Shatarupa Nagpaul

Romance Classics

4.0  

Shatarupa Nagpaul

Romance Classics

সে

সে

9 mins
776



অফিস থেকে বেরোতে দেরী হয়ে গেল আজ।শেষমুহুর্তে নুতন প্রেজেন্টেশন চলে এল একেই মার্চমাস তার ওপর সামনেই একটা বড় প্রোমোশন হবার চান্স আছে তাই আর কাজ ফেলে রাখলাম না। এখন শেষ বসন্ত চলছে বাতাসে গরমভাব প্রখর হচ্ছে ধীরেধীরে তবে সন্ধ্যার পরে প্রায়ই একটা ঠান্ডা হাওয়া ছাড়ে।আজও তেমনি ছেড়েছে তাই বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলাম খোশমেজাজে গুনগুন গান গাইতে গাইতে।পাড়ায় ঢোকার মূহুর্তে চমকে উঠলাম।তপাদারদের বাড়িতে আলো জ্বলছে যে! কে এল এতদিন পর? টিংকা দা তো সেই ঘটনার পর আর দেশে ফিরবেনা জানিয়েছিল ।কাকু কাকিমা দুজনেই গত হয়েছেন প্রায় বছর দুয়েক হল।বাড়ির পুরানো চাকর রামদিনের যাবার কোথাও ছিলনা তাই টিংকাদার ইচ্ছায় সে এই বাড়ির দোতালার একটা ঘরে থাকে বাড়িঘর দেখাশোনা করে তবে নীচতলায় নামেনা কখনও।নীচতলায় আলোও জ্বলেনা এখন আর।তবে? রামদিন কি গ্রাম থেকে কোনও পরিজনকে নিয়ে এসেছে মনিববাড়ি ভোগদখলের উদ্দেশ্যে? এসব সাতপাঁচ ভাবছি হঠাৎ একটা বহু প্রাচীন মিষ্টি গন্ধ আমার নাকে এল।আমি মনে করতে চাইলাম এই গন্ধ এর আগে কোথায় পেয়েছি? এত চেনা এত প্রিয় কীসের গন্ধ এটা? এই গন্ধ যার শরীর থেকে আসত সে তো বহু আগেই..না না সে কিছুতেই হতে পারেন..আমার একটা চাপা অস্বস্তি হতে লাগলো।জোড় করেই আমি রাস্তা চলতে লাগলাম মাথাটা ঝিমঝিম করছিল আমার।হঠাৎই দেখি কখন যেন বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছি। কলিংবেল বাজাতেই মিষ্টু দরজা খুলে দিল। ক্লান্ত বিদ্ধস্ত চেহারা কিন্তু চোখেমুখে নুতন মাতৃত্বের দীপ্তি।একটা কুর্তি পাজামা পরনে চুল চুড়ো করে বাঁধা হাতে দুধের বোতল কি নরম কি অপূর্ব দেখাচ্ছে ওকে! আমার ভারী হয়ে আসা মনটা মিষ্টুকে দেখেই অর্ধেক ভালো হয়ে গেল তারপর ঘরে ঢুকে হাতমুখ ধুয়ে মিষ্টুর এনে দেওয়া কফি খেতে খেতে আমার ছ'মাসের ছোট্টমেয়েটাকে কোলে নিয়ে বাকিটাও ভালো হয়ে গেল। মিষ্টু তুতানকে ঘুম পারাতে গেলে ফুরফুরে মনে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।গিয়ে দেখি মা নিয়মমতো একবাটি মুড়ি নিয়ে বারান্দায় বসে আছে চোখটা তপাদারদের বাড়ির দিকে।আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ঘরঘরে গলায় বলল –“ও আবার ফিরেছে রে খোকা..”

-“কে ফিরেছে মা?”

-“আভা।আভা আবার ফিরেছে..আমার মাথা খা খোকা মনে রাখিস তোর কিন্তু এখন একটা পরিবার আছে..”

-“কে বলল তোমায় আভা ফিরেছে?”

-“এসেছিল।আমায় প্রণাম করল বউমার সাথে গল্প করল তুতানকে আদর করে গেল..”

-“ও। কিছু বলল? মানে কিছু জিজ্ঞেস করল?..”

-“না বলেছে আবার আসবে..থাকবে ক'দিন এখন বাড়ি বিক্রির ব্যাপারে এসেছে..”

-“টিংকা দা নিতে দেবে ওকে বাড়ির ভাগ?”

-“টিংকার সাথে নাকি এখন কথা হয় ওর...ও ই নাকি বলেছে..”

-“ও”।

-“বউমা আর তুতানের কথাটা মাথায় রাখিস বাবা..”

-“ধুর তুমি যে কি বলনা মা....সেই কোনবয়সের.. এখন কি আর সেসব..”

মা আর কিছু বলল না ধীরপায়ে উঠে গেল।আমিও আমার স্নায়ুর উত্তেজনা যথাসম্ভব কমিয়ে ঘরে চলে এলাম।তুতান ততক্ষণে ঘুমে কাদা।মিষ্টি এই অবসরে মুখে নাইটক্রিম ঘষছে আমাকে দেখে কৌতুকের গলায় বলল 

-“কীগো তোমার যে এমন সুন্দরী একটা বান্ধবী আছে এতদিন বলনি তো আমায়!?”

-“ক্ক কে? কার কথা বলছ?”

-“আভাদির কথা।আজ এসেছিল তো এখন নাকি ক'দিন এখানেই থাকবে..খুব মিষ্টিমেয়ে কিন্তু যাই বল..”

-“ও। কি বলল?”

-“কত কী বলল..তোমার নাকি একদিনও ওকে নাহলে চলতোনা..সব সময় যাতায়াত ছিল..আরও কত কী..”

-“হুম তা ছিল..”

আর কথা হল না সেরাতে।সারাদিনের ক্লান্ত মিষ্টু মেয়েকে ঘুমোতে দেখে আলো নিভিয়ে শুয়ে সাথেসাথে ঘুমিয়ে পরল আর আমি রইলাম জেগে।টের পেলাম স্নায়ুর উত্তেজনা চরমে উঠে গিয়েছে। আভা আমার আভা এত কাছে আমার মনে হচ্ছিল দৌঁড়ে গিয়ে ওদের বাড়ির দরজায় গিয়ে দাঁড়াই একবার অন্তত দেখে আসি আভাকে! কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই আমার পূর্বকৃত পাপের কথা স্মরণ হয়ে গুটিয়ে এতটুকু হয়ে গেলাম।আভা কি আদৌ আমার সাথে আর কখনও কথা বলবে? আমারই কি সাহস হবে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াবার? হঠাৎই একটা মিহি গানের সুর ভেসে আসলো।গ্রামাফোনের সুর।আভা খুব ভালোবাসতো গ্রামাফোনের গান।


দিন কাটতে লাগলো।আমি যতটা পারা যায় ব্যস্ত থাকতে লাগলাম কাজে।মিষ্টুর কাছে টুকটাক খবর পেতাম আভার।মাঝেমধ্যে নাকি আসে এবাড়িতে।তবে সেদিনের পরে মা আর কিছু বলেনা।কি যেন ভাবে বসেবসে।হাজার চেষ্টা করেও আভাকে এড়ানো গেলনা। একদিন বিকেলবেলায় ছাদ দিয়ে বেড়াচ্ছি তুতানকে নিয়ে হঠাৎই চোখ চলে গেল আভাদের ছাদের দিকে।দেখি আভা আমার দিকেই চেয়ে আছে।মুখে পুরানো মিষ্টি অথচ রহস্যময় হাসি।আমার গলা শুখিয়ে আসছিল হাত-পা ঘেমে যাচ্ছিল কিন্তু আভা সহজ গলায় বলল

-“কিরে এঁচোড়ে পাকা বাবা হয়ে দিব্বি ঘ্যাম হয়েছে না? পাত্তা দিচ্ছিস না যে বড়?”

