Aayan Das

Others

2.5  

Aayan Das

Others

তখন সকাল

তখন সকাল

3 mins
10.2K


তখনও পুরোপুরি দিনের আলো ফোটেনি।সমস্ত রাবাংলা যেন সাদা কুয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে।আমি হোটেল থেকে বেরিয়ে এলাম।দুরে সবুজ পাহাড়ের উপর ভোরের স্বপ্নের মত লেগে রয়েছে মেঘেরা।আমার চোখের পাতায়,ঠোঁটে চুম্বন করছে মেঘকন্যারা।আমি এগিয়ে চলেছি একটা শব্দের দিকে।কিছুদুর গিয়ে দেখি অনেক উঁচু থেকে কোনো ছিপছিপে সহজ কবিতার মত ঝরে পড়ছে একটি পাহাড়ি ঝরণা।একটা পাথরের উপর আমি নিঝুম হয়ে বসে রইলাম।আমার মেয়ের ঘুমিয়ে থাকা মুখের মত পবিত্র ভোর তখন গুটি গুটি পায়ে রওনা দিচ্ছে সকালের দিকে।

বাবাকে সেভাবে কখনও আমলই দেয়নি শুভ।তার বাবা আদ্যন্ত একজন ব্যর্থ মানুষ।একজন উদ্যমহীন,কুঁড়ে,হতাশ,হেরে যাওয়া মানুষ।জীবনের কোনো একটা কাজও বাবা গুছিয়ে করে উঠতে পারেনি।বাবার কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন হল।শুভ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে খড়গপুরে।কাল এস.এম.এস পেয়েই শুভ বুঝেছিল সব শেষ।তারপর বাড়ি এসে বাবাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা,মা কে সামলানো,শ্মশানের ঝামেলা মিটিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সকাল সাতটা বেজে গেল।ঘরে ঢুকেই শুভ যেন খুব জোরে বুকে একটা ধাক্কা খেল।অসহায় শূন্যতায় পড়ে রয়েছে বাবার চেয়ার ও টেবিল।বাবা দিনের বেশিরভাগ সময়টা এখানেই কাটাতো।পড়ে রয়েছে চশমা, কিছু বই,বাবার কবিতা লেখার ডায়রি আর অতি প্রিয় পার্কার পেনটা।জানলা দিয়ে একটা হলুদ রঙের আলো এসে যেন পুড়িয়ে দিচ্ছে সমস্তকিছু।শুভ'র বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠল।গলার কাছে একটা অব্যক্ত কষ্ট দলা পাকিয়ে উঠল।জীবনে এই প্রথম বাবার প্রতি এক তীব্র ভালবাসা অনুভব করল সে।শুভ, বাবার পেনটা হাতে নিয়ে শিশুর মত কেঁদে ফেলল।

-তুমি বন্ধুতা আর প্রেমের ডিফারেন্সটা বুঝতে শেখো।নারী পুরুষের সম্পর্ক মানেই প্রেম নয়।একজন ক্রিয়েটিভ মানুষকে বুঝতে হয়।তাকে খানিকটা স্পেস দিতে হয়।তার বন্ধু হতে হয়।

-তারমানে?তুমি ভাল লেখ,ভাল অভিনয় করো বলে তোমার যা খুশি করার অধিকার আছে?আজ যদি আমারও একজন বয়ফ্রেন্ড থাকতো,যে শুধুই বন্ধু -তুমি মানতে পারতে?

সন্ধ্যেবেলার তুমুল ঝগড়ার পর বেশ কিছুক্ষন কথা বন্ধ ছিল।তারপর মাঝরাতে আবারও কাছাকাছি এসেছে স্বামী-স্ত্রী।আবারও মিলিত হয়েছে নারীপুরুষ।ভোরবেলায় ঘুম ভাঙার পর ছোট্ট একচিলতে আদরের পর সুজয় জয়িতা কে বলল,''-দেখ,আকাশটা কি পরিষ্কার,চলোনা-একটু হেঁটে আসি।

"কাল রাত্তিরে ঝড় বয়ে গেছে রজনীগন্ধা বনে"।

না,রাত্তিরে এ নয়, সৌমিক ও সুজাতার রজনীগন্ধা বনে উথালপাথাল ঝড় উঠেছে ঘুমঘুম ভোর বেলায়।

             

টুয়া কে কিছুতেই বউ হিসেবে মেনে নিলনা বাবা মা।কত ঝগড়া কত অশান্তি...ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গিয়ে সেইসব ঘটনাগুলো সিনেমার মত মনের পর্দায় ভেসে উঠতে থাকে জয়দীপের।শেষপর্যন্ত লুকিয়ে বিয়ে এবং ফ্ল্যাট ভাড়া করে এই রাজারহাটে।দুজনেই আই.টি সেক্টরে কাজ করে।সারাটা দিন চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে কেটে যায়।শুধু সকালে ঘুম থেকে উঠে.....

পাশে অঘোরে ঘুমোচ্ছে টুয়া।ক্কা ক্কা করে বিষাদের সুরে একটানা ডেকে চলেছে একটা কাক।রাতে বৃষ্টি হয়েছে।পেয়ারা গাছের পাতা থেকে টুপ টাপ শব্দে জল ঝরছে।রান্নাঘরে ঢুকে চা করতে করতে জয়দীপের মনে পড়ল বাড়িতে এইসময় সে বিছানায় ঘাপটি মেরে পড়ে থাকত।মা ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে তার বালিশের পাশে চা রেখে যেত।মায়ের হাতের তৈরি দিনের প্রথম চা'এর স্বাদ টা -উঃ ঠিক যেন অমৃত।জয়দীপ এর চোখটা কেমন যেন জ্বালা করতে লাগল।

            

ওঠ,ওঠ,ওঠ,ওঠ,ওওওওঠ!

রুমা তারস্বরে চেঁচাতে থাকে।

বাস সাড়ে ছটার বেশি এক মিনিট'ও দাঁড়াবে না।অলরেডি পৌনে ছটা বেজে গেছে।এই, তুমি ওঠোতো,তুমি না উঠলে ওকে টেনে তোলা যাবেনা।

-হুম

-কি হুম! ওঠো ওঠো ওঠো,আমার ম্যাগি রেডি হয়ে গেছে।

-বাবা? ও বাবা?

-হুম

-আজকে যেতে ইচ্ছে করছে না,আজ তেমন ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস নেই,তুমি মাকে বলো না!

রুমা এবার বিকট চিৎকার করে ওঠে,এখনও উঠিসনি?সে ফেরোসাস হয়ে মশারির চারটে খুট খুলে দিয়ে এক ঝটকায় বাবা মেয়ের শরীর থেকে লেপটা তুলে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

সে দেখে প্রবল শীতে কাঁপতে কাঁপতে বাবা আর মেয়ে পরস্পর কে আঁকড়ে ধরে শুয়ে আছে।

-             

ক্রির..রি.ই.ই.ং....ক্রি.রি.রি.ই.ই.ং ল্যান্ডফোনটা অশ্লীল ভাবে বাজতে থাকে।সোমা ধড়মড় করে উঠে বসে।

-হ্যালো

-হ্যালো বৌদি,শোনো আজ আসতে পারবো না গো৷

-এই কল্পনা,অ্যাই শোনো,আজকে না আসলে হবেই না।আজ আমার স্কুলে পরীক্ষার গার্ড আছে,ছুটি নেওয়া যাবেনা৷তোমার দাদার ক্লোজিং,ওকেও যেতেই হবে৷তাতানের স্কুল,প্লিজ কল্পনা..।

-কাল রাত থেকে ছেলেটার ধুম জ্বর,আমাকে ছাড়ছে না৷মাথায় জলপট্টি দিচ্ছি,কিছু একটা করে আজ একটু ম্যানেজ করে নাও গো বৌদি।

-কল্পনা,কল্পনা,লক্ষ্মী সোনা শোনো,আজ কামাই কোরোনা৷প্লিজ কল্পনা,অন্তত এক ঘন্টা৷

-আজ কিছু করতে পারব না গো বৌদি..না হলে যখন তখন আমি কামাই করি বলো?

-হ্যালো..হ্যালো..হ্যালোওওওও

সোমা মৃগী রোগির মত কাঁপতে কাঁপতে সিজোফ্রেনিক দৃষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল-শুনছো,কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে!


Rate this content
Log in