাও.."
আমরা সশরীরেই ফিরে এসেছিলাম।আর সকলেই ভয় পেলেও কেউ কারো সাথে এই নিয়ে আলোচনা করিনি সেই রাতে।ঘটনার শেষ এখানেই নয়,পরের দিন রাতে ফেসবুকে ছবি দেব বলে আগের দিনের তোলা ছবি আর ভিডিও গুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমাদের গাড়ির সামনে দিয়ে চলা সেই মুরগি বোঝাই ট্রাকটা কোথাও নেই অথচ আমার পরিষ্কার মনে আছে আমি সেই ট্রাকটা সামনে থাকার সময় ভিডিও করেছিলাম আমার বন্ধুরাও করেছিল....অথচ কোনও ভিডিওতে গাড়িটার ছায়াও আসেনি...কেন?? এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ খেয়াল হয় গতরাতে সেই প্রাচীন মন্দির পার করার পর গাড়িটাকে আমরা আর কেউ লক্ষ্যই করিনি।অথচ আমাদের গাড়ি এক মুহুর্তের জন্যেও থামেনি কোথাও আর সামনের গাড়িটার গতিবেগও কমই ছিল আর সবচেয়ে বড় কথা সেই রাস্তাটা নাকবরাবর লম্বা ছিল কোনও গলিতে ঢুকে যাবার কথা নয়। তা হলে কি হলো? জলজ্যান্ত একটা গাড়ি স্রেফ উবে গেল মাঝরাস্তা থেকে? ওই মেয়েটাই বা কে? কি চাইছিল ও? আর সেই কুয়াশা আর ঘড়ির দেখানো ভুল সময়? কি হয়েছিল আমাদের সাথে সেই রাতে বা বলা ভালো কি হতে চলেছিল? জানিনা আমি বা আমার বন্ধুরা তবে সেইরাতে একটা ঘোর আমরা টের পেয়েছিলাম সকলেই। আমরা এখন সম্পুর্ন বিশ্বাস করি রাতেরবেলায় ওই জঙ্গল জেগে ওঠে,জ্যান্ত হয়ে ওঠে কি যেন বলতে চায় ফিসফিস করে।

