Riya Roy

Romance Inspirational

4.3  

Riya Roy

Romance Inspirational

চলার সঙ্গী

চলার সঙ্গী

10 mins
696


সোমদত্তা আর দেবিকা দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুল ছুটির পর দুজনে একসাথে ফেরে । স্কুল থেকে বাস স্ট্যাড এর বেশ খানিকটা দূরত্ব, অনেকেই রিক্সা বা অটোয় যায় কিন্তু ওরা এই রাস্তাটা হেঁটেই ফেরে রোজ গল্প করতে করতে। দুজনের খুব বন্ধুত্ব। এই চলতে চলতে একসাথে ফিরতে দুজনেরই ভীষণ ভালো লাগে। কেউ একদিন স্কুল অ্যবসেন্ট করলে অন্যজনের মনখারাপ হয়।


সেদিন স্কুল ছুটির পর ওরা হাঁটছে।


দেবিকা বলে উঠলো, "এই আজ ফুচকা খাবি ?"


সোমদত্তা - "খেলেই হয় ...!কিন্তু ওটা আমি ভালই খাই আমার না ভীষণ ভেলপুরি খেতে ইচ্ছে করছে।"

দেবিকা -" ভালই খাস বলতে..? কবে আবার তুই খেলিরে এর মধ্যে..?"


সোমদত্তা হাসি হাসি মুখ করে বলে উঠলো, "সেদিন গেলাম না নীলাঞ্জন এর সঙ্গে ..!


দেবিকা অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

"কবে ...? কবে গেলি..?"


সোমদত্তা-

"ওই যে যেদিন ইংলিশ কোচিং থাকে আমাদের।"


দেবিকা -

"ও ওই জন্য গত সপ্তাহে সেদিন...,

তুই তো তোর শরীরটা ভালো নেই বলেছিলিস। আর এদিকে চোরি চোরি চুপকে চুপকে চলছে।"


সোমদত্তা হেসে উঠলো।


দেবিকা আবার জিজ্ঞেস করল,

"তা সেদিন কোথায় গেলি তোরা ..? সিনেমা দেখলি..?


সোমদত্তা বললো,"না .না সিনেমা তো আগের সপ্তাহে সরস্বতী পুজোর দিন গেছিলাম দেখতে..।

গতদিন আমরা ভিক্টোরিয়া গেছিলাম।


দেবিকা- "বাব্বা তোর খালি বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঘোরা।

তোর বাড়িতে কেউ জানতে পারে না, কাকু, কাকিমা তো খুব রাগি বলেছিলিস।"


সোমদত্তা বললো, "আগের বার বলেছিলাম পুজোর অঞ্জলি দেবো , দেরি হবে আর গতদিন তো ইংলিশ ক্লাস বলেই বেরিয়ে ছিলাম।"


দেবিকা বলে উঠলো,

"কাকিমা যদি খোঁজ নিত তখন তোর কি হতো..


সোমদত্তা - "উহঃ ....ধরতে পারে নি তো ।"


দেবিকা আবার বললো,

"আচ্ছা পরে যদি নীলাঞ্জন কে তোর বাড়ির লোক মেনে না নেয়, যদি তোর সাথে ওর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় .. তখন তুই কি করবি..?"


সোমদত্তা কাঁদো কাঁদো মুখে বলে উঠলো,

"তুই আমার বন্ধু না শত্রু রে। খালি নেগেটিভ বলিস...!

কি যা তা রে তুই

নিজেও প্রেম করবি না আর কেউ করলেও..."


দেবিকা -"আচ্ছা তুই রাগ করছিস কেন.? আমি জাস্ট কথাটা বললাম।"


সোমদত্তা বললো, "সে তখন দেখা যাবে মেনে না নিলে আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো। আমি ওকে ছাড়া ভাবতেই পারি না নিজেকে। তাছাড়া আমার বাড়ি একটু স্ট্রিক্ট ও জানে সবটাই।"


দেবিকা--"এত সিরিয়াস ব্যাপারটা..?


সোমদত্তা--"তা নয়তো কি ..!

কিছু ক্ষন পর আবার


সোমদত্তা বলে উঠলো,

" এই জানিস ও না গতদিন  আমাকে কিস্ করেছিলো ।  সোমদত্তা খানিকটা ভাবুক হয়ে আবার বলতে শুরু করলো, ও যখন আমাকে টাচ্ করেছিল আমার না কেমন একটা হচ্ছিল...."

দেবিকা ইয়ার্কি ছলে , "কেমন হচ্ছিল...?

কি হচ্ছিল তোর ...মাথা ঘুরছিলো নাকি বুক ব্যাথা.."

সোমদত্তা-"তুই না সত্যি , মানে যা তা একটা..."

দেবিকা-"তুই তো বললি.."

সোমদত্তা "একটা অনুভুতি। হয়েছে..।

দেবিকা-"হ্যাঁ হ্যাঁ সেটাই তো , সেটা কি ..?

সোমদত্তা--"সেটা জানতে গেলে একটা প্রেম করতে হয় বুঝলি..?

দেবিকা--"ভালো হয়েছে...।

একটা কিস্ করে যার এই অবস্থা হয় সে আবার আমায় ল্যাকচার দিচ্ছে।"

সোমদত্তা আবার বলে উঠলো, "চুপকর ...এমন বলছিস তুই যেনো কত কিস। কতবার ..."

দেবিকা-"কি কতবার ...আমি বল

তোর তো প্রেম করতে গিয়ে

ঠকঠক করে হাত পা কাঁপতে থাকে। "

ওমনি সোমদত্তা মজার ছলে দেবিকাকে মারলো।

এই ভাবে খুনসুটি গোটা রাস্তা ধরে চলতে থাকে

আর তারপর ওরা নিজের নিজের বাড়ি ফেরে।


দেখতে দেখতে পেরোলো কয়েকটা বছর....


সোমদত্তা আর নীলাঞ্জন এর প্রেম গভীর হয়ে উঠেছে। পার্কে, সিনেমা হলে, লেকের ধারে সব জায়গায় দুজনের সুখের বিচরণ।

নীলাঞ্জন এর সব কথা দেবিকাকে এসে সোমদত্তা জানাতো।

আর এইভাবেই সময় এগিয়ে চললো....

নীলাঞ্জন এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরি করছে।

সোমদত্তা আর দেবিকা তখন কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।


একদিন নীলাঞ্জন হঠাৎ সোমদত্তাকে জানালো , "আমাদের সম্পর্কটা এবার বাড়িতে জানাতেই হবে। আমার বাড়িতে বাবার বন্ধুর মেয়ে সৃজনীর সাথে বিয়ের কথা শুরু হচ্ছে।"


সোমদত্তা সে কথা দেবিকাকে বললে দেবিকা বলে, "একদিন না একদিন তো জানতেই হতো, তো জানিয়ে দেওয়াই ভালো।

আরো বলে তুই নিজে না পারলে। তোর দিদি জামাইবাবু কে বল সবটা ।

তারা নিশ্চয়ই তোদের ব্যাপারটা বুঝবে।"


তেমনটাই হলো সোমদত্তা একদিন দেবিকাকে নিয়ে ওর দিদির কাছে গেলো সবটা বললো, ওর দিদি , জামাইবাবু বাবা মাকে বুঝিয়ে রাজিও করালো। এদিকে নীলাঞ্জন ওর বাবা মাকে জানালো।


দুটো পরিবারের দেখা হলো।

এরপর শুরু হলো সমস্যা ।

নীলাঞ্জনের বাবার সঙ্গে সোমদত্তার বাবার অনেক কিছুতেই মতের মিল হলো না।

দুটো পরিবারের মধ্যে মতবিরোধ হলো ।

সোমদত্তার বাবা নীলাঞ্জন এর বাবাকে দুচার কথা শুনিয়ে দিলো।


এতে নীলাঞ্জন খুব অসন্তুষ্ট হলো।


সোমদত্তাকে সে জানালো, " অত্যন্ত ন্যারো মাইন্ড ফ্যামেলি তোমাদের। আমার পুরো ডিসগাস্টিং লাগলো। "

সোমাদত্তা বোঝানোর চেষ্টা করলো সে কোনো ভাবেই দায়ী নয়।

তার বাবার ব্যবহারে তার ও ভালো লাগেনি। সোমদত্তা অনেকবার ক্ষমাও চাইলো।


আর বললো," তার ভালোবাসায় কোনো ফাঁক নেই ।

নীলাঞ্জন যেন তার বাবার জন্য তাকে না ভুল

বোঝে। "

কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

নীলাঞ্জন উল্টে এখন সোমদত্তার কাছে সৃজনীর কথা বলতে শুরু করলো আর সৃজনীর বাড়ীর লোকজন অনেক বেশী আধুনিক সে কথা জানালো।


সোমদত্তা নীলাঞ্জন কে এও বললো, " আমার পরিবার বরাবরই একগুঁয়ে, জেদি সেকথা তোমায় অনেকবার বলেছি। তুমি তখন আমার পাশে থাকবে বলেছিলে তাহলে আজ এরকম কেন বলছো?"


যতদিন এগোচ্ছে নীলাঞ্জন সম্পর্কটা ভাঙ্গতে শুরু করলো। সোমদত্তা বারবার তার কাছে গেল। নীলাঞ্জন তাকে ফিরিয়ে দিলো।

একদিন সন্ধ্যায় অবসন্ন হয়ে সোমদত্তা দেবিকার বাড়িতে গেলো।


সোমদত্তা দেবিকাকে বললো, "নীলাঞ্জন এই সম্পর্কটা আর রাখতে চায় না।

আর তার এখন কিচ্ছু ভালোলাগছে না ।

কেন এমন হলো...? "


কিছু ক্ষন এটা সেটা পুরনো অনেক কিছু বলতে থাকলো , কান্নাকাটি করলো অনেক ক্ষন ধরে।

তার বাবা মা কে দায়ী করতে শুরু করলো।


দেবিকা সোমদত্তাকে শান্ত হতে বললো, থামানোর চেষ্টা করলো।

দেবিকা বলে উঠলো," তোদের সম্পর্ক টা তো দেখছি মজবুত ছিলোই না। নীলাঞ্জন যদি সত্যি তোর ভালোবাসা বুঝতো তবে সে তোকে এত অজুহাত দেখিয়ে সরিয়ে দেবে কেন...?

সে চাকরি করে , তাই চাইলেই তোকে সবার অমতে গিয়ে সহজেই বিয়ে করতে পারে।

আর আজ এতদিন বাদে কেন নীলাঞ্জন তোর সাথে সৃজনীর তুলনা টানছে...?

হয়তো এই সম্পর্কটা একদিন ভাঙতোই ।

কাকু, কাকিমার

ব্যবহার খুব খারাপ ছিল আমি মানছি কিন্তু ও তো জানতো তোর পরিবার বরাবরই স্ট্রিক্ট , তোর সাথে যবে থেকে ওর রিলেশন তখন থেকেই ও তোর কাছে শুনে আসছে।

তাহলে আজ কেন পারলো না তোর সাথে থাকতে।"

সোমদত্তা চোখ ভরা জল নিয়ে--" আমি জানি না কিছু না..."


বেশ কিছু দিন পরে...


সোমদত্তা দেবিকাকে টেলিফোনে জানালো , " সে আর কোলকাতায় থাকছেনা সে তার মাসির বাড়ি সিকিমে চলে গেছে এখন থেকে এখানেই থাকবে।"

দেবিকা জানতে চায় কেন সে এভাবে চলে গেল।দেবিকা বললো, " আমার খুব খারাপ লাগছে।"

সোমদত্তা তাকে বলে, " কোলকাতায় সে আর থাকতে চায় না প্রতিমুহূর্তে নীলাঞ্জন এর স্মৃতি তার মনে পড়ছে কোলকাতায় থাকলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে..... আরোও বললো, তবে সিকিমে এসে সে দেবিকাকে খুব মিস করছে।


কিছু ক্ষন দুই বান্ধবী মধ্যে কথা চললো, আর পুরনো স্কুলের দিনগুলো তারা মনে করতে থাকলো।


দেখতে দেখতে কেটে গেলো বেশ

কয়েকটা বছর......


সোমদত্তার মাসির বাড়িতে ভাড়া থাকতো কোচবিহারের ছেলে বিমলেশ।

সে সিকিমে চাকরি করে।

সোমদত্তার সাথে তার আলাপ হয়।

সোমদত্তা প্রথমে তাকে পাত্তা না দিলেও ছেলেটি নিজে থেকেই তার সাথে কথা বলতে শুরু করে।

পরে বিমলেশ এর সাথে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হতে থাকে।

সোমদত্তা বিমলেশকে নীলাঞ্জন এর কথা জানায়। বিমলেশ সোমদত্তার সবটা শুনে সান্ত্বনা দেয়। তার প্রতি সমব্যাথী হয়।

সিকিমে সোমদত্তা এম এ পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি ভর্তি হয় আর বিমলেশ তাকে সব কিছুতে সাহায্য করে।


সোমদত্তা তখনও পারেনি নীলাঞ্জনকে ভুলতে। প্রতিমুহূর্তে নীলাঞ্জন এর নানা স্মৃতি তার মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলতো।

বিমলেশের সাথে এখন প্রায়ই রাস্তায় বেরিয়ে বারবার নীলাঞ্জন এর কথাই বলে ফেলে সোমদত্তা।

বিমলেশ সোমদত্তাকে অনেক ভাবেই হাসিখুশিতে রাখতে চেষ্টা করে। বিমলেশ নানা রকম ইয়ার্কি তখন করতো আর তারপর সোমদত্তা সে সব শুনে হেসে ফেলতো।

কিন্তু তবুও নানান কথায় নীলাঞ্জন এটা করতো, নীলাঞ্জন এইটা পছন্দ করে ,

এসব প্রায়ই সোমদত্তা বলে উঠত আর হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে মনখারাপ করতো।

বিমলেশ সোমদত্তা কে মনে মনে ভালোবেসে ফেলে তাই সোমদত্তা মনখারাপ যাতে না করে সেই চেষ্টা করতে থাকে।


একদিন মাসির বাড়ির ছাদে।

শান্ত পরিবেশ। খোলা আকাশের নীচে ওরা দাড়িয়ে আছে।


সোমদত্তা দূরে তাকিয়ে আছে আর বিমলেশ সোমদত্তা কে দেখছে।


বিমলেশ বলে উঠলো,

"সারাজীবন একি কথা ভেবে তুমি কেন এত যন্ত্রনা মনকে দাও।

জীবন কে নতুন করে দেখো।"

সোমদত্তার খুব কাছে দাঁড়িয়ে এখন বিমলেশ।

সোমদত্তা হঠাৎ করে সেখান থেকে সরে অন্য দিকে চলে গেলো।


সোমদত্তা বললো, " মানুষের মনের উপর কোনো

জোর চলে না।"

বিমলেশ- " জানি , তোমায় জোর করে কিছু ভুলতে বলিনি শুধু বললাম নতুন করে পথ চলা শুরু করো।"

সোমদত্তা- " আমার সব বিশ্বাস ভেঙে গেছে।"

বিমলেশ-" একটা মানুষ দিয়ে সবার বিচার করা কি ঠিক?"

সোমদত্তা বহুক্ষন বিমলেশ এর দিকে তাকিয়ে।

তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো," কোনটা ঠিক কোনটা ভুল আমার সব গুলিয়ে গেছে।"


বিকেলের সূর্য ডুবছে। মাথার উপর কিছু মেঘ আর বলাকার সারি।

এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বিমলেশ সোমদত্তাকে বলাকার সারি দেখালো। সোমদত্তা হঠাৎ করেই বিমলেশের হাতটা ধরে --"

দ্যাখো কি সুন্দর না ...?

ওরা দলবেঁধে যাচ্ছে আমার ওদের দেখতে দারুন লাগে। সোমদত্তার চোখে মুখে আনন্দ ফুটে উঠল।

বিমলেশ সোমদত্তার এই আনন্দ দেখে খুব নিশ্চিন্ত হলো।

এতদিন বাদে সে দেখলো সোমদত্তাকে আনন্দ পেতে।


সোমদত্তার মাসির বিমলেশকে খুবই পছন্দ ।তাছাড়া সোমদত্তা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।

সোমদত্তার মাসি বিমলেশের কথা সোমদত্তার বাবা মা কে জানালো আর বিমলেশের সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা বললো। সোমদত্তা ঠিক রাজি ছিল না এই বিয়েতে।


বিমলেশ সোমদত্তাকে বিয়ে করতে রাজি হলো। কিন্তু সে একথাও মাসিকে বললো, " সোমদত্তা না চাইলে কখনোই জোর করে সে এই বিয়ে করবে না"

এদিকে দেবিকাও সবটা শুনে সোমদত্তাকে বিয়েতে মত দিতে বললো।


সোমদত্তা শেষপর্যন্ত বিয়েতে মত দিলো।


সোমদত্তার বাবা মা বিমলেশ এর সাথে আলাপ করতে সিকিমে এলো। পূর্বের ঘটনা জন্য নিজেদের দায়ি করলে। সোমদত্তার মাসি বলে পুরোনো কথা ভেবে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।


একদিন সবাই মিলে সিকিমের কাছাকাছি জায়গায় ঘুরতে বেরলো।


সোমদত্তা একটা পাহাড়ের উপর বসে আছে বিমলেশ অনেক কিছু এটা সেটা বলে চলেছে আর সোমদত্তা মাঝেমধ্যে কথা বলছে।


হঠাৎ সোমদত্তার ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনটা দেখে সোমদত্তা অবাক হলো। নীলাঞ্জন এর নম্বর । শেষে ধরলো আর বিমলেশের থেকে দূরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করল।


নীলাঞ্জন সোমদত্তার কাছে ফিরে আসতে চাইলো। সে ভুল করেছে তার জন্য ক্ষমা চাইলো।

সোমদত্তা নীলাঞ্জন এর কথা শুনে চঞ্চল হয়ে উঠল।

এদিকে দূরে বিমলেশ সোমদত্তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সোমদত্তা নীলাঞ্জন এর সাথে কথা বলা শেষ করলো।

বিমলেশ জানতে চাইলে সে কোনো উওর দিলো না।


দেখতে দেখতে দিন এগিয়ে যাচ্ছে। বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে।


সোমদত্তার বাবা , মা ফিরে গেলো আর কোলকাতায় বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করলো।

ওদিকে নীলাঞ্জন এর সাথে সোমদত্তার ফোনে কথা চলছে।


সোমদত্তা নীলাঞ্জন কে বললো, "আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।"


নীলাঞ্জন-" তুমি আমাকে এভাবে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না, তুমি কোলকাতায় ফিরে এসো, তুমি শুধু আমার...।"


সোমদত্তা বিমলেশকে বলে , "নীলাঞ্জনের সাথে ইদানিং তার ফোনে কথা হয়েছে।

নীলাঞ্জন তাকে ফিরে পেতে চায়। নীলাঞ্জন আজোও তাকেই ভালবাসে।


বিমলেশ বলে উঠে, "

তুমি যদি নীলাঞ্জন এর কাছে যেতে চাও তো ঠিক আছে । তুমি যাতে ভালো থাকো আমি সেটাই করবো।


আমি তোমাকে কোলকাতায় পৌঁছে দেবো।"


সোমদত্তা- "কিন্তু বিয়ের এই যে এত কিছু আয়োজন, আর সবাই.....।"


বিমলেশ- "আমি বলবো, আমি বোঝাবো। তুমি চিন্তা করো না।"


বিমলেশ সবাই কে সবটা বোঝালো।

তারপর

সোমদত্তাকে কোলকাতায় পৌঁছে দিতে গেলো। নীলাঞ্জন এর কাছে তাকে ফিরিয়ে দিতে গেলো।


সোমদত্তা মনে মনে এবার চাইতে শুরু করলো বিমলেশ তাকে বাঁধা দিক কিন্তু তা হলো না।

বিমলেশ তাকে পৌঁছে দিতে গেলো নীলাঞ্জনের কাছে।


নীলাঞ্জন ফোনে জানতে চাইলো কখন তারা আসছে‌ সোমদত্তা জানালো কটার সময় তারা পৌঁছাবে।


এদিকে দেবিকাও জানতে পারলো সোমদত্তার কাছে। দেবিকা খুব অবাক হলো এত তাড়াতাড়ি এত কিছু হলো আর দেবিকার সাথে সোমদত্তার ফোনে ভালো করে কথাটা ও হলো না।


সোমদত্তা ট্রেনে উঠে পড়লো।

সোমদত্তা ট্রেনে উঠলো সঙ্গে বিমলেশ।

দেবিকাকে বললো, "কলকাতায় এসে সে দেখা করবে।"


কিন্তু দেবিকা স্থির থাকতে পারলো না ।


সে ফোন ম্যাসেজ পাঠালো।

সোমদত্তা ট্রেনে বসে পড়তে শুরু করলো দেবিকার পাঠানো ম্যাসেজ।


দেবিকা লিখেছে---

"ছোট থেকে তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব ।

স্কুলে থেকে ফেরার পথে..., দিনগুলো আজোও ভুলতে পারি না।

চলার সঙ্গী সবাই হতে পারে না সোমদত্তা।

নীলাঞ্জন ভালো প্রেমিক আমি জানি কিন্তু শুধু প্রেম করলেই হয় না,

প্রেমকে যত্নে বাঁচাতে ও হয়।

যে তোর ভালোর জন্য নিজের ভালোবাসা কে বিসর্জন দিতে পারে সেই কিন্তু তোর যোগ্য চলার সঙ্গী।

বিমলেশের কাছেই থাক। তুই ভালো থাকবি।

এবার ডিসিশন তোর।"


সোমদত্তা ম্যাসেজ পড়ে বিমলেশ এর দিকে তাকলো। 

চোখভরা জল , সোমদত্তার মুখ থমথমে। কোনো ভাষা নেই। শুধু মনের মধ্যে তোলপাড় চলছে। সোমদত্তা আজ আর ফিরতে চায় না নীলাঞ্জন এর কাছে,

তবু বিমলেশ কেন বুঝলো না সে কথা ।

তাই ভেবে সোমদত্তা অস্থির হলো।


সোমদত্তা দেখলো বিমলেশ তার জন্য খাবার ঠিক করছে।

বিমলেশ সোমদত্তার দিকে তাকিয়ে বললো,- "কি হলো তোমাকে কেমন লাগছে , কোনো অসুবিধা হচ্ছে তোমার?

নীলাঞ্জন এর ম্যাসেজ পড়ছিলে ?

তুমি ওকে বলেছো তো ..?স্টেশনে থাকতে আমাদের নামার সময়টা জানিয়েছো তো?

নাও তুমি এবার খেয়ে নাও। "


সোমদত্তা- "কেন..? তুমি আমাদের কোলকাতার বাড়িতে যাবে না ...?

আমাকে পৌঁছে দিতে...?


বিমলেশ -" আমি আর গিয়ে কি করবো, আগে ব্যাপারটা অন্য ছিলো কিন্তু বিয়েটা ই যখন হচ্ছে না, তাছাড়া তোমাকে নীলাঞ্জন এসে নিয়ে যাবে তো, তুমি তো বলেছো।

আর বাড়িতে ও তো সব ঠিক হয়ে গেছে আমি তো তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি। উনি সব মেনে নিয়েছেন।

তুমি আর নীলাঞ্জন খুব ভালো থাকবে।

আমি ভাবছি কোচবিহার চলে যাব কদিন এর জন্য, তোমাকে পৌঁছে দিয়ে ওয়েটিং রুমে থাকবো তারপর দেখি কখন ট্রেন পাই.."


সোমদত্তা কিছু বললো না শুধু বিমলেশকে দেখছে।


যথাসময় ট্রেন পৌঁছে গেলো।


সোমদত্তা নীলাঞ্জন এর কাছে যেতেই


নীলাঞ্জন বললো, "আমি জানতাম তুমি আমার কাছেই ফিরবে।"


সোমদত্তা বলে উঠলো, "না... আমি তোমার কাছে ফিরতে চাই না। তোমার জন্যেই আমি একদিন কোলকাতা ছেড়ে ছিলাম। আজ যদি তোমার কাছে ফিরি তবে সত্যি আমি ভালোবাসার মতো দামি জিনিস কে চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলবো। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো কিন্তু এটাও তো ঠিক কোনো কঠিন পরিস্থিতি এলে তুমি আমাকে সহজেই ফেলে চলে যেতে পারো। "


নীলাঞ্জন বলে উঠলো, "সেদিন এর কথাগুলো তুমি এখনো মনে রেখেছো..?"


সোমদত্তা বললো, " মনে না রাখলেও সত্যি টা মিথ্যে হয়ে যায় না। তুমি শুধু ভালোবাসাকে দেখিয়ে ছিলে কিন্তু তাকে কেমন করে যত্ন করতে হয় তা বিমলেশ আমায় শিখিয়েছে। ওর সাথে দেখা না হলে জানতেই পারতাম না‌।"


সোমদত্তা নীলাঞ্জন কে ফিরিয়ে দিয়ে বিমলেশকে খুঁজতে শুরু করলো।


তারপর ওয়েটিং রুমে বিমলেশকে পেলো।


বিমলেশ অবাক হয়ে," কি হলো তুমি একা..? নীলাঞ্জন কোথায়..?"


সোমদত্তা- আমি ওকে ফিরিয়ে দিয়েছি তুমি জিগাসা করলে না তো কেন?


বিমলেশ তাকিয়ে আছে সোমদত্তার দিকে।


সোমদত্তা বলে উঠলো,

"তুমি নীলাঞ্জন এর কাছে আমাকে ফিরিয়ে দিতে এলে কই একবারও তো আমায় বাঁধা দিলে না। এতই যদি আমাকে ভালোবাসো তো আমায় নীলাঞ্জন এর কাছে পাঠাচ্ছো কেন? নিজের কাছে রাখছো না কেন?..... বলো ?


বিমলেশ বলে উঠলো, " তুমিই তো নীলাঞ্জন এর কাছে ফিরতে চাও।"


সোমদত্তা চোখে জল টলটল করছে আর বলে উঠলো, "আমি বলেছি তো কি হয়েছে, সিকিমে তো তুমি সবসময় চাইতে আমি যাতে হাসিখুশি থাকি আর আমাকে খুশি রাখতে তো দিনরাত চেষ্টা করতে তাহলে এখন কেন..... বলেই সোমদত্তা কেঁদে ফেললো।


বিমলেশ সোমদত্তার চোখের জল মুছিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো, " আমি সত্যি বুঝিনি... স..রি.. প্লিজ.. কেঁদো না।"


স্টেশন থেকে দুজনে চলতে শুরু করলো।


সোমদত্তা বললো, "এতদিন তুমি আমায় সিকিম দেখিয়েছো এবার আমি তোমায় কোলকাতা পুরোটা দেখাবো।

জানো আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু দেবিকা ওর ম্যাসেজ তখন পড়ছিলাম ।ও আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো সবাই চলার সঙ্গী হয় না।

বিমলেশ বলে উঠলো, "দেবিকা মানে.... তোমার সেই স্কুলের বন্ধু যার সাথে রোজ বাড়ি ফিরতে।"

সোমদত্তা বললো, " হ্যাঁ আমি তো বাড়িতে ফিরেই ওর সাথে দেখা করতে চাই, কত কথা জমেছে, কতদিন দেখিনি ওকে। "


দুজনে কথা বলতে বলতে চলেছে হঠাৎ একটা অন্য প্ল্যাটফর্মে ট্রেন থামলো আর অজস্র মানুষের ভীড়। ব্যাস ভীড়ের মধ্যে সোমদত্তাকে আর বিমলেশ দেখতে পাচ্ছে না

ওদিকে সোমদত্তার ও একিই অবস্থা।


তারপর ভীড় থেকে সরে সোমদত্তা দেখতে পেলো বিমলেশকে আর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে উঠলো, উহ্ আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। "


বিমলেশ এগিয়ে এসে সোমদত্তার হাতটা ধরলো। আর বললো, "নাও চলো এবার ।"

তারপর....


দুজনেই হাসতে হাসতে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে চলতে শুরু করলো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance