Sayantani Palmal

Inspirational

2.5  

Sayantani Palmal

Inspirational

দেবীপক্ষ

দেবীপক্ষ

4 mins
720


মেয়েটাকে দেখেই রক্ত গরম হয়ে গিয়েছিল বিনায়ক বোসের। কী ফিগার! ভগবান বোধহয় ওকে বানানোর সময় খুব ভালো মুডে ছিলেন । বিনায়ক ওর ফাইলটায় নামকাওয়াস্তে একঝলক চোখ বুলিয়ে ছিলেন। বিনায়ক বোসের পি.এর চাকরিটা পাওয়ার জন্য ওর ঐ আগুন ঝরানো রূপ ই যথেষ্ট। মেয়েটার নাম তৃষা। বিনায়ক বোসের আর কিছু জানার দরকার নেই। বিছানায় তো আর ডিগ্রী দরকার হয় না। কথাটা মনে হতে নিজের মনেই হাসতে থাকলেন বিনায়ক। আজ পর্যন্ত কত যে মেয়ের সাথে শুয়েছেন তার হিসেব বোধকরি ভগবানেরও জানা নেই। বিনায়কের এই সুপুরুষ চেহারা আর মেয়েদের আকৃষ্ট করার সহজাত ক্ষমতা এই দুইয়ের মেলবন্ধন ঘটার ফলে মেয়েরা পতঙ্গের মত তার শরীরের আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে। বহু মেয়ে এই আগুনে ঝলসে গেছে কিন্তু বিনায়ক পাত্তা দেননি। যাকে সহজে পেয়েছেন ভালো যে সহজে ধরা দেয়নি তার সাথে একটু প্রেমের অভিনয় ব্যস বিনায়ক বোসকে উপেক্ষা করার মত মেয়ে এই পৃথিবীতে জন্মায় নি।


           দশদিন হয়ে গেল তৃষা কাজে যোগ দিয়েছে কিন্তু এখনও বিনায়ক মেয়েটার মনের তল পাননি। মেয়েটা তাঁকে আহ্বানও করছে না আবার উপেক্ষা করছে সেটাও বলা যাবে না। প্রথম কয়েক দিন তো কেমন জড়সড় হয়েছিলো তারপর দিনচারেক হল পাখি ডানা মিলতে আরম্ভ করেছে। এবার আর বিনায়ককে বেশি অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হচ্ছে না। আসলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। নাহ বিছানায় বিনায়ক অনেক সিক্স প্যাকধারী যুবককে দশ গোল দিতে পারেন কিন্তু এই তৃষার মত মেয়ের বয়সী কচি মেয়েদের সাথে রয়েসয়ে এগোতে হয় তবে এসব বিনায়কের কাছে কোনও সমস্যাই নয় এখন পর্যন্ত তার সাফল্য হাণ্ড্রেড পারসেন্ট।

           আজ একটা চেষ্টা করতেই হবে বিনায়ককে। আজকাল তৃষাকে দেখলেই ধমনীর মধ্যে দিয়ে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে রক্ত ছুটছে। মেয়েটা ধরা না দিলেও কেমন একটা ইঙ্গিত যেন হাওয়ায় ভাসিয়ে দিচ্ছে। সাড়ে সাতটা বাজে তৃষা এবার বেরিয়ে যাবে। তৃষা ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো

 বিনায়ক ওর কাছে এগিয়ে গেলেন। 

“আজ সন্ধ্যায় কি আমি একজন অপূর্ব সুন্দরী মহিলার সাথে এককাপ কফি খাওয়ার সুযোগ পেতে পারি ?”

“উহুঁ আজ সন্ধ্যায় সেই সুন্দরী মহিলার বেস্ট ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি আছে।”

তৃষার অহংকারী উত্তর যা ওর মত রূপসীকেই মানায়।

“আমার দুর্ভাগ্য ।”

“তবে চাইলে আজ রাতটা সেই সুন্দরী মহিলা আপনাকে কম্পানি দিতে পারে ।”

চোখের ইঙ্গিতে যেন আরও অনেক কথা বলে দিল তৃষা।

ওফ্ এ যে মেঘ না চাইতেই জল। বিনায়ক রাস্তা তৈরি করতে চাইছিলেন আর এ তো লক্ষ্যেই পৌছে গেলেন।


     রাতের অন্ধকার চিরে হু হু করে ছুটে চলেছে বিনায়ক বোসের রথ। সাদা মার্সিডিজটাকে এই নামেই ডাকেন বিনায়ক। বিখ্যাত কর্পোরেট কর্তা বিনায়ক বোস চলেছেন গোপন অভিসারে। যতই হোক বয়সটা নেহাতই কম আর নতুন মেয়ে তাই এখনও একটু ঐ "স্যার অফিসের কেউ যেন না জানে" এই রকম বায়নাক্কা গুলো আছে। ডাকলোও ওর কোন বন্ধুর ফাঁকা ফ্ল্যাটে, বিনায়কের পছন্দসই জায়গ নাকচ করে দিল। কেউ যদি দেখে ফেলে সেই ভয়ে। 


         ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁইছুঁই। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃষার নিখুঁত ভাস্কর্যের মত শরীরটা বিনায়কের হাতের মধ্যে এটা মনে হতেই শরীরটা উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে উঠছে। মাথাটা মাঝে মাঝে ঝিমঝিম করছে। আনন্দের আতিশয্যে ড্রিঙ্ক করাটা একটু অধিকমাত্রায় হয়ে গেছে। কুছ পরোয়া নেহি। টাকা নারী সুরা এই তিনটি নেশাই তো আছে বিনায়কের। এসবের আকর্ষণেই বিয়ের মত ফালতু ঝামেলায় জড়ান নি।


          রাস্তাটা দুভাগ হয়ে গেছে। তৃষা তাঁকে বাঁদিকের রাস্তাটায় যেতে বলেছে। এদিকের পথঘাট একেবারেই চেনেন না বিনায়ক তাও ড্রাইভার নেননি কারণ গোপন অভিসারগুলো তিনি গোপনই রাখেন। তৃষা খুব ভালো ভাবে পথ নির্দেশ দিয়েছিল তাঁকে। বাঁদিকের রাস্তায় ঢুকে পড়লেন বিনায়ক। চারিদিকে ঘন অন্ধকার। যেন একটা কৃষ্ণগহ্বরে ঢুকছেন বিনায়ক।


            সকাল ছটা। টিভিতে মা মন দিয়ে মহালয়া দেখছে। পিতৃপক্ষের অবসান আর দেবীপক্ষের সূচনা। তৃষা চুপচাপ সোফায় বসে আছে কিন্ত অশান্ত মনের মধ্যে  কালবৈশাখীর চঞ্চলতা। কাল জীবনের সব চেয়ে বড় ফাটকাটা খেলেছে সে কিন্তু খেলার ফলাফল এখনও অজানা। ফোনটা বেজে উঠল তৃষার। রিংটোনে বাজছে মহিষাসুর মর্দিনীর আগমনী গান...

“হ্যালো” 

“খবরটা পেয়েছিস?”

“কী খবর?”

“ও তার মানে তুই এখনও শুনিসনি।বিনায়ক স্যার কাল রাতে অ্যাকসিডেন্ট এ মারা গেছেন ।”

“হাউ স্যাড… কি করে হোলো?”

“আরে ঐ লোকটা এভাবে মরবে না তো কে মরবে রে? আকন্ঠ মদ খেয়ে একটা ডেড লেনে ঢুকে পড়ে ছিল। রাস্তার শেষে একটা আণ্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এর মাটি খোঁড়া ছিল। বিল্ডিং মেটেরিয়াল পড়েছিল। সেইখানে হরিবল অ্যাকসিডেন্ট। স্পট ডেড।ক ত মেয়ের যে জীবন নষ্ট করেছে লোকটা ঠিক নেই। তাদের দীর্ঘশ্বাসের দাম তো আছে।”

“তাই? আমি জানতাম না তো।”

‘তুই নতুন তো তাই জানিস না। পুলিশ তো সন্দেহ করছে ঐ এলাকায় দুটো বার আছে যেখানে কল গার্লরা আসে। ওখানেই যাচ্ছিল। মদের ঘোরে ভুল রাস্তায় ঢুকে গেছে। যাইহোক, এখন রাখছি। পরে কল করব। টিভিটা খোল নিউজে দেখাচ্ছে।”


   তার অন্তরে যাই হোক বহিরঙ্গে তার প্রকাশ চলবে না কাউকে বুঝতে দেওয়া চলবে না এই খেলার নেপথ্য নায়িকা সে। সুযোগ খুজছিল সে। অনেক রকম ছক কষে ছিল তার মগজে। সেদিন শয়তানটা সুযোগ খুঁজতে সেও সুযোগ পেয়ে গেল। ঐদিকে একদিন একটা কাজে গিয়ে তৃষা নিজেই ঐ রাস্তায় ভুল করে ঢুকে পড়েছিল। তখনই এই ছকটা মাথায় আসে। শয়তানের জন্য এটাই ঠিক রাস্তা। রাত বারোটার অন্ধকার, নেশাতুর বিনায়ক বোস আর বিনায়কের কাম লালসার তাড়না এই তিনের ত্র্হ্যস্পর্শে তার উদ্দেশ্য সফল হবেই এই আত্মবিশ্বাস তৃষার ছিলই। আসলে আত্মবিশ্বাস, ধুরন্ধর মস্তিষ্ক এসবই তো জন্মসূত্রে পেয়েছে তৃষা।

 

মায়ের দিকে তাকাল তৃষা। অস্ফুটে বলল, "মা তোমার মত দেবীকে যে সমাজের চোখে অপবিত্র করেছে, তোমার সারাটাজীবন নষ্ট করেছে। যার জন্য আমাকে জারজ সন্তানের তকমা পেতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত সমাজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে সেই অসুরটা আজ শেষ মা। হ্যাঁ অসুর ওকে বাবা বললে পৃথিবীর লক্ষ কোটি বাবাদের অসম্মান হয়। ইচ্ছে করেই আমার বসের মিথ্যে নাম বলেছি তোমাকে। সরি মা।"


     টিভিতে দেখাচ্ছে অসুরের বুকে ত্রিশূল বিদ্ধ করলেন মা দূর্গা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational