দেবদাস আর একটা আত্মহত্যা
দেবদাস আর একটা আত্মহত্যা
ও পাড়ার রাজু গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে গো গিন্নি ...
তারণ খুড়ো হাঁকাতে হাঁকাতে বাজারের থলি নিয়ে ঢুকল । সাইকেলটা বাইরে রেখেই বাজারের থলি হাতে তারণ ঢুকে এসেছে । গিন্নি মানে সরমা তুলসী তলায় জল দিচ্ছিল । একটা জোয়ান ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে একটু বিমর্ষ হলো সরমা । মনে মনে বলল , ঠাকুর ছেলে গুলোর মতিগতি বোঝা ভার । মা বাপের কোল শূন্য করে যখন জোয়ান ছেলে চলে যায় কেমন লাগে ? আমাদের বরং দুটো মেয়ে দিয়ে ভালোই করেছ নারায়ণ । মেয়েরা কই মাছের জান , তাদের ধৈয্য ও সহ্য অনেক বেশি । তাই সন্তানের এভাবে মরা মুখ দেখার অন্তত দুর্ভাগ্য হবে না এ জীবনে ।
তারণ খুড়ার দুটি মেয়ে । একটি বিয়ে দিয়ে শশুর বাড়ী পাঠিয়েছে খুড়া এক বছর আগে একটি বিয়ের পিঁড়িতে বসলেই হয় । বাজারের থলি থেকে হাট থেকে আনা তাজা ফুলকপি ,সীম , বেগুন , কচি লাউ বেতের ঝুড়িতে রাখে সরমা । স্বামী আজ খিচুড়ি খাবে বলেছে । তাই কুটনো কাটতে বসতে হবে । মেয়ে রমাকে ডাকলেন সরমা । রমা বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে বেরিয়ে এলো । সরমা মেয়েকে বললেন , এই ছুরি ! খালি বসে বসে থাকা । আয় জ্বাল দিয়ে ফেল চটপট । আমি অনাজ কেটে ফেলি । খিচুড়ি বসাতে হবে ।
রমা মুখ বেঁকিয়ে বলে , কেন বাবা কই ?
সরমা বটিতে মনোনিবেশ করেই বলল , কামার পাড়ার রাজু মরেছে । তাই তোর বাবা গেল দেখতে ।
রমা খবরটা পেয়েই যেন থম মেরে গেল । এটা কি করে হতে পারে ? দিদিকে রাজু ভালোবাসত । রাজু কামারদের ছেলে বলে দিদি বাড়িতে বলেনি । ইস্কুল মাস্টার পাত্র পেয়ে তার সাথেই বিয়ে করে চলে গিয়েছিল । সেই রাজুর কি কান্না । দেবদাস হয়ে গেল একেবারে । সারাটা দিন কেবল সোমা আর সোমা । তখন রমা সদ্য ইলেভেন থেকে টুয়েলভ । দিদির স্বার্থপরতার জন্য ছেলেটার কষ্ট দেখে খারাপ লাগে ওর । রাজুকে বোঝায় রমা । ওকে বলে রাজু চাইলে রমা ওর বন্ধু হবে । তারপর অনেক সামলে নিয়েছিল ছেলেটা । রমাকে ছুটকি ছুটকি বলে বলে খ্যাপাত সবসময় । রমা দাদার চোখেই দেখেছিল রাজুকে । তাই তো ওর ওই হেরে যাওয়া প্রেমিকের মত হাল দেখতে পারেনি । ওকে স্বাভাবিক করে তুলতে চেয়েছিল ।
কাল রাজু ভরার পাড়ের কাছে ডেকেছিল রমাকে । রমাকে একটা নুপুরের গোছা দিয়ে বলেছিল ... টিউশনির টাকা দিয়ে বানালাম । তোকে দেব বলে ছুটকি । রমা নিয়েছিল নুপুর জোড়া । রাজু বলেছিল , ভালোবাসি তোকে রমা । সোমা না তুই আমার পারো । আর আমি তোর দেবদাস ।
রমা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় । কি বলবে বুঝতে পারেনি । নুপুর জোড়া রাজুর হাতে ফেরত দিয়ে সাইকেল নিয়ে ফিরে এসেছিল । রাজু কি বুঝেছিল জানা নেই । তবে রমা বুঝেছে এই প্রত্যাখ্যান আর সহ্য করতে পারল না ছেলেটা । তাই তো রাজু চিরকালের মত পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে ।
ও রাজুদা গো ... বলে মাটিতে আছড়ে পড়ল রমা ।
সরমা মেয়ের এই শোক দেখে বুঝতে পারলেন না যে মেয়ে কেন এমন করছে । আশেপাশের লোক দেখলে কি বলবে ? বলবে মনে হয় রমার সাথে কিছু ছিল রাজুর । তাই জোয়ান ছেলেটা মরল । সরমা তাড়াতাড়ি খিরকি নাচের দরজা বন্ধ করে এসে মেয়ের চুলের মুঠি ধরে মেয়েকে ঘরে ঢোকাতে লাগলেন । বদনামকে সরমা বড্ড ভয় পান ।
