Atrayee Sarkar

Romance Tragedy

3  

Atrayee Sarkar

Romance Tragedy

দুই প্রজন্ম

দুই প্রজন্ম

7 mins
289


দিনগুলোর কথা মনে করলে,,,, আজও মনে খুব বেদনা হয়।

দিন কি বলবো,,,,,, বছর। কিন্তু পুরো বছরটা আমার কাছে কিছু দিন ই হয়ে গেছিল ।

আমি উত্তমকে কলেজ লাইফ থেকে ভালোবাসতাম। সারাক্ষণ মনটা ভাবত,,,,,, কখন উত্তম আমায় মিতালি বলে ডাকবে ।

যেই আমি শুনতাম--" মিতালি,,,, my sweetheart .

চল,,, ধারেকাছে কোথাও আনন্দ করে আসি ।"

আমার যেন হৃদয়টা আনন্দে মেতে উঠত ।

এরপর,,,, চাকরি করতে করতে,,, উত্তম,, USA তে চাকরি করতে চলে যায়।

সম্পর্ক টিকে ছিল । কিন্তু উত্তমের মতন,, আমি ও চাকরি করতাম । আমি ইঞ্জিনিয়ার ।

ফেসবুকে,, কতো আর কথা বলা যায়।

প্রতিদিন রাতে,,, আর রোববার দিন একটু কথা বলতাম।

সামনাসামনি কথা বলা,,,, আর ওয়াটস্যাপ, ফেসবুকে কথাবলা তো আর এক নয়।

তাও,,,, সম্পর্ক রয়ে গেছিল।


আমি ছোটবেলায় ই,, মা,, বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।

আমি, মা, বাবা,, একসাথে ঘুরছিলাম গাড়ি করে।

কি বলবো,,,, নিয়তি ।

Accident হয়ে গেল হঠাত্ । খুব জোর লেগেছিল ।

মা,, বাবা আর রইল না,, শুধু আমিই একমাত্র বেঁচে ছিলাম ।

কেন এরম হলো কে জানে ।

আগের জন্মের অপরাধের শাস্তি লাগে কখনো ।

মামা,, মামির কাছেই বড়ো হয়েছি ।

মামা,, মামির, নিজের সন্তান ছিল না ।

আমাকে তাই,, একদম নিজের মেয়ের মতন করে ভালোবাসত।

আমার ও,, মামা,, মামিকে, নিজের মা, বাবাই লাগতো ।

তখন আমার ২৬ বছর বয়স হয়ে গেছিল।

মামা,, মামি তাই বলল--" বিয়ে করেনে মনা।

উত্তমকে,, ভালোবাসিস,, যানি । কিন্তু উত্তম কবে USA থেকে আসবে,, তার তো কোনো ঠিকই নেই।

আমরা তোকে,, একা ফেলে রেখে, কি করে চলে যাবো?

যাওয়ার সময় তো হয়ে এসে গেছে । কখন, কবে চলে যাবো, তার তো ঠিক আছে??"

সবকিছু শুনে রাগ হয়ে গেছিল ।

বললাম--" আমাকে,, আজীবনের মতন ছেড়ে চলে যেতেই তোমাদের খুব ইচ্ছা।

খবরদার,, এরম মরে যাওয়ার কথা আর বলবে না । তাহলে, আমি যেখানে পারি সেখানে চলে যাবো ।"

রেগে গেছি দেখে মামি বলে উঠেছিল--" এতো রাগারাগি করা,, এখন কমা ।

শ্বশুরবাড়ি গিয়ে,,, কথায় কথায় রাগ করলে চলবে না।"

বলেছিলাম--" চুপ করে সব সহ্য করব??"

মামি--" না, রে, পাগলি মেয়ে । cooperate তো তোকে করতে হবে ।"

মামা,, মামির কথায়,, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়,, অচিন্ত্যর সাথে।

অচিন্ত্যর সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায় ।

আমার হাসবেন্ডের নাম হচ্ছে,,, অচিন্ত্য রায়।

অচিন্ত্যর সাথে আমার কিরম অদ্ভুত মিল আছে।

অচিন্ত্যর,, মা আছে,, বাবা নেই ।

আর যাই হোক,,, মা তো আছে । আমি তো মাকেও হারিয়েছিলাম।

উত্তমের সাথে যোগাযোগ সেরম আর ছিল ও না।

আমি, অচিন্ত্যর সাথেই সংসার করতাম।

ভালোই ছিলাম সংসারে।

হঠাত্ একদিন দেখি,,,, উত্তম ওয়াটস্যাপে ম্যসেজ পাঠিয়েছে--" কেমন আছ?? বিয়ে হয়ে গেছে আমার sweetheart এর,, যানি । তাও নিজেকে, তোমার সাথে কথা বলা থেকে আটকাতে পারলাম না ।"

আমার মনটা তখন কিরকম ছটফট করছিল। আমিও উত্তমের সাথে ওয়াটস্যাপে চ্যাট করতে শুরু করে দিয়েছিলাম--" এতো বছর বাদে আমার কথা মনে পড়ল তোমার?? মনে করলে কেন? একদম ভুলে যেতে তো পারতে ।"

উত্তম বলছিল--" চাকরির জন্য বিদেশে যেতেই হলো।

সংসার চালাতে গেলে,, অর্থের তো দরকার পরেই।"

বলছিলাম--" দেশে কি চাকরি করলে, সংসার চালানো যায় না?? এগুলো তোমাদের মনের ভাবনা,, আর স্টেটাস,, "আমি USA তে আছি ।"

উত্তম তখন বলছিল--" উফ!! তোমার রাগটা আর গেল না।

আমি তোমায় খুব মিস করেছি ।"

আমিও বলে উঠেছিলাম--" আমি কতো কষ্ট পেয়েছিলাম,, একবারও ভেবে দেখেছ??

তোমাদের আর কি,,,, I love you বলে চলে যাও।"

উত্তম বলছিল--" Sorry,,,

কেমন আছ??"

বলছিলাম--" ভালো আছি। অচিন্ত্য খুবই ভালো। তবে তোমার ভালোবাসাটা মনটাকে টানে।"

এইভাবে প্রতি রাতে,,,, অচিন্ত্য শুয়ে পারার পর,, আমি উত্তমের সাথে ওয়াটস্যাপে কথা বলতাম ।

একদিন হঠাত্ অচিন্ত্য বলে উঠেছিল--" কার সাথে রাতে এতো গল্প করো??"

বলেছিলাম--" না,,, আমি কারো সাথে সেইরকম কথা বলি না ।

আমার স্কুলের বান্ধবী ।"

বলে,,, আমার বুক ধরফর করছিল,, যে অচিন্ত্য সবকিছু জানতে পারলে কি করবো ।

অচিন্ত্য তখন বলছিল--" আমার দিকে তাকিয়ে বলোতো,, তোমার কথাটা ।"

আমি চুপ হয়ে গেছিলাম ।

অচিন্ত্য বলছিল--" লুকোচুরি খেলছ কেন?? বলই না কথাটা । আমি তোমায় ব্যথা দেব না ।"

আমার মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বেরোচ্ছিল না।

অচিন্ত্য তখন বলে উঠেছিল--" তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমায় অপমান কোরবো । তাই তো?

না মিতালি,,, আমি এতো বাজে নই।"

বলেছিলাম--" আমায় তুমি ক্ষমা করবে না,, শুনলে ।"

অচিন্ত্য বলে উঠেছিল -- " একবার বলে দেখ।"

তখন আমি,,,, আমার আর উত্তমের কথা,, অচিন্ত্যকে বলেদি।

অচিন্ত্য তখন বলে উঠেছিল--" তুমি আজও উত্তমের ভালোবাসা ভুলতে পারোনি । তাই তো??

আসলে,, কি বলোতো,, ভালোবাসা ভোলা যায় না।

নিজেকে যন্ত্রণা দিয়না । তুমি উত্তমের কাছে চলে যাও।"

অচিন্ত্যর ওই কথা শুনে,, আমার চোখ ছলছল করছিল। কিন্তু আমি নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছিলাম না।

মামি সবকিছু শুনে,, আমায় একদিন বলে--" খেতে পেলে, শুতে চাস তোরা।

এতো ভালো একজন হাসবেন্ড তোর,,, তাকে ছেড়ে তুই উত্তমের কাছে যাবি ভাবছিস???

এই কথাটা,, অন্য কেউ শুনলে,, না,, ঠাসিয়ে থাপ্পড় মারতে মারতে, বাড়ি থেকে বের করে দিত।

আমারই,, তোকে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা করছে ।

বাঁদর হয়ে গেছিস তোরা।

এই ফেসবুক আর ওয়াটস্যাপ বাঁদর করে দিয়েছে তোদের।

আমিও একজনকে ভালোবাসতাম।

তখন তো আর ফোন ছিল না ।

ওর সাথে কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর,, তোর মামার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছিল।

৪ বছর বাদে হঠাত্ একদিন দেখা হতে,, ও যখন কথা বলতে আসছিল,, আমি চলে গেছিলাম।

বললাম--" মামি,,, আমার মনটা টানছে,, উত্তমের কাছে।

বিয়ে হয়ে গেছে বলে সেই মানুষটার সাথেই থাকতে হবে??

আমার কোন অধিকার নেই??

সেই মানুষটা যা বলবে তাই ই করতে হবে?

পুরুষমানুষরা করলে তো কিছু বলো না ।

একজন নারীকেই সব মানতে হবে??

আমরা,, নারীরা, এবার দাড়িয়ে গেছি নিজের পায়ে। আর এসব জোর আমি মানতে পারবো না। "

মামি বলল--" জানি,, পুরুষরা করলে,, কিছু বলা হয় না। এটা অন্যায়।

তোর স্বামী যদি খারাপ ব্যবহার করত তোর সাথে,, আমি তখনই তোকে বলতাম চলে আসতে।

নারী সবসময় অত্যাচার, চুপ করে সহ্য করবে,, এটা এখন আর চলবে না।

কিন্তু অচিন্ত্য খুবই ভালো মানুষ।

এরম হাসবেন্ড পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

আর তুই অচিন্ত্যকে ছেড়ে চলে যাবি ভাবছিস??

বাচ্ছাদের মতন,, আমি তোকে বোঝাতে পারব না।

কিছু করার আগে ভেবে করিস ।

তোরা খালি ভাবিস,, তোরা নিউ জেনারেশন।

তোরা অনেক এগিয়ে। তোদের অধিকার আছে সবকিছু করার।

আর আমরা হচ্ছি backdated । "

এটা বলে মামি ফোন কেটে দেয়।

মামির সব কথা শুনেও,,,, আমি নিজেকে আটকাতে পারলাম না। সেই উত্তমের কাছে চলে গেলাম ।


উত্তমের কাছে গিয়ে আমার আনন্দের শেষ ছিল না ।

আমি আর উত্তম চতুর্দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম আনন্দে।

প্রায় ৬ মাস হয়ে গেছিল ।

একদিন আমি উত্তমের হাত ধরে বলছিলাম--" উত্তম,,, আমরা কবে এক হব??" 🥰🥰🥰🥰🥰

উত্তম যে এমন একটা কথা বলবে ভাবিওনি ।

উত্তম বলল--" আমি তোমার সাথে থাকতে চাই । কিন্তু আমি,, বিয়ে করা পছন্দ করিনা।

আমি তো তোমার সাথে কোন খারাপ কিছু করছি না।

জরিয়ে ধরে আদর ও করছিনা ।

আমি তোমাকে ভালোবাসি,,, তোমার সাথে থাকতে ইচ্ছে করে,, আনন্দ করতে ইচ্ছে করে ।"

উত্তমের এই কথাটা শুনে আমার একটু খারাপ লেগেছিল । কিন্তু তাও আমি ওর সাথে ছিলাম ।

৬ মাস বাদে দেখি,,, অচিন্ত্যর সেই মাসতুতো দিদি এসছে ।

অচিন্ত্যর মাসতুতো দিদি,,,, অতশি,,, খুবই ভালোবাসত অচিন্ত্যকে। একদম,, নিজের ভাইয়ের মতন ।

অচিন্ত্যর দিদি আসতে আমার একটু অবাক লাগছিল ।

বলেছিলাম--" বসো দিদি। "

এই বলে চা করে নিয়ে এনেছিলাম ।

দেখছিলাম তখন,,, দিদি একটা file দিচ্ছে।

ফাইলটা খুলে দেখেছিলাম,,,, অচিন্ত্য নিজের জমির power of atony আমার নামে করে দিয়েছে ।

এসব দেখে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম ।

দিদিকে তখন বলছিলাম--" এটা কি দিচ্ছ অতশিদি?? আর কেন??"

অতশিদি বলল--" অচিন্ত্যর কিডনি রোগ হয়েছে ।

তাই অচিন্ত্য ঠিক করেছিল জমিটা তোর নামে করে দেবে। কারণ,,, কিডনির রোগে বাঁচার সম্ভাবনা অনেকটা কম থাকে।

মাসির তো বয়স হয়ে গেছে ।

মাসির পক্ষে,, জমি সামলানো সম্ভব নয় ।

আচ্ছা আমি আসি রে। কাজ আছে ।

চোখ দিয়ে তখন জল পরছিল,, ঝর্ণার মতন।

নিজেই নিজেকে বলছিলাম--" এ কি করলাম আমি??

আমি তো তোমায় কিছু দিতেই পারিনি ।

তুমি আমায় এতো কেন দিলে?

আমি তো তোমাকে ঠকাইয়ো নি।

কি ভেবেছ তুমি,, এই কাগজগুলো দিয়েই,, তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবে??

এ হবে না ।"


মামির কথাগুলো বারবার মনে পরছিল।

ওয়াটস্যাপ,,, ফেসবুকে, যার সাথে পারি গল্প করে,,, যখন খুসি প্রেম করে ফেলি।

অচিন্ত্যর ভালোবাসা,,,, আমি চিনতেও পারলাম না।

উত্তমের I love you কথাটাই,, আমি দেখলাম শুধু।

এগুলো যখন ছিল না,,,, তখন এরকম করতাম ও না।

আমি অচিন্ত্যর কাছে এসে বললাম-- " আমায় ক্ষমা করে দাও, একবারের জন্য,, অচিন্ত্য।

জানি,,,,, আমি যা করেছি,, এর কোন ক্ষমা হয়না ।

একবার সুযোগ দাও আমায় ।"

আমার চোখ দিয়ে জল পরছিল।

অচিন্ত্য তখন বলল--" কাঁদছ কেন???

আমি কি একবারও বলেছি,, তোমায় আমি অধিকার দেব না আমার কাছে আসতে??

তুমি যেমন ভুলতে পারোনি তোমার ভালোবাসা,,,

আমি ও পারিনি তোমায় ভুলতে।"

অচিন্ত্যর কথার কি উত্তর দেব বুঝতে পারছিলাম না।

মনে হচ্ছিল,, আমি খুবই বড়ো ভুল করেছিলাম।

অচিন্ত্য আর আমি এক হয়ে যাই ।

তারপর,,,, আমার মামার এক বন্ধু,,, ডাক্তার ছিল,,, ওনার কাছে গিয়ে,, অচিন্ত্যর চিকিত্সা করাই।

অচিন্ত্য এখন ভালো আছে ।।

আমি আর অচিন্ত্য,,, একসাথে আছি,,, থাকব ও।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance