STORYMIRROR

Manik Goswami

Romance Classics

3  

Manik Goswami

Romance Classics

দীপমালা

দীপমালা

8 mins
230



পড়ন্ত বিকেলে হাতল ভাঙা চেয়ারটায় গা এলিয়ে বসে আকাশ পাতাল চিন্তায় নিজেকে ডুবিয়ে নিয়ে আপন মনেই বিড়বিড় করতে থাকে শুভদীপ। সংসার চালানো তো দিনে দিনে আরো বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ছে মালা। শুধুমাত্র টিউশানির ওপর নির্ভর করে কি আজকাল সংসার চালানো সম্ভব ? তার ওপর যে দুচারজন টিউশন পড়তে আসতো, এই লক ডাউনের বাজারে তারাও তো আসা বন্ধ করে দিয়েছে। জিনিস পত্রের দামও যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে সংসার চালানোর জন্য সামান্য সঞ্চয়ের টাকাও তো নিমেষেই শেষ হয়ে যাবে। তখন খাবই বা কি আর তোমাদেরই বা কি খাওয়াবো। তার ওপর অন্তরা তো এখনও পড়াশোনা করছে। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে আরো এক বছর লাগবে। তারপর যদি কোনো চাকরি জোগাড় করতে পারে, তখন একটু সুসময়ের দেখা মিললেও মিলতে পারে। অবশ্য আজকাল আর শুধু গ্রাজুয়েশনের কোনো দাম নেই, তাই চাকুরীর চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র। আমরা যে তিমিরে আছি সেখানেই থেকে যাবো। সময় থাকতে পড়াশোনাটা আর করিনি। এমন কি সামান্য গ্রাজুয়েশনের পরে চাকুরী না পেয়ে, হতাশ হয়ে, চাকুরী পাবার সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়ে, সেই যে টিউশানি পড়াতে শুরু করি তা আজও চালিয়ে যেতে হচ্ছে শুধুমাত্র দুপয়সা উপার্জন ছাড়া সংসারটা কেমন করে চলবে এই চিন্তা করেই। প্রথম দিকে অনেক ছাত্র ছাত্রীই আসতো। নাম ডাকও হয়েছিল বেশ ভালোই। স্টুডেন্টদের অভিভাবকরা ভরসা করার সাহস টুকুও পেতেন এই মাস্টারমশাইয়ের ওপর। ভালোই কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলো। অবশ্য ধীরে ধীরে স্টুডেন্টের সংখ্যা কিছু কমে যায়। সেটা হয়তো পাড়ার আরো অনেকে এই পেশাতে মনোনিবেশ করেছিল বলেই। তারপরেই তো শুরু হয়ে গেলো এই লকডাউন। পড়াশোনার পাঠটাই তো চুকেবুকে গেলো। কম্পিউটারটাও ঠিকমতো শিখে উঠতে পারিনি যে অনলাইন ক্লাস নেবার সাহসটুকুও দেখাতে পারবো। পড়াশোনাটাই যার শেখা হয়ে ওঠেনি সে আবার কম্পিউটার ঠিকমতো চালাবেই বা কি করে। ফলে এখন ঠেলা সামলাও। কি ভাবে সংসার চালাবে চালাও। নিজের গালেই নিজেকে চড় মারতে ইচ্ছে করছে। অথচ আমাদের এই পাশের বাড়ির অসীমদা, কি সুন্দর পড়াশোনা করে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পেয়ে বড় একটা চাকরি জোগাড় করে বাংলার বাইরে চলে গিয়েছে। শুনেছি বেশ উঁচু পজিশনে রয়েছে এখন, ভালোই আছে, দিব্যি আছে। আর দেখো আমার হাল, হায় কি কপাল। এখন উঠতে বসতে সহ্য করো বৌয়ের গালাগাল। অবশ্য মালা খুব ভালো মেয়ে। আমার এই দৈন্য অবস্থাটা বুঝতে পেরে আমার থেকেও বেশি কষ্ট পায় মালা । অপদার্থ আমি, মালার কষ্টটা এক দিনের তরেও দূর করতে পারলাম না।

সেই কবে থেকে মালার সঙ্গে আমার পরিচয়। মনে আছে ওরা যেদিন প্রথম আমাদের বাড়ির উল্টোদিকের বাড়িতে ভাড়া নিয়ে এলো, সেদিন বিকেলে ওদিকের জানালায় মালাকে দেখেছিলাম দাঁড়িয়ে থাকতে। আমাদের বারান্দায় আমি ছিলাম দাঁড়িয়ে। চোখে চোখ পড়তেই মুখটা নামিয়ে অন্যদিকে চেয়ে থাকার চেষ্টা করছিলো মালা। কিন্তু পারছিলো না। মাঝে মাঝেই আড় চোখে দেখে নিচ্ছিলো আমাকে। প্রথম দর্শনেই মালার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলাম আমি। কি সুন্দর টানা টানা দুটি চোখ। সে চোখে ভালোবাসার প্রথম পাঠটা যেন খোদাই করাই ছিল। টিকালো নাক, সুন্দর মায়াবী মুখশ্রী। মাথায় ঘন কালো কোঁকড়ানো চুলের বাহার। গায়ের রংটা একটু চাপা হলেও শরীরের গঠন আর চাহনি আমার মতো বয়সের যে কোনো ছেলেকেই আকৃষ্ট করবে। আমি মালার প্রেমে পড়ে গেলাম। সেই প্রথম। তারপর থেকে মালা জানালায় এসে দাঁড়ালেই আমার চোখে ওর চোখ পড়তোই। আমিও যত বেশি সময় পারা যায় বারান্দাতেই কাটাতে লাগলাম। সারাদিনে অন্ততঃ একবার দেখা পাবার আশায় উদ্বেল হয়ে থাকতাম। দেখা হলেই চোখে চোখে অনেক কথা, অনেক অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়ে যেত। ধীরে ধীরে ভালোলাগা চাহনিটাই কবে যেন প্রেমে পরিণত হয়ে গেলো। প্রায়শঃই মালাকে আমি স্কুলে পৌঁছে দেবার জন্য সাথে যেতাম, আবার কোনো কোনোদিন স্কুল থেকে ফেরার সময়ও একসাথেই ফিরতাম। ছুটিছাটার দিনে দু'জনে শহর কলকাতার রাস্তাগুলো চষে বেড়াতাম। মনে হয় এমন কোনো রাস্তা বাদ যায়নি যেখানে আমাদের দু'জনের পায়ের ধুলো পড়েনি। এমন কোনো পার্কের বেঞ্চ বাকি নেই যেখানে আমরা বসিনি। এমন কোনো কথা বাকি নেই যেগুলো আমরা আলোচনা করিনি। পার হয়ে আসা সে সময় ছিল উচ্ছ্বলতায় পরিপূর্ণ, অবিস্মরণীয়, একেবারেই ভোলা যায় না। অবশ্য, আমাদের এই মেলামেশা পাড়ার মা-কাকিমাদের নিশ্চয়ই খুব দৃষ্টিকটু লাগতো। পড়ন্ত বেলায়, বাড়ির বারান্দা অথবা ছাদে তাদের আলোচনার বিষয় বস্তুর মধ্যে অন্ততঃ একবার হলেও এসে যেত আমাদের সাহসিকতার গল্প। আজকালকার ছেলেমেয়েরা একদম উচ্ছন্নে গেছে, গুরুজনদের সন্মান দিতেই জানে না। বড়দের মানতে চায়না বলেই তো এইভাবে তাদের চোখের সামনে দিয়েই যুগলে ঘুরে বেড়ায়। উচ্ছন্নে গেছে, সব উচ্ছন্নে গেছে, সেইজন্যেই না সবার সামনেই এইভাবে সাহস দেখিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারছে। আর, মা-বাবারাও কেমন পাল্টে গেছে দেখো। তারা কি জানে না যে তাদের বাড়ির ছেলে বা মেয়ে কি করে বেড়াচ্ছে সারাদিন ধরে। এতটুকু শাসন নেই, এতটুকু বাধা দেবার ক্ষমতা বা ইচ্ছে কিছুই নেই। মা-বাবা যদি দেখেও না দেখার ভান করে, ছেলেমেয়েদের এইভাবে প্রশ্রয় দিতে থাকে, তবে এই উঠতি বয়সে তারা তো উচ্ছন্নে যেতে বাধ্য। আমরা অবশ্য কাকিমাদের এইসব অতিরঞ্জিত মন্তব্য গুলোকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনতাম না। জানতাম, আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি, কোনো শাসনই এই ভালোবাসার গভীরে ফাটল ধরাতে পারবে না। তাই, কোনো কটু মন্তব্যকেই আমরা কোনো মূল্য দেবার প্রয়োজন ছিল বলে মনেই করতাম না। বিশ্বাস করতাম যে ভালোবাসা স্থান, কাল, পাত্র কোনো কিছুই বিচার করে মনের মাঝে ঠাঁই নিতে পারে না। সেজন্যই পাড়ার কে কি বললো, কি মনে করলো, কোনো কিছু নিয়েই আমরা অযথা মাথা ঘামাতাম না। আর, কাল এর ব্যাপারে বলতে পারি, না গ্রীষ্ম না বর্ষা, কোনোকালই আমাদের ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখতে পারেনি। পাত্র হিসেবে আমিও মন্দ ছিলাম না। সুস্বাস্থের অধিকারী ছিলাম। নিয়মমতো শরীর চর্চা করতাম। তবে হ্যাঁ, বিদ্যাচর্চা করতে আমার মোটেই ভালো লাগতো না। কোনোমতে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজের বাধাও সসম্মানে টপকে যেতে পেরেছিলাম। লেখাপড়া করতে ভালো লাগতো না ঠিকই, কিন্তু তাই বলে একেবারে কিছুই শিখতে পারিনি তাও কিন্তু নয়। আমিও

যে কিছু শিখেছি সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারলাম টিউশন পড়াতে গিয়ে। বুঝতে পারলাম যে জ্ঞানের ভান্ডারটা আমার একেবারেই শূন্য কলসি নয়। তাই তো এতগুলো বছর শুধুমাত্র টিউশনির ওপর নির্ভর করে নিজের সংসারটাকে টেনে চলেছি। মালার সাথে প্রেমিক মনটাকে সঙ্গী করে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ানোর আগে পর্যন্ত খেলাধুলাটা আমি ভালোই করতাম। পাড়ার যে কোনো প্রতিযোগিতা মূলক খেলায় আমাকে বাদ দেবার কথা চিন্তাই করতে পারতো না টিমের নির্বাচক মন্ডলী। সেই খেলাধুলাটাও ছাড়তে হলো যেদিন থেকে মালার পাশে পাশে হাঁটতে শুরু করলাম। কাকিমাদের অভিযোগের তীর আমাদের দিকে এমনভাবে ধেয়ে আসতে লাগলো যে আমাদের এই নির্মল প্রেম কাহিনীটাকে বিকৃত ভাবে আমাদের বাড়ির গুরুজনদের কানে পৌঁছাতে লাগলো। আমরা নাকি দু'কান কাটা, আমাদের নাকি লজ্জা শরম বলে কিছু নেই, আমরা নাকি পাড়ার গুরুজনদের উপযুক্ত সম্মানটুকুও দেবার তাগিদ অনুভব করি না - এই সব। পাড়ার মধ্যেই আমরা নাকি হাত ধরাধরি করে, প্রেমে গদগদ হয়ে বক বকম করতে করতে সবার নাকের ডগাতেই হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চলি। আমাদের কোনো শালীনতা বোধ নেই। পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নাকি আমাদের দেখে আমাদের মতোই উচ্ছন্নে যেতে বসেছে। এই ধরণের কথার ওপর আরো রঙের প্রলেপ দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে আমাদের ঘরে ঘরে পরিবেশন করে গেলেন আমাদেরই পাড়ার কাকিমারা। ফলস্বরূপ মালার ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর ওপর জারি হয়ে গেলো নিষেধাজ্ঞা। স্বাধীনতা বলতে শুধু কখনো সখনো জানালায় বসে মুখটুকু দেখানোর সুযোগটুকুই রইলো। আমার ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করার চেষ্টা করেছিলেন আমার মা-বাবা। কিন্তু ওই পর্যন্তই। আমার বারান্দায় এসে দাঁড়ানোর স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করতে পারেনি কেউ। তাছাড়া রাস্তায় বেরোনোর পূর্ণ স্বাধীনতাটাও ছিল। ঘরে আটকে রাখলে দোকান বাজারটা করবে কে। বাবা তো সারাদিন অফিসের কাজেই ব্যস্ত। আর মা তো যাবেন না বাজার হাট করতে। তাই বাইরে যাওয়াতে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়নি। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল শুধু মালার সাথে দেখা করার ওপর। তাতে কি এসে গেলো। মালা তো কলেজে যাবেই, রাস্তায় কথা বলার লোক হিসেবে আমাকেই পেতে থাকবে। আগের তুলনায় তফাৎ শুধু এইটুকুই হলো যে আমরা আর পাড়ার মধ্যে দেখাই করতাম না। বাকি সমস্ত জায়গা রীতিমতো চষে বেড়াতাম। ইতিমধ্যে আমি কলেজের গন্ডি পেরিয়ে গেছি। বিভিন্ন জায়গায় চাকুরীর চেষ্টাও শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু আমার মতো সাধারণ মানের কোনো ক্যান্ডিডেটকে কোনো কোম্পানি ইন্টার্ভিউতেই ডাকতেই চায় না। ফলে চাকুরী পাওয়া আমার আর হলো না। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে, বিভিন্ন দিক থেকে, বিভিন্ন ভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর অবশেষে টিউশনি পড়ানোর সিদ্ধান্তটা নিজেই নিয়ে নিই। কিছুদিনের মধ্যেই মালাকে ঘরে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তটাও নিয়ে নিলাম। নিজের বাবা-মাকে জানালাম, মালার বাবা-মাকেও জানিয়ে দিলাম যে আমরা দুজন বিয়ে করতে চলেছি। অনেক টাল-বাহানার পর দুই পরিবারের গুরুজনেরা অবশেষে আমাদের পক্ষেই তাদের রায় জানিয়ে দিলেন। মালা এসে উঠলো আমাদের ঘরে। বিয়ে তো করলাম, কিন্তু সংসারে স্বচ্ছ্বলতা আনতে পারবো কি? সারাদিন মাথার মধ্যে একরাশ চিন্তা। সামান্য টিউশনির ওপর ভরসা করে জীবনে এতোবড়ো একটা পদক্ষেপ নিয়েছি, শেষ পর্যন্ত সামলে উঠতে পারবো তো ? মালাকে সুখী রাখার সবরকম দায় দায়িত্ব এসে পড়েছে আমার কাঁধে। টিউশনির ব্যাচ বাড়িয়ে দিয়ে আরো সময় দিতে লাগলাম পড়ানোর পেছনে। খাটুনিটা একটু বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সংসারের আর্থিক জোগানটাও তো কিছুটা হলেও বেড়েছে। সপ্তাহান্তে মালাকে সঙ্গে নিয়ে একটা সিনেমা দেখতে যাবার অভ্যাসটা এখনও ছাড়তে পারিনি। সময় সুযোগ পেলে সেটা চলছে এখনও। রঙিন স্বপ্নে ভেসে ভেসে কাটিয়ে দিলাম বেশ কয়েকটা বছর। ইতিমধ্যে সংসারে নতুন অতিথির আগমন হয়েছে। মালার কোল জুড়ে এসেছে অন্তরা, আমার খেলার সাথী, হেসে খেলে সময় কাটিয়ে দেবার জন্য ভগবানের পাঠিয়ে দেওয়া এক সুন্দর উপঢৌকন। সংসার চলছিল স্বাভাবিক ভাবে, আমাদের খেয়াল খুশি মতো। সংসারের দায়িত্বপূর্ণ বাঁধনে বাঁধা পড়ে গিয়েও মালার ওপর অন্তরের টানে ঘাটতি হয়নি কিন্তু এতটুকু। মালাও মনের কোণে ঠাঁই দেয়নি কোনো মান-অভিমানকে। প্রশ্রয় দেয়নি নিজেদের মনে কোনো অসহিষ্ণুতা বা বিরোধিতার মতো কোনো দূরত্ব বাড়িয়ে দেবার মতো অশনি সংকেতকে।

লক ডাউন চলছে। সংসারে এখন ভাটার টান। দৈন্যতা উঠছে ফুটে। সংসারের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আঘাত পাচ্ছে টিউশনিটা টিম টিম করে চলছে বলে। মালা এগিয়ে এসেছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। টেলারিং এর কাজ কিছু শিখেছিল অল্প বয়সেই। সেটা শুরু করেছে নতুন করে। দুচারটে যা অর্ডার পাচ্ছে সময়ের মধ্যেই করে দিচ্ছে। ঘরে বসে দুচার পয়সা উপার্জন করার চেষ্টাটা সংসারের কাজেই লাগছে। তবুও এখন এমন একটা অসহায় অবস্থায় নিজেকে খুব ছোট, খুব নিচু প্রকৃতির মনে হচ্ছে। মালার মতো মেয়েকে ঘরে নিয়ে এসে শুধু কষ্টই দিয়ে গেছি। অপরাধবোধ টা খুব বেশি করেই মনে লাগছে। নিজের এতটুকু সামর্থ্য হয়নি যে ভালো একটা চাকুরী করে মালাকে একটা সুন্দর সংসার উপহার দেব। এখন আমি মনে করি যে অল্প বয়সের আবেগকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমি বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি। মালার ওপর অবিচার করে বসেছি। ওকে অন্য একটা সুন্দর জীবন বেছে নেবার সুযোগটুকুও পর্যন্ত আমি দিই নি। আমি সত্যিই একজন স্বার্থপর ব্যক্তি। নিজের মনটাকেই শুধু বোঝার চেষ্টা করেছি। মালাকে, তার মনের অন্য কোনো রকম ইচ্ছাকে আমি প্রাধান্য দিতে চাইনি।

আমি বিমর্ষ হয়ে বসে আছি দেখে, মালা এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলে উঠলো, কি এতো চিন্তা করছো বলতো। সারাদিন ধরে টাকার চিন্তা করলে তোমার শরীর কি আর ঠিক থাকবে ? অসুস্থ হয়ে পড়বে তো। মন্দার বাজারে তোমার উপার্জন কমেছে তো তাতে কি হয়েছে। আমিও তো কিছু আয় করতে পারছি। দেখবে, আমাদের দুজনের মিলিত প্রচেষ্টায় এই দুর্দিন একদিন কেটে যাবে নিশ্চয়ই। আমরা জয়ী হবোই, আর আমাদের এই জয় হবে দৈন্যতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়, মানসিক অশান্তির বিরুদ্ধে জয়, নৈতিকতার জয়, চিরকালীন ভালোবাসার জয়। আজ আর কোনো দুঃখ নয়, কোনো মন খারাপ করা নয়। এসো, আমরা হাসিমুখেই সমস্ত বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলার শপথ গ্রহণ করি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance