দুর থেকে দুরে-গল্প
দুর থেকে দুরে-গল্প


''স্যার, প্লিজ স্যার,আমার ব্যাপারটা একটু কনসিডার করুন স্যার।''
''আই থিঙ্ক উই হ্যাভ ক্রসড অল দ্য লিমিটস মিঃ পাল।এর আগে তিনবার আপনাকে ডেকে ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছে।আপনাকে শোধরাবার চেষ্টা করা হয়েছে।আপনি শুধরে যাওয়ার লোক নন।''
''স্যার আমি তো চেষ্টা..''
''হেল ইয়োর চেষ্টা।আপনার পারফরম্যান্স তো অতি পুওর।সেল ফিগারগুলো নিয়ে অ্যানালিসিস করলে আপনি বিপদে পড়ে যাবেন।আপনার এরিয়া ম্যানেজার ,রিজিওনাল ম্যানেজাররা বহুদিন ধরেই আপনার নামে আমার কাছে কমপ্লেন করছে,আমি চোখ বুজে রয়েছি।-বাট নাও আই হ্যাভ টু টেক অ্যাকশান এগেনস্ট ইউ।দিনের পর দিন ফলস রিপোর্টিং,এ মেনে নেওয়া যায়না।আমার কাছে সবার আগে ডিসিপ্লিন।টারমিনেট করছিনা,যদিও উচিৎ ছিল,তিনসুকিয়ায় চলে যান।''
''স্যার,আপনিতো জানেন আমার স্ত্রী মারা গেছেন।মেয়েটা 'এইচ.এস' দেবে।এইসময় আমি চলে গেলে ও একা একা কিভাবে থাকবে স্যর?আমাকে তাহলে চাকরিটা ছেড়ে দিতে হবে স্যর।নয়তো মেয়েটার...''
''এসব কথা দিনের পর দিন ফলস রিপোর্টিং করার আগে ভাবা উচিৎ ছিল মিঃ প্রদীপ পাল।নাও আই হ্যাভ নাথিং টু ডু।''
দিব্যেন্দু রিজিওনাল ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বলল,''-মুখার্জি,-প্লিজ গিভ হিম দ্য কাষ্টমার লিষ্ট এন্ড ডিষ্ট্রিবিউটর লিষ্ট অফ তিনসুকিয়া,আই অ্যাম ইন হারি।''
মুখার্জি ভিতরে গেলে প্রদীপ দিব্যেন্দুর হাত চেপে ধরে অসহায় আকুতির সঙ্গে ফিসফিস করে বলে,''-বাবাই..প্লি ই ই জ।''
''নতুন যে জি.এম জয়েন করল সে নাকি বাঙালি?''
''তাই তো শুনছি।''
''যাক..''
''অত আনন্দ পাওয়ার কিছু নেই।বাঙালি গুলোই শালা হারামি হয়।বাঙালিরাই সবচেয়ে বেশি বাঙালির পোঁদ মারে।''
হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনালের কনফারেন্স রুমে রিজিওনাল ম্যানেজার মুখার্জির সঙ্গে প্রবেশ করেন কোম্পানিতে নতুন জয়েন করা জি.এম মিঃ দিব্যেন্দু মৈত্র।ছ'ফুট লম্বা, ফর্সা, এক ঝকঝকে যুবা পুরুষ।
প্রদীপ এর বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠে।
''লেটস ইন্ট্রোডিউস ইয়োরসেল্ফ টু আওয়ার নিউ জি.এম।''
''আই অ্যাম প্রদীপ কুমার পাল,আই হ্যাভ জয়েনড ইন দিস কোম্পানি...''
দিব্যেন্দুর ভুরুটা আচমকা অদ্ভুত রকমের কুঁচকে যায়,ঠোঁটের কোনে একটা হাসির আভাস দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায়।মুখটা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
মিটিং শেষ হয়ে যাবার পর সুইমিং পুলের সামনে দুজনে এসে দাঁড়ায়।
''হোয়াট এ প্লেজান্ট সারপ্রাইজ!তুই এই কোম্পানিতে আছিস৷গ্রেট-''
''হ্যাঁ আপনি,মানে তুমি যে জি.এম হয়েছো-খুব ভাল লাগছে।''
''কি তুমি তুমি করছিস?এখানে তো আর তোর এ.এস.এম বা আর.এস.এম নেই।তুই করে বল ব্যাটা।
কাকু কাকিমার কি খবর?''
''বাবা তো মারা গেছে৷মা থাকে বহরমপুরে-দাদার কাছে,ঐ আছে একরকম।''
''তোদের কী খবর বল..''.
''সুরেন কাকা ভাল আছে?''
''আসলে মা মারা যাওয়ার পর থেকেই,এমনিতে বিন্দাস আছে।এইতো সিঙ্গাপুর ঘুরে এলো।''
''মানা দি?''
''ওরা তো দিল্লীতে থাকে।জামাইবাবু তো এইমস এর ডাক্তার,জানিস তো।তোর কি খবর বল?তোর বিয়েতে যেতে পারিনি।''
''হ্যাঁ হ্যাঁ, তোদের দিল্লীর ঠিকানায় কার্ড পাঠিয়েছিল বাবা।আমার তো একটাই মেয়ে।টুয়েলভ এ পড়ে।মিসেস মারা গেল গত বছর,ক্যানসার হয়েছিল৷''
''আমার মিসেস তো 'আই টি' তে আছে।ব্যাঙ্গালোর এই শিফ্ট করে গেলাম বুঝলি।ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ঢুকলো এ বছর।''
''তোর সঙ্গে এতদিন বাদে দেখা হল তোতোন,কি যে ভাল লাগছে।তুই কিন্তু কালো হয়ে গেছিস,মাথাটাও পুরো গড়ের মাঠ...''দিব্যেন্দু হা হা করে হেসে ওঠে।
''আমার ও খুব ভাল লাগছে বাবাই।তুই কিন্তু আগের অনেক থেকে ফরসা হয়েছিস।হা হা হা হা।''
দিব্যেন্দু ও প্রদীপ পরস্পরের হাতে হাত রাখে।
''আরে!তোতোন না!তোকে চিনতেই পারিনি!তোর চাপদাড়ি কোথায় গেল?''
''কবে এলি?''
''কাল এলাম।ঝুমকির বিয়ে না!আমি তো বর আনতে যাব।''
''ও''
''কি করছিস এখন?''
''সেলস এ ঢুকলাম।কনজিউমার গুডস।নর্থ টা দেখছি।তুই?''
''আমার তো 'এমবিএ' র লাস্ট সেশান টা শেষ হল।ক্যাম্পাসে হয়ে গেছে কগনিজেন্ট এ।ব্যাঙ্গালোরে চলে যাচ্ছি।''
''বাঃ, বাঃ''
''একটা ফোন করিস না!একবার একটু কষ্ট করে সবাই মিলে দিল্লীতে চলে আয়না।খুব মজা হবে।''
''আচ্ছা দেখি।আজ চলি রে।আমাকে আবার..''
''ফোন করবি কিন্তু..''
'এসো বাবা এসো।আমরা খুব খুশি হয়েছি তোমার রেজাল্ট এ।থাক, থাক।হয়েছে, হয়েছে.''.
''তোতোন কোথায় কাকিমা?''
''ঐ তো দেখোনা ঘরে মুখ ভার করে শুয়ে আছে।এখন দুঃখ করে কি করবি,আগে পড়িস নি কেন?এখন এই রেজাল্ট এ কোথায় যে ভর্তি হবে!আজকালকার দিনে থার্ড ডিভিশন এর কোনো দাম আছে বলো?''
''অত চিন্তা করবেননা কাকিমা।'আরবিসি' কলেজে কমার্সে পেয়ে যাবে।এই হতভাগা তোতোন,ওঠ! চল ঘুরে আসি।''
''ওফ্! তানিয়াদি কে কি লাগছে মাইরি!আজ তানিয়াদি কে ভেবে সকালে একবার...হয়ে গেছে.''
''আমার রুবি বৌদি কে একঘর লাগে।কালকে আমাদের পুকুর থেকে চান করে উঠে আসছিল---ওঃ! ফাটাফাটি!''
''এ বাবাই সুমিতদের সঙ্গে আশীর্বাদ হলে যাবি?একটা দুর্দান্ত পানু এসেছে।কুমারিদুলহন!''
''কুমারিদুলহন দেখেছি।এমন কিছুনা।চারটে সিন আছে।আজ বিকেলে একটা ম্যাচ আছে।পরশুদিন শচীন কি খেলল মাইরি!ফাটাফাটি।মরুঝড়!''
''ধুর্, আমার সৌরভকে বেশি ভাল লাগে।''
''কি বলছিস!কোথায় শচীন আর কোথায় সৌরভ!''
''হাউস দ্যাট!''
''না না, আমি আউট হইনি।আমি ক্রিজে পৌঁছে গেছি।ইয়ার্কি নাকি?''
''তুই ক্রিজে পৌঁছাসনি।তোর ব্যাট উপরে ছিল।''
''না, না, না, আমি আউট্ দেবনা।''
''আউট্ দিবিনা মানে?পরিস্কার আউট্!''
দুই কিশোরের মধ্যে ঝগড়া আস্তে আস্তে হাতাহাতির রূপ নেয়।
''অ্যাই কাঁদছিস কেন?কি হয়েছে?''
''আমি আউট হইনি, তবু জোর করে..''
''রোজ ঝগড়া মারামারি করবি আবার বিকেল হলেই দৌড়বি।এবার খেলাটা একটু কমা।সামনে পরীক্ষা।''
সামনে পুকুর।পুকুরের পাশে আম কাঁঠালের বন।পাঁচ-ছ বছরের কয়েকটি শিশু লুকোচুরি খেলছে।বাবাই একটা আমগাছের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে।তোতোন চোর হয়ে সবাইকে খুঁজছে।টুউউউকিইই!!....................পটলা হুস..পটলা ধরা দেয়।মানু হুস।আস্তে আস্তে সবাইকে খুঁজে পেলেও তোতোন কিছুতেই বাবাইকে খুঁজে পায়না।হঠাৎ তোতোনের পিঠের মধ্যে বাবাই হাত দিয়ে হাল্কা থাপ্পড় মারে...........
ধাপ্পা!!
#positiveindia