ডাক্তারের ওপর ডাক্তারি
ডাক্তারের ওপর ডাক্তারি


সেদিনটা ছিল রবিবার। আমি সেই সপ্তাহে হস্টেলেই ছিলাম। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবার পর থেকে বই কেনা থেকে শুরু করে,পকেট মানি বাঁচিয়ে খাওয়া দাওয়া করা বা আড্ডা দেওয়া, সবেতেই ভরসা সেই বই পাড়া। সেদিনও আমি আমার রুম মেট ধ্রুবকে পাকড়াও করে প্রথমে পুঁটিরাম থেকে নিমকি,মোহনভোগ দিয়ে পেট পুজো সারলাম তারপর একটা পুরনো বইয়ের দোকানে একটু খোঁজ করতেই পেয়ে গেলাম বইটা - হেনরি গ্রের লেখা 'এনাটমি অফ দি হিউম্যান বডি' । লোকজন এটাকে এনাটমির বাইবেল বলে থাকে। ওপর ওপর নেড়েচেড়ে দেখলাম বইয়ের অবস্থা তেমন কিছু মন্দ নয়। সারা বছর এত বই কিনতে হয় যে কথায় কথায় নতুন বই কিনতে গেলে পকেটে টান পড়তে পারে। তাই একটু দরদাম করে কিনেই ফেললাম বইটা।
বইটা ঘরে গিয়ে সেদিন রাতে খুলতেই প্রথম পৃষ্ঠায় দেখলাম লেখা আছে - এ গিফট ফ্রম বাবা মুস্তাফা টু জ্যাসোয়া ফ্রাঁসো, ১৯২০। বুঝলাম বইটির বর্তমান অবস্থা যেমনি হোক না কেন বয়স তার চেয়ে ঢের বেশি। আরো একটা অদ্ভুত জিনিস চোখে পড়ল। বইয়ের মাঝে মাঝে বেশ কয়েকটা পাতা কেউ যেন নিজের হাতে জুড়েছেন। সেই পাতাগুলোতে এনাটমির বিভিন্ন বিষয়ে ইলাস্ট্রেশন দেওয়া ,যেগুলো আমার মতে তখনকার মত বেশ উপরি পাওনা বলেই মনে হল।
বইটা যত পড়তে লাগলাম ততই অবাক হতে লাগলাম। বেশ সুন্দর অনুপুঙ্খ বর্ণনা আছে, কি ভাবে শবদেহ ব্যবচ্ছেদ করা হয়, দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অবস্থান তা নিয়ে তো বটেই, সেই সাথে হাতে লেখা সেই পাতাগুলোতে লেখা আছে বিশদে, কি ভাবে শবদেহ জোড়া লাগানো যায় সেই সংক্রান্ত বিষয়েও। এত সাবলীল ভাবে জটিল প্রক্রিয়াগুলো বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যে, যে কোনো ভালো ছাত্র ওই পাতাগুলো পড়েই অনেক দূর কাজ করতে পারবে। প্রত্যেকটা দৃশ্য যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো। কিন্তু যাই হোক না কেনো, শবদেহ জোড়া দিতে হবে কেনো? ব্যপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হল আমার।
আমি নিজের গরজেই এবার একটু খোঁজ খবর করতে শুরু করলাম। এই বিষয়ে এগোনোর আগে ১৯২০ সালে জ্যাসোয়া ফ্রাঁসো নামে এই শহরে কেউ ছিল কিনা সেটা আগে জানা প্রয়োজন। প্রথমেই গেলাম সেই বইয়ের দোকানে। জিজ্ঞেস করলাম বইটা সে কোথা থেকে পেয়েছে। যেটুকু জানলাম পাইকারি পুরোনো বইয়ের বাজার থেকেই ওজন দরে সব পুরোনো বই কিনে আনেন ওনারা। বেশিরভাগ বইই বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে ফেরিওয়ালারা কিনে কিংবা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সুতরাং মোটের ওপর এটুকু ধরে নেওয়া যায় যে বইটির আগের মালিক হয় তো এই শহরেরই কেউ হবেন। কিন্তু এটুকু তথ্য থেকে কোনো সিদ্ধান্তেই আসা সম্ভব নয়।
আমি তারপর অনেক ভেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা আপডেট দিলাম বইটার প্রথম পাতার ছবি দিয়ে। সেখানে বললাম বইটির আসল মালিকের সঙ্গে আমি বিশেষ কারণে যোগাযোগ করতে আগ্রহী। আমার পোস্টটা আমার চেনা জানা বন্ধু বান্ধবদেরও বললাম যতটা সম্ভব শেয়ার করতে। এতে অবশ্য কাজ হল।
দুদিন পর আমি যখন ডিনার করবো বলে নিচে নেমেছি তখনই মেসেঞ্জারে একটি মেসেজ ঢুকলো। দেখলাম নীলাঞ্জন মাইতি নামে জনৈক এক ব্যক্তি আমার সাক্ষাৎপ্রার্থী । তিনি বইটি সম্পর্কে আমাকে কিছু জানাতে চান। আমি যদি আগ্রহী থাকি তবে যেনো আসছে শনিবার ওনার সাথে দেখা করি। বুঝলাম এই সপ্তাহান্তেও আমার বাড়ি যাওয়া মাটি হবে।
আমি আমার রুমমেট ধ্রুবকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে , প্যারামাউন্টে ডাব সরবত খাইয়ে তাকেও রাজি করালাম এই সপ্তাহটা আমার সাথে হোস্টেলেই থেকে যেতে। তারপর শনিবার দিন তাকে বগলদাবা করে নিয়ে নির্ধারিত সময়ে মিস্টার মাইতির দেওয়া নির্ধারিত ঠিকানায় হাজির হলাম।
ভদ্রলোকের বাড়ি গল্ফ গ্রিনের অভিজাত পাড়ায়। বেশ সৌম্য দর্শন, আলাপি মানুষ। বয়স দেখে আন্দাজ করা মুশকিল। তবু মনে হল পঞ্চাশের গণ্ডি ছাড়িয়েছেন। আলাপ পরিচয়ের পর্ব চুকলে মিস্টার মাইতি বললেন - "বুঝতেই তো পারছেন , আমায় দেখে, আমি ব্যবসায়ী মানুষ। পড়াশোনায় খুব একটা উৎসাহ কোনো কালেই ছিল না আমার।পূর্ব পুরুষের থেকে টাকা-কড়ি, বিষয় সম্পত্তি কিছু কম পাইনি। কিন্তু সেসব দেখভালের জন্য যত লোক লস্কর প্রয়োজন, আমার বা বলতে পারেন আমার বাবার পক্ষে পরবর্তীকালে তত রাখা সম্ভব হয় নি। ফলে একরকম দায়ে পড়েই অনেক কিছু নিলামে চড়াতে কিংবা পাতি পাইকারি দরে বেঁচে দিতে হয়েছে। এই বইটি আমার নয়। আমাদের বৌবজারের পুরোনো বাড়ির একতলায় ১৯৭০ সাল অব্দি এক ফিরিঙ্গি সাহেব ভাড়া থাকতেন। এটি তাঁর। নাম জ্যাসোয়া ফ্রাঁসো। জাতে ফরাসী। কাজ ছিল ডাক্তারি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিপর্যয় মোকাবিলা ও ত্রাণের কাজে সাহায্য করবেন ভেবে একদল স্বেচ্ছাসেবকের সাথে এদেশে এসেছিলেন।তারপর থেকে এখানেই থেকে যান। তিনি বহু পড়াশোনা করতেন। ডাক্তার হিসেবেও তার পসার মন্দ ছিল না। মাঝে যদিও একবার একটা বদনাম রটেছিল। তখন আমরা বেশ ছোট। এই তোমাদের বয়সী ধর। তারপর আবার সব ধামা চাপা পরে যায়। ওই বাড়িতেই তিনি জীবনের শেষ দিন অব্দি কাটিয়ে গেছেন।আমাদের সকলের সঙ্গেই ওনার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। ১৯৭০ সালে নভেম্বর মাসে উনি মারা যান। ওনার তেমন কোনো আত্মীয় কোনোদিন আছে বলে শুনিনি। উনি মারা যাবার পর আমার বাবা ওই বাড়িটি বিক্রি করে দেন। এখন দেখবে বৌবজারে গ্রিন জোন বলে একটা বহুতল আবাসন আছে। সেই জমিতেই ছিল আমাদের ঐ বাড়িটা। ওনার মৃত্যুর পর ওনার সম্পত্তির কোনো দাবিদার আছে কিনা জানানোর জন্য আমার বাবা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই সময় মত যোগাযোগ করেনি। ফলত বাড়ি বিক্রির সময় অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে ঐ বাড়িতে ওনার যে তিন আলমারি বোঝাই বই ছিল সেগুলোও বেচে দেওয়া হয়। এত বইয়ের মাঝে এই বইটি যদিও আমার চেনার কথা নয়। চিনতে পারছি কারন প্রায়ই এই বইটা ওনাকে পড়তে দেখতাম।"
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে মিস্টার মাইতি এবার একটু থামলেন। আমিও চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে তখনই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলাম - 'যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে কি বলা সম্ভব হবে যে কি ধরনের সমস্যায় উনি জড়িয়ে পড়েছিলেন?' ভদ্রলোক এবার একটু উঠে একটা ফাইল নিয়ে এলেন। দড়ির ফাঁস খুলতে খুলতে বললেন -' আমি জানতাম, প্রশ্নটা আসবে। তাই ফাইলটা বের করে রেখেছিলাম আগেই'। এই বলে তিনি ফাইলের ভেতর থেকে একটা পুরনো খবরের কাগজের কাটিং এগিয়ে দিলেন আমাদের দিকে।
১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসের সান্ধ্য বার্তা কাগজের একটি ছোট প্রতিবেদন - 'কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজের সংগ্রহ থেকে পুরোনো একটি মধ্য বয়স্ক মানুষের শবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ খোয়া গিয়াছে। পুলিশ তদন্ত করিতেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু একজনের ধারণা এই ব্যাপারের সঙ্গে জ্যাসোয়া ফ্রাঁসো নামে এক ফরাসী ডাক্তারের কোনো ভাবে যুক্ত থাকতে পারেন'। আমরা পড়ে কাগজটা ফেরত দিলাম। ভদ্রলোক ফাইলে সেটা রেখে বললেন - এরকমই টুকটাক কিছু খবর বেরিয়েছিল। পুলিশও ঐ বাড়িতে এক দুবার এসেছিল শুনেছিলাম। তবে তার বেশি কিছু নয়। ব্যপারটা কিছুদিনের মধ্যেই আবার বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যায়।" আমি এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন করলাম - " বাবা মুস্তাফা কে , কিছু কি বলতে পারেন? কারণ বইটি কিন্তু ঐ বাবা মুস্তাফাই দিয়েছেন ওনাকে। " ভদ্রলোক একটু ভেবে বললেন - " নাহ্, তেমন কারুর কথা তো তিনি কখনো বলেননি।" তারপর কি একটা মনে পড়াতে ভদ্রলোক আবার বললেন " তবে হ্যাঁ, আমার ছোট বোন পল্লবী ছোট থেকেই খুব গল্পের বইয়ের পোকা ছিল। ওকে ভদ্রলোক একবার ওর জন্মদিনে আলিবাবা অ্যান্ড ফরটি থিভস বইটা উপহার দিয়েছিলেন। তার ওপরে লিখে দিয়েছিলেন - এ গিফট ফ্রম ডিসাইপেল অফ বাবা মুস্তাফা।"
সেদিন আর কিছু তেমন বইটির ব্যপারে জানতে পারলাম না। হোস্টেলে ফিরে খাওয়া দাওয়া সেরে আমি মিস্টার মাইতির দেওয়া তথ্যগুলো মন দিয়ে ভেবে দেখছিলাম। তখনই হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত মাথায় এলো বিষয়টা। আরে, আলিবাবা গল্পেও তো বাবা মুস্তাফা নামে একটি চরিত্র ছিল। এটা তো আগে মাথায় আসে নি। বাবা মুস্তাফা মানে তো সেই মুচি যে কিনা আলিবাবার দাদা কাশেমের টুকরো করা দেহ জোড়া লাগিয়েছিল।আরব্য রজনীর এই গল্প তো সেই কোন ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি। যদিও সব সময়েই আমার মনে হয়েছে সেটি মোটেই সহজ কাজ ছিল না। বাবা মুস্তাফা কোনো সাধারণ মুচি ছিলেন না। এনাটমির ওপর অগাধ জ্ঞান না থাকলে সে কাজ করা অসম্ভব ব্যাপার। তলিয়ে ভাবলে আরো জিনিসটা অবাক করে সেটা হল বাবা মুস্তাফাকে কেনো এই কাজ করতে বলা হয়েছিল? কারণ যাতে কাশেমের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে প্রতিপন্ন করা যায়। তাহলে কোনো ভাবে কি গল্পের এই চরিত্রগুলোর সাথে কোনো যোগযোগ আছে এই বইয়ের কিংবা তার মালিকের?
প্রশ্নটা মনে এলেও পরীক্ষার চাপ সামলে বেশ কিছুদিন বিষয়টা নিয়ে ভাবার অবকাশ পেলাম না। পরীক্ষা শেষ হতেই আবার শুরু করলাম ভাবনা চিন্তা। এরমধ্যে বইটির বেশ কয়েকটি পাতায় ফরাসী ভাষায় লেখা বেশ কিছু ফুটনোট পেয়েছি। সেখানে একটা নাম দেখলাম বারবার ঘুরে ফিরে আসছে। সেটি হল অ্যান্টোনিও গ্যালান্ড। তার সম্পর্কে জায়গায় জায়গায় বেশ কিছু কথা লেখা আছে এই যেমন-' অ্যান্টোনিও যেভাবে বলেছেন তাতে আর্টারির মাঝে কোনো রকম কাটা ছেড়া না করাই ভালো' বা 'পেস্টিং অয়েনমেন্টের যে ফর্মুলা অ্যান্টোনিও লিখে রেখে গেছেন সেটা নিয়ে পরীক্ষা করে মনে হল কলার বোন জোড়া দেবার ক্ষেত্রে সেটি খুব একটা কার্যকরী নয়'। এরকমই নানান রেফারেন্সে নামটি পেলাম কয়েকবার।মনে প্রশ্ন এলো, ইনি আবার কে? আমি আরেকটু এ ব্যপারে পড়াশোনা করে যে তথ্য জানতে পারি তাতে একজনকেই এই বইটির সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও হতে পারে বলে মনে হল। তিনি অষ্টাদশ শতকের একজন ফরাসী লেখক এবং অনুবাদক যিনি কিনা হান্না দিয়াব নামে একজন আরবী গল্পকারের মুখে আরবে প্রচলিত লোককথাগুলো শোনেন। ফরাসী সেই ভদ্রলোক গল্পগুলো নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। নাম দেন 'ওয়ান থাউজ্যান্ড অ্যান্ড ওয়ান নাইট'। বলতে গেলে তাঁর হাত ধরেই আরবের বা মধ্য এশিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে গল্পগুলো পৃথিবীর সকল দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই বইয়েরই অন্যতম জনপ্রিয় গল্প ছিল আলিবাবা এবং চল্লিশ চোর।
বুঝলাম জ্যাসোয়া ফ্রাঁসো পারিবারিক সূত্রে বা অন্য কোনো ভাবে পরিচিত ছিলেন অ্যান্টোনিওর সাথে। হয় তো দুজন সমসাময়িক ব্যক্তি নন কিন্তু অ্যান্টোনিও আরো এমন কিছু জেনেছিলেন মধ্য প্রাচ্যের মানুষ জনের থেকে যেগুলো হয় তো তিনি গল্পকথায় লেখেননি। হতে পারে লোককথায় উঠে আসা চরিত্ররা কোনো রক্ত মাংসের চরিত্র দ্বারাই প্রভাবিত ছিল। মুস্তাফার মত কেউ হয় তো মৃত মানুষের দেহের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করতেন।
আমরা সকলেই কম বেশি জানি যে ইউরোপে একসময় বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে এই ধরনের নানান অন্ধবিশ্বাস কাজ করতো। আ্যলকেমিষ্টদের কথা তো অনেকেই পড়েছি, যারা গোপনে সোনা তৈরির ফর্মুলা বের করতে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। এটাও হয় তো সেই ধরনেরই কিছু পরীক্ষা ছিল। অ্যান্টোনিও হয় তো তার এই বিশ্বাসকে কিছু মানুষের মধ্যে চালিত করতে পেরেছিলেন, যাদের মধ্যে আমার বিশ্বাস বাবা মুস্তাফা নামের আড়ালে কোনো একজন বা একাধিক মানুষ ছিলেন যারা কিনা অনাটমিতে সুদক্ষ। এরা কেউ হয়তো জ্যাসোয়া ফ্রাঁসোকে এই বইটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। জ্যাসোয়ার এই ব্যাপারে বিশ্বাস এবং আগ্রহ দুইই ছিল। ডাক্তার হিসেবেও যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন তিনি। সে কারণেই হয় তো মেডিক্যাল কলেজের সেই শবদেহ....। খোঁজ খবর করে জেনেছিলাম, যে শবদেহটি চুরি গেছিল, সেটা নাকি কোনো তরুণী শ্বেতাঙ্গীনির ছিল। আশ্চর্যজনক ভাবে সেও ছিল ফরাসী। এদেশে এসেছিলেন প্রাচ্য বিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে। এখানে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আবাসে থাকতেন। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং এখানেই মারা যান। দেহটি তিনি মৃত্যুর পূর্বে দান করে দিয়ে যান কলেজে। এমন একজনকে কেনো তাকে বাঁচিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন জ্যাসোয়া ফ্রাঁসো? শুধুই কি স্বাজাত্য বোধ নাকি কোনো ভাবে অপত্যস্নেহও কাজ করেছিল? তিনি তো যতদূর জেনেছিলাম তিনি ডিভোর্সী ছিলেন। তবে সম্পর্কে কে ছিল ঐ তরুণী ? মেয়ে নয় তো?
সত্যিগুলো জ্যাসোয়া ফ্রাঁসোয়ার সাথে সাথে কফিনেই সারা জীবনের মত হারিয়ে গেছে। তাই অনেক বাক্যই হয় তো শব্দটি যোগ করে শেষ করতে হল। কারণ সেগুলো সবই অনুমান মাত্র। আমি বরাবরই শার্লক হোমসের বড় ভক্ত। হোমসিও ডিডাকশন আমাকে পাঠক হিসেবে মুগ্ধ করেছে বারবার। আমিও তেমন ভাবেই চেষ্টা করেছি বিনি সুতোর মালা গাঁথতে। এই ক্ষেত্রে আমার অনুমান কতটা যুক্তিযুক্ত সেটি বিচারের ভার কিন্তু আপনাদের।