দাদু - নাতনি আর রেডিও
দাদু - নাতনি আর রেডিও
রেডিও আমার কাছে কোনদিন ই শুধুমাত্র বিনোদনের সাধন ছিলনা, ছিল জীবনের একটি অংশ | কাজের চাপ আর সময়ের অভাবে রেডিও শোনাটা প্রায় ঘুঁচেই গেছে | তবে রেডিওর সাথে দূরত্ব ঘটার পিছনে আরেকটি বিশেষ কারণ ও ছিল বৈ কি। সেই শৈশব কালের কথা; বাড়িতে তখন নতুন টেলিভিশন এশেছে, তবে ওই যন্ত্রটি যে খুব মনে ধরেছে সেটাও নয় | হঠাৎ একদিন দাদুনের আগমণ; ওঁর কাছে একটি অদ্ভুত বস্তু চোখে পড়লো। সে এমন এক জিনিশ যার থেকে নানান রকমের কণ্ঠস্বর, আলোচনা, গান, আবৃত্তি, নাটক, সংবাদ সব ই শোনা যায় | সেটাকে হাতড়াতে হাতড়াতে উপলব্ধি করলাম যে এটা থেকে শুধুই ধ্বনি বের হয়, কিছুই দেখা যায়না। আমার কিঞ্চিৎ আগ্রহ হতে লাগলো ওই যন্ত্রটির উপর | দাদুনের হাত ধরেই রেডিও শোনা শুরু। ক্রমান্বয়ে বহু শঙ্খক বেতারকেন্দ্রের নাম ও জানতে থাকি।এই সবকিছুর মধ্যে সব চাইতে যেটা ভীষণ প্রিয় ছিল সেটা হচ্ছে “শ্রূতি নাটক”।যেমনি সুন্দর শিল্পীদের কণ্ঠ, তেমনি সুন্দর তাদের আবেগপ্রবণ নাট্য উপস্থাপনা। আমার মন কেড়ে নিয়েছিল সেই শুক্রবার রাত ৮ টার “শ্রূতি নাটক”| সব চাইতে মজার ব্যাপার ছিল যে বাড়িতে মায়ের সাথে শান্তিচুক্তি সই করতে হয়েছিল যেন কোন ব্যাঘাত ছাড়াই নিজের পড়াশোনা এবং যাবতীয় কাজ যেন সেই সময়ের আগেই সেরে ফেলা হয় | নিয়ম করেই দাদুনের সাথে শুক্রবার রাত ৮ টায় ওই অনুষ্ঠানটি দুজনেই বসে উপভোগ করতাম আর তারপর সেই নিয়ে নানান আলোচনা যে হয়ে থাকতো, সেটা বলাই বাহুল্য | রীতিমত বেশ একটা গম্ভীর উত্তপ্ত তর্ক – বিতর্কও হত নাটকের বিবষয়স্তু নিয়ে আমাদের মধ্যে | কিন্তু যে দাদুন আর শ্রূতি নাটক আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছিল, তারা কেউই আজ আর নেই... তাই হয়তো জীবনের সবচেয়ে ভালো সময়টা আজ শুধুমাত্র স্মৃতি হয়েই রয়ে গেছে। আজ আর শুক্রবার রাতে রেডিও শোনার ডাক আসেনা…হয়না কোনো তর্ক - বিতর্ক |