এ মনে শুধু তুমি
এ মনে শুধু তুমি
কালকের রাত্রের পার্টির পর শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল রনিতের, তারপর কালকে নিজের সাফল্যের আনন্দে ড্রিংকসের পরিমাণ বেশি হয়ে গেছিল তাই কখন.... যে... ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে তার কোনো খেয়াল নেই রনিতের!আদৌ ও.... নিজে ঘরে আসতে পেরেছিল নাকি?কেউ ওকে ধরে নিয়ে এসেছিল সেটাও মনে নেই!!!! রনিত মাথায় চাপ দিয়ে মনে করার চেষ্টা করতে লাগল কাল রাতের ঘটনা, কিন্তু!!কোনো লাভ হলোনা.... বরং মাথা ধরাটা যেন আরও বেড়ে যেতে লাগল। রনিত মনে মনে ভাবলো না......আর দেরী করে লাভ নেই!!!! অনেক বেলা হয়ে গেছে বরং ঝটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে নিই, না...... হলে মাথা ধরা ছাড়বেনা। যেমন ভাবনা ঠিক তেমন কাজ। ঝটপট বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রনিত নিজেকে নিজেই মনে মনে কংগ্রেচুলেশন জানালো, আর মুখ ফুটে বলে উঠল তুই....পেরেছিস রনিত তুই.... পেরেছিস, শেষ পর্যন্ত সবদিক থেকে তোর জিত হয়েছে।
রনিত একটা ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে দীপালির ঘরের দিকে গেল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নক করল কিন্তু কোন রকম সাড়া শব্দ পেলনা তাই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়ল। কিন্তু ঘর একদম পরিপাটি অথচ দীপালি নেই!!!! রনিত ভাবলো দীপালি হয়তো ওয়াশরুমে গেছে তাই সেই দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল না.,, সেখানেও কেউ নেই!!!!! রনিত ব্যালকনির দিকে পা....বাড়ালো, না.... সেখানেও কেউ নেই!!!!! রনিত মনে মনে ভাবল দীপু তাহলে নীচে আছে, অনেক বেলা হয়ে গেছে মনে হয় ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। রনিত মনে মনে বলে উঠল আজ তোমার আমার মধ্যে তৈরী হওয়া সমস্ত দুরত্ব আমি মিটিয়ে দেব, তোমার সমস্ত অভিমান ভাঙ্গিয়ে আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে ভরিয়ে দেবে। আজ থেকে শুরু হবে আমাদের বিবাহিত জীবনের পথ চলা। যতই আমাদের বিয়ের পাঁচটা বছর পার হয়ে যাকনা কেন। আজ আমি এত বছর পর তোমাকে মন থেকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করবো। এতদিন ধরে আমি যে...... পরীক্ষা দিয়ে চলছিলাম সেই পরীক্ষায় আমি সব দিক থেকে সফল হয়েছি। আর আমার এই সাফল্যের পিছনে অনেকটা অংশ জুড়ে আছ তুমি দীপু।
এইসব কথা ভেবে মুচকি হাসি হেসে রনিত নীচে নামতে লাগল। বিশাল বড় এই বাড়ি, এককথায় একে বাড়ি নয় প্যলেস বা রাজপ্রাসাদ বলা উচিত। এই বাড়ি পাঁচ বছরের বিবাহবার্ষিকির উপহার হিসাবে রনিত দীপালিকে দিয়েছে। আর এই বাড়ির নাম দিয়েছে "ভালোবাসার নীড়।" রনিত নীচে এসে বাড়ির সমস্ত সার্ভেন্টদের দেখতে পেল ওরা ব্রেকফাস্টের জন্য টেবিল সাজাচ্ছে কিন্তু দীপালিকে কোথাও দেখতে পেলনা!
-------------রনিত কে দেখার সাথে সাথে সবাই বলে উঠল গুড....মর্নিং.... স্যার।
------------রনিত হাসি হাসি মুখে বলে উঠল, মর্নিং.....মর্নিং। তারপর একটু ইতঃস্তত করে জিজ্ঞাসা করল তোমাদের ম্যাডাম কোথায়?
-----------একজন বলে উঠল ম্যাম এখনও নীচে নামেন নি!
-----------রনিত বলল সে....কি...... দীপালিতো ঘরে নেই!
------------পাশ থেকে আর একজন বলে উঠল তাহলে হয়তো বাগানে আছেন!!!!, ম্যাম খুব পছন্দ করেন গাছ, ফুল এমনকি.... গাছেদের সাথে কথাও বলেন আমি অনেকদিন দেখেছি।
রনিত আর কথা না বাড়িয়ে বাগানের দিকে গেল। কিন্তু সেখানে মালি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলনা। রনিত ভালো করে বাগানের চারিদিক দেখে মালিকে জিজ্ঞাসা করল.......দীপালির কথা, কিন্তু মালিরও সেই...... এক কথা আজকে এখনও পর্যন্ত ম্যাম বাগানে আসেন নি..... অন্যদিন এতক্ষনে চলে আসেন!
এইবার রনিতের একটু চিন্তা হতে লাগল, কোথায় গেল দীপালি কাউকে কিছু না..... বলে? রনিত এবং সমস্ত সার্ভেন্ট মিলে সারা বাড়ি খুঁজে ফেললো কিন্তু দীপালিকে কোথাও পাওয়া গেলনা। রনিতের নিজেকে কেমন অসহায় ও পাগল পাগল লাগছে, রনিত বুঝতে পারছেনা ও এখন কি..... করবে, কোথায় খুঁজবে ওর দীপুকে। রনিত আর কিছু ভাবতে পারছেনা ওকে এক্ষুনি পুলিশের কাছে গিয়ে জানাতে হবে সবকিছু! কে.. জানে কোন বিপদ হলোনাতো? রনিতের শত্রুর তো.... অভাব নেই!এত বড় বিজনেস, প্রভাব, প্রতিপত্তি অনেকেই অনেক রকম ভাবে রনিতের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এইসব ভাবতে ভাবতে রনিত নিজের ঘরে ঢুকে রেডি হয়ে গাড়ির চাবি নিতে গিয়ে দেখে..... টেবিলে চাবির নীচে একটা কাগজ চারভাজ করে রাখা আর তার পাশে একটা খাম। রনিত সাথে সাথে কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে খুলে ফেলে। রনিত এই কাগজ টা.... দেখে অবাক হয়ে যায় আর অস্ফুট স্বরে ওর মুখ থেকে একটা কথা বেড়িয়ে আসে চিঠি রনিত পড়তে শুরু করে
"প্রিয়, রনিত......
জানি আমাদের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি!!!!! কিছুটা চাপে পড়ে তুমি আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়ে ছিলে!!!! আমি এও..... জানি আমার প্রতি তোমার কোনো রকম ভালোবাসা, বা অনুভূতি ছিলনা, এবং হয়ওনি!!!!! শুধুমাত্র কর্তব্যের খাতিরে তুমি এতদিন ধরে আমার সমস্ত সুবিধা, অসুবিধার খেয়াল রেখেছ। কিন্তু আমি বড্ড বোকা তাই তোমার কর্তব্যবোধকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করে ছিলাম!!!!! আমি ভুলে গেছিলাম তুমি এই সব যা...... কিছু করছো সব তোমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার মানুষ কে.... দেখানোর জন্য!!!! তুমি তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছিলে যে.... তোমাকে অস্বীকার করে সে জীবনে কত বড় ভুল করেছে। আর তোমার এই দেখানোর খেলায় আমি একটা অতি সাধারণ গুটি, আর সেই গুটিকে ব্যবহার করে তুমি ছক্কা ফেলেছো আর আমি ভুল করে তাকে ভালোবাসা ভেবে ফেলেছিলাম!!!!! অবশ্য এতে তোমার কোনো দোষ নেই!!!!! যা..... দোষ সব আমার, আমার ভাগ্যের, তাই এই মিথ্যে, নাটকিয় বন্ধনে বাঁধা পড়ে আমি আর বাঁচতে পারছিনা, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাই আমি আমার চলার পথ খুঁজে নিলাম।
একটা কথা না..... বললেই নয়.... তাই বলছি, সত্যি করে বলবে....,??? আমার ভালোবাসা কি.... তুমি কোনদিনও ফিল করতে পারোনি????? আমি তো..... তোমার কাছ থেকে এই বিলাসিতায় ভরা জীবন চাইনি!!!! চেয়েছিলাম শুধু একটু ভালোবাসা!!!! ছিঃ.... ছিঃ.... আমি এইসব কি.... বলছি তুমিতো একজনের ভালোবাসায় অন্ধ ছিলে তাই অন্যের ভালোবাসা, তার অনুভূতি কিছুই বুঝতে পারনি!!!! তবে একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি তোমার আর তোমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই!!!! কারন সে.... তোমার প্রকৃত ভালোবাসা কে বুঝতে পারেনি!!!! আর তুমি আমার প্রকৃত ভালোবাসা কে বুঝলেনা!!!!, শুধু অবহেলা আর ব্যবহার করে গেলে। সে যাই হোক ওসব কথা এখন থাক আমি সবসময় চাইব তুমি খুব ভালো থেকো, আর তোমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা এবার যেন তোমার কাছে ফিরে আসে। আর তোমার জন্য একটা উপহার রেখে গেলাম, তোমার মত দামি দামি উপহার দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই কিন্তু আমার দেওয়া এই ছোট্ট উপহার আশা করি তোমার খুব ভালো লাগবে।
ইতি
দীপালি।"
রনিত চিঠিটা পড়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। চোখের কোন বেয়ে নেমে আসা জলটা টপ... টপ.....করে চিঠির ওপর পড়তে লাগল এবং চিঠির লেখাগুলোকে মুছে দিতে লাগল। রনিত সাথে সাথে টেবিলের ওপরে থাকা খামটাকে তুলে নিয়ে খুলে দেখল, আর সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলো কেন..... আমাকে ভুল বুঝলে দীপু???? জানি অনেক অন্যায় করেছি তোমার ওপর কিন্তু ভালোবাসা মিথ্যে ছিলনা!!!!! সেটা সত্যি ছিল আমি কোনদিনও ডির্ভোস চাইনি!!!! তাহলে কেন এই উপহার দিলে আমাকে???? রনিত কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
রনিতের এইরকম মর্মভেদি চিৎকার শুনে সার্ভেন্টরা দৌড়ে ওপরে চলে আসে। সবার মুখে একটা ভয়ের ছাপ। কেউ সাহস করে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারছেনা, আবার চলেও যেতে পারছেনা। সবার মধ্যে থেকে একজন সাহস করে জিজ্ঞাসা করে ফেলল..........
-----------স্যার কি.....হয়েছে????? ম্যাম........কোথায়????
--------------রনিত নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, কিছু হয়নি!!!!! তোমারা নিজেদের কাজে যাও..... আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
রনিতের কথা শুনে যে যার মত নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে নীচে চলে গেল। রনিত দীপালির সাইন করা ডির্ভোস পেপারটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ব্যলকনি থেকে উড়িয়ে দিল। আর খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ফেলে আসা সেই সব পুরনো স্মৃতির পাতা উল্টাতে শুরু করল।
******************************************
শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়তে এসেছিল রনিত। বাবা, মা আর বোনকে নিয়ে রনিতের ছোট্ট, সুখি পরিবার। রনিত চোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল কোলকাতা শহরের বুকে। তার বাবার গারমেন্টের বিজনেসটাকে ভবিষ্যতে অনেক বড় করবে!!!! রনিত বাবার সব স্বপ্ন পূরন করতে চায়।
এই কলেজে এসে রনিতের সাথে পরিচয় হয় দীপিকার। দীপিকার অপরূপ সৌন্দর্য এবং মিশুকে ব্যবহার রনিতের মন যেন কেড়ে নিয়েছিল। যত দিন পেরতে থাকে রনিত দীপিকার প্রতি দুর্বল হতে শুরু করে। রনিতের মনে বসন্তের রঙিন ছোঁয়া লাগে। এক অদ্ভুত অনুভূতি হতে থাকে। সয়নে, স্বপ্ননে, জাগরনে রনিতের চোখের সামনে দীপিকার মুখ ভাসতে থাকে। রনিত আর নিজের মনের অনুভূতি চেপে রাখতে পাড়েনা দীপিকাকে বলে দেয় তার ভালোবাসার কথা। দীপিকাও রনিতকে ফেরায়না ভালোবাসা স্বীকার করে নেয়। সুন্দর ভাবে চলতে থাকে ওদের ভালোবাসার পথ।
রনিতের ম্যানেজমেন্ট পড়া শেষ হলে নিজেদের ব্যাবসায় ঢুকে পরে। কিন্তু ব্যাবসার হাল তখন খুব খারাপ। চারিদিক থেকে যেন ডুবতে বসেছে। তবুও রনিত হাল ছাড়েনি একটা বছর ব্যবসাটাকে কিছুটা সামলে নেয় রনিত। রনিত আর তার ভালোবাসা কে দূরে রাখতে চায়নি, তার ভালোবাসাকে পাকাপাকি ভাবে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিল। সেইমত দুই বাড়ির লোকেদের কথা হয়। ছেলে, মেয়ের পছন্দের ওপর ভরসা রেখে বাড়ির কেউ কোনো রকম আপত্তি করে নি। বিয়ের দিনক্ষন ঠিক হয়। তখন রনিত প্রথম দীপালিকে দেখেছিল। দীপালি ছিল দিপিকার কাকার মেয়ে। একটা দূর্ঘটনায়!!!!!দীপালি বাবা,মা দুজনকে একসাথে হারায় তারপর থেকে এই জ্যেঠু, জেঠিমার কাছে মানুষ দীপালি।
দুই বাড়িতে তোরজোড় শুরু হয়ে গেছিল বিয়ের। সবাই খুব খুশি ছিল। কিন্তু এই খুশি যে চিরস্থায়ী নয় সেটা কেবল দীপিকা জানত। কারন দীপিকা ততদিনে সৌনকের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে পড়ছে। সৌনক এন আর আই, এবং বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান। দীপিকার সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয় সৌনকের। সৌনকের আভিজাত্য এবং সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছিল দীপিকা।
বিয়ের ঠিক দুদিন আগে দীপিকা রনিত কে ডেকে পাঠায় এবং মুখের ওপর জানিয়ে দেয় ও রনিতকে বিয়ে করতে পারবেনা!!!!! রনিত দীপিকাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু.....দীপিকা রনিতের মুখের ওপর বলে, রনিতের মত মিডিলক্লাস ছেলেকে বিয়ে করে ও সারাজীবন নিজের সমস্ত আবদার স্যাক্রিফাইস করতে পারবেনা!!!! তাই ও....সৌনককে বিয়ে করবে, বিদেশে থাকবে জীবনটাকে উপভোগ করবে।
------------দীপিকার বাবা, মা মেয়ের এইরূপ আচরনে হতবাক্ হয়ে ছিল!!!! এবং...... একটা কথাই বলেছিল, আমাদের সম্মানের কথাটা একবার ভাব!!!!
------------সেইদিন একমাত্র দীপালি রনিতের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে বলেছিল, তুই..... এই রকম করতে পারিসনা দীপি!!!! তোর কাছে ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই!!!! দীপি ভালো করে ভেবে দেখ জীবনে ভালোবাসা না.... থাকলে টাকা, পয়সা, আভিজাত্য এইসব নিয়ে তুই কি করবি?????
------------দীপিকা সেই দিন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলেছিল, ভালোবাসা হা...... হা.....। ভালোবাসা মাই.... ফুট.....। যখন সংসারে টান পড়বে তখন ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালাবে। আর তোর যদি এত দরদ রনিতের প্রতি তাহলে দীপু তুই ওকে বিয়ে করে নে আমার কোনো আপত্তি নেই।
--------------দীপালি চিৎকার করে বলে উঠেছিল, এইসব তুই..... কি বলছিস দীপি???? তোর মাথা ঠিক আছে তো......????
-------------দীপিকা হো...... হো...... করে হেসে বলেছিল, ব্যাস.... হয়ে গেলো তো!!!!! যেই তোকে বিয়ে করতে বললাম ওমনি সব জ্ঞান দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল।!!!!
----------দীপালি বলল না...... বিয়ে করতে বলার জন্য নয় !!!!! রনিত দা.... তোকে ভালোবাসে দীপি আমাকে নয়!!!! তাহলে আমাকে বিয়ে করার প্রশ্ন আসছে কেন??????
-----------------এইসব কথা শুনে রনিতের সর্ব শরীর রাগে, এবং দীপিকার প্রতি ঘৃনায় জ্বলে ওঠে। রনিত গম্ভীর এবং দৃঢ় কন্ঠে বলে, ঠিকআছে দুইদিন পর বিয়ের দিন আমি বিয়ে করতে আসব তবে দীপিকাকে নয় দীপালিকে। আমি দীপালিকে বিয়ে করব আর দীপিকা তোমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে ঠিক একদিন দেখিয়ে দেব তুমি আমার ভালোবাসা কে অস্বীকার করে কতটা ভুল করেছো। রনিত আর একটাও কথা না বলে চলে গেছিল সেইদিন। আর দীপালি পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ছিল।
ঠিক রনিতের কথা মত বরের সাজে রনিত এসেছিল বিয়ে করতে কিন্তু বউ পাল্টে গেছিল দীপিকার জায়গায়, দীপালি। সমস্ত আচার, নিয়ম এবং বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ছিল দুটো মানুষ। একজন, ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য, আর একজন অন্যায়ের প্রতিবাদ ও পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য তবে মনে মনে শপথ নিয়ে ছিল মানুষটার জীবন ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেবে।
তারপর শুরু হয়ে ছিল রনিতের অন্য জীবন। বিয়ের একমাস যেতে না যেতে রনিত বিদেশি কম্পানির সাথে কন্ট্রাক্ট করে বিদেশ পাড়ি দিল, এবং ব্যাবসাও ফুলে ফেপে উঠতে লাগল। রনিত ঠিক দুবছর পর ফিরে এসে দীপালিকে নিয়ে বিদেশ গেল। রনিতের মাথা থেকে সবকিছু বেড়িয়ে গেছিল শুধু মাত্র একটাই লক্ষ্য ছিল ওকে মস্ত বড় বিজনেস ম্যান হতে হবে!!!!! প্রচুর টাকা ইনকাম করতে হবে!!!!!
বিয়ে হয়েছিল ঠিকই!!!!!! কিন্তু রনিত কোনদিনও দীপালিকে স্ত্রীর অধিকার দেয়নি তবে দীপালির প্রতি কোন রকম অবহেলা করেনি!!!! এইভাবেই কেটে চলেছিল ওদের জীবন। তবে রনিত হেরে যায় নি.... চার বছরের মাথায় নিজেকে প্রমান করেছিল একজন সফল বিজনেস ম্যান হিসাবে। তবে রনিত সব সময় দীপিকার খোঁজ নিয়ে গেছিল। আর শেষ পর্যন্ত দীপিকাকে সর্বশান্ত করে দিয়েছিল। দীপিকার বরের সমস্ত কিছু রনিত কিনে নিয়েছিল। তবে সফল ব্যবসায়ী হতে গিয়ে মনটাকে হারিয়ে ফেলছিল তাই ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা কে বুঝতে পারেনি!!!!!
হঠাৎ করে রনিতের ফোনটা বেজে উঠল রনিতের ভাবনা বন্ধ হল। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল বাড়ির ফোন। আর রনিতের কানে ভেসে আসতে লাগল...........
-------------কিছুদিন আগে বলা ওর মায়ের কথা, এই রকম টাকার পিছনে ছুটিসনা বাবু!!!!!!দেখবি একদিন শুধু টাকাই পড়ে আছে পাশে ভালোবাসার কোনো মানুষ নেই!!!! দীপালিকে একটু সময় দে.....। মেয়েটা বর একাকিত্বে ভোগে!!!!! মুখ ফুটে কিছু বলেনা, তবে আমিতো মা তাই বুঝতে পারি!!!!!!
------------রনিত ফোনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল, কেন এই রকম করলে দীপু????? আমি এখন তোমাকে কোথায় খুঁজবো???? কি.....উত্তর দেব সবার কাছে????? জানি ভুল করেছি তবুও কি.... একটু সময় দেওয়া যেতনা???? আমি যে..... জিতেও হেরে গেলাম!!!!! সবথেকে কাছের মানুষটাকে হারিয়ে ফেললাম!!!!!
রনিত আর সময় নষ্ট না করে পুলিশের কাছে গেল সমস্ত কিছু বলে দীপালির ছবি দিল এবং নিজের মত খুঁজতে লাগল।
*****************************************
কথায় আছে 'সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের ন্যায়' সেই রকম ভাবে পার হয়ে গেল আরও দু- বছর। তবে রনিত দীপালির কোনো খোঁজ পাইনি। তবে আশা ছাড়েনি!!!!! এখনও খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই দু-বছরে রনিতের জীবনটা কেমন অগোছালো হয়ে গেছে। আরও যেন বেশি করে কাজের মধ্যে ডুবে গেছে। তবে রনিত এখন শুধু টাকা রোজগার করেনা!!!!!! প্রচুর সাহায্যও করে। আজ রনিত নিজের বাড়ি ফিরবে। শিলিগুড়িতে রনিত অনাথ বাচ্ছাদের জন্য একটা আশ্রম খুলেছে। সাথে বিনা পয়সায় চিকিৎসার জন্য হসপিটাল, এবং পড়ার জন্য স্কুল। সাধারণত রনিত এইসব জায়গায় যেতে চায়না!!!!!কারন রনিত প্রচার চায় না!!!!! যে টুকু করে মন থেকে করে। তবে এইখানে আসার জন্য সবাই ওকে খুব অনুরোধ করেছে। এমনকি ওর বাড়ির লোক পর্যন্ত। এখানে আসলে নাকি ও অনেক কিছু ফিরে পাবে। তাই সবার অনুরোধে রনিত এখানে আসছে।
খুব সুন্দর করে সেজে উঠেছে নতুন তৈরী এই অনাথ আশ্রমটা। রনিত যখন আশ্রমের গেটের সামনে পৌঁছাল তখন ওর বাড়ির লোক সবাই ওখানে আগে থেকেই পৌঁছে গেছে। সবার মুখে একটি সুন্দর মিষ্টি হাসি। রনিত এগিয়ে গিয়ে যাকে দেখলো তা... ও.... নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছেনা!!!!!
-----------রনিত আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলনা ছুটে গিয়ে সবার সামনে মানুষটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল নিজের বুকের মাঝে, এবং....... কান্নাভেজা গলায় বলতে লাগল, আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেছিলে দীপু????? জানি অনেক অন্যায় করেছি!!!!!, একবার একটু সুযোগ দেওয়া যেতনা!!!!! কত খুঁজেছি তোমায়???? তোমাকে ছাড়া থাকতে কত কষ্ট হয়েছে জানো আমার???? তুমি কেন এত কষ্ট দিলে আমাকে????? আর কোন কথা বলতে পারছেনা রনিত, কান্নায় গলা বুজে এসেছে।
------------দীপালি রনিতকে বলল, শান্ত হও...., আর এইতো আমি ফিরে এসেছি আর কোথাও যাবনা!!!!
-------------রনিত দীপালিকে ছেড়ে দিয়ে ওর হাতটা চেপে ধরে বলল, ছাড়লে তবেনা যাবে!!!!, আর কোনদিনও তোমাকে ছাড়বোনা!!!!!কিন্তু তুমি কোথায় ছিলে এতদিন????? আচ্ছা!!!!তোমরা সবাই জানতে এখানে দীপু আছে তাই আমাকে বারবার আসতে বলছিলে।
------------রনিতের বাবা বলল সে সব অনেক কথা পরে বলব এখন কাজগুলো সেরে নে.... । রনিত দীপালির হাতধরে এগিয়ে গেল ভিতরে সমস্ত কাজ সেরে সবাই কে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল। গাড়ি করে যাওয়ার সময় দীপালি বলতে শুরু করল ওর কথা........
সেইদিন ভোরে দীপালি চুপিচুপি রনিতের ঘরে গিয়ে চিঠিটা আর খামটা রেখে বেড়িয়ে যায় নিজের কাছে জমানো কিছু টাকা নিয়ে। দীপালি জানতোনা.... কোথায় যাবে?????কি করবে????তবে..... এইটুকু ঠিক করে নিয়ে ছিল এই ভাবে আর রনিতের সাথে থাকতে পারবেনা!!!!।এয়ারপোর্টে গিয়ে টিকিট কেটে ফিরে আসে নিজের দেশে। প্রথমে দীপালি ভেবেছিল, বাড়ি আসবে তারপর ভাবলো যার জন্য সম্পর্ক সেই যখন সম্পর্ক স্বীকার করেনা তখন সেখানে গিয়ে কোনো কাজ নেই!!!! আর এখন বিয়ের পর আর জ্যেঠু জেঠিমার ঘাড়ের বোঝা হতে চাইনি!!!! তাই কলকাতায় একটা মেশ ভাড়া নিয়ে ছিল তারপর এনজিওতে চাকরি সেই সূত্রে এই আশ্রম তৈরীর কাজে যোগদান, আর সেইখান থেকে বাড়ির সবার সাথে দেখা!!!!
সবকিছু রনিত চুপচাপ শুনলো, দীপালির হাতটা শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করল। আর মনে মনে শপথ করল আর কোনদিনও এই হাত ছাড়বেনা। সব সময় ছায়া হয়ে থাকবে দীপালির সাথে। শুরু হল নতুন করে পথ চলা।ভালোবাসা এক মূল্যবান অনুভূতি। ভালোবাসা হারিয়ে তা..... ফিরে পাওয়ার যে কি......আনন্দ তা ব্যক্ত করা সম্ভব নয়!!!!!! ঝড়, ঝাপটা, মান, অভিমানের সমস্ত কালো মেঘ কেটে গিয়ে শুরু হলো নতুন করে একে অপরকে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে ওদের পথ চলা

