STORYMIRROR

Manasi Ganguli

Romance Inspirational

4  

Manasi Ganguli

Romance Inspirational

দ্বিতীয় পৃথিবী

দ্বিতীয় পৃথিবী

3 mins
370


       

  শান্তনুর মনটা আজ বড় বিষণ্ণ, বড় ভার হয়ে আছে। অফিসেও আজ বসের সাথে মনোমালিন্য, ঘরে এসে একটু যে হালকা হবে তা কার কাছে? আছেটা কে? কেউ নেই,কেউ নেই তার। পৃথিবীটা তার কাছে এক মহাশূন্যের মত।

   একাকী চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার মনে পড়লো কল্পনাদির কথা,কল্পনা দাস। ফেসবুকে আলাপ হয়েছে সবে।শান্তনুর পাঠানো রিকোয়েস্ট কল্পনাদি অ্যাকসেপ্ট করেছেন।শান্তনুর মনটা তাতে খুশীই হয়েছিল,কেমন যেন স্নেহশীলা বড় দিদির মত মনে হয়েছিল।

বিষাদের এই মূহুর্তে,তার সেই দিদিটাকেই মনে পড়ল। রাত অনেক হয়ে গেছে,প্রায় ১২টা।হয়নি তখনো রাতের খাওয়া।ইচ্ছেও করছে না। খুব ইচ্ছে করছে দিদিটার সাথে একটু আলাপ করতে। কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে দেখল দিদি অনলাইন আছে। মনটা বেশ ভালই লাগল। দ্বিধাও ছিল। দিদি কিছু মনে করবেন না তো? শেষমেশ ইনবক্সে হাই করতেই দিদি সাড়া দিলেন।

   শান্তনু জিজ্ঞাসা করল,"দিদি কেমন আছেন?"কল্পনা বললেন,"ভাল আছি ভাই,তুমি কেমন?"

শান্তনু -ভাল নেই দিদি।

কল্পনা-কেন কি হয়েছে? শরীর খারাপ? জ্বর? ডাক্তার দেখিয়েছ?

একনাগাড়ে বলে গেলেন কল্পনা। শান্তনুর খুব ভাল লাগতে শুরু করল। তবে তার জন্যও কেউ অধীর হতে পারে? বলল,"না দিদি,শরীর ঠিক আছে,মনটা ভাল নেই।"

"অমন মাঝেমাঝে সবারই হয়,আবার ঠিক হয়ে যায়"বললেন কল্পনা।

শান্তনুর কল্পনাদিদির কাছে মন খুলে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। বলল,"না দিদি,আমার মন সারাজীবনেও ভাল হবে না।একা একা থাকলে কারো মন ভাল থাকে?"কল্পনার মনটা নরম হয়,ছেলেটা কষ্টে আছে তার মনে হয়। সে ও বুঝল,ছেলেটি তার সাথে কিছু শেয়ার করতে চাইছে। জিজ্ঞেস করল,"তুমি কোথায় থাকো? "

শান্তনু -শিলিগুড়ি।

কল্পনা -তোমার বাড়ী কোথায়?

শান্তনু -শিলিগুড়ি।

কল্পনা-বাড়ীর অন্যান্য মেম্বাররা কোথায় থাকেন?

শান্তনু-নেই।

কল্পনা-মা,বাবা,ভাই,বোন?

শান্তনু-নেই।

কল্পনা-নেই মানে?

শান্তনু-নেই মানে নেই।

কল্পনা এবার পরিষ্কার বুঝতে পারে সব। বলে,"ও হো,so sad."কল্পনার আরো অবাক হওয়া বাকী ছিল যখন শান্তনু বলল,"আরো শুনবেন? আমার ছেলে মারা গেছে। যেদিন হল সেদিনই।"

কল্পনা জোর ধাক্কা খেল,আহা রে এই বয়সে ছেলেটা এত কষ্ট পেয়েছে? বলল,"ইসসসসসসস"। শান্তনুর আজ যেন বাঁধ ভেঙ্গে গেছে,থামতেই চায় না। এভাবে তার কথা কেউ তো শুনতে চায় নি? বলে,"আরো শুনবেন? আমার বউ আমায় ছেড়ে চলে গেছে।"কল্পনা হতবাক,"সে কি? কেন?"শান্তনু বলে চলে,"ছেলে মারা গেছে বলে,ও আমাকে দোষারোপ করছে।ডাক্তার বলেছিলেন মা ছেলের একজনকে বেছে নিতে হবে।আমি কি করতাম বলুন দিদি?"কল্পনা বলেন,"না না ভাই,তুমি তো ঠিকই করেছো। দুজনকে পেলে তো সুখেরই হোত,কিন্তু....।Don't get upset.সব ঠিক হয়ে যাবে।

শান্তনু-না দিদি,ও আমার কাছে divorce চাইছে।

কল্পনা-সে কি? না ভাই না,এটা হতে দিও না। দুঃখে,অভিমানে ও হয়তো এমন বলছে। তুমি ভালবেসে তাকে কাছে নিয়ে এসো। নিজের প্রিয়জনদের সাথে জেদাজিদি করতে নেই। ধৈর্য ধর।তুমি ওকে কাছে নিয়ে এসো। এখন তুমিই ওর আশ্রয়। এই কষ্ট দু'জনে মিলে ভাগ করে নাও। তাতে দুজনেরই কষ্ট কমবে।

শান্তনু -দিদি,আমি তো তাই চাই।জানি না ও মানবে কিনা। ঠিক আছে,আপনি যখন বলছেন আবার চেষ্টা করব।

কল্পনা-অনেক রাত হল,শুয়ে পড় ভাই। আমিও শুই গিয়ে।

  কিন্তু কল্পনার ঘুম আসে না। ছোট ভাইয়ের মত একটি ছেলে এই পৃথিবীতে একা? তার কেউ নেই? কল্পনা সারারাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাটায়। অল্প আলাপে একটি ছেলেকে সে নিজের ভাইয়ের আসনে বসায়।

   শান্তনুর ও রাতে ঘুম আসে না। কল্পনাদিদির কথাগুলো তাকে ভীষণ নাড়া দেয়। দিদির কথায় কি স্নেহ,কি ভালবাসা। তার পৃথিবীতে তার নিজের বলতে কেউ নেই,তাকে ভালবাসার,তাকে বোঝার। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেবার জন্য কেউ নেই।

    এ যেন এক দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধান পেলো সে,যেখানে তার জন্য রয়েছে কল্পনাদিদির স্নেহ-ভালবাসা,মমতার ছায়া। শান্তনুর মনটা খুশীতে ভরে ওঠে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance