ডাইরির সেই পাতা গুলো
ডাইরির সেই পাতা গুলো
পর্ব :- ৭
কলমে:- রুখসা
রেজাল্ট-এর দিন সকালবেলা খুব টেনশনে ছিলাম। দিয়ে স্কুল গেলাম। স্কুলে সব বন্ধুরা খুব টেনশনে ছিলাম। কেউ কারুর সঙ্গে খুব একটা ভালো করে কথা বলছিলাম না। তবে আমি জানি রেজাল্ট বেরানোর সবাই একটু মনখারাপ কান্নাকাটি করব। তারপর ঘর গিয়ে আব্বু-আম্মুকে একটু ইমোসেনাল ব্লাকমেইল। তারপর দু-দিন পড়াশোনা বিরাট মন দিয়ে করা । তার পর আবার যেইকে সেই।
কিন্তু সেদিন পরিস্তিতি কিছুটা আলাদা হল সেদিন। রেজাল্ট বেরোলো আমদের ক্লাস টিচার রিদ্বিমা ম্যাম দিয়ে গেলেন রেজাল্ট। রেজাল্ট খুব একটা খারাপও হয়নি আবার খুব একটা ভালোও হয়নি । তবে ফিজিক্স-এ নাম্বার সব থেকে কমকম পেয়েছি। কয়েকজন তো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করতে শুরু করেছে। কিন্তু ওদের এই কুমিরের কান্না দেখে আমার মাথায় আগুন চরে গেল। তবুও চুপ করে রইলাম এবং ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়লাম। আর একটু ক্ষন থাকলে হয়তো ঝগড়া লেগে যেতাম আমি। আমার চিন্তার শেষ ছিল না। আমি ভাবছি ঘরে গিয়ে কেমন ঝাড় খাবো। এমন সময় এল অনু ,লালা, ইপশু,বিদু, সুযোগ(সুদিপা) । ওদের সঙ্গে মোটামুটি কথা বলে আমি আর লালু বেরিয়ে পড়লাম ঘর যাবার জন্য। যাবার সময় আবার এক উটকো ঝামেলায় পড়লাম। সামনে দেখি ফিজিক্স স্যার দাড়িয়ে আছেন। আমি আর লালু পড়লাম মহা ঝামেলায়। দু-জনেই ওনার স্টুডেন্ট ছিলাম। কী আর করার,ঠিক করলাম পিছনের গেট দিয়ে যাব না।যা হবে তা হবে সামনের গেট দিয়েই যাব। ওদিকে স্যার নিজের মেয়েকে নিতে এসেছেন। আমাদের নাম্বার জিজ্ঞাসা করল। কিন্তু আমাদের মুখ দেখে ওনি বুঝতে আমরা অপ্রস্তুতে পড়ে গেছি। তাই ওনি বললেন পরে ফোন করে জানিয়ে দিতে বললেন।
তারপর একটু এগিয়ে যেতে দেখলাম আব্বু ওয়েট করছে। ফ্রেন্ডস -দের টাটা বলে চলে এলাম আব্বুর কাছে। আব্বু বলল --
---- বলেছিলেন সময় থাকতে পড়াশোনাটা করো। করবি তো নাহ্। আমি কিছু বলবো না তবে তোর মা কি করবে সেটা তোর মা-ই জানি।
তখন আমি ভাবতে বসলাম আম্মু কী করবে আমার সাথে। ভাবতে ভাবতে ঘরে এসে পৌঁছালাম ঘরে। আমাকে ঘরে পৌঁছিয়ে আব্বু আবার নিজের স্কুলে চলে গেলেন। সেসন শেষ হওয়ায় ওনার আরো কিছু কাজ বাকি ছিল।
আমি আসতে আসতে ঘরে ঢুকলাম তখনই আরেশা ম্যাম ঘরে। ম্যাম বললেন --
---- রেজাল্ট কেমন হল?? দেখি দাও তো রেজাল্ট কার্ডটি।
আমি মুখ বেজার করে বললাম খুব একটা ভালো হয়নি। দিয়ে এগিয়ে দিলাম কার্ডটি। উনি দেখে বললেন --
---- একি তুমি তোমার ফিজিক্স-এ সবথেকে কম পেয়েছো।
---- হুম
তখনই আম্মু এসে বলল --
---- দেখলে আরেশা কতবার বলেছিলাম ভালো করে পড়তে কিন্তু সারাদিন গল্পের বই নিয়ে বসে থাকবে।
---- সানা এটা কিন্তু ঠিক না সারাদিন তুমি যদি গল্প পড়ো পড়াশোনা হবে কি করে বলো তো ।
আমি আর কী করব চুপ করে থাকলাম। কারণ আমি জানি এখন সবাই আমাকে বকবে । শুধু তাই নয় এখন যদি বেশি কথা বলি তাহলে আম্মু রেগে যাবে।তারপর ঘরে চলে গেলাম।
আজ এমন একটা দিন যেদিন দুনিয়ার সমস্ত
আত্মীয়রা ফোন করে লোকের মুখে কথা শুনেছিলাম কিন্তু কথাটা শতভাগ সত্যি। হলোও তাই সারা এ,ও তেপান্তরের অচেনা অজাইরা লোক গুলি ফোন করল। সারাদিন চুপচাপ শান্তিতে কাটল। আব্বু কিছু বলেননি শুধু বলেছেন নেক্সট টাইম যেন ভালো রেজাল্ট হয়।
ব্যালকনিতে বসে বসে নিজের পড়াশোনা নিয়ে ভাবছিলাম। দিয়ে ঠিক করলাম আজ থেকে আরেশা ম্যামের কাছে ফিজিক্স পড়ব।
দিন যেতে শুরু করল, সময়ও নিজের মতো যেতে শুরু করল। আমার নিত্যদিনের পড়াশোনা শুরু হল।
একদিন বসে পড়ছিলাম। এমন আম্মু জল নিয়ে এলেন। এটা ওনার নিত্যদিনের কাজ। হঠাৎ আব্বু বলল --
---- জানো আজ আরিয়ালের সঙ্গে দেখা হল।
আম্মু বলল --
---- ও। তা কেমন আছে ছেলে টা?? অনেক দিন দেখা হয়নি ছেলেটার সাথে। একদিন আসতে বলতে পারতে তো।
---- বলেছি তো সব বলেছি। জানো ছেলেটা বিয়ের জন্য বউ খুঁজছে। আমি ভাবছি আরেশার সাথে যদি ওর বিয়ে দেওয়া যায় তাহলে কেমন হয়??
---- হুম। জানো মেয়েটার চোখগুলি বড়ো বলে ওর বিয়ে হচ্ছে না। আচ্ছা মেয়েটার তো সবই ভালো। শুধুমাত্র চোখ গুলির জন্য , এরা মানুষ না ওন্য কিছু কে জানে!!!
সে যাই হোক তুমি এই ডিসিশনটা খুব ভালো নিয়েছো।
দেখতে দেখতে এসে গেল তাদের দু -জনের দেখা করার দিন।
সেদিন..................
