Sayandipa সায়নদীপা

Inspirational

3  

Sayandipa সায়নদীপা

Inspirational

দাগ

দাগ

7 mins
578


কাল রাত থেকেই ঋজুলার মনে চাপা উত্তেজনা। আজও তাই ঘুমটা ভেঙে গেল ভোর ভোর। বাইরের প্রকৃতি দুধ সাদা রঙের চাদর মুড়ি দিয়েছে। শরীরে হালকা শিরশিরে অনুভূতি। চাদরটা ভালো করে গায়ে মাথায় জড়িয়ে নিল ঋজুলা। জানালার ফাঁক গলে ধুতুরা ফুলের বীজের মতো নরম পাখা মেলে গুটি গুটি করে ঢুকে পড়ছে কুয়াশারা। ঋজুলার বরাবর ঠান্ডা লাগার ধাত, এই কুয়াশা মাখা জানালার সামনে বসে থাকলে কি হবে কে জানে! তবুও উঠতে ইচ্ছে করছে না ওর। একটা বিশেষ ফোন আসার কথা, যতক্ষণ না সেটা আসে ঋজুলা কিছুতেই উঠবে না এ জায়গা ছেড়ে। কুয়াশার মাঝেই লাল, সাদা, নীল, কমলা, হলুদ, গোলাপী… উঁকি দিচ্ছে তারা, মাঝে সবুজের রং বাহার। বড় যত্ন করে ওদের বড় করেছে ঋজুলা। আজকের দিনে তো রাস্তার ধারের দোকানগুলোতে লাল রঙের ভীড় লেগে থাকে, সেই ভীড় হালকা করতে গিয়ে কতজনের যে পকেট খানাও হালকা হয়ে যায় তার ইয়ত্তা নেই। ঋজুলা অবশ্য এসবের ধার ধারে না। তার জন্য সবসময় বিশেষ ব্যবস্থা। আজ ন'টা বছর ধরে সে সযত্নে সাজিয়ে গিয়েছে এই দিনটাকে। নিজের হাতে বেঁধেছে স্বপ্ন। হয়তো দোকানের মত নিপুণ ভাবে বাঁধতে পারেনি, তবুও নিজের স্বপ্ন তো… 

আজ ৭ই ফেব্রুয়ারি। নাহ, ক্যালেন্ডারে দিনটা বিশেষ রঙে চিহ্নিত নেই, তবে প্রেমিক হৃদয়ের ক্যালেন্ডারে দিনটার রং লাল। ভ্যালেন্টাইন উইকের প্রথম দিন, রোজ ডে। সবাই যখন দিনটা আসার অপেক্ষায় প্রহর গোনে ততক্ষণে ঋজুলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। অতি যত্নে সে পরিচর্যা করে তার বাহারী গোলাপ গাছগুলোর, একেকটার একেক রকম রং, একেক রকম অর্থ। আজ ন'বছর ধরে এই দিনটাতে ঋজুলা প্রত্যেকটা গাছ থেকে একটা করে ফুল নিয়ে নিজের হাতে তোড়া বানায়, তারপর উপহার দেয় ওর প্রিয় মানুষটাকে। এই বছরটা সব দিক দিয়ে অন্যরকম। এ বছরই অর্ণব চাকরি পেয়েছে কিছুদিন আগে। দু'বাড়ির থেকে ওদের সম্পর্কের কথা মৌখিক ভাবে জানতোই, অর্ণব চাকরি পাওয়ার পর সেটা পাকাপোক্ত ভাবে জেনেছি তাঁরা। শুধু তাই নয় ফোনে ফোনে দুই পরিবারের তরফে বিয়ের কথাও এগিয়েছে খানিক। এবার শুধু মুখোমুখি দেখা করে সবকিছু স্থির করার অপেক্ষা। তাই সেরকম চললে এটাই শেষ বছর যখন প্রেমিকা হিসেবে ঋজুলা তাদের হাতে বোনা গোলাপের ডালি উপহার দিতে পারবে তার অর্নবকে। তাই তো উত্তেজনায় ঘুম আসেনি তার। প্রত্যেক বছর অর্ণব সকাল সকাল ফোন করে দেখা করার প্ল্যানটা করে। এখন তারই অপেক্ষাতে ঋজুলা। 


“দেহেলিজ পে মেরে দিল কি…”

গানটা শুনতে পেয়েই চায়ের কাপ ফেলে ছুটল ঋজুলা। এটা নিশ্চয় তার ফোন। কখন কোথায় দেখা করবে জানাতে ফোন করেছে। চা'টা খেয়েই তোড়াটা বানিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু ফোনটা হাতে তুলতেই মোবাইল স্ক্রিনটার ওপর একটা পরিচিত নম্বরের ঝলকানি দেখতে পেল ঋজুলা, যে নম্বরটা আজ বছর সাতেক ধরে ঋজুলার ফোনে সেভ করা থাকলেও কথার আদান প্রদান এখনো অবধি হয়নি কোনোদিন, তবে এবার থেকে প্রায়ই হবে। কিন্তু উনি আজ এতো সকালে ঋজুলাকে কেন ফোন করছেন! না চাইতেও খানিকটা নার্ভাস হয়ে গেল ঋজুলা। কাঁপা কাঁপা গলায় ফোনটা তুলে বলল,

“হ্যালো আন্টি...”

“তোমার বাবাকে ফোনটা দাও।”

অর্ণবের মায়ের গলার আওয়াজটা ঠিক স্বাভাবিক লাগল না ঋজুলার। মনে একটা আশঙ্কা নিয়ে সে বলল, “হ্যাঁ, দিচ্ছি।”

এই বলে ডাইনিং রুমে এলো সে। বাবা তখন ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে তৃপ্তি সহকারে চুমুক দিতে ব্যস্ত ছিলেন। ঋজুলা বাবার কাছে গিয়ে ফোনটা ধরিয়ে চাপ গলায় বলল, “অর্ণবের মা।” বাবা একটু অবাক চোখে ঋজুলার দিকে তাকিয়ে ফোনটা কানে চাপলেন,

“হ্যাঁ মিসেস সেন বলুন।”


কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনটা কান থেকে নামিয়ে কাঁপতে শুরু করলেন দেবজ্যোতি বাবু। মুখটা ক্রমশ লাল হয়ে উঠল তাঁর। হার্টের রোগী দেবজ্যোতি বাবুর আচমকা এহেন পরিবর্তনে স্বাভাবিকভাবেই ভয় পেয়ে গেল পুরো পরিবার। সবাই ছুটে এলো তাঁর কাছে। মীনাক্ষী দেবী একরাশ উৎকণ্ঠা ভরা গলায় জানতে চাইলেন, “ওগো কি হলো তোমার?”

বৌমা দিয়া জিজ্ঞেস করল, “কি বললেন অর্ণবের মা?”

নিজেকে খানিক সামলে নিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন দেবজ্যোতি বাবু, “আচ্ছা তোমার মুখের দাগটার কথা কি অর্ণব জানতো না?”

নিজের স্বপ্নের আবেশে ভাসতে থাকা মেয়েটা হঠাৎ করেই যেন নিজের মধ্যে একটা ধাক্কা খেলো। রিভু জিজ্ঞেস করল, “কেন বাবা কি হয়েছে?”

“মিসেস সেন বললেন ওনার সহজ সরল ছেলেটাকে নাকি আমরা ফাসিয়ে নিয়ে আমাদের মেয়েকে উদ্ধার করতে চাইছি। আরো অনেক কিছু বললেন উনি…”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে গেলেন দেবজ্যোতি বাবু, পুরোটা বলতে পারলেন না আর। দিয়া যেন নিজের মনেই বলে উঠল, "অর্ণবেরও কি তাই মত?" 

মীনাক্ষী দেবী কান্না চাপা গলায় বললেন, “জানার দরকার নেই আমার, আর কিচ্ছু জানার দরকার নেই। এরকম অপমানের পর…”

“এই তাহলে তোদের ভালোবাসা!” দাঁত কিড়মিড় করে বলল রিভু। রিভুর কথার কোনো উত্তর দিলনা ঋজুলা। ধীর পায়ে নিজের ঘরে ফিরে এলো সে। খাটে বসে মুহূর্তের জন্য যেন হারিয়ে গেল আজ থেকে বছর সাতেক আগের একটা সকালে।


   ভিড় রাস্তা পার হতে ঋজুলার চিরকালই ভয়, অন্যদিকে দুদিক থেকে প্রচন্ড গতিতে ধেয়ে আসা গাড়ির মধ্যিখান দিয়ে ছুটে রাস্তা পেরোনোটা অর্ণবের কাছে একটা এডভেঞ্চার। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে অনুযোগ অভিযোগ প্রায়ই লেগে থাকে। সেদিন মোহনপুর ব্রিজে সকাল বেলায় একটা এক্সিডেন্ট হওয়ায় বাসটা জ্যামে আটকে গিয়েছিল অনেকক্ষণ। অবশেষে রাস্তা পরিষ্কার হতে বাসটা যখন ওদের কলেজের সামনে নামায় ততক্ষণে প্রথম ক্লাসটা শেষ হয়ে দ্বিতীয় ক্লাস টাও দশ মিনিট শুরু হয়ে গেছে। আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ক্লাসে না পৌঁছতে পারলে এই ক্লাশটাতেও আর ঢুকতে পাবেনা। কিন্তু বিধিবাম। দীর্ঘ সময় জ্যাম থাকার ফলে এখন রাস্তায় যেন গাড়ির বন্যা; কিছুই রাস্তাটা পেরোনো যাচ্ছেনা। অর্ণব অনেকক্ষণ থেকেই উশখুশ করছে এরই মাঝে পেরোবার জন্য। কিন্তু ঋজুলা রাজি নয়, তার বক্তব্য ক্লাস মিস হলে হবে কিন্তু এরকম রিস্ক নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। হঠাৎ হাতে একটা হ্যাঁচকা টান, ঋজুলার বাম হাতের কব্জি অর্ণবের হাতের মুঠোয়। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় ঋজুলার পা টা গিয়ে হোঁচট খায় রাস্তার ইন্ডিকেটরে। অর্ণবের হাতের মুঠো আলগা হয়ে যায়। ওপাশ থেকে প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসছিল একটা ট্রাক, পাঞ্জাবী ড্রাইভার অনেক চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি সেদিন...


  তিনদিন পর যখন জ্ঞান ফেরে ঋজুলা নিজেকে আবিষ্কার করেছিল নার্সিংহোমের বেডে। সারা শরীরে অসহ্য ব্যাথা। বেডের সামনের দেওয়ালে লাগানো আয়নাটার দিকে তাকাতেই ঋজুলা দেখতে পায় কপালের সাথে সাথে বামদিকের গালে বিশাল একটা ব্যান্ডেজ। সাতদিন পর যখন ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছিল আয়নায় নিজের মুখটা দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিল ঋজুলা। এটা কে আয়নায়! বাবা চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি। পায়ের থেকে চামড়া নিয়ে প্লাস্টিক সার্জারিও হয়েছিল। কিন্তু ক্ষতটা এতটাই গভীর ছিল যে পুরোপুরি মেটানো যায়নি সেই দাগ। সাত বছর কেটে গেছে কিন্তু দাগটা রয়ে গেছে আজও।


  সব কিছু হয়েছে, শুধু এক্সিডেন্টের আসল কারণটা কেউ জানতে পারেনি কোনোদিন; কারণ ঋজুলা চায়নি তার ভালোবাসার মানুষটার দিকে কোনোদিনও আঙ্গুল তুলুক কেউ। অর্ণনবের সেই অপরাধবোধে ভোগা চোখ দুটো দেখে বুকটা সেদিন চিনচিন করে উঠেছিল ঋজুলার। ভেবেছিল ওর কি দোষ, ও তো ইচ্ছে করে ঘটায়নি ঘটনাটা। 


   আজ আর বুকটা চিনচিন নয়,বুকের ভেতরটায় কেমন যেন হুলুস্থুলুস হচ্ছে ঋজুলার। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর থেকে একটা একটা করে অংশ ওকে ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। সেতো অর্ণবকে ভালোবাসতো, আর আজ ন'টা বছর ধরে বিশ্বাস করে গেছে যে অর্ণবও তাকে ভালোবাসে। আর এই ন'বছরে অর্ণবের আচরণের মধ্যে তো কোনো খুঁত দেখেনি ঋজুলা। মানুষ কি এতো সহজে পাল্টে যেতে পারে! কক্ষনো না। অন্য কেউ পারলেও তার অর্ণব কোনোদিনও এরকম করবে না। নিশ্চয় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে সবার। ত্বরিৎ গতিতে ফোনটা হাতে নিয়ে নম্বরটা ডায়াল করল ঋজুলা। হাতের তালুটা বরফের মত। মৃদু শিহরণে ফোনটা কাঁপছে। ওপ্রান্তে বাজছে পরিচিত কলার টিউন। কিন্তু নাহ, নির্দিষ্ট সময় পর সুরের মূর্ছনা কেটে গিয়ে ভেসে এলো যান্ত্রিক কন্ঠের ঘোষণা। উদভ্রান্তের মতো আরও একবার চেষ্টা করল ঋজুলা। এইবার ফোনটা ধরল সে, "বলো…"

এই একটা কণ্ঠস্বর শুনলেই ঋজুলার রাগ, অভিমান সবের পাহাড় হুড়মুড়িয়ে ভাঙতে শুরু করে। আজও তার ব্যতিক্রম হলনা। আশা ছিল অন্যরকম, আশা ছিল সেই স্নিদ্ধ শব্দযাপনের, আশা ছিল পরিচিত আদরে ভেসে যাওয়ার, আশা ছিল বুকে জমে ওঠা এক পাহাড় অভিমানের চূড়াটাকে ধ্বংস করে দেওয়ার। কিন্তু নাহ, আজ আর তেমনটা কিছুই হল না। সব কিছুর পরিবর্তে ভেসে এলো শুধু একটা মাত্র অজুহাত, "ঋজু আমি কি করব বলো? মা যে রাজি হচ্ছে না…" 


    সকাল থেকেই কুয়াশাটা সরেনি আজ। সূর্য অভিমান করে চলে গেছে কোথাও। মন খারাপের মেঘ জমেছে গোলাপ দিবসের আকাশে। বিকেলটা শুধু কাঁটায় জর্জরিত। ধীর পায়ে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ঋজুলা। জানালার বাইরের দৃশ্যটা অসহ্য লাগছে তার। ক্ষিপ্র হাতে সে মুঠো করে ধরে নিল লাল গোলাপের গাছটা। কাঁটা এসে ফুটে গেল তার হাতে। ভ্রূক্ষেপ করল না ঋজুলা। আজ সব শেষ করে দেবে সে। সব শেষ। এসবের আর কোনো মূল্য নেই। গাছের গোড়ায় থেকে সজোরে একটা টান দিল ঋজুলা, কাঁটাগুলোও আত্মরক্ষার তাগিদে ক্ষত বিক্ষত করে দিল নরম তালু। আর একটু হলেই ওই একসঙ্গে হাসতে থাকা গোলাপ দুটোও ছিঁড়ে লুটিয়ে পড়বে মাটিতে। কিন্তু তার আগেই কে যেন দ্রুত বেগে এসে টেনে ধরল ঋজুলার হাত। ঋজুলা দেখল বৌদি। কান্নাভেজা জিজ্ঞাসু চোখ দুটো নিয়ে ঋজুলা তাকাল বৌদির দিকে, হাপরের মত ওঠানামা করছে তার বুক। 

"যে গোলাপের কদরই জানেন তাকে গোলাপ দিয়ে কি করতিস ঋজু? সে তো শুধু পায়ে দলে নষ্ট করতে জানে, তোর মতো সৃষ্টি করার ক্ষমতা তার নেই।"

"আমি কি করব বৌদি? আমি যে আর সহ্য করতে পারছিনা।"

"কি করবি? ওই দেখ কি করেছিস তুই?"

বৌদির ইশারা লক্ষ্য করে অবাক চোখে তাকাল ঋজুলা। দেখল প্রায় দশ পনেরটা ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে এসে জড়ো হয়েছে ওদের গেটের কাছে। 


  বছর দেড়েক আগে একটা NGOর তরফ থেকে অন্যান্যদের সঙ্গে ঋজুলা গিয়েছিল কাছাকাছি এক বস্তিতে ইংরেজী পড়াতে। ওখানে যেতে যেতেই কিছুদিন পর ঋজুলা ভাবে পড়াশুনার পাশাপাশি বাচ্চাগুলোকে আর অন্যকিছু শেখালে ভালো হয়। এই ভেবে ঋজুলা আলাদা ভাবে ওদের আঁকা শেখানো শুরু করে। আজ সেই বাচ্চাগুলোই সব এসে জড়ো হয়েছে ওদের গেটের সামনে। ওদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে রংবেরঙের গোলাপের ছবি। ঋজুলা অস্ফুটে বলল, "তোরা!" 

ওদের মধ্যে যে মেয়েটা তুলনামূলক একটু বড় সে এগিয়ে এসে বলল, "তুমি তো আগের হপ্তাতেই আমাদের গোলাপ আঁকা শিখিয়েছো। আর আমরা শুনলাম আজ নাকি গোলাপের দিন। তাই আমাদের প্রিয় ম্যাডামের জন্য আমাদের উপহার।"

বাকি বাচ্চাগুলো একসঙ্গে বলে উঠল, "হ্যাপি রোজ ডে ম্যাডাম।"

ঋজুলা অবাক হয়ে তাকাল ওদের দিকে, আর সঙ্গে সঙ্গে মন খারাপের মেঘটা সরে গিয়ে শেষবেলায় সূর্যটা উঁকি দিল টুক করে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational