SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Thriller

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Thriller

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৯

চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৯

3 mins
226


চন্দ্রবিন্দু থেকে চ - ৯

শুভময় মণ্ডল


বললাম - না বলার অধিকার তো আপনার নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু আমি আপনার ড্রইংরুমে বসে, এই যে এত বন্ধুত্বপূর্ণভাবে সওয়াল করছি, তা বোধহয় করবেন না সরকারি উকিল বা থানারও কোনো অফিসার, এটা তো মানবেন? আপনাদের থেকে প্রকৃত সত্যটা জানা আমার দরকার। কারণ, এই কেসটার ফাইনাল ক্লোজারের সিদ্ধান্ত ডিপেন্ড করছে আমার রিপোর্টের উপর।


আর, আপনাদের উত্তরে যতক্ষণ না আমার স্যাটিসফেকশন হচ্ছে, জেনে রাখুন এই কেস ততক্ষণ ক্লোজড হচ্ছে না। আমি নেগেটিভ রিপোর্ট দিলে, আপনাদের বাকি জীবনটাই কেটে যাবে আদালতের দরজায় দরজায় ঘুরতে ঘুরতে। সরকারি কাজে ধীরগতির জন্য লোকের অনেক অসুবিধা হয়, সবাই জানে। তাকেই কাজে লাগিয়ে কিভাবে নীরবে আত্মগোপনকারী, আপনাদের মত অপরাধীদের শাস্তি দিতে হয়, সে আমারও খুব ভালোই জানা আছে। বোঝার চেষ্টা করুন, প্রকৃত সত্য না জেনে আমি মোটেও থামবো না। ঘটনার তেরো বছর পরেও যখন আমি তদন্ত থামাইনি, তখন...


- স্বপ্নাকে প্রলোভন দেখাচ্ছিলো আবার, তার বাবার সহকর্মীরা - মুখ খুললেন অভিরূপ রায় - ওদের এলাকায় আবার নতুন করে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ শুরু করার জন্য হঠাৎ উঠে পড়ে লেগেছিল ওর বাবারই একসময়ের সহকর্মীরা। 


কলকাতার অনেকগুলি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র-ছাত্রী আর কিছু শিক্ষিত মানুষ, যাঁরা পেশায় কেউ প্রফেসর, কেউ গবেষক, কেউবা আইনজীবী - হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ওদের এলাকায় ঝিমিয়ে পড়া, নিষ্ক্রিয় সংগঠনগুলিকে নতুন করে সক্রিয় করে তোলার কাজে। তাদেরই দলে নাম লিখিয়েছিল স্বপ্না। বেশ কিছুদিন ধরেই তার আচার-আচরণে রীতিমত পরিবর্তন চোখে পড়ছিল সবারই। স্বপ্নার আসল পরিচয় জানতে পারি নেটের ফর্ম ফিলাপের সময়। ওর বাবার নামটা এতবার শুনেছি শৈশবে আমার বাবার মৃত্যুর পর, সহজে ভোলার ছিল না। পরে ঐ একইভাবে জানতে পারি রত্নার পরিচয়ও। 


স্বপ্না ওর মামারবাড়ি থেকে বাকি পড়াশোনা করায়, রত্নাও তাকে চিনতো না। নেটের ফর্ম ফিলাপের সময়, তিনজনের পিতৃপরিচয়ই তিনটে পৃথক সত্ত্বাকে একসূত্রে গ্রথিত করে দিল। যদিও প্রথমে সে'টা শুধু আমিই জানতাম। অন্যদিকে, ততদিনে আমার মনে অনেকটা জায়গা করে নিয়েছিল স্বপ্না। বেশ ভালবেসে ফেলেছি তাকে, তাই শুধু ঐ পিতৃপরিচয়ের কারণে সেই রিলেশন থেকে পিছিয়ে আসার কথা ভাবিনি। 


আপনার মতই আমিও বিশ্বাস করতাম যে, তার বাবা যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, স্বপ্না তো নিরাপরাধ ছিল। পরে রত্নাকে আমি বিষয়টা জানালে, সেও একই অভিমত ব্যক্ত করে, তাই দু'জন মিলে একপ্রকার স্বপ্নাকে আগলেই রেখেছিলাম আমরা। কিন্তু হঠাৎ একদিন টের পেলাম যে, সবকিছু ততটাও ভালো নয় যতটা আমরা আশা করছিলাম।


আমাদের বোঝা উচিত ছিল, কোন সাপকে ঠিক মতো লালন-পালন করলে হয়তো সে মিত্র-স্বভাব হতে পারে, কিন্তু তার দাঁতে যা সঞ্চিত হয় তা বিষ ছাড়া অন্য কিছু হতে পারেনা! আর অতি তুচ্ছ কারণেও, কৃতঘ্ন হয়ে ছোবল মারতেও সে কখনোই দ্বিধাবোধ করবে না। এখানেও ঘটনাটা ঠিক তাই, যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে, নিজেদের ক্ষতি ভুলে তাকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ধরে রাখার চেষ্টা করছিলাম, সেই কার্যকলাপই পুনরায় শুরু করার উদ্দেশ্যেই কলকাতায় এসে ঘাঁটি গেঁড়েছিলো সে! 


কলকাতার ঐসব তথাকথিত শিক্ষিত, মনুষ্যত্বের হত্যাকারীদের সঙ্গে ওদের এলাকার সন্ত্রাসবাদী নেতাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে কাজ করাই ছিল তার এখানে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য। নেটে বসাটা তখন তার কাছে ছিল গৌণ! গঙ্গার এপারে ওরই বয়সী একটি ছেলে যোগাযোগ রাখত গ্রামের নেতাদের সঙ্গে, আর ওপারে বসা স্বপ্নার দায়িত্ব ছিল শহরের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার। রত্নাই সবথেকে আগে সেটা টের পেয়েছিল। 


যে ছেলেটা তার সঙ্গে উত্তরপাড়া থেকে এসে দেখা করতো দক্ষিণেশ্বরে, সে একদিন চোখে পড়ে যায় রত্নার। তাদের দেখা করার এবং কথা বলার ভঙ্গীটাই ছিল দক্ষিণেশ্বরে রোজ বেড়াতে আসা অসংখ্য প্রেমিক-প্রেমিকাদের মত। তাদের দেখে লোকের যাতে সন্দেহ না হয়, সে'জন্যই হয়তো জেনেশুনেই তারা অমন আচরণ করতো।


- চলবে -



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama