দোস - ডেস
দোস - ডেস
হাঁফাতে হাঁফাতে আরুষি যখন কলেজে পৌঁছালো.. ঘড়িতে সাড়ে দশটা। এইরে.. আবার দেরী হয়ে গেল। ইংলিশের স্যার আবার খুব রাগী। কি কি বলবেন কে জানে। আর ক্লাসে যাবেই না! ধুর যা হওয়ার হবে। এখন সবার সামনে ওনার চাট কে খাবে!
কোলকাতার বেশ প্রসিদ্ধ কলেজ এটি। আরুষি ইংলিশ অনার্সের ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। ক্লাসের দিকে না গিয়ে ক্যান্টিনের দিকে যাওয়াই স্থির করল আরুষি। দেখা যাক, যদি রোহিত, স্যাম, জিকো, জিনি, পিউ এদের দেখা পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সকলেই অবশ্য আর্টসের স্টুডেন্ট না, কেউ কেউ কমার্সেরও আছে। সাইন্সের টাইম শিফট আলাদা। পিউ কেবল তার সাথে..
ওর জন্যেই এই গ্রুপের সাথে পরিচয় আরুষির। বাকি সকলকে সে ভালো ভাবে চেনেও না, আর খুব একটা পছন্দও করে না। একজন যেমন জিনি.. আলট্রা মড, নাভিতে পিয়ার্সিং.. মুখেও কিছু আটকায়না। পিউ একটু সরল ভালমানুষ ধরণের বলে ওকে তো বেহেনজি বলেই ডাকে। আর ওই এক স্যাম.. ওর চোখদুটো কেমন জানি গিলে খাওয়া ধরনের, আরুষির একদম ভাল লাগে না। পিউকে যে কতোবার বলেছে এদের সাথে না মিশতে, তা কে কার কথা শোনে! এদের মধ্যে রোহিতটাই যা একটু বেটার। তাদের গ্রুপের লিডার বলা যেতে পারে। যেমন পড়াশুনাতেও ভালো, তেমনই ব্যবহারেও। সকলের ঝগড়া ঝামেলাগুলো সেই মিটিয়ে রাখে। আর খুব সুদর গানও করে। তেমনই গীটারও বাজায়। ওর কথা ভাবতেই আরুষির মনটা পুলকিত হয়ে ওঠে.. কেমন জানি তলপেটটা গুরগুর করে ওঠে!
ক্যান্টিনে গিয়ে কিন্তু হতাশই হল সে। শুধু জিকো বসে। ধুর, ব্যাটা ভাঁড় একটা!
আরুষির কথাঃ আরুষি শিলিগুড়ির মেয়ে, এখানে পড়াশুনার জন্য এসেছে.. থাকে তার দাদা বৌদির কাছে। অনেক ছোটোবেলাতেই বাবাকে হারিয়ে,, সে ছিল তার বয়সী অন্যান্য ছেলেমেয়েদের থেকে অনেকটাই ম্যাচিওরড। দাদা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আর বৌদি স্কুল টিচার। বাড়িতে তার সব থেকে বেশী ভাব ছিল তার ভাইপো গোগোলের সাথে। গোগোলের বয়স বছর ছয় হবে, তা এর মধ্যেই যা পাকা হয়েছে.. হামেশাই আরুষির ফোনটা নিয়ে টানাটানি করে আর তার কাছে বকা খায়! তৎসত্বেও সুযোগ পেলেই পিসির ফোন তার হাতে।
জিকোকে দেখে বিরক্তি সহকারে আরুষি চলে আসছিল, এমন সময়ে একটা জিন্স আর স্লিভলেস প্রোভোকেটিভ টপে একটি মেয়ে তার রাস্তা আটকালো....
" আঃহা জিকো দেখেছিস, রোহিত আর পিউকে না দেখতে পেয়েই.. ম্যাডামের হল যত গোসা! আমরা তো আর কেউ নই বল.. তাই না?"
জিকো তালে তাল দিয়ে বিশ্রী ভাবে হেসে উঠল। কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে কন্ট্রোল করে নিল আরুষি। নাঃ এদের সাথে লেগে কোনো লাভ নেই.. মন আর রুচি নষ্ট। পিউ যে কি দেখে এই গ্রুপটায়!
কোনো উত্তর না দিয়ে পিছন ফিরে চলে আসছিল.. এমন সময়ে একটা মিষ্টি মেয়ে ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল....
"উফফ কোথায় ছিলি বলতো তুই, এতো দেরী করিস কেন? আজ ও ক্লাসটা মিস করলি তো! খুব মিস করেছি তোকে"।
আরুষির মুখটা নিমেষে আবার খুশিতে ভরে উঠল।
ক্রমশ