-“ন্ন না.. কই আমি তো..”

-“থাক জানা আছে তোকে...তুতান সোনা কি করে?”

-“এই ওর দুধ খাবার সময় হয়েছে রে..আসি..অন্যসময় কথা হবে..”

-“বেশ! তাই যেন হয়..”

আভা আর আমি প্রায় পিঠাপিঠি। আমাদের বাড়ির দু-চারটে বাড়ি পরেই ওদের বাড়ি।ছোটবেলায় কত খেলেছি একসাথে।তারপর কৈশর পার করে যখন যৌবনে পা দেব দেব করছি তখন সেই উচাটনের সময় আমি আভার প্রেমে পরেছিলাম।যে সে প্রেম নয় আমি আভার জন্যে সব করতে পারতাম।প্রেমে পরার পর আমি অন্তত বার দশেক আভাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলাম আর প্রতিবার প্রবল উপেক্ষা আর উপহাসের মাধ্যমে আভা আমায় না করেছিল।কখনও বলতো –“তোকে ঠিক প্রেমিক মনে হয়না অরিন..” আবার কখনও বলত-“বেশ।বিয়ে করে খাওয়াবি কি?” ইত্যাদি।এভাবেই দিন কাটছিল।আমি আর আভা দুজনেই তখন কলেজের ফাইনাল ইয়ারে হঠাৎ একদিন শুনলাম আভার নাকি বিয়ে।পাত্র ইঞ্জিনিয়ার। প্রেমের বিয়ে নাকি প্রায় মাস আষ্টেক ধরে জানাচেনা।পাত্র বিদেশে যাবে তাই যাবার আগে বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়।আভার প্রতি প্রেমে কামে অন্ধ আমি এই খবর পেয়ে জ্বলে উঠেছিলাম।সেদিনই কলেজ ফেরার পথে আভার রাস্তা আটকেছিলাম

-“কিরে ভালো পাত্র পেয়ে আমায় লাথি মারলি?”

-“কি বলছিস এসব অরিন! তুই আমার বন্ধু তোকে..”

-“বটে বন্ধু? তাহলে আমার তলে তলে প্রেমটা করলি অথচ জানালি না?”

-“কি করব..তুইই তো ক্ষেপে উঠলি প্রেম প্রেম করে.. ইন্দ্রর কথা শুনে যদি পুরো..”

-“আমি তোকে অন্য কারও হতে দেবনা আভা..কিছুতেই না..”

-“তোর যা খুশি কর গিয়ে..ইন্দ্র আমায় কোনওদিন ছেড়ে যাবেনা.. আমাদের বিয়েটা হচ্ছেই..”।


বাড়ি ফিরে রাগে দু:খে অপমানে পাগল আমি একটা মারণখেলার চিত্রনাট্য লিখে ফেললাম।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এমন কিছু করব যাতে আভার বাবা মা নিজে থেকে হাতেপায়ে ধরে আমার সাথে ওর বিয়েটা দিয়ে দেন আর আভার ওর প্রতি ইন্দ্রর প্রেমের গুমোরও ভেঙে যায়। বাড়িতে বাবার এক বন্ধুর এনে দেওয়া বিদেশি ক্যামেরা ছিল সেটা বের করে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন কোন থেকে আভার অজান্তে লুকিয়ে লুকিয়ে ওর ছবি তুলতে লাগলাম।তারপর একদিন সারারাত বসে বসে আমার কম্পিউটারে আভার যাবতীয় ছবিকে বিভিন্ন অশালীন ছবির সাথে জুড়ে দিতে লাগলাম কয়েকটা ছবিতে মনে করে আমার ছবিও জুড়লাম যাতে মনেহয় আভার সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আমিই ছিল।তারপর আভার আশীর্বাদের দিন কৌশলে ওদের বাড়িতে সেসব পাঠিয়ে দিলাম।তারপর যা হবার তাই হল।ইন্দ্রের বাড়ির সকলে প্রত্যাশা মতই আভার বাবা মা কে যাচ্ছাতাই অপমান করে বিয়ে ভেঙে দিয়ে গেলেন।আভা অনেক কাঁদলো আমিও লোক দেখানো কান্নাকাটি করে বোঝাতে চাইলাম যে কে বা কারা এমন নোংরা ষড়যন্ত্র করেছে তা আমিও জানিনা এবং এই ঘটনায় আমিও যারপরনাই অপমানিত।এসব করার আগে নিজের হাতে বাবার ক্যামেরা আর আমার কম্পিউটারটা নষ্ট করে দিয়েছিলাম।আভার বিয়ে ভাঙল তবে তপাদার কাকু কাকিমা আভাকে বিয়ে করার জন্যে আমার পায়ে পড়লেন না।আভার দাদা টিংকা দা জানিয়ে দিল সে আর দেশে ফিরবেনা বোনের এই অন্যায় আচরণে অপমানিত সে,ইন্দ্র টিংকাদার জুনিয়র ছিল অফিসে। ওর সুত্রেই আভার সাথে ইন্দ্রর পরিচয় হয়েছিল।এর কিছুদিনের মাথাতেই আভা বাড়ি ছেড়েছিল।কোথায় গেল কেন গেল কিচ্ছু জানা গেলনা। হাজার লোকের হাজার বঁাকা কথা অপমান মাথায় নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল আভা।তপাদার দম্পতি আমরণ চরম নি:সঙ্গতায় কাটিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন।ততদিনে আমার বাবাও গত হয়েছেন।আমি চাকরি পাবার পর বিয়ে করেছি আজ চারবছর।সদ্যবাবা হয়েছি।মা বউ বাচ্চা নিয়ে আমার সুখের সংসার।আভার সাথে ওইসব আপত্তিকর ছবিতে থাকার পরও আমার এই সুখী জীবন পেতে অসুবিধে হয়নি কারণ আজও সকলে বিশ্বাস করেন সোনার আঙটি বাঁকা হয়না।আমার এই পাপের কথা কেউ জানেনা কেউ না শুধু মা বাদে আসলে আভার বাড়ির লোকজন পুলিশে এফ আই আর করলে আমি ভয় পেয়ে সব কথা স্বীকার করি মায়ের কাছে।সবশুনে মা’ই আমায় বাবার ক্যামেরা আর কম্পিউটার নষ্ট করে দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।পরে আর তেমন জোরালো তদন্ত হয়নি আর আশ্চর্যকথা আভা একবারও পুলিশের কাছে আমার ওকে প্রেমপ্রস্তাব দেওয়া ও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কথা বলেনি তাই কারও সন্দেহও হয়নি শুধু আমার মা'ই যেন কেমন হয়ে গেলেম তারপর থেকে সবসময় ভয় দুশ্চিন্তা গ্রাস করে থাকে মা'কে। যাই হোক আমার একান্ত নিস্তরঙ্গ সুখী জীবনে ফিরে এসে একপ্রকার ঝড় তুলে দিয়েছে আভা। অসম্ভব টান অনুভব করছি আভার প্রতি । অসহায় লাগছে।

প্রায় মাসদুয়েক কেটে গেছে।এই ক'দিনে আভা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে।ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেয় মিষ্টুর সাথে তুতান কে খাওয়ায় ঘুম পারায় মায়ের হাঁটুব্যাথা হলে মালিশ করেদেয় নির্দ্বিধায় আর এসব কিছু থেকে অবসর পেলেই আভা ছুট্টে চলে আসে আমার বুকে।ওদের বাড়িতে বা মিষ্টু আর মায়ের চোখের আড়ালে আমরা মিলিত হই।নিয়মিত।প্রতিবার মিলনের পরে আমি প্রতিজ্ঞা করি আর কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করবনা মিষ্টুর সাথে,ওকে যে আমি ভালোবাসি!কিন্তু প্রতিবার আভা নিজের খাজুরাহো মূর্তি আমার চোখের সামনে তুলে ধরে আমায় অসহায় করে দেয়।আমি আভাতে ডুব দিতে বাধ্য হই।আভা আমাদের ছেলেবেলার অনেক গল্প করে কিন্তু কখনও সেই ঘটনার কথা মুখে আনেনা আমারও সাহস হয়না।আভাকে দেখে মনেহয় ও যেন আমায় ধরা দিতেই ফিরে এসেছে বাড়ি বিক্রিটা যেন নিতান্তই নগণ্য আমি বুঝি আমি ধীরেধীরে মিষ্টু তুতান আর মায়ের থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি একটা মিথ্যে ঢাকতে হাজার মিথ্যে বলছি কতদিন হল তুতান কে আদর করিনা মিষ্টুর সাথে হাসিঠাট্টাও হয়না আর মা যেন কেমন অদ্ভুৎ চোখে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে মা'র কাছে কি সব স্বীকার করব!? নাহ থাক, আমার পূর্বকৃত পাপের ভার মা আজও নিশব্দে বইছে তাঁকে আর নাহয় এইবয়সে আর নূতন করে.. যাই হোক দিন কাটতে থাকে।

বর্ষাকাল।এক বৃষ্টিমুখর দুপুরে আভাদের বাড়িতে আমার বক্ষলগ্না হয়ে শুয়েছিল আভা।আভার চোখেমুখে তখনও লেগেছিল কিছুক্ষণ আগের উদ্দাম প্রেমের পরাগরেণু।আমি পুরোপুরি নি:স্ব হয়ে গেছি এতদিনে।আমি আভাকে ছাড়া আর কিচ্ছু ভাবতে পারিনা,আমি একইসাথে আভাকে প্রচন্ড ভালোবাসি আর ভয় পাই।আমি জানি আভা আমাদের প্রতিটা গোপন মুহুর্ত ক্যামেরা বন্দি করে রেখেছে গোপনে।যে কোনওদিন ও মিষ্টুর সাথে হাসিমস্করা করতে করতেই হয়তো মেলে ধরবে আমাদের যৌথ ছবি বা ভিডিও।সমস্যা হল আভার নিষ্পাপ মুখ অনর্গল কথা উদগ্র প্রেম কামে জর্জরিত আমি আজ অবধি সবটা বুঝেও সাহস করে ওরসাথে এই বিষয়ে কোনও কথা বলতে পারিনি।আমার বারবার ইচ্ছে হয়েছে চেঁচিয়ে বলে দিই-

-“ আমি তোর সব প্ল্যান ধরে ফেলেছি আভা..তুই আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে এসব করছিস তো তোর বিয়ে ইন্দ্রর সাথে হতে দিইনি বলে!?” কিন্তু বলে উঠতে পারিনি।আমার গলা শুখিয়ে এসছে বারবার হাত-পা ঘামে ভিজে উঠেছে। হঠাৎই আভা উঠে বসে বিছানা থেকে তারপর খুব স্বাভাবিক গলায় বলে-

“ তুই আমাকে এখনও এত ভয় করিস অরিন?”

-ম্মা..মানে আশ্চর্য ভয় করব কেন?”

-“ আমি টের পাই তুই ঘনিষ্ঠ সময়েও আতঙ্কে থাকিস..অমনোযোগী হয়ে যাস..”

-“কই নাতো..ভয় করব কেন? আমি তো তোকে ভালোবাস..”

-“না অরিন তোর মুখে ওই কথা মানায় না..তুই কোনওদিন কাউকে ভালোবাসিসনি বিশ্বাস কর.. তুই শুধু নিজেকে নিজের ইগোকে স্যাটিসফাই করতে চেয়েছিস বরাবর..আমাকে যদি ভালোবাসতি অরিন তাহলে ওভাবে আমার অপমান হতে দিতিনা..নিজের হাতে তুই আমাকে একঘর মানুষের সামনে নগ্ন করেছিলি সেদিন যাতে আমার বিয়েটা না হয় আমার শরীর অন্য কেউ দখল করতে না পারে...কি সত্যি না বল!?”

-“তুই সব জেনেও এতদিন কাউকে বলিসনি কেন?”

-“আমি তোকে ক্ষমা করতে চেয়েছিলাম অরিন.ইন্দ্র আমাকে নিজেকে প্রমাণ করার একটা সুযোগ দেয়নি আমি চেয়েছিলাম তুই অন্তত একটা সুযোগ পাস..ভেবেছিলাম একটা সুযোগ পেলে হয়তো তুই বদলে যাবি.. কিন্তু তুই তো নিজে মেয়ের বাবা হয়েও বদলালি না আগের মতই লোভী রয়ে গেলি..”

-“তুই প্রোভোক করিস নি আমায়!?.সব আমার দোষ?”

-“আমি প্রোভোক করলেই তুই তাতে পা দিবি? তুই না দাবী করতি মিষ্টুর কাছে তুই ওকে তোর সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসিস?এই তোর সর্বস্ব? এত ঠুনকো তুই অরিন?”

-“ও তুই প্রতিশোধ নিতে এসেছিস তো?”

-“না ঠিক প্রতিশোধ না জানিস..তবে আমার মনেহয় আমার মিষ্টুকে জানানো উচিৎ সব মেয়েটা পাগলের মত ভালবাসে তোকে ওর জানা উচিৎ ও কার জন্যে..”

-“তোর পায়ে পরি আভা আমার এই সর্বনাশ করিসনা...আমি..”

-“এতক্ষণে হয়তো মিষ্টু আমার পাঠানো এম এম এস গুলো,ছবিগুলো সব পেয়ে গেছে...হয়তো স্বামীর প্রেমলীলা দেখে এতক্ষণে ফ্যানের দড়িতে..”

আভার কথা শেষ হয়না আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় উর্ধশ্বাসে দৌঁড়তে থাকলাম।মাত্র পাঁচমিনিটের রাস্তা পার করতে আমার যেন একযুগ লেগে গেল। বৃষ্টি তখনও থামেনি।বাড়ি ফিরে দেখি মিষ্টু কোথাও নেই মা নিজের ঘরে ঘুমিয়ে তুতানকে নিয়ে আমার হাত পা অবশ হয়ে আসে আমি পাগলের মত মিষ্টুকে ডাকতে থাকি। আমার হাঁকডাকে স্নানঘর থেকে ভিজে গায়েই বেড়িয়ে আসে মিষ্টু এসেই অবাক হয়ে বলে

-“কি গো কী হল?”

-“তোমার মোবাইলটা কোথায়..”

-“ওই তো টেবিলে কেন গো?”

-“না কিছুনা এ এমনি..”

মিষ্টু চেঞ্জ করতে গেলে আমি অতিসন্তর্পনে ওর মোবাইলটা নিয়ে পাতিপাতি করে যখন সব ছবি ভিডিও ঘাটছি তখন আমার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে।আভার।আভা লিখেছে-

-“আমার বাড়ি থেকে তোর বাড়ি অব্ধি তুই যে দৌঁড়টা দিলি সেই দৌঁড়টা আমার সেদিনের ভেঙে যাওয়া আশীর্বাদের দিন থেকে শুরু হয়েছে...আমি তোর চোখে একবার সেই অপমান সেই লজ্জাটা দেখতে চেয়েছিলাম যেগুলি নিয়ে আমি বাড়ি ছেড়েছিলাম..বারবার সুযোগ কিন্তু সবাই পায়না অরিন আমি আবার তোকে ক্ষমা করলাম ...আর কখনও মিষ্টুর বিশ্বাস ভাঙিসনা”। 

সেদিনের পর আর কেউ কখনও আভাকে খুঁজে পায়নি।যেভাবে হঠাৎ এসেছিল সেভাবেই যেন উধাও হয়ে গেল ও এতদিন কোথায় ছিল কোথায় গেল কেউ বলতে পারলনা।আমার ক্ষমা করে সারাজীবনের মত পাপের আগুনে জ্বালিয়ে দিয়ে গেল আভা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance