চলো পাল্টাই, কিছু করে দেখাই
চলো পাল্টাই, কিছু করে দেখাই
মধ্য কোলকাতার বুকে দত্তদের বাড়ি চেনে না এমন লোক খুব কমই আছে। এই বাড়ির কর্তা রমেশ দত্তের কোলকাতার বুকে পাঁচ পাঁচটা সোনার বড় দোকান আছে। পৈত্রিক ব্যবসা তাই প্রতিপত্তি ও যথেষ্ট। প্রতি বছর দোকানে নববর্ষে নতুন খাতা পূজার রীতি চলে আসছে বহুবছর ধরে।
তবে এবছরের ব্যাপারটা একটু আলাদা। এবছর তার একমাত্র ছেলে দেবজিৎ এর বিয়ের পর প্রথম নববর্ষের অনুষ্ঠান। পুত্রবধূ প্রত্যয়ীকে তিনি নিজেই পছন্দ করে এনেছেন এবং নিজের মেয়ে না থাকায় তাকে কন্যাসম স্নেহ করেন।
পয়লা বৈশাখের দু‘দিন আগে তিনি প্রত্যয়ীকে ডেকে বললেন ‘মা তোমাকে একটা দায়িত্ব দিতে চাই, আমার বিশ্বাস তুমি ঠিক পারবে দায়িত্বপূরণ করতে। এত বছর ধরে তোমার শাশুড়ি মা পয়লা বৈশাখের সমস্ত ব্যবস্থা নিজে হাতে করে এসেছেন। কিন্তু আমার একান্ত ইচ্ছা এবছর এই কাজটা তুমি কর তোমার মতো করে। টাকা পয়সা যা লাগে তুমি দেবুর থেকে নিয়ে নিও কেমন।’ এই বলে তিনি নিজের ঘরে চলে গেলেন।
প্রত্যয়ী দোকানের পূজা ও সবার জন্য নতুন জামা কাপড় কেনা ছাড়াও আরো কিছু ব্যবস্থা করল তবে সেটা আগে থেকে কাউকে জানালো না।
পয়লা বৈশাখে দোকানগুলির পূজা শেষ হওয়ার পর প্রত্যয়ী এসে শ্বশুরমশাইকে বলল ‘বাবা একটু বাইরের বারান্দায় চলুন একটা দরকার আছে।’ রমেশ বাবু বললেন ‘কি দরকার মা?’ প্রত্যয়ী বলল ‘বাবা আমি কিছু অনাথ বাচ্চাদের জন্য নতুন কয়েকটা জামা কিনেছি ও কিছু খাবার কিনেছি। আমার ইচ্ছা আজকের দিনে এগুলি আপনি নিজের হাতে ওদের দিন।’ পুত্রবধূর এই কথা শুনে রমেশবাবু একটু চুপ করে রইলেন আর রমেশবাবুকে এই অবস্থায় দেখে প্রত্যয়ী একটু ঘাবড়ে গেল, বলল ‘বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনাকে জিজ্ঞাসা না করেই আমি কাজটা করে ফেলেছি, আর কোনদিন হবে না।’ রমেশবাবু এবার কথা বললেন, তিনি চেয়ার থেকে উঠে এসে প্রত্যয়ীর মাথায় হাত রাখলেন। প্রত্যয়ী দেখলো তাঁর চোখের কোণায় জল চিকচিক করছে। রমেশবাবু বললেন ‘তুমি বারবার এরকম ভুল করবে মা। আজকে নিজের পছন্দের ওপর আমার গর্ববোধ হচ্ছে।’ এই বলে তিনি প্রত্যয়ীর হাত ধরে বারান্দার দিকে এগোতে এগোতে বললেন ‘চলো পাল্টাই, কিছু করে দেখাই।’
একটা নতুন ভাবনার সাথে শুরু হল একটা নতুন বছর